সংসদে প্রশ্নোত্তর-বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নেই পদ্মা সেতু হবে :প্রধানমন্ত্রী

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নেই পদ্মা সেতু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সংসদে বলেছেন, এ প্রকল্পে বিকল্প অর্থায়নের প্রয়োজন হবে না। প্রধানমন্ত্রী বুধবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বিষয়ে সৃষ্ট বর্তমান জটিলতা সাময়িক। এটি নিরসনের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। আশা করি, শিগগির এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন স্থগিত করায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়, সরকার এ প্রকল্পে বিকল্প অর্থায়নের উৎস খুঁজছে।


এ পর্যায়ে গতকাল জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিকল্প কোনো অর্থায়নের প্রয়োজন হবে না। বিশ্বব্যাংক প্রয়োজনে আরও ৩০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে বলে জানান তিনি।বর্তমানে আলোচিত প্রকল্প মেট্রো রেল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নোত্তরে বলেন, বিজয় সরণি নয়, রোকেয়া সরণির পাশ দিয়েই মেট্রো রেললাইন নির্মিত হবে। মেট্রো রেলের গতিপথ নিয়ে টক শোতে সমালোচনার তুফান না তুলে সাহস থাকলে এটাও বলুন, লুই আই কানের নকশা কে ধ্বংস করেছে। কীভাবে নকশা ক্ষতিগ্রস্ত করে ক্রিসেন্ট লেকের ওপর দিয়ে জিয়ার মাজারে যাতায়াতের জন্য ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেডিও এবং টেলিভিশনের টক শোতে
অনেকেই সংসদ ভবনের মূল নকশা নিয়ে আলোচনার তুফান তুলছেন। এসব আলোচকের উদ্দেশে বলতে হচ্ছে, আলোচনার আগে লুই কানের নকশাটা দেখুন।
সরকারি দলের বেনজীর আহমদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিমানবাহিনীর আপত্তিতে বারবার মেট্রো রেলপথের গতিপথ ঘুরছে, একথা সত্য নয়। এসটিপির সুপারিশকৃত এমআরটি লাইন-৬ (মেট্রো রেল) বাস্তবায়নের জন্য সম্পূর্ণভাবে জাইকার অর্থায়নে ও ব্যবস্থাপনায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বুয়েট, যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মেট্রো রেললাইন রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বর্তমান রুটটি লুই কানের নকশাকে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, কয়েকটা খেজুর গাছ বেশি প্রয়োজন, নাকি বিমানবন্দর বেশি প্রয়োজন? যখন জিয়ার মাজারের নামে হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হলো, আজকে যারা সমালোচনার তুফান তুলছেন, তখন তারা কোথায় ছিলেন? তখন তো তাদের কোনো কথা বলতে শুনিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, তৎকালীন সেনাপ্রধান এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ চট্টগ্রাম থেকে একটি বাক্স এনে বললেন, এখানে জিয়ার লাশ রয়েছে, এখানে দাফন করা হবে। টুঙ্গিপাড়া থেকেও বঙ্গবন্ধুর লাশ এনে এখানে (চন্দ্রিমা উদ্যান) মাজার করার জন্য এক মেজর জেনারেলকে দিয়ে প্রস্তাব পাঠানো হলো। আমার রাজি হওয়ার প্রশ্নই আসে না। যখন অর্ধচন্দ্রাকৃতি ক্রিসেন্ট লেকের নকশা ধ্বংস করে জিয়ার মাজারের নামে ব্রিজ নির্মাণ করা হলো, সে সময় কেন কথা হলো না? যারা আজ মেট্রো রেলের গতিপথ নিয়ে নানা কথা বলছেন, তারা কি লুই আই কানের মূল ব্লুপ্রিন্টটা দেখেছেন? দেখলে এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য দিতেন না।
লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বিজয় সরণির পাশ দিয়ে মেট্রো রেললাইন স্থাপনের প্রধান ১০টি কারণ সংসদে তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিজয় সরণির পাশ দিয়ে মেট্রোরুট হলে তেজগাঁও বিমানবন্দরে রানওয়ের দৈর্ঘ্য কমে যাবে। ফলে তা বিমান অবতরণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। তিনি জানান, ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তেজগাঁও বিমানবন্দরকে সামরিক ঘাঁটি হিসেবে বিমানবাহিনীকে হস্তান্তর করে। সে সময় থেকেই বিমানবন্দরটি সামরিক ঘাঁটি ও ত্রাণ তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, মেট্রো রেললাইন বিজয় সরণির পাশ দিয়ে স্থাপন করা হলে বিমানের 'অ্যাপ্রোচ পাথে' আড়াআড়িভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। মেট্রো রেলের উচ্চতার কারণে বিমান অবতরণকালে ল্যান্ডিং অ্যাপ্রোচের উচ্চতা বাড়াতে হবে। সে ক্ষেত্রে রানওয়ের প্রথমভাগের বড় অংশ বাদ দিয়ে অবতরণ করতে হবে, যা বিমান অবতরণের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া বিজয় সরণির মধ্যবর্তী আইল্যান্ড দিয়ে মেট্রো রেলের রুট গেলে ফার্মগেটে মোড় নেওয়ার সময় দুটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ছয়তলা ভবন ভেঙে ফেলতে হবে। উল্টোদিকে বিজয় সরণি দিয়ে গেলে ছয় থেকে আটটি ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবন ভাঙতে হবে। একই সঙ্গে চার রাস্তার সংযোগস্থল হওয়ায় বর্তমান রাস্তা সংকুচিত হয়ে যানজট আরও বাড়বে।
পদ্মা সেতু প্রসঙ্গ
সরকারদলীয় সাংসদ এসকে আবু বাকেরের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের বরাবরে চিঠি দিয়ে সরকারের অবস্থান জানানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে সর্বোচ্চ ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে। প্রয়োজনে তারা আরও ৩০ কোটি ডলার ঋণ দেবে। বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়নকারী সংস্থাগুলোর প্রধান সমন্বয়ক। টেন্ডার আহ্বান, প্রি-কোয়ালিফিকেশন, ঠিকাদার নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সম্মতির জন্য পাঠাতে হয়। যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তাদের নিজস্ব অফিসিয়াল রয়েছে। কোনো প্রকার অভিযোগ_ সেটা বেনামি ও ভিত্তিহীন হলেও বিশ্বব্যাংকের তা তদন্তের নিয়ম রয়েছে।
শেখ হাসিনা জানান, বর্তমান সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে এ সরকারের সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে বিস্তারিত ডিজাইন প্রণয়নের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। ইতিমধ্যে এ সেতুর ডিজাইন চূড়ান্ত এবং সব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর কাজ দ্রুত শেষ করতে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
ভারতকে ট্রানজিট/করিডোর দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, গত বছরের ১২ জানুয়ারি প্রকাশিত যৌথ ইশতেহারের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে নির্মিতব্য পালাটানা পাওয়ার প্লান্টের জন্য আশুগঞ্জ-সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-সুলতানপুর-চিনাইর-আখাউড়া-সেনারবাদি (আগরতলা) সড়কপথে এ বছরের ২৮ মার্চ থেকে ওভার ডাইমেনশন কার্গো পরিবহন শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে এ রুটে ভারতীয় পণ্য সীমিত আকারে পরিবহন করা হচ্ছে। ট্রানজিট ফি নির্ধারণসহ রুট নির্ধারণ ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে ট্যারিফ কমিশনের আওতায় গঠিত কোর কমিটি প্রস্তাবিত খসড়া প্রতিবেদন পেশ করেছে যা চূড়ান্তভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.