সংবিধান সংশোধন-শক্তিশালী হোক গণতন্ত্র

বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই অবশেষে সংসদে কণ্ঠভোটে পাস হয়ে গেল সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বাহাত্তরের সংবিধানের চার মূলনীতি_জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে পুনর্বহাল হলো। একই সঙ্গে বহাল থাকল রাষ্ট্রধর্ম ও বিসমিল্লাহ।


তবে রাষ্ট্রধর্মের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মকেও দেওয়া হয়েছে সমান অধিকার ও মর্যাদা। সংশোধনী অনুযায়ী সংবিধানে সনি্নবেশিত হবে নতুন একটি অনুচ্ছেদ। এ অনুচ্ছেদে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও উপজাতিদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বলা হয়েছে। সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হওয়ায় ভবিষ্যতে সংবিধানের মৌলিক বিধান সংশোধনের সুযোগ নতুন করে আর থাকছে না। সংবিধানের মৌলিক বিধান সংশোধনের অযোগ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, 'এ সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহাই কিছু থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম ক-ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের অনুচ্ছেদ ১৫০-সহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।'
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারবিষয়ক সংশোধনী। এ সংশোধনী বিল সংসদে পাস হয়ে যাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আর থাকছে না। প্রধান বিরোধী দল এ বিষয়টির বিরোধিতা করে আসছে শুরু থেকেই। সংসদে না গেলেও সংসদের বাইরে থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের বিরুদ্ধে নিজেদের মতো করে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে বিরোধী দল। সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়াও পাওয়া গেছে। বিরোধী দল বলেই দিয়েছে, এ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। সংবিধানের সংশোধনী যেকোনো কারণেই হতে পারে। যুগের পরিবর্তনে সংবিধানকেও যুগোপযোগী করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়া অসম্ভব নয়। কিন্তু সব সময় মনে রাখতে হবে, সংবিধান সংশোধনের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সরকারপক্ষ কোনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে গেলে বিরোধী দল স্বাভাবিকভাবেই সেটার বিরোধিতা করবে। কিন্তু সংসদীয় ব্যবস্থায় এ বিরোধিতারও একটি নিয়ম আছে। সরকার বা বিরোধী দল কে কতটা সেই নিয়ম পালন করেছে, সেটা এখন বড় প্রশ্ন। বিরোধী দল সংসদের বাইরে সংবাদ সম্মেলন ডেকে বা হরতাল-বিক্ষোভ করে নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু সংসদে যায়নি। সংসদে গিয়ে সংবিধান সংশোধনীর বিরোধিতা করলে বিরোধী দল বিবেচনা বোধের পরিচয় দিত বলে অনেকের ধারণা। অন্যদিকে বিলটি পাস করতে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, তা করা হয়েছে কি না সেটাও একটি বড় প্রশ্ন।
যা কিছুই করা হোক না কেন, তা যেন গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্ত করার জন্যই করা হয়। এটা ঠিক যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য সুখকর নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পারস্পরিক বিশ্বাসযোগ্যতাই হচ্ছে মূলকথা। একটি শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও পারস্পরিক বিশ্বাসযোগ্যতাই পারে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে। দেশে বারবার সামরিক শাসন দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছিল। আদালতের রায়ের পর সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সেই গণতন্ত্র আবার শক্তিশালী হোক।

No comments

Powered by Blogger.