স্থিতি অনেক দূর
হুবহু যেন আড়াই বছর আগের ছবিটিই ফিরে এলো
তাহরির স্কয়ারে! ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হোসনি মুবারকের ক্ষমতাচ্যুতিকে
মানুষ যেভাবে উদ্যাপন করেছিল, গত বুধবার মোহাম্মদ মুরসির অপসারণের পরও
জনতা সেভাবেই মেতে উঠল আনন্দ-উল্লাসে।
টানা ১৮ দিনের
গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তিন দশকের শাসক মুবারক।
মুবারকের নামমাত্র গণতান্ত্রিক শাসনামলের পর গত বছর অনুষ্ঠিত প্রথম অবাধ ও
সুষ্ঠু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫১.৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতাসীন হন মুরসি। বছর
না ঘুরতেই চার দিনের গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে হলো তাঁকেও।
অনির্বাচিত ও নির্বাচিত- এ দুই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধেই শেষ পর্যন্ত দাঁড়ায়
দেশের সশস্ত্র বাহিনী। এখন প্রশ্ন হলো, মুবারকবিরোধী বিপ্লবের যে চেতনার
সঙ্গে 'বিশ্বাসঘাতকতা' করার দায়ে বিদায় নিতে হলো মুরসিকে- সেই বিপ্লবের ফসল
কি এবার জনতার ঘরে উঠবে, না কি আরো গভীর বিভাজন ও সহিংসতার দিকে গড়াবে
দেশ?
মুবারক-পরবর্তী সামরিক শাসনের সময়ও রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছিল মিসরবাসী। নির্বাচনের জন্য মানুষকে অপেক্ষা করতে হয় পুরো এক বছর। এবারও সেনাবাহিনীর 'জিম্মায়' দেশ। যদিও সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি তাঁর পূর্বসূরি ফিল্ড মার্শাল হোসেন তানতাউয়ির মতো ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটানোর ব্যাপারে সতর্ক বলেই দৃশ্যমান হচ্ছে। মুবারকের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তানতাউয়ি সাময়িকভাবে নিজেই ক্ষমতায় বসেছিলেন, আর মুরসির প্রতিরক্ষামন্ত্রী সিসি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বের ভার তুলে দিলেন সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালতের প্রধান আদলি মনসুরের হাতে। সিসির ভাষ্য, প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত মনসুরের নেতৃত্বাধীন টেকনোক্রেটিক সরকার তাঁকে সহায়তা করবে।
টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ক্ষমতার পালাবদলের বিষয়ে দেওয়া বিবৃতির সময় সিসির পাশে উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা। এর প্রতীকী অর্থ বেসামরিক এ নেতৃত্ব সিসির পক্ষে। সাম্প্রতিক সহিংসতার পর সিসির উদ্যোগে তাঁদের সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারটি স্বাভাবিকভাবেই বিরাট গুরুত্ব বহন করে। উদারপন্থী বিরোধী ব্লকের প্রধান মোহাম্মদ এলবারাদিও ছিলেন টেলিভিশনের পর্দায়। জাতির উদ্দেশে তিনি বললেন- জনতার দাবি পূরণ হয়েছে এবং ২০১১ সালের বিপ্লব ফের শুরু হয়েছে।
তবে তাহরির স্কয়ারে বিরোধীদের মতো বড় পরিসরে জমায়েত ঘটাতে না পারলেও মুরসি সমর্থকরাও কিন্তু রাজপথে সক্রিয়। তাদের নেতার হঠাৎ বিদায়ে তারা মর্মাহত, নেতার বিদায় তরান্বিত করতে পেছনে থেকে যারা কলকাঠি নেড়েছে সেই কুশীলবদের প্রতি ক্রুদ্ধ। তারা মুরসির ক্ষমতা থেকে বিদায়ের ঘটনাকে পরিষ্কারভাবে সেনা অভ্যুত্থান মনে করে। এ ঘটনা গণতন্ত্রকে পদদলিত করেছে বলেও তাদের পরিষ্কার মত। আর মুরসি যে রাজনৈতিক ঘরানায় যুক্ত, সেই ইসলামপন্থী মুসলিম ব্রাদারহুড দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্লক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। মুবারকের অপসারণের পর বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর দেশব্যাপী জনসংযোগ করে পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সক্ষমতা তারা দেখাতে পেরেছে। সুতরাং ইসলামপন্থীরা সহজে সব ছেড়ে দেবে- তা ভাবা ঠিক হবে না। ইতিমধ্যে সালাফিপন্থী ও জিহাদি শক্তি অঙ্গীকার করেছে, মুরসিকে জোর করে সরিয়ে দেওয়ার জবাব দেবে তারা।
অন্যদিকে বিশ্লেষকদের একটি অংশ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে সামরিক হস্তক্ষেপের পূর্বনজির টেনে মিসরের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। আলজেরিয়ায় ১৯৯২ সালের নির্বাচনের ফল সেনাবাহিনী বাতিল ঘোষণা করায় নৃশংস গৃহযুদ্ধ বেঁধে গিয়েছিল। পরিণতিতে প্রাণ হারায় দেড় লাখেরও বেশি মানুষ। ওই নির্বাচনে ইসলামপন্থী দল জিতেছিল। তুরস্কে সেনাবাহিনী অতীতে চার দফা নির্বাচিত সরকারকে বিতাড়িত করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতে হিতে বিপরীতই হয়।
দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান তারা- মিসরের সেনাবাহিনী গত কয়েক দিন এ বার্তাই দিয়েছে। উদারনৈতিক মূল্যবোধের অভিভাবক হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছে তারা। এখন এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- রক্তক্ষয় ছাড়া কিভাবে সেনাবাহিনী দেশে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনবে। ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে হবে তাদের 'নিয়ন্ত্রিত' অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। চলমান অস্থিতিশীলতা ও অব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ ও পর্যটনে ধস নেমেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট চরমে। এসব মেরামতে সফল না হওয়ার অর্থ জনমনে ফের অসন্তুষ্টি দানা বাঁধা, যার পরিণতিতে ফের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের চক্রে পড়বে মিসর। সূত্র : বিবিসি।
মুবারক-পরবর্তী সামরিক শাসনের সময়ও রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছিল মিসরবাসী। নির্বাচনের জন্য মানুষকে অপেক্ষা করতে হয় পুরো এক বছর। এবারও সেনাবাহিনীর 'জিম্মায়' দেশ। যদিও সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি তাঁর পূর্বসূরি ফিল্ড মার্শাল হোসেন তানতাউয়ির মতো ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটানোর ব্যাপারে সতর্ক বলেই দৃশ্যমান হচ্ছে। মুবারকের প্রতিরক্ষামন্ত্রী তানতাউয়ি সাময়িকভাবে নিজেই ক্ষমতায় বসেছিলেন, আর মুরসির প্রতিরক্ষামন্ত্রী সিসি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বের ভার তুলে দিলেন সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালতের প্রধান আদলি মনসুরের হাতে। সিসির ভাষ্য, প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত মনসুরের নেতৃত্বাধীন টেকনোক্রেটিক সরকার তাঁকে সহায়তা করবে।
টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত ক্ষমতার পালাবদলের বিষয়ে দেওয়া বিবৃতির সময় সিসির পাশে উপস্থিত ছিলেন কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা। এর প্রতীকী অর্থ বেসামরিক এ নেতৃত্ব সিসির পক্ষে। সাম্প্রতিক সহিংসতার পর সিসির উদ্যোগে তাঁদের সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারটি স্বাভাবিকভাবেই বিরাট গুরুত্ব বহন করে। উদারপন্থী বিরোধী ব্লকের প্রধান মোহাম্মদ এলবারাদিও ছিলেন টেলিভিশনের পর্দায়। জাতির উদ্দেশে তিনি বললেন- জনতার দাবি পূরণ হয়েছে এবং ২০১১ সালের বিপ্লব ফের শুরু হয়েছে।
তবে তাহরির স্কয়ারে বিরোধীদের মতো বড় পরিসরে জমায়েত ঘটাতে না পারলেও মুরসি সমর্থকরাও কিন্তু রাজপথে সক্রিয়। তাদের নেতার হঠাৎ বিদায়ে তারা মর্মাহত, নেতার বিদায় তরান্বিত করতে পেছনে থেকে যারা কলকাঠি নেড়েছে সেই কুশীলবদের প্রতি ক্রুদ্ধ। তারা মুরসির ক্ষমতা থেকে বিদায়ের ঘটনাকে পরিষ্কারভাবে সেনা অভ্যুত্থান মনে করে। এ ঘটনা গণতন্ত্রকে পদদলিত করেছে বলেও তাদের পরিষ্কার মত। আর মুরসি যে রাজনৈতিক ঘরানায় যুক্ত, সেই ইসলামপন্থী মুসলিম ব্রাদারহুড দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্লক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। মুবারকের অপসারণের পর বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর দেশব্যাপী জনসংযোগ করে পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সক্ষমতা তারা দেখাতে পেরেছে। সুতরাং ইসলামপন্থীরা সহজে সব ছেড়ে দেবে- তা ভাবা ঠিক হবে না। ইতিমধ্যে সালাফিপন্থী ও জিহাদি শক্তি অঙ্গীকার করেছে, মুরসিকে জোর করে সরিয়ে দেওয়ার জবাব দেবে তারা।
অন্যদিকে বিশ্লেষকদের একটি অংশ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে সামরিক হস্তক্ষেপের পূর্বনজির টেনে মিসরের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। আলজেরিয়ায় ১৯৯২ সালের নির্বাচনের ফল সেনাবাহিনী বাতিল ঘোষণা করায় নৃশংস গৃহযুদ্ধ বেঁধে গিয়েছিল। পরিণতিতে প্রাণ হারায় দেড় লাখেরও বেশি মানুষ। ওই নির্বাচনে ইসলামপন্থী দল জিতেছিল। তুরস্কে সেনাবাহিনী অতীতে চার দফা নির্বাচিত সরকারকে বিতাড়িত করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতে হিতে বিপরীতই হয়।
দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান তারা- মিসরের সেনাবাহিনী গত কয়েক দিন এ বার্তাই দিয়েছে। উদারনৈতিক মূল্যবোধের অভিভাবক হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছে তারা। এখন এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- রক্তক্ষয় ছাড়া কিভাবে সেনাবাহিনী দেশে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনবে। ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে হবে তাদের 'নিয়ন্ত্রিত' অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে। চলমান অস্থিতিশীলতা ও অব্যবস্থাপনায় বিনিয়োগ ও পর্যটনে ধস নেমেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট চরমে। এসব মেরামতে সফল না হওয়ার অর্থ জনমনে ফের অসন্তুষ্টি দানা বাঁধা, যার পরিণতিতে ফের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের চক্রে পড়বে মিসর। সূত্র : বিবিসি।
No comments