মাংসখেকো গাছ by আবুল বাসার
খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে একমাত্র মানুষই
একটু খুঁতখুঁতে। অধিকাংশ খাবার তেল, লবণ, মসলা, পানিসহ হাবিজাবি নানান
জিনিস দিয়ে রান্না না করলে মানুষ খেতেই পারে না! তবে বন্য জীবজন্তুদের অত
ঝামেলা নেই।
খাবাররূপী জলজ্যান্ত কোনো প্রাণীকে শিকার করে
তার পরই সেই কাঁচা খাবারই গবাস গবাস করে খাওয়া। ব্যস! কাজ শেষ। তবে
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, মানুষ ছাড়াও গাছপালারাও রান্না করে খাবার খায়।
পৃথিবীতে একমাত্র গাছপালাই নিজের খাবার নিজেই তৈরি করে। এদের খাবার তৈরির
সেই বিশেষ পদ্ধতির নাম সালোক সংশ্লেষণ। এ পদ্ধতিতে মাটি থেকে পানি, খনিজ,
বায়ু থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে গাছ। এ দুইয়ের সঙ্গে নিজের পাতার
ক্লোরোফিল মিশিয়ে সূর্যের আলোতে রান্না করে গ্লুকোজ তৈরি করে গাছেরা।
এভাবেই খাবার তৈরির কারণে বিশ্বের সব প্রাণী বেঁচে আছে। তাই খাবারের জন্য
সব প্রাণীই কোনো না-কোনোভাবে গাছেদের কাছে ঋণী।
তবে কিছু গাছ আছে, যারা আবার এত সব ঝামেলা একেবারেই পছন্দ করে না। তার চেয়ে একটু আমিষ মানে মাংস খেতেই ভালো লাগে ওদের। এদেরই বলে মাংসখেকো গাছ। হলিউডি চলচ্চিত্রে তোমরা নিশ্চয় মানুষখেকো গাছ দেখেছ। সিনেমার কারণে অনেকের ধারণা মানুষখেকো গাছ আছে। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের গাছ দেখা না গেলেও পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকা কিছু গাছ ছোট খুঁজে পাওয়া গেছে। এরাই মাংসখেকো গাছ (মানুষখেকো নয়)। এর মধ্যে কলসগাছ, ফ্লাইপেপার ট্র্যাপ, স্ন্যাপ ট্র্যাপ, ব্লাডার ট্র্যাপ, লবস্টার-পট ট্র্যাপ, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ উল্লেখযোগ্য। দক্ষিণ আমেরিকায় মাংসখেকো উদ্ভিদ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া এশিয়ার কিছু দেশেও এর দেখা মেলে। বাংলাদেশের সিলেটের পাহাড়ি এলাকাতেও সূর্য শিশির, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ নামের মাংসখেকো গাছ আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত যেখানে মাটিতে পুষ্টি উপাদান কম (বিশেষ করে নাইট্রোজেন) এবং মাটি ভেজা সেখানে মাংসখেকো গাছ বেশি জন্মে। কারণ, মাটি থেকে পুষ্টি না পাওয়ার অভাব এরা পোকামাকড় খেয়ে মেটায়।
এই উদ্ভিদগুলো পোকামাকড়কে ধরার জন্য নানা ধরনের ফাঁদ পাতে। বোকা পোকামাকড়ও সেই ফাঁদে সহজেই ধরা পড়ে। কলস উদ্ভিদের কথাই বলা যাক। এ গাছটি দেখতে অনেকটা কলসের মতো বলেই এর নাম কলস উদ্ভিদ। এই কলসের ওপরের দিকে ফুলের মতো দেখতে লালরঙা। এই অংশে মধুর মতো রস নিংসৃত হয়, যা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে। মধুলোভী পোকামাকড় এই কলসের ওপর বসে মধু সংগ্রহ করতে গেলেই ঘটে বিপত্তি। কারণ, পিচ্ছিল কলসের ওপর বসার সঙ্গে সঙ্গেই সে পা পিছলে কলসের মধ্যে পড়ে যায়। এরপর কলসের ভেতরের একধরনের রস এসে পোকাটিকে আটকে ফেলে। তারপর কলস উদ্ভিদ আরও কিছু রসের সাহায্যে পোকাটাকে হজম করে ফেলে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ও নর্থ ক্যারোলিনার ভেনাস ফ্লাইট্রাপের পোকা ধরার পদ্ধতি আরও মজার। প্রায় এক ফুট লম্বা ভেনাস ফ্লাইট্রাপের পাতা দেখতে অনেকটা মুখের চোয়ালের মতো। এ পাতা তিন থেকে ছয় ইঞ্চির মতো লম্বা হয় এবং এতে ছোট ছোট অনেকগুলো লোম থাকে। পোকামাকড় কখনো এই পাতার ওপর বসলে তা নিমেষেই বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, লজ্জাবতীর লতার মতোই এ পাতাও খুব সংবেদনশীল। তাই পোকামাকড় এদের গায়ে বসলেই আধা সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে সে তার পাতা বন্ধ করে ফেলতে পারে। ঠিক এই সময় আবার পাতার লোমগুলোও পোকাকে বাইরে বের হতে বাধা দেয়। ফলে পাতার মাঝখানে পোকা আটকা পড়ে। এরপর আর কী, পাতা থেকে বিশেষ এক রস বের হয়ে পোকাকে হজম করতে শুরু করে। এভাবে একটা পোকা হজম করতে এদের ১০ দিন সময় লাগে। একটি পোকা হজম শেষ হলে ওই পাতা আবার খুলে যায় নতুন পোকা ধরার আশায়। এভাবে একটি পাতা তিন থেকে চারটি পোকা ধরার পর তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। নতুন পাতা শুরু করে শিকারের কাজ।
কিন্তু এই গাছেরা অন্যদের মতো জল-হাওয়া না খেয়ে পোকামাকড় খায় কেন? প্রথমত বলতে হয়, এদের স্বভাবটাই এ রকম তাই। দ্বিতীয়ত কলসগাছ, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপসহ অন্যান্য মাংসখেকো গাছদের বাঁচার জন্য প্রচুর নাইট্রোজেন প্রয়োজন। কিন্তু এদের বসবাস সাধারণত জলাভূমিতে। জলাভূমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ এমনিতেই খুব কম। তাই এ উদ্ভিদকে নাইট্রোজেন জোগাড় করতে হয় পোকামাকড় খেয়ে। কিছু বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, পরিবর্তিত পরিবেশে টিকে থাকতে গিয়ে বিবর্তনের মাধ্যমে এসব গাছ মাংসভূক হয়েছে। কিন্তু অনেকের এ নিয়ে দ্বিমতও আছে। সে যাই হোক, অনেকেই হয়তো মাংসভূক এসব গাছের কথা শুনে ভয় পাচ্ছ। কিন্তু এখন তো অনেকেই শখ করে বাড়িতে টবে চাষ করছে মাংসখেকো বা মাংসভূক গাছ। তাই নো টেনশন।
তবে কিছু গাছ আছে, যারা আবার এত সব ঝামেলা একেবারেই পছন্দ করে না। তার চেয়ে একটু আমিষ মানে মাংস খেতেই ভালো লাগে ওদের। এদেরই বলে মাংসখেকো গাছ। হলিউডি চলচ্চিত্রে তোমরা নিশ্চয় মানুষখেকো গাছ দেখেছ। সিনেমার কারণে অনেকের ধারণা মানুষখেকো গাছ আছে। কিন্তু বাস্তবে এ ধরনের গাছ দেখা না গেলেও পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকা কিছু গাছ ছোট খুঁজে পাওয়া গেছে। এরাই মাংসখেকো গাছ (মানুষখেকো নয়)। এর মধ্যে কলসগাছ, ফ্লাইপেপার ট্র্যাপ, স্ন্যাপ ট্র্যাপ, ব্লাডার ট্র্যাপ, লবস্টার-পট ট্র্যাপ, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ উল্লেখযোগ্য। দক্ষিণ আমেরিকায় মাংসখেকো উদ্ভিদ সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া এশিয়ার কিছু দেশেও এর দেখা মেলে। বাংলাদেশের সিলেটের পাহাড়ি এলাকাতেও সূর্য শিশির, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপ নামের মাংসখেকো গাছ আছে। গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত যেখানে মাটিতে পুষ্টি উপাদান কম (বিশেষ করে নাইট্রোজেন) এবং মাটি ভেজা সেখানে মাংসখেকো গাছ বেশি জন্মে। কারণ, মাটি থেকে পুষ্টি না পাওয়ার অভাব এরা পোকামাকড় খেয়ে মেটায়।
এই উদ্ভিদগুলো পোকামাকড়কে ধরার জন্য নানা ধরনের ফাঁদ পাতে। বোকা পোকামাকড়ও সেই ফাঁদে সহজেই ধরা পড়ে। কলস উদ্ভিদের কথাই বলা যাক। এ গাছটি দেখতে অনেকটা কলসের মতো বলেই এর নাম কলস উদ্ভিদ। এই কলসের ওপরের দিকে ফুলের মতো দেখতে লালরঙা। এই অংশে মধুর মতো রস নিংসৃত হয়, যা পোকামাকড়কে আকৃষ্ট করে। মধুলোভী পোকামাকড় এই কলসের ওপর বসে মধু সংগ্রহ করতে গেলেই ঘটে বিপত্তি। কারণ, পিচ্ছিল কলসের ওপর বসার সঙ্গে সঙ্গেই সে পা পিছলে কলসের মধ্যে পড়ে যায়। এরপর কলসের ভেতরের একধরনের রস এসে পোকাটিকে আটকে ফেলে। তারপর কলস উদ্ভিদ আরও কিছু রসের সাহায্যে পোকাটাকে হজম করে ফেলে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ও নর্থ ক্যারোলিনার ভেনাস ফ্লাইট্রাপের পোকা ধরার পদ্ধতি আরও মজার। প্রায় এক ফুট লম্বা ভেনাস ফ্লাইট্রাপের পাতা দেখতে অনেকটা মুখের চোয়ালের মতো। এ পাতা তিন থেকে ছয় ইঞ্চির মতো লম্বা হয় এবং এতে ছোট ছোট অনেকগুলো লোম থাকে। পোকামাকড় কখনো এই পাতার ওপর বসলে তা নিমেষেই বন্ধ হয়ে যায়। কারণ, লজ্জাবতীর লতার মতোই এ পাতাও খুব সংবেদনশীল। তাই পোকামাকড় এদের গায়ে বসলেই আধা সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে সে তার পাতা বন্ধ করে ফেলতে পারে। ঠিক এই সময় আবার পাতার লোমগুলোও পোকাকে বাইরে বের হতে বাধা দেয়। ফলে পাতার মাঝখানে পোকা আটকা পড়ে। এরপর আর কী, পাতা থেকে বিশেষ এক রস বের হয়ে পোকাকে হজম করতে শুরু করে। এভাবে একটা পোকা হজম করতে এদের ১০ দিন সময় লাগে। একটি পোকা হজম শেষ হলে ওই পাতা আবার খুলে যায় নতুন পোকা ধরার আশায়। এভাবে একটি পাতা তিন থেকে চারটি পোকা ধরার পর তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। নতুন পাতা শুরু করে শিকারের কাজ।
কিন্তু এই গাছেরা অন্যদের মতো জল-হাওয়া না খেয়ে পোকামাকড় খায় কেন? প্রথমত বলতে হয়, এদের স্বভাবটাই এ রকম তাই। দ্বিতীয়ত কলসগাছ, ভেনাস ফ্লাইট্র্যাপসহ অন্যান্য মাংসখেকো গাছদের বাঁচার জন্য প্রচুর নাইট্রোজেন প্রয়োজন। কিন্তু এদের বসবাস সাধারণত জলাভূমিতে। জলাভূমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ এমনিতেই খুব কম। তাই এ উদ্ভিদকে নাইট্রোজেন জোগাড় করতে হয় পোকামাকড় খেয়ে। কিছু বিজ্ঞানীর বিশ্বাস, পরিবর্তিত পরিবেশে টিকে থাকতে গিয়ে বিবর্তনের মাধ্যমে এসব গাছ মাংসভূক হয়েছে। কিন্তু অনেকের এ নিয়ে দ্বিমতও আছে। সে যাই হোক, অনেকেই হয়তো মাংসভূক এসব গাছের কথা শুনে ভয় পাচ্ছ। কিন্তু এখন তো অনেকেই শখ করে বাড়িতে টবে চাষ করছে মাংসখেকো বা মাংসভূক গাছ। তাই নো টেনশন।
No comments