রাজপথে জামায়াতের তাণ্ডব-অশুভ শক্তি সম্পর্কে সতর্ক থাকুন
সোমবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে জামায়াতে ইসলামীর সহিংস কর্মসূচি উদ্বেগজনক। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করার পর কারও কারও ধারণা হয়েছিল যে, তারা হয়তোবা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে কিংবা নিজেদের সংযত করেছে।
কিন্তু বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের নামে তারা যে তাণ্ডব ঘটিয়েছে তা থেকে স্পষ্ট যে, দলের নেতৃত্ব যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছে। তারা নির্বিচারে যানবাহন ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ করেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এরপরও দলের নেতাদের বক্তব্য ঔদ্ধত্যপূর্ণ : 'এটা কেবল তাদের শক্তি প্রদর্শনের সূচনা।' দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে যে দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছে তাদের এ হুমকিকে হালকা করে দেখা চলে না। এটা লক্ষণীয়, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর চারদলীয় জোটের শরিকরা পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রাখলেও এক মঞ্চে হাজির হয়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপর্যয়ের জন্য বিএনপির অনেকেই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সম্পর্ককে দায়ী করেছে। সঙ্গত কারণেই বিএনপি গত আড়াই বছর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতার দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু যখন ঘোষণা করা হলো যে, আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর দুটি দল রাজধানীর একটি সমাবেশে এক মঞ্চে হাজির থাকবে, তার একদিন যেতে না যেতেই জামায়াতে ইসলামী তার শক্তি প্রদর্শনে ব্যগ্র হয়ে পড়ে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, অশুভ শক্তির সঙ্গে সখ্যের পরিণতি দল কিংবা দেশ কারও জন্য মঙ্গলজনক হয় না। বিগত সাধারণ নির্বাচনে দলের বিপর্যয়ের পর সর্বমহলে এ ধারণা বদ্ধমূল হয় যে যুদ্ধাপরাধী শক্তির বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ ব্যাপক। নতুন পরিস্থিতিতে এ দলটি বিএনপির সঙ্গে ঐক্যের সুযোগ নিয়ে শুধু নিজের শক্তি-সামর্থ্য বাড়াতেই সচেষ্ট হয়নি, প্রথম সুযোগেই তারা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি গ্রহণ করে। এদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সপক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকে সতর্ক থাকতে হবে। দেশে রাজনৈতিক দল গঠন ও মতপ্রকাশের অধিকার স্বীকৃত। কিন্তু তার সুযোগে অস্থিরতা সৃষ্টি কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। একাত্তরে যুদ্বাপরাধের দায়ে আটক ব্যক্তিদের বিচার বানচালের অপচেষ্টাও দেশবাসী মেনে নেবে না। জামায়াতে ইসলামীর সহিংস কর্মসূচি সম্পর্কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ অবহিত এবং তা মোকাবেলায় প্রস্তুত ছিল কি-না সে প্রশ্ন উঠেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতে ইসলামী ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের প্রস্তুতি নিয়েই দেশব্যাপী মিছিল-সমাবেশ করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, মিছিলকারীদের কেউ কেউ মাথায় হেলমেট পরিহিত ছিল এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে বিশেষ ধরনের বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। রাজধানীতে আগাম ঘোষণা না দিয়েই তারা বড় ধরনের মিছিল নিয়ে পথে নেমে পড়েছে এবং তাদের তাণ্ডব শুরুর অনেক পড়ে পুলিশ কার্যকর হস্তক্ষেপ করার মতো শক্তির সমাবেশ ঘটাতে পারে। স্পষ্টতই আরেকটি গোয়েন্দা ব্যর্থতার অজুহাত দেশবাসীকে শুনতে হলো। কিন্তু আর কত ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটলে তারা সচেতন হবে?
No comments