যেসব কারণে মুরসির বিদায়
মাত্র দুই বছরের কিছু সময় আগে উত্তাল
হয়ে উঠেছিল মিসরের রাজধানী কায়রোর তাহরির স্কয়ার। আরব বসন্তের ঢেউয়ে ১৮
দিনের আন্দোলনেই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন দেশটির তিন দশকের শাসক হোসনি
মোবারক। আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে তাহরির স্কয়ার। এবার মাত্র চার দিনের
আন্দোলনেই ক্ষমতাচ্যুত দেশের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট
মোহাম্মদ মুরসি। তবে প্রভাবশালী সেনাবাহিনী এ ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে পক্ষ
নিয়ে বিষয়টিকে সহজ করে দিয়েছে। ফল হিসেবে ক্ষমতায় বসার মাত্র এক বছরের
মাথায় বিদায় নিতে হয়েছে মুরসিকে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভাষ্যকার ও
পর্যবেক্ষকেরা মুরসির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার নানা কারণ উল্লেখ করছেন। মোটা
দাগে বললে কারণগুলো হচ্ছে, ভঙ্গুর অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে ব্যর্থতা, বিদেশি
বিনিয়োগ ও পর্যটনশিল্পকে জাগিয়ে তুলতে না পারা এবং অভ্যন্তরীণ
স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতা। গত এক বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি-সংকট
ছিল নিয়মিত বিষয়। এসব ব্যর্থতার অভিযোগের জবাবে মুরসির সমর্থকেরা বলতে
পারে এক বছর খুব বেশি সময় নয়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বলছে, এই সময়ের
মধ্যে ভালো কিছু করার ইঙ্গিতও দিতে পারেননি মুরসি। স্থানীয় আল-হায়াত
টিভির জরিপে দেখা যায়, মিসরের ৭৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন মুরসি গত এক বছরে
জনগণের জন্য কোনো ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। ৬৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন,
মুরসির শাসনকালে তাঁদের জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত কমে গেছে। বিশ্লেষকদের
মতে, দেশ পরিচালনায় এসব ব্যর্থতার পাশাপাশি কৌশলেও ভুল ছিল মুরসির দল
ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির (এফজেপি)। দলটির মূল সংগঠন মুসলিম
ব্রাদারহুডের কাছাকাছি ভাবাদর্শেই মূলত পরিচালিত হচ্ছিল মিসর। সংবিধান
প্রণয়ন করতে গিয়ে মুরসি রাজনৈতিক বিরোধীদের কোনো কথাই শোনেননি। এ বিষয়টি
মুরসি ও তাঁর দলের ব্যাপারে রাজনৈতিক বিরোধীদের আস্থা কমিয়ে দেয়। মুরসি ও
তাঁর দল মূলত রাজনৈতিকভাবে নিঃসঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। তখন বিরোধীরা সরকারের
ব্যর্থতাগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। জনগণের সামনে ব্যর্থতাগুলো তুলে
ধরে আন্দোলনের ডাক দেয় এবং শেষ পর্যন্ত সফলও হয়। বিশ্লেষকদের মতে, এগুলো
ছাড়াও মুরসির ভুল পদক্ষেপ বা সীমাবদ্ধতাগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রেসিডেন্ট
হিসেবে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ডিক্রি জারি, মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য ও
সমর্থকদের বেশি করে সরকারে রাখা এবং এক বছরেও কোনো ক্ষেত্রেই জনগণের সামনে
তুলে ধরার মতো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে না পারা। কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে
করেন, মুরসির পতনের মূল কারণ হলো ক্ষমতা গ্রহণের পর মোবারকের সমর্থক ও আরব
বসন্তের শক্তিকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নেওয়া। এই বিষয়টি মুরসির জন্য
মিসরের সার্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছিল। বিবিসি, আল-জাজিরা ও
আল-আহরাম।
No comments