অনুসন্ধান-আদালতের মালখানায় মাদক বেচছে পুলিশ by পারভেজ খান
যে ভবনে বসে বিচারকরা মাদক বিক্রেতাদের সাজা দেন, যে ভবনে বসে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মাদক উচ্ছেদের অভিযান পরিচালনা করেন, সেই ভবনের ভেতরে বসেই প্রায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে স্বয়ং পুলিশ। আর এই মাদক হলো সেই মাদক, যা তারা আটক করে নিজেদের হেফাজতে রেখেছিল আদালতের মালখানায়। আর যে পুলিশ এই মাদক বিক্রি করছে, তারা সেই মালখানারই রক্ষণাবেক্ষণকারী। কালের কণ্ঠের নিজস্ব অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার সচিত্র তথ্য।
পুরান ঢাকার আদালতপাড়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত ভবনের ওপরে বসেন বিচারকরা। দিনভর চলে বিচারকাজ। এখানে বসেন ঢাকা জেলার পুলিশপ্রধানও। এই ভবনের নিচেই ঢাকা জেলা আদালতের মালখানা।
সোমবার ভর দুপুর। আদালত চত্বর এ সময় কিছুটা নীরব থাকে। দুপুরের খাবারে ব্যস্ত থাকেন অনেকেই। অনেক কার্যক্রমই স্থগিত থাকে কিছু সময়ের জন্য। এ দিনও এর ব্যত্যয় ছিল না। দুপুর পৌনে ২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদক দাঁড়িয়ে ছিলেন জেলা আদালতের মালখানার সামনের প্রবেশপথে। সেখানে টুল পেতে এক ভদ্রলোক বসে মোবাইল ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলছিলেন। একজন-দুজন করে লোক ঢুকছিলেন মালখানার ভেতরে। ৫-৭ মিনিট পর তাঁরা বের হয়ে আসতেই আবার অন্যদের লাইন। এঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অল্প বয়সী আইনজীবীও ছিলেন। এভাবেই চলছিল যাওয়া-আসা। জানা গেল, যাঁরা ভেতরে যাচ্ছেন তাঁদের সবারই উদ্দেশ্য এক_ফেনসিডিল পান করা। ভেতরে টেবিলে অনেকটা দোকানের মতো করে ফেনসিডিলের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন একজন পুলিশ সদস্য, তবে সাদা পোশাকে। তাঁর সামনে বসা পোশাক পরা আরেক পুলিশ সদস্য। লোকজন যাচ্ছে, সেখানে ফেনসিডিল কিনছে, দাঁড়িয়ে থেকে খেয়ে আবার বের হয়ে আসছে। বোতলপ্রতি পুলিশকে দিতে হচ্ছে ৬০০ টাকা করে। তবে শর্ত হলো_বোতল নিয়ে কেউ বাইরে আসতে পারবে না। ওখানেই খেয়ে বোতল রেখে আসতে হবে। কারণ, ওটা সরকারি হিসাবের মাল। পুলিশ যে মাদক বিক্রি করছে, সেটা জব্দ করা আলামত। জানা গেল, বিক্রির পরে শূন্য বোতলে পানি ভরে হিসাবের খাতা ঠিক রাখতে হয়।
সরেজমিন অনুসন্ধান এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব খবর পাওয়ার পর কালের কণ্ঠ খুঁজে বের করে এই মালখানা থেকে নিয়মিত ফেনসিডিল কিনে খায় এ রকম একজনকে। তাঁকে রাজি করিয়ে এবং তাঁর সহায়তায় কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে আরেকজনকে গোপন ক্যামেরা দিয়ে পাঠানো হয় মালখানার ভেতরে। ভেতরে দেখা যায়, মালখানা কর্মকর্তার চেয়ারে বসে আছেন একজন পুলিশ সদস্য। নাম আসাদুজ্জামান। আদালতপাড়ায় 'আসাদ ভাই' নামে পরিচিত। তাঁর সামনের চেয়ারে পুলিশের পোশাক পরে বসা শামিম। বুকে নামফলক লাগানো। দুজনই পুলিশ কনস্টেবল। ভেতরে ঢুকতেই হাত বাড়িয়ে দেন আসাদুজ্জামান। ক্রেতা তাঁর হাতে গুঁজে দেন টাকা। টাকা গুনে নেন আসাদুজ্জামান। এরপর ক্রেতার হাতে তিনি তুলে দেন এক বোতল ফেনসিডিল। ক্রেতা অনুরোধ করলে ফেনসিডিলের বোতলের সিপিও খুলে দেন আসাদুজ্জামান। ফেনসিডিলের দাম-দর নিয়ে কিছু বাক্যও বিনিময় হয় ক্রেতা-বিক্রেতার। ফেনসিডিলের এখন খুব সংকট চলছে বলেও ক্রেতাকে জানান আসাদ। তাঁদের এই আলাপচারিতা আর টাকা দেওয়া-নেওয়াসহ সব চিত্রই ধরা পড়ে গোপন ক্যামেরায়।
আগের দিন রবিবারও কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে প্রায় একই ধরনের চিত্র।
গতকাল বুধবার দুপুরে আবারও সরেজমিন অনুসন্ধান চালানো হয় আদালতপাড়ায়। মালখানায় কথা হয় কনস্টেবল আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। অফিসকক্ষে তিনি মালখানা অফিসারের চেয়ারে বসেই কাজ করছিলেন। পাশে বসা ছিলেন সেই কনস্টেবল শামিম। আলাপকালে আসাদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ১৪ মাস আগেই তিনি অবসরে গেছেন। এরপর কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশে তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে আলামত হিসেবে রক্ষিত মাদকদ্রব্য বিক্রির যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা ঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করলে আসাদুজ্জামানকে জানানো হয়, এই প্রতিবেদকের কাছে তাঁর ফেনসিডিল বিক্রি করার ছবি তোলা আছে। এরপর তিনি বেশ ঘাবড়ে গিয়ে বলেন, 'এটা কী করে সম্ভব! এ ঘরে তো কেউ ক্যামেরা নিয়ে ঢোকে না।'
পরে আলাপচারিতায় আসাদ আরো বলেন, 'ছবিই যখন তুলে ফেলেছেন, তখন আর কিছুই বলার নেই। পারলে ক্ষমা করে দিয়েন। নয়তো, যেটা ভালো মনে করেন, লিখবেন।'
মালখানা থেকে বের হয়ে আসার পর আসাদুজ্জামান এই প্রতিবেদকের সঙ্গে সঙ্গে আসেন। সংবাদটি না ছাপানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'এখানে ফেনসিডিল বিক্রি না করে উপায় নেই। নইলে লাশ হয়ে পড়ে থাকতে হবে। বাধ্য হয়েই এটা করতে হচ্ছে।'
অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে আরো অনেক তথ্য। জানা যায়, আদালতের মালখানায় অবাধে মাদক বেচাকেনা চলে আসছে ১০ বছর ধরে। এই টাকার ভাগ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকেই পান। আসাদুজ্জামান এলাকায় একটা মাদক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। আর এ কারণেই অবসরে যাওয়ার পরও সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ায় তাঁকে ওই দায়িত্বেই বহাল রাখা হয়েছে।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে মালখানা তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আসলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশেই আসাদ চাকরিতে না থেকেও কাজ করে যাচ্ছেন। আগে তিনি নিজেই এই কাজ করতেন। তিনি বদলি হয়ে গেছেন বরিশালে। তবে আসাদ যে অপরাধ করছেন, সেটা অমার্জনীয় এবং তিনি পুরো পুলিশ বিভাগের গায়ে কালিমা লেপ্টে দিয়েছেন। এই অপরাধের শাস্তি হওয়া উচিত।
সদর কোর্টের পুলিশ পরিদর্শক এবং মালখানা তদারকির আরেক কর্মকর্তা রবীন্দ্র নারায়ণ সাহা পাশে বসা আরেক পুলিশ সদস্যকে উদ্দেশ করে বলেন, 'মালখানা তো বাইরে থেকে তালাবদ্ধ থাকার কথা। সাংবাদিক ভেতরে ঢুকল কিভাবে?' এরপর তিনি এ প্রতিবেদককে লক্ষ্য করে বলেন, আসলে বাস্তবতা ভিন্ন। মালখানার যে বেহাল অবস্থা, নতুন কেউ এসে সহজে কোনো আলামত খুঁজে বের করতে পারবেন না। এ কারণেই আসাদ নতুনদের কাজ শিখিয়ে দিচ্ছেন। তবে দরজা খোলা রেখে আসাদের ওই সংরক্ষিত চেয়ারে বসে কাজ করা উচিত হয়নি।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ পরই তিনি আসাদকে ডেকে পাঠান এবং তাঁকে বের করে দিয়ে মালখানা তালাবদ্ধ করে দেন।
একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, এই মালখানায় সব ধরনের নেশাজাত দ্রব্যই বিক্রি হয়। ক্রেতারা মূলত এক শ্রেণীর আইনজীবী এবং আদালতে হাজির করা বন্দি। আইনজীবী ও আইনজীবীর সহকারীদের জন্য প্রতি বোতল ফেনসিডিলের দাম রাখা হয় ৬০০ টাকা। আর বন্দিদের জন্য ৮০০ টাকা। বন্দিদের হাজতঘরে পানীয়র বোতলে ভরে ফেনসিডিল পেঁৗছে দেওয়া হয়। এর জন্য বাহককে দিতে হয় অতিরিক্ত ১০০ টাকা। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই বাহকও পুলিশ।
সূত্র আরো জানায়, স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রও এখানে এসে নিয়মিত ফেনসিডিল সেবন করে। তাদেরকে মালখানার পক্ষ থেকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকাও দিতে হয়। বিশেষ করে, কলতাবাজারের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় সন্ত্রাসী এবং মোহসীন ও স্বপন নামের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে টাকা না দিয়ে এই ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
সোমবার ভর দুপুর। আদালত চত্বর এ সময় কিছুটা নীরব থাকে। দুপুরের খাবারে ব্যস্ত থাকেন অনেকেই। অনেক কার্যক্রমই স্থগিত থাকে কিছু সময়ের জন্য। এ দিনও এর ব্যত্যয় ছিল না। দুপুর পৌনে ২টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদক দাঁড়িয়ে ছিলেন জেলা আদালতের মালখানার সামনের প্রবেশপথে। সেখানে টুল পেতে এক ভদ্রলোক বসে মোবাইল ফোনে কারো সঙ্গে কথা বলছিলেন। একজন-দুজন করে লোক ঢুকছিলেন মালখানার ভেতরে। ৫-৭ মিনিট পর তাঁরা বের হয়ে আসতেই আবার অন্যদের লাইন। এঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন অল্প বয়সী আইনজীবীও ছিলেন। এভাবেই চলছিল যাওয়া-আসা। জানা গেল, যাঁরা ভেতরে যাচ্ছেন তাঁদের সবারই উদ্দেশ্য এক_ফেনসিডিল পান করা। ভেতরে টেবিলে অনেকটা দোকানের মতো করে ফেনসিডিলের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন একজন পুলিশ সদস্য, তবে সাদা পোশাকে। তাঁর সামনে বসা পোশাক পরা আরেক পুলিশ সদস্য। লোকজন যাচ্ছে, সেখানে ফেনসিডিল কিনছে, দাঁড়িয়ে থেকে খেয়ে আবার বের হয়ে আসছে। বোতলপ্রতি পুলিশকে দিতে হচ্ছে ৬০০ টাকা করে। তবে শর্ত হলো_বোতল নিয়ে কেউ বাইরে আসতে পারবে না। ওখানেই খেয়ে বোতল রেখে আসতে হবে। কারণ, ওটা সরকারি হিসাবের মাল। পুলিশ যে মাদক বিক্রি করছে, সেটা জব্দ করা আলামত। জানা গেল, বিক্রির পরে শূন্য বোতলে পানি ভরে হিসাবের খাতা ঠিক রাখতে হয়।
সরেজমিন অনুসন্ধান এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব খবর পাওয়ার পর কালের কণ্ঠ খুঁজে বের করে এই মালখানা থেকে নিয়মিত ফেনসিডিল কিনে খায় এ রকম একজনকে। তাঁকে রাজি করিয়ে এবং তাঁর সহায়তায় কালের কণ্ঠের পক্ষ থেকে আরেকজনকে গোপন ক্যামেরা দিয়ে পাঠানো হয় মালখানার ভেতরে। ভেতরে দেখা যায়, মালখানা কর্মকর্তার চেয়ারে বসে আছেন একজন পুলিশ সদস্য। নাম আসাদুজ্জামান। আদালতপাড়ায় 'আসাদ ভাই' নামে পরিচিত। তাঁর সামনের চেয়ারে পুলিশের পোশাক পরে বসা শামিম। বুকে নামফলক লাগানো। দুজনই পুলিশ কনস্টেবল। ভেতরে ঢুকতেই হাত বাড়িয়ে দেন আসাদুজ্জামান। ক্রেতা তাঁর হাতে গুঁজে দেন টাকা। টাকা গুনে নেন আসাদুজ্জামান। এরপর ক্রেতার হাতে তিনি তুলে দেন এক বোতল ফেনসিডিল। ক্রেতা অনুরোধ করলে ফেনসিডিলের বোতলের সিপিও খুলে দেন আসাদুজ্জামান। ফেনসিডিলের দাম-দর নিয়ে কিছু বাক্যও বিনিময় হয় ক্রেতা-বিক্রেতার। ফেনসিডিলের এখন খুব সংকট চলছে বলেও ক্রেতাকে জানান আসাদ। তাঁদের এই আলাপচারিতা আর টাকা দেওয়া-নেওয়াসহ সব চিত্রই ধরা পড়ে গোপন ক্যামেরায়।
আগের দিন রবিবারও কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে প্রায় একই ধরনের চিত্র।
গতকাল বুধবার দুপুরে আবারও সরেজমিন অনুসন্ধান চালানো হয় আদালতপাড়ায়। মালখানায় কথা হয় কনস্টেবল আসাদুজ্জামানের সঙ্গে। অফিসকক্ষে তিনি মালখানা অফিসারের চেয়ারে বসেই কাজ করছিলেন। পাশে বসা ছিলেন সেই কনস্টেবল শামিম। আলাপকালে আসাদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ১৪ মাস আগেই তিনি অবসরে গেছেন। এরপর কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশে তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তবে তাঁর বিরুদ্ধে আলামত হিসেবে রক্ষিত মাদকদ্রব্য বিক্রির যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা ঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করলে আসাদুজ্জামানকে জানানো হয়, এই প্রতিবেদকের কাছে তাঁর ফেনসিডিল বিক্রি করার ছবি তোলা আছে। এরপর তিনি বেশ ঘাবড়ে গিয়ে বলেন, 'এটা কী করে সম্ভব! এ ঘরে তো কেউ ক্যামেরা নিয়ে ঢোকে না।'
পরে আলাপচারিতায় আসাদ আরো বলেন, 'ছবিই যখন তুলে ফেলেছেন, তখন আর কিছুই বলার নেই। পারলে ক্ষমা করে দিয়েন। নয়তো, যেটা ভালো মনে করেন, লিখবেন।'
মালখানা থেকে বের হয়ে আসার পর আসাদুজ্জামান এই প্রতিবেদকের সঙ্গে সঙ্গে আসেন। সংবাদটি না ছাপানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'এখানে ফেনসিডিল বিক্রি না করে উপায় নেই। নইলে লাশ হয়ে পড়ে থাকতে হবে। বাধ্য হয়েই এটা করতে হচ্ছে।'
অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে আরো অনেক তথ্য। জানা যায়, আদালতের মালখানায় অবাধে মাদক বেচাকেনা চলে আসছে ১০ বছর ধরে। এই টাকার ভাগ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকেই পান। আসাদুজ্জামান এলাকায় একটা মাদক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। আর এ কারণেই অবসরে যাওয়ার পরও সম্পূর্ণ অবৈধ প্রক্রিয়ায় তাঁকে ওই দায়িত্বেই বহাল রাখা হয়েছে।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে মালখানা তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আসলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মৌখিক নির্দেশেই আসাদ চাকরিতে না থেকেও কাজ করে যাচ্ছেন। আগে তিনি নিজেই এই কাজ করতেন। তিনি বদলি হয়ে গেছেন বরিশালে। তবে আসাদ যে অপরাধ করছেন, সেটা অমার্জনীয় এবং তিনি পুরো পুলিশ বিভাগের গায়ে কালিমা লেপ্টে দিয়েছেন। এই অপরাধের শাস্তি হওয়া উচিত।
সদর কোর্টের পুলিশ পরিদর্শক এবং মালখানা তদারকির আরেক কর্মকর্তা রবীন্দ্র নারায়ণ সাহা পাশে বসা আরেক পুলিশ সদস্যকে উদ্দেশ করে বলেন, 'মালখানা তো বাইরে থেকে তালাবদ্ধ থাকার কথা। সাংবাদিক ভেতরে ঢুকল কিভাবে?' এরপর তিনি এ প্রতিবেদককে লক্ষ্য করে বলেন, আসলে বাস্তবতা ভিন্ন। মালখানার যে বেহাল অবস্থা, নতুন কেউ এসে সহজে কোনো আলামত খুঁজে বের করতে পারবেন না। এ কারণেই আসাদ নতুনদের কাজ শিখিয়ে দিচ্ছেন। তবে দরজা খোলা রেখে আসাদের ওই সংরক্ষিত চেয়ারে বসে কাজ করা উচিত হয়নি।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ পরই তিনি আসাদকে ডেকে পাঠান এবং তাঁকে বের করে দিয়ে মালখানা তালাবদ্ধ করে দেন।
একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, এই মালখানায় সব ধরনের নেশাজাত দ্রব্যই বিক্রি হয়। ক্রেতারা মূলত এক শ্রেণীর আইনজীবী এবং আদালতে হাজির করা বন্দি। আইনজীবী ও আইনজীবীর সহকারীদের জন্য প্রতি বোতল ফেনসিডিলের দাম রাখা হয় ৬০০ টাকা। আর বন্দিদের জন্য ৮০০ টাকা। বন্দিদের হাজতঘরে পানীয়র বোতলে ভরে ফেনসিডিল পেঁৗছে দেওয়া হয়। এর জন্য বাহককে দিতে হয় অতিরিক্ত ১০০ টাকা। আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই বাহকও পুলিশ।
সূত্র আরো জানায়, স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রও এখানে এসে নিয়মিত ফেনসিডিল সেবন করে। তাদেরকে মালখানার পক্ষ থেকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকাও দিতে হয়। বিশেষ করে, কলতাবাজারের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় সন্ত্রাসী এবং মোহসীন ও স্বপন নামের দুই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে টাকা না দিয়ে এই ব্যবসা পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
No comments