সংসদে বাজেট পাস-স্বপ্ন যেন ভেঙে না যায়
২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেট গত সংসদে পাস হয়েছে। যথারীতি বিরোধী দল অনুপস্থিত ছিল বাজেট পাসের সময়। সংসদে বাজেট প্রস্তাবের পর প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। গত ৯ জুন এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকার যে বাজেট সংসদে অর্থমন্ত্রী পেশ করেছিলেন, তাতে ঘাটতি ছিল ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ। বুধবার সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১১-১২ অর্থবছরের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয়ের জন্য ২ দশমিক ৩২৪ ট্রিলিয়ন (দুই লাখ ৩২ হাজার ৪০০ কোটি) অর্থ ব্যয়ের মঞ্জুরি চেয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে তা গৃহীত হয়। এর আগে মঙ্গলবার পাস হয় অর্থবিল। এই দুই বিল পাসের মধ্য দিয়ে পাস হয়ে গেল ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেট। বাজেট প্রস্তাবের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের ব্যয়ের জন্য ৫৪টি মঞ্জুরি দাবি উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। অন্যদিকে বিরোধী দলের সদস্যদের ৬০০টিরও বেশি ছাঁটাই প্রস্তাব এলেও তাঁদের অনুপস্থিতির কারণে তা উত্থাপন হয়নি। একমাত্র স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের সাতটি প্রস্তাবের ওপর সংসদে আলোচনা হয় এবং কণ্ঠভোটে প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়।
বিরোধী দল দীর্ঘদিন ধরে সংসদ বর্জন করে চলেছে। এই সংসদ বর্জনের ধারায় এবারের বাজেট অধিবেশনে যোগ দেয়নি বিরোধী দল। আগের বছরের ধারাবাহিকতায় বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সংসদের বাইরে একটি বিকল্প বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। বিরোধী দলের বিকল্প প্রস্তাবে অনেক গঠনমূলক কথা বলা হয়েছিল। বিরোধী দল এ কথাগুলো সংসদে গিয়ে বললে তা সংসদীয় রীতিসম্মত হতো এবং তাতে গণতন্ত্রই উপকৃত হতো। কিন্তু তাদের কথা তারা সংসদে গিয়ে বলেনি। সব সময় কথা বলে আসছে সংসদের বাইরে থেকে। এতে একদিকে যেমন গণতন্ত্রের জন্য এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, তেমনি জনগণের দেওয়া দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকা হয়। তা ছাড়া এভাবে অনুপস্থিত থেকে সংসদে একতরফা বাজেট পাস হতে দেওয়ার একটা কুনজির স্থাপিত হয়ে যাচ্ছে, যার দায়দায়িত্ব বিরোধী দলের ওপরই বর্তায়। বিরোধী দল ঠুনকো কিছু অভিযোগ এনে দীর্ঘদিন সংসদ বর্জনের মধ্য দিয়ে তাদের ওপর জনগণের দেওয়া দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রয়েছে। বাজেটের বিষয়ে বিরোধী দলের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ থাকতেই পারে, থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই পর্যবেক্ষণের বিষয়টি জানাতে হবে সংসদে গিয়ে_অন্য কোথাও নয়। সেটাই গঠনমূলক বিরোধী দলের দায়িত্ব। সংসদীয় রাজনীতির এই অ আ ক খ-টুকুও বিরোধী দল শিখল না।
বাজেট একটি দেশের সারা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব। এই হিসাবের ওপর নির্ভর করে একটি দেশের এক বছরের উন্নয়নের স্বপ্ন বোনা হয়। অর্থবছর শেষে সেই স্বপ্ন কতটুকু পূরণ হয়েছে সেটাই ভেবে দেখার বিষয়। এবার অর্থমন্ত্রীর পেশ করা যে বাজেট সংসদে পাস হয়েছে, সেই বাজেটের মধ্যেও রয়েছে আমাদের দেশের উন্নয়নের অনেক স্বপ্ন, যেমনটি গত বছরও ছিল। এ স্বপ্ন সফল হোক_সেটাই জাতির কাম্য। তবে স্বপ্নভঙ্গ হলে তার কারণ কী, সেটাই খুঁজে বের করতে হবে। বাজেট প্রণয়ন ও সংসদে বাজেট প্রস্তাব যেন আমাদের কাছে স্বপ্ন বোনার দিন। বাজেট পাস হওয়ার পর সারাটি বছর যেন স্বপ্নভঙ্গ। এবার যেন তেমনটি না হয়, সেটাই আশা করব আমরা।
No comments