শ্রদ্ধাঞ্জলি-খালেদা খানম : মানুষ গড়ার কারিগর by এস এম বন্ধন

১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লে. সেলিম এবং ডা. এম এ হাসানের একমাত্র ভগিনী এবং শহীদ লে. সেলিম শিক্ষালয় ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ খালেদা খানম গত ২৭ জুন ভোররাত ৩টা ৪৫ মিনিটে শমরিতা হাসপাতালে আইসিইউতে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। যে বাতাস ভোরের আজানের সঙ্গে হঠাৎ করে বয়ে যায়, রাতের আঁধারভাঙা সুরের সঙ্গে মিশে যায়, তিনি তার সঙ্গে মিশে গিয়ে দূর মহাজগতে চলে গেছেন।


পেছনে রেখে গেছেন তাঁর নশ্বর দেহ, অমর কর্মযজ্ঞ এবং নীরব দেশপ্রেম। আকস্মিক ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছিল তাঁর। দুই ভাই মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার কারণে যুদ্ধের শুরুতেই খালেদা খানম এবং তাঁর প্রয়াত বোনের জীবনে যে অশনিসংকেত নেমে আসে, তা-ই তাঁকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে সারা জীবন। ২৮ মার্চ ১৯৭১ সালে ছোট ভাই ডা. এম এ হাসান মানিকগঞ্জে নানার বাড়িতে তাঁকে এবং তাঁর ছোট বোনকে রেখে আসার পর শুরু হয় দীর্ঘ অনিকেত জীবন। পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা তাঁদের তাড়িয়ে বেড়িয়েছে গ্রাম থেকে গ্রামে। তার মাঝেও দুই বোন এবং মা দুই হাতে সাহায্য করেছেন মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থ দিয়ে, ওষুধ দিয়ে। বিশেষ করে ক্যাপ্টেন হালিমের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক ছিল তাঁর পরিবারের। এই শহীদ ভগিনী একজন অসাধারণ সৎ, পরোপকারী, নিবেদিতা শিক্ষয়িত্রী। শিশুদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ জাগাতেই ১৯৭৮ সালে তিনি তাঁর স্কুলটি গড়ে তোলেন। তিনি সব সময় শিশুদের তাঁর ভাইয়ের আদর্শ, মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেম ও ত্যাগের কথা শুনিয়েছেন। তাঁর হাঁটতে অসুবিধা হতো। তার পরও অসুস্থ শরীরটি টেনে টেনে নিয়ে গেছেন এলাকার প্রতিটি ঘরে। সংগ্রহ করেছেন ছাত্র। শিশুদের মধ্যে জাগিয়েছেন সীমাহীন দেশপ্রেম এবং আদর্শের আলোকবর্তিকা। বিনিময়ে নিজের নাম চাননি ও পরিবারের অমর কীর্তি লিপিবদ্ধ করতেও চাননি। শুধু ভালো মানুষের কারিগর হতে চেয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহপাঠী ছিলেন খালেদা খানম। ইডেন থেকে বাংলা সাহিত্যে গ্র্যাজুয়েশন ও অনার্স করেন স্বাধীনতার আগেই। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন স্বাধীনতার পরপর। ডাকসাইটে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার মেয়ে হলেও মাটির সঙ্গে মিশে থাকতেন সদা বিনয়ী ও নম্র খালেদা। অধ্যবসায় ও সততাই ছিল তাঁর জীবনের শক্তি। অধ্যক্ষ খালেদা খানম অবিভক্ত ভারতের বিশিষ্ট চিকিৎসক, শিক্ষক তথা পাকিস্তানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এম এ শিকদারের জ্যেষ্ঠ কন্যা। তিনি বিবাহিতা। তাঁর স্বামী অধ্যাপক আফতাব হোসেন আবুজর গিফারী কলেজের সাবেক সহ-অধ্যক্ষ। তাঁর দুই কন্যা মলি্লকা আলম ও সুলতানা তামান্না আপন গুণে ভাস্বর।
এস এম বন্ধন

No comments

Powered by Blogger.