চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অনিয়মের পাহাড় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে by মোশতাক আহমেদ ও তাসনীম হাসান
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান
উপাচার্য মো. আনোয়ারুল আজিমের গত দুই বছরের মেয়াদে প্রায় ২০০ শিক্ষক নিয়োগ
পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে নিয়োগ পেয়েছেন অন্তত ৪০ জন।
এ
ছাড়া ছেলে, শ্যালিকা ও পূত্রবধূকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা পদে
নিয়োগ দিয়ে সমালোচিত হয়েছেন তিনি। পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে
শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করার মতো অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের হলুদ দল বিভক্ত হয়ে গেছে। গড়ে উঠেছে ‘বঙ্গবন্ধু আদর্শ বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে নতুন আরেকটি সংগঠন। একই আদর্শের শিক্ষকদের মধ্যে দুটি ধারা তৈরির জন্য উপাচার্যের ভূমিকাকে দায়ী করা হচ্ছে।
অনির্বাচিত ওই উপাচার্যের অনিয়মের ঘটনাগুলো তুলে ধরে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের বিক্ষুব্ধ অংশটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক গাজী সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শিগগিরই চিঠিটি আচার্যের কাছে পাঠাব। কারণ, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী চলছে না।’
মূলত উপাচার্যের কর্মকাণ্ড নিয়ে সৃষ্ট এই বিভক্তির পর সরকার-সমর্থক শিক্ষকেরা ডিন ও শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে পৃথক প্যানেল দেন। এই পরিস্থিতিতে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন দেওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন না আনোয়ারুল আজিম।
বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে নিয়োগ: ২০১১ সালের নভেম্বরে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে তিন প্রভাষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, নিয়োগ পান পাঁচজন। অতিরিক্ত নিয়োগ পাওয়া দুজন প্রার্থীর শিক্ষাজীবনে দ্বিতীয় শ্রেণী রয়েছে, কিন্তু আবেদন করা সাত প্রার্থীর সব কটিতে প্রথম শ্রেণী থাকলেও তাঁরা নিয়োগ পাননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮৯তম সিন্ডিকেট সভায় ইসলামের ইতিহাস বিভাগে বিজ্ঞাপিত সাতটি পদের বিপরীতে ১০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮২তম সিন্ডিকেট সভায় ২৭টি পদের বিপরীতে ৪৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সমাজতত্ত্ব বিভাগে একবার সাতটি পদের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নেওয়া হয় ১০ শিক্ষক। এভাবে সব মিলিয়ে বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে প্রায় ৪০ শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রয়োজনে একটি বিজ্ঞাপনের বিপরীতে জরুরি মনে হলে বিভাগের অনুরোধে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মানের সঙ্গে আপস করে শিক্ষক নিয়োগ হলে তা খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সঠিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় বিভিন্ন পর্ষদ দ্বারা, নিয়োগ হয় কমিটির মাধ্যমে। এখানে একজনের পক্ষে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।’
উপাচার্য আরও বলেন, এখানে শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন আছে। তাই অনেকটা উদ্দেশ্যমূলক ও বিদ্বেষপ্রসূতভাবে অভিযোগ করা হয়। তিনি আরও বলেন, হয়তো অনেকে উপাচার্য হতে চেয়েছেন, পারেননি, তাঁদের একধরনের অভিযোগ আছে। আবার ২০ জন প্রার্থীর মধ্যে হয়তো যোগ্য দুজনকে নেওয়া হলো, বাকিরা নানা ধরনের অভিযোগ করেন। এর বাইরে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকেরা সরকারবিরোধী অবস্থান থেকে কথা বলেন।
নিয়োগ পেয়েছেন উপাচার্যের ছেলে, শ্যালিকা ও পুত্রবধূ: আগে থেকে প্রক্রিয়াধীন থাকলেও উপাচার্যের আমলে ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন, রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (আইইআরটি) নামে একটি ইনস্টিটিউট খোলা হয়। প্রথমে উপাচার্যের ছেলে ইফতেখার আরিফকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অস্থায়ী (অ্যাডহক) ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে ওই কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ইনস্টিটিউটের আওতায় আনা হয়। এর মাধ্যমে তাঁর ছেলেসহ কলেজের ১৮ জন শিক্ষক ওই ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হন।
ছেলে ছাড়াও উপাচার্যের আমলে শাখা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তাঁর শ্যালিকা ইশরাত শামীম। রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেয়েছেন উপাচার্যের পুত্রবধূও।
ছেলেসহ অন্য আত্মীয়দের নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, যদি তাঁরা (ছেলেসহ আত্মীয়স্বজন) বাংলাদেশের নাগরিক হন এবং যোগ্যতাসম্পন্ন হন তাহলে তো তাঁরা কোনো অপরাধ করেননি।
শর্ত শিথিল করে শিক্ষক নিয়োগ: বর্তমান উপাচার্যের আমলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেকের স্নাতক সম্মান বা স্নাতকোত্তরে দ্বিতীয় শ্রেণী রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শ্রেণী বেমানান বলে বিবেচিত। ২০১১ সালের নভেম্বরে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত শিথিল করা হয়। শিক্ষাজীবনের সব পর্যায়ে জিপিএ বা সিজিপিএ নির্ধারণ করা হয় ৩। শর্ত শিথিল না করতে একাডেমিক কমিটি ও ডিনস কমিটির সুপারিশও উপেক্ষা করা হয়।
পরবর্তী সময়ে শিক্ষক আন্দোলনের মুখে শর্ত শিথিলের বিষয়টি প্রত্যাহার করা হলেও তত দিনে নিয়োগ পান অন্তত ৪৩ জন শিক্ষক। নৃবিজ্ঞান, বাংলা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, সমাজতত্ত্বসহ কয়েকটি বিভাগে তুলনামূলক কম যোগ্য এসব শিক্ষক নিয়োগ পান।
শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করার সুযোগে জিপিএ ৩ দশমিক শূন্য ৮ পেয়েও নৃবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হন মোক্তার আহমেদ চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে নিয়োগপ্রাপ্ত বাকি ছয়জনের ফলও তেমন ভালো ছিল না। এর প্রতিবাদে আবেদনকারী প্রার্থীদের তিনজন ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনটি পৃথক রিট আবেদন করেন। প্রার্থীরা হলেন শিক্ষার সব স্তরে প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্ত সামিনা আফরিন। অপর দুজন হলেন মাহফুজা আক্তার ও আরিফউদ্দিন খান।
জানতে চাইলে আরিফউদ্দিন বলেন, ‘রিটের শুনানি এখনো হয়নি। আদালতের রায় যা হয়, তা-ই মেনে নেব।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রভাষক পদে মতিউল হক ও মোহাম্মদ নিয়াজ মোরশেদের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক আছে। অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা আবেদন না করেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনের আগে তাঁদের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, দুটি বিজ্ঞাপনের মারপ্যাঁচের সুযোগ নিয়ে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
অধ্যাদেশ লঙ্ঘিত: দুই বছর পার হয়ে গেলেও ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন না দিয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন উপাচার্য। সিনেটে ৩৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি থাকার কথা, বর্তমানে ১৮টি পদই শূন্য। সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনেরও উদ্যোগ নেই। রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধির ২৫টি পদ ১৯৮৬ সালের পর থেকে ফাঁকা। সিন্ডিকেটের চারটি শিক্ষক প্রতিনিধি পদ নয় মাস ধরে খালি। এ ছাড়া রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, হিসাব নিয়ামক, গ্রন্থাগারিক পরিচালক ও শারীরিক শিক্ষা বিভাগের প্রধানের পদে ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কর্মরত।
জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আ ন ম মুনির আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে। অযোগ্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বন্দ্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের হলুদ দল বিভক্ত হয়ে গেছে। গড়ে উঠেছে ‘বঙ্গবন্ধু আদর্শ বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামে নতুন আরেকটি সংগঠন। একই আদর্শের শিক্ষকদের মধ্যে দুটি ধারা তৈরির জন্য উপাচার্যের ভূমিকাকে দায়ী করা হচ্ছে।
অনির্বাচিত ওই উপাচার্যের অনিয়মের ঘটনাগুলো তুলে ধরে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার-সমর্থক শিক্ষকদের বিক্ষুব্ধ অংশটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক গাজী সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা শিগগিরই চিঠিটি আচার্যের কাছে পাঠাব। কারণ, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী চলছে না।’
মূলত উপাচার্যের কর্মকাণ্ড নিয়ে সৃষ্ট এই বিভক্তির পর সরকার-সমর্থক শিক্ষকেরা ডিন ও শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে পৃথক প্যানেল দেন। এই পরিস্থিতিতে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন দেওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন না আনোয়ারুল আজিম।
বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে নিয়োগ: ২০১১ সালের নভেম্বরে ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে তিন প্রভাষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, নিয়োগ পান পাঁচজন। অতিরিক্ত নিয়োগ পাওয়া দুজন প্রার্থীর শিক্ষাজীবনে দ্বিতীয় শ্রেণী রয়েছে, কিন্তু আবেদন করা সাত প্রার্থীর সব কটিতে প্রথম শ্রেণী থাকলেও তাঁরা নিয়োগ পাননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮৯তম সিন্ডিকেট সভায় ইসলামের ইতিহাস বিভাগে বিজ্ঞাপিত সাতটি পদের বিপরীতে ১০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮২তম সিন্ডিকেট সভায় ২৭টি পদের বিপরীতে ৪৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সমাজতত্ত্ব বিভাগে একবার সাতটি পদের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নেওয়া হয় ১০ শিক্ষক। এভাবে সব মিলিয়ে বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে প্রায় ৪০ শিক্ষক নিয়োগ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রয়োজনে একটি বিজ্ঞাপনের বিপরীতে জরুরি মনে হলে বিভাগের অনুরোধে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মানের সঙ্গে আপস করে শিক্ষক নিয়োগ হলে তা খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ সঠিক নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় বিভিন্ন পর্ষদ দ্বারা, নিয়োগ হয় কমিটির মাধ্যমে। এখানে একজনের পক্ষে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।’
উপাচার্য আরও বলেন, এখানে শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন আছে। তাই অনেকটা উদ্দেশ্যমূলক ও বিদ্বেষপ্রসূতভাবে অভিযোগ করা হয়। তিনি আরও বলেন, হয়তো অনেকে উপাচার্য হতে চেয়েছেন, পারেননি, তাঁদের একধরনের অভিযোগ আছে। আবার ২০ জন প্রার্থীর মধ্যে হয়তো যোগ্য দুজনকে নেওয়া হলো, বাকিরা নানা ধরনের অভিযোগ করেন। এর বাইরে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকেরা সরকারবিরোধী অবস্থান থেকে কথা বলেন।
নিয়োগ পেয়েছেন উপাচার্যের ছেলে, শ্যালিকা ও পুত্রবধূ: আগে থেকে প্রক্রিয়াধীন থাকলেও উপাচার্যের আমলে ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন, রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (আইইআরটি) নামে একটি ইনস্টিটিউট খোলা হয়। প্রথমে উপাচার্যের ছেলে ইফতেখার আরিফকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অস্থায়ী (অ্যাডহক) ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে ওই কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ইনস্টিটিউটের আওতায় আনা হয়। এর মাধ্যমে তাঁর ছেলেসহ কলেজের ১৮ জন শিক্ষক ওই ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হন।
ছেলে ছাড়াও উপাচার্যের আমলে শাখা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তাঁর শ্যালিকা ইশরাত শামীম। রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেয়েছেন উপাচার্যের পুত্রবধূও।
ছেলেসহ অন্য আত্মীয়দের নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, যদি তাঁরা (ছেলেসহ আত্মীয়স্বজন) বাংলাদেশের নাগরিক হন এবং যোগ্যতাসম্পন্ন হন তাহলে তো তাঁরা কোনো অপরাধ করেননি।
শর্ত শিথিল করে শিক্ষক নিয়োগ: বর্তমান উপাচার্যের আমলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেকের স্নাতক সম্মান বা স্নাতকোত্তরে দ্বিতীয় শ্রেণী রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শ্রেণী বেমানান বলে বিবেচিত। ২০১১ সালের নভেম্বরে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত শিথিল করা হয়। শিক্ষাজীবনের সব পর্যায়ে জিপিএ বা সিজিপিএ নির্ধারণ করা হয় ৩। শর্ত শিথিল না করতে একাডেমিক কমিটি ও ডিনস কমিটির সুপারিশও উপেক্ষা করা হয়।
পরবর্তী সময়ে শিক্ষক আন্দোলনের মুখে শর্ত শিথিলের বিষয়টি প্রত্যাহার করা হলেও তত দিনে নিয়োগ পান অন্তত ৪৩ জন শিক্ষক। নৃবিজ্ঞান, বাংলা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, সমাজতত্ত্বসহ কয়েকটি বিভাগে তুলনামূলক কম যোগ্য এসব শিক্ষক নিয়োগ পান।
শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করার সুযোগে জিপিএ ৩ দশমিক শূন্য ৮ পেয়েও নৃবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হন মোক্তার আহমেদ চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে নিয়োগপ্রাপ্ত বাকি ছয়জনের ফলও তেমন ভালো ছিল না। এর প্রতিবাদে আবেদনকারী প্রার্থীদের তিনজন ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে তিনটি পৃথক রিট আবেদন করেন। প্রার্থীরা হলেন শিক্ষার সব স্তরে প্রথম শ্রেণীপ্রাপ্ত সামিনা আফরিন। অপর দুজন হলেন মাহফুজা আক্তার ও আরিফউদ্দিন খান।
জানতে চাইলে আরিফউদ্দিন বলেন, ‘রিটের শুনানি এখনো হয়নি। আদালতের রায় যা হয়, তা-ই মেনে নেব।’
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রভাষক পদে মতিউল হক ও মোহাম্মদ নিয়াজ মোরশেদের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক আছে। অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা আবেদন না করেও শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনের আগে তাঁদের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, দুটি বিজ্ঞাপনের মারপ্যাঁচের সুযোগ নিয়ে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
অধ্যাদেশ লঙ্ঘিত: দুই বছর পার হয়ে গেলেও ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন না দিয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন উপাচার্য। সিনেটে ৩৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি থাকার কথা, বর্তমানে ১৮টি পদই শূন্য। সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনেরও উদ্যোগ নেই। রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধির ২৫টি পদ ১৯৮৬ সালের পর থেকে ফাঁকা। সিন্ডিকেটের চারটি শিক্ষক প্রতিনিধি পদ নয় মাস ধরে খালি। এ ছাড়া রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, হিসাব নিয়ামক, গ্রন্থাগারিক পরিচালক ও শারীরিক শিক্ষা বিভাগের প্রধানের পদে ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কর্মরত।
জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আ ন ম মুনির আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে। অযোগ্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
No comments