চট্টগ্রামে কারখানাগুলো সপ্তাহে তিন দিনের বেশি গ্যাস পাবে না
চট্টগ্রামে গ্যাসসংকট পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষ আজ বৃহস্পতিবার থেকে নতুন ব্যবস্থা নিচ্ছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সময়বিন্যাস করে (স্ট্যাগারিং) গ্যাস সরবরাহের এ ব্যবস্থায় একটি কারখানাকে সপ্তাহে সর্বোচ্চ তিন দিন গ্যাস দেওয়া হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে এমন অনেক কারখানা আছে, যেগুলোর গ্যাস সরবরাহ পাওয়ার পর উৎপাদন শুরু করতেই লাগে আড়াই থেকে তিন দিন।
সুতা উৎপাদন, চিনি পরিশোধনাগারসহ বয়লারনির্ভর কারখানাগুলো এই পর্যায়ে পড়ে। চার দিন বন্ধ শেষে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হলে উৎপাদন শুরুর আগেই এ ধরনের কারখানা ফের বন্ধ হয়ে যাবে বলে কারখানার মালিকেরা জানিয়েছেন। এদিকে গতকাল রাত ১১টার মধ্যে কয়েকটি কারখানা কর্তৃপক্ষকে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ উৎপাদন বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কেজিডিসিএলের কর্মকর্তারা বলেছেন, গ্যাস সরবরাহ বন্ধের প্রস্তুতি হিসেবে আগেভাগে কারখানাগুলোকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
দেশের অন্যতম বৃহৎ সুতা তৈরির কারখানা মডার্ন পলি ইন্ডাস্ট্রি ও মডার্ন ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সুফিয়ান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আধুনিক সুতার কারখানায় একবার উৎপাদন বন্ধ করে পুনরায় চালু করতে কমপক্ষে তিন দিন সময় লাগে। তাই এ ধরনের কারখানায় সপ্তাহে চার দিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হলে কারখানা আর উৎপাদনে যেতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের অভাবে এই কারখানা যাতে এক ঘণ্টার জন্যও বন্ধ না থাকে, সে জন্য আমরা ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করে নিজস্ব গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছি। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকলে এই কেন্দ্রও চালু রাখা সম্ভব হবে না।’
কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সানোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘সব কলকারখানায় একযোগে গ্যাস না পাওয়ার চেয়ে একনাগাড়ে তিন দিন করে পর্যায়ক্রমে গ্যাস পাওয়া অনেক ভালো। এ কারণে আমরা নতুন ব্যবস্থায় গ্যাস সরবরাহ দিচ্ছি।’ নতুন ব্যবস্থাপনায় কিছু কারখানা উৎপাদনে যেতে পারবে না—এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন।
বৈঠক: জানা গেছে, নতুন নিয়মে গ্যাস সরবরাহের বিষয় নিয়ে গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নেতাদের সঙ্গে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বৈঠক করেন। চট্টগ্রাম বিজিএমইএ কার্যালয়ে বৈঠক চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা। সানোয়ার হোসেন চৌধুরী শিল্পকারখানায় সময়বিন্যাস করে গ্যাস দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ দিন দিন কমছে। এ কারণে সব কারখানায় একযোগে গ্যাস দেওয়া সম্ভব নয়। আবার সব কারখানায় সরবরাহ বন্ধ করেও দেওয়া যাবে না। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, গত সোমবার চট্টগ্রামে গ্যাসের সরবরাহ ছিল ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট। মঙ্গলবার পাওয়া যায় ২০৮ মিলিয়ন ঘনফুট। আর বুধবার তা ২০৫ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে আসে। অথচ চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
তবে বিজিএমইএর নেতারা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, এতে এ শিল্পের উৎপাদনে ধস নামবে। ইতিমধ্যে অনেক কারখানায় গ্যাসের অভাবে প্রক্রিয়াজাত করা কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে। ফোর এইচ গ্রুপের পরিচালক হাসান জেকি অভিযোগ করেন, তাঁদের রপ্তানি আদেশের ১২ টন কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে। এসব কাপড়ের প্রতি কেজির দাম পড়েছে সাত মার্কিন ডলার।
আলোচনার একপর্যায়ে বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি মো. এরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘গ্যাস সরবরাহের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এর চেয়ে আমরা বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমসে অনেক ভালো ছিলাম।’ বিজিএমইএর আরেক সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়ব অভিযোগ করেন, চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থা বর্তমানে কেবল রাউজান তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও চট্টগ্রাম ইউরিয়া সারকারখানায় (সিইউএফএল) আটকে গেছে। এতে ১০০ কোটি টাকার সার উৎপাদনের জন্য ১০০ বিলিয়ন টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হতে পারে।
বৈঠকে বক্তারা সবাই যেকোনো শর্তে তৈরি পোশাকশিল্পকে গ্যাসের সময়বিন্যাসের আওতার বাইরে রাখার দাবি জানান।
কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাকশিল্পের তেমন ক্ষতি হবে বলে মনে করি না। তবে এ দাবি মানতে হলে অন্য শিল্পকারখানার ওপর বেশি চাপ পড়বে।’
চেম্বারের বিরোধিতা: সময়বিন্যাসের মাধ্যমে কলকারখানা সপ্তাহে তিন দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীকে ফ্যাক্স পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার। ফ্যাক্সবার্তায় চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম বলেন, ‘একতরফাভাবে কেজিডিসিএল তৈরি পোশাকশিল্প, টেক্সটাইল, স্পিনিং মিলস্, স্টিল ও রি-রোলিং মিলস্, অটোমেটিক ব্রিক ফিল্ডস্, সিমেন্ট, লবণ উৎপাদন কারখানা, সিএনজি ফিলিং স্টেশন, ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে সারকারখানা সিইউএফএল চালু করেছে। এটা অমানবিক ও অযৌক্তিক। গ্যাসসংকটের কারণে ঈদুল আজহার আগে পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পকারখানায় উৎপাদন বন্ধ হলে মালিকের পক্ষে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া কষ্টকর হবে। এতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, শ্রম অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।’
দেশের অন্যতম বৃহৎ সুতা তৈরির কারখানা মডার্ন পলি ইন্ডাস্ট্রি ও মডার্ন ফাইবার ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সুফিয়ান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আধুনিক সুতার কারখানায় একবার উৎপাদন বন্ধ করে পুনরায় চালু করতে কমপক্ষে তিন দিন সময় লাগে। তাই এ ধরনের কারখানায় সপ্তাহে চার দিন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হলে কারখানা আর উৎপাদনে যেতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের অভাবে এই কারখানা যাতে এক ঘণ্টার জন্যও বন্ধ না থাকে, সে জন্য আমরা ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করে নিজস্ব গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছি। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকলে এই কেন্দ্রও চালু রাখা সম্ভব হবে না।’
কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সানোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘সব কলকারখানায় একযোগে গ্যাস না পাওয়ার চেয়ে একনাগাড়ে তিন দিন করে পর্যায়ক্রমে গ্যাস পাওয়া অনেক ভালো। এ কারণে আমরা নতুন ব্যবস্থায় গ্যাস সরবরাহ দিচ্ছি।’ নতুন ব্যবস্থাপনায় কিছু কারখানা উৎপাদনে যেতে পারবে না—এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন।
বৈঠক: জানা গেছে, নতুন নিয়মে গ্যাস সরবরাহের বিষয় নিয়ে গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নেতাদের সঙ্গে কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বৈঠক করেন। চট্টগ্রাম বিজিএমইএ কার্যালয়ে বৈঠক চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা। সানোয়ার হোসেন চৌধুরী শিল্পকারখানায় সময়বিন্যাস করে গ্যাস দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ দিন দিন কমছে। এ কারণে সব কারখানায় একযোগে গ্যাস দেওয়া সম্ভব নয়। আবার সব কারখানায় সরবরাহ বন্ধ করেও দেওয়া যাবে না। পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, গত সোমবার চট্টগ্রামে গ্যাসের সরবরাহ ছিল ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট। মঙ্গলবার পাওয়া যায় ২০৮ মিলিয়ন ঘনফুট। আর বুধবার তা ২০৫ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে আসে। অথচ চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
তবে বিজিএমইএর নেতারা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, এতে এ শিল্পের উৎপাদনে ধস নামবে। ইতিমধ্যে অনেক কারখানায় গ্যাসের অভাবে প্রক্রিয়াজাত করা কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে। ফোর এইচ গ্রুপের পরিচালক হাসান জেকি অভিযোগ করেন, তাঁদের রপ্তানি আদেশের ১২ টন কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে। এসব কাপড়ের প্রতি কেজির দাম পড়েছে সাত মার্কিন ডলার।
আলোচনার একপর্যায়ে বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি মো. এরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘গ্যাস সরবরাহের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এর চেয়ে আমরা বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমসে অনেক ভালো ছিলাম।’ বিজিএমইএর আরেক সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়ব অভিযোগ করেন, চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থা বর্তমানে কেবল রাউজান তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও চট্টগ্রাম ইউরিয়া সারকারখানায় (সিইউএফএল) আটকে গেছে। এতে ১০০ কোটি টাকার সার উৎপাদনের জন্য ১০০ বিলিয়ন টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হতে পারে।
বৈঠকে বক্তারা সবাই যেকোনো শর্তে তৈরি পোশাকশিল্পকে গ্যাসের সময়বিন্যাসের আওতার বাইরে রাখার দাবি জানান।
কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাকশিল্পের তেমন ক্ষতি হবে বলে মনে করি না। তবে এ দাবি মানতে হলে অন্য শিল্পকারখানার ওপর বেশি চাপ পড়বে।’
চেম্বারের বিরোধিতা: সময়বিন্যাসের মাধ্যমে কলকারখানা সপ্তাহে তিন দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রীকে ফ্যাক্স পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার। ফ্যাক্সবার্তায় চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম বলেন, ‘একতরফাভাবে কেজিডিসিএল তৈরি পোশাকশিল্প, টেক্সটাইল, স্পিনিং মিলস্, স্টিল ও রি-রোলিং মিলস্, অটোমেটিক ব্রিক ফিল্ডস্, সিমেন্ট, লবণ উৎপাদন কারখানা, সিএনজি ফিলিং স্টেশন, ওয়াশিং প্ল্যান্টসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে সারকারখানা সিইউএফএল চালু করেছে। এটা অমানবিক ও অযৌক্তিক। গ্যাসসংকটের কারণে ঈদুল আজহার আগে পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পকারখানায় উৎপাদন বন্ধ হলে মালিকের পক্ষে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়া কষ্টকর হবে। এতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, শ্রম অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।’
No comments