অনলাইন থেকে-মিসরে সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব
২০১১ সালে মোহাম্মদ মুরসি মিসরের ক্ষমতায়
এসে শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন জেনারেলকে সরিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাঁদের পরবর্তী
জেনারেলদের সঙ্গে কিছু সমঝোতায় এসেছিলেন। প্রেসিডেন্ট মুরসি এবং তাঁর দল
মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতারা মনে করেছিলেন, সামরিক বাহিনীকে সম্ভবত বশ করা
গেছে।
কিন্তু তাঁদের সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। মুরসি
প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অপসারিত হলেন, সংবিধান স্থগিত হলো এবং প্রেসিডেন্ট
প্রাসাদের আশপাশসহ দেশটিতে এখন টহল দিচ্ছে সামরিক বাহিনীর ট্যাংক ও সাঁজোয়া
যান। পূর্বসূরি হোসনি মুবারকের মতোই সহসা মুরসিও আবিষ্কার করলেন, সামরিক
বাহিনী বশ মানেনি, তারা সবার ওপরের অবস্থানটিই ধরে রেখেছে।
মিসরে যা ঘটেছে এটি কোনো আদর্শগত নয়, বরং রাজনৈতিক বিষয়। সেনাবাহিনী তার শ্রেষ্ঠত্বের দাবিকেই প্রতিষ্ঠা করেছে। কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ স্টিভেন এ কুকের মতে, বর্তমান পরিবর্তনে মিসরের সেনা জান্তাদের কোনো আদর্শিক অবস্থান নেই। তারা বিশ্বাস করে, রাজনৈতিক ক্ষমতার সিঁড়িতেও তাদের একটি স্থান রয়েছে। আর সে জন্য তারা যে কারো সঙ্গে আপস করতে পারে।
মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডের সংক্ষিপ্ত শাসনামলে জনরোষ এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে যে লাখ লাখ জনতা মুরসি সরকারের অপসারণের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। সব শেষে তা সরকার সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষে রূপ নেয়। আবার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের জন্য সেনাবাহিনী এটিকেই মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নেয়। জাতীয় সংহতি রক্ষার প্রয়োজনে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। একজন তত্ত্বাবধায়ক নেতাকে স্থাপন করা হয়। সরকারবিরোধীরা সেনাবাহিনীর এই হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানায়।
আসলে মিসরের ক্ষমতায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি নতুন কোনো ঘটনা নয়। আড়াই বছরের মাথায় এটি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় হস্তক্ষেপ। আড়াই বছর আগে অনুরূপ গণ-অভ্যুত্থানের মুখে হোসনি মুবারককে ক্ষমতাচ্যুত করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল সেনাবাহিনী। হোসনি মুবারক নিজেও ছিলেন বিমানবাহিনীর একজন অধিনায়ক। প্রায় তিন দশক তিনি মিসরকে শাসন করেছেন। আর প্রায় ছয় দশক আগে বাদশাহ ফারুককে ক্ষমতাচ্যুত করে মিসরের শাসনক্ষমতা নিয়েছিলেন জামাল আবদুল নাসের। আর এই ছয় দশকে মিসরের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে উদ্ভূত হয়েছে সামরিক বাহিনী। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসি সেই শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করতে চেয়েছিলেন।
আরব জগতে সবচেয়ে বড় সামরিক বাহিনী রয়েছে মিসরের। সাড়ে চার লাখ সেনা সদস্যের এই বাহিনীতে রয়েছেন বহু জাঁদরেল অফিসার। ছয় দশক ধরে তাঁরা তাঁদের মর্যাদা ও অগ্রাধিকারগুলো রক্ষা করে আসছেন। অর্থবিত্তের হিসাবেও সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের রয়েছে একটি আলাদা সামাজিক অবস্থান। এমনকি সরকারের ঠিকাদারি হোক কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য হোক- তাদের আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত। ফলে তাঁদের সেখানে 'ব্রাহ্মণ গোত্রীয়' গণ্য করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতি তাঁদের উপেক্ষা করতে পারে না।
ক্যালিফোর্নিয়ার মনটেরিতে অবস্থিত নেভাল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্কুলের অধ্যাপক এবং মিসরের সামরিক বাহিনী সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ রবার্ট স্প্রিংবর্গের মতে, এটি একটি শক্তিশালী ও সুসংহত গোষ্ঠী। তারা একভাবেই ভাবতে অভ্যস্ত এবং ব্রাদারহুডের পাশাপাশি দেশটিতে তারাই একমাত্র ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান।
লেখক : বেন হববার্ড, আইএইচটি থেকে সংক্ষেপিত, ভাষান্তর : ফরহাদ মাহমুদ
মিসরে যা ঘটেছে এটি কোনো আদর্শগত নয়, বরং রাজনৈতিক বিষয়। সেনাবাহিনী তার শ্রেষ্ঠত্বের দাবিকেই প্রতিষ্ঠা করেছে। কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ স্টিভেন এ কুকের মতে, বর্তমান পরিবর্তনে মিসরের সেনা জান্তাদের কোনো আদর্শিক অবস্থান নেই। তারা বিশ্বাস করে, রাজনৈতিক ক্ষমতার সিঁড়িতেও তাদের একটি স্থান রয়েছে। আর সে জন্য তারা যে কারো সঙ্গে আপস করতে পারে।
মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডের সংক্ষিপ্ত শাসনামলে জনরোষ এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে যে লাখ লাখ জনতা মুরসি সরকারের অপসারণের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে। সব শেষে তা সরকার সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষে রূপ নেয়। আবার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের জন্য সেনাবাহিনী এটিকেই মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নেয়। জাতীয় সংহতি রক্ষার প্রয়োজনে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। একজন তত্ত্বাবধায়ক নেতাকে স্থাপন করা হয়। সরকারবিরোধীরা সেনাবাহিনীর এই হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানায়।
আসলে মিসরের ক্ষমতায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি নতুন কোনো ঘটনা নয়। আড়াই বছরের মাথায় এটি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় হস্তক্ষেপ। আড়াই বছর আগে অনুরূপ গণ-অভ্যুত্থানের মুখে হোসনি মুবারককে ক্ষমতাচ্যুত করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল সেনাবাহিনী। হোসনি মুবারক নিজেও ছিলেন বিমানবাহিনীর একজন অধিনায়ক। প্রায় তিন দশক তিনি মিসরকে শাসন করেছেন। আর প্রায় ছয় দশক আগে বাদশাহ ফারুককে ক্ষমতাচ্যুত করে মিসরের শাসনক্ষমতা নিয়েছিলেন জামাল আবদুল নাসের। আর এই ছয় দশকে মিসরের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে উদ্ভূত হয়েছে সামরিক বাহিনী। গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসি সেই শ্রেষ্ঠত্বকে অস্বীকার করতে চেয়েছিলেন।
আরব জগতে সবচেয়ে বড় সামরিক বাহিনী রয়েছে মিসরের। সাড়ে চার লাখ সেনা সদস্যের এই বাহিনীতে রয়েছেন বহু জাঁদরেল অফিসার। ছয় দশক ধরে তাঁরা তাঁদের মর্যাদা ও অগ্রাধিকারগুলো রক্ষা করে আসছেন। অর্থবিত্তের হিসাবেও সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের রয়েছে একটি আলাদা সামাজিক অবস্থান। এমনকি সরকারের ঠিকাদারি হোক কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য হোক- তাদের আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত। ফলে তাঁদের সেখানে 'ব্রাহ্মণ গোত্রীয়' গণ্য করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতি তাঁদের উপেক্ষা করতে পারে না।
ক্যালিফোর্নিয়ার মনটেরিতে অবস্থিত নেভাল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্কুলের অধ্যাপক এবং মিসরের সামরিক বাহিনী সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ রবার্ট স্প্রিংবর্গের মতে, এটি একটি শক্তিশালী ও সুসংহত গোষ্ঠী। তারা একভাবেই ভাবতে অভ্যস্ত এবং ব্রাদারহুডের পাশাপাশি দেশটিতে তারাই একমাত্র ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান।
লেখক : বেন হববার্ড, আইএইচটি থেকে সংক্ষেপিত, ভাষান্তর : ফরহাদ মাহমুদ
No comments