শিবির কর্মীর মৃত্যুর খবরে শেষ বিকেলে ফের হরতালের উত্তেজনা
শেষ বিকেলে জামায়াতের হরতালে ফের উত্তাপ ছড়ালো কালসির ঘটনা। রাজধানীর মিরপুরের ওই এলাকায় শিবির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন শিবির কর্মী আহত হয় বলে খবর আসে। ওই সংঘর্ষে গুরুতর আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করছে প্রত্যক্ষদর্শীরা।
পুলিশ বা অন্য কোন সূত্র এ মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করতে না পারলেও নগর জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।বিকেলের ওই সংঘর্ষে শিবির কর্মীরা অর্ধশতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে।
সেখান থেকে আহত ৭ জন শিবির কর্মীকে আটক করে প্রথমে পল্লবী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
তবে এ ঘটনার আগে বেলা ১২টার পর থেকে হরতালের উত্তেজনা অনেকটাই থিতিয়ে আসছে শুরু করে। দেশব্যাপী বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে ভোরে শুরু হওয়া হরতাল দুপুর গড়ানোর আগেই যেন উত্তাপ হারাতে শুরু করে।
কমে যায় হরতাল সমর্থকদের চোরাগোপ্তা হামলা, ঝটিকা মিছিল, জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর। দিনভর রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েও গা ঢাকা দেয় জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা। বিপরীতে পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দাপট বাড়তে থাকে হরতালের মাঠে।
শুরু হয় হরতাল বিরোধী মিছিল। রাজপথে শোনা যায় ‘মুজিবের বাংলায়, রাজাকারের ঠাই নেই’, ‘যারা দেয় হরতাল, তাদের মাথায় ঘোল ঢাল’, ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার, এ মুহূর্তে দেশ ছাড়’ ইত্যাদি শ্লোগান।
এমনকি জামায়াতের আখড়া হিসেবে পরিচিত মগবাজারে জামায়াত-শিবির পরিচালিত এক হাসপাতালেও ভাঙচুর চালায় যুবলীগ ক্যাডাররা।
সুপ্রিম কোর্টেও হরতাল বিরোধী মিছিল করেছে সরকার সমর্থক সংগঠন সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের একাংশ।
যদিও হরতালের সমর্থনে জামায়াত সমর্থক আইনজীবীদের কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি।
তবে দুপুরের পর কালসির ওই সঘর্ষ পুরো হরতাল পরিস্থিতিরই মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
এর আগে ভোর থেকে শুরু করে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের জেলাসদরে বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। কোথাও কোথাও তারা চোরাগোপ্তা হামলা চালায় পুলিশের ওপর।
তাদের সামলাতে অনেক স্থানেই লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ছুঁড়তে হয় কাঁদানে গ্যাস আর রাবার বুলেটও।
এসব সংষর্ষে উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এমনকি একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সিলেটে। বিভিন্ন ঘটনাস্থল থেকে শতাধিক কর্মীকে আটকও করা হয়েছে।
এদিকে দূরপাল্লার কোন গাড়ি না ছাড়লেও হরতালে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল ছিলো স্বাভাবিক। তবে সকাল সাড়ে ১০টায় ২১৩টি ব্রোকার হাউজ লগ ইন করে লেনদেন শুরু করলেও শেয়ার লেনদেন ছিলো খুবই কম। ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের উপস্থিতি কম মনে হয়েছে। দু’একটি বাদে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
হরতালে সবিচালয়েও স্বাভাবিক কার্যক্রম চলেছে। স্বাভাবিক ছিলো হিলি স্থলবন্দরও। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত ছিলো।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জামায়াত-শিবির কর্মীরা শান্তিনগর মোড়ে বাস ভাঙচুর করে। সেখান থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উভয় পাশে পুলিশের সতর্ক উপস্থিতি দেখা যায়।
মিরপুরে ৪টি বাসে আগুন ও ভাঙচুর চালায় জামায়াত কর্মীরা। এ সময় অজ্ঞাতনামা ২ জনকে আটক করে মিরপুর থানা পুলিশ।
বেলা ১টায় মুগদা থেকে চারজনকে আটক করা হয়।
আটককৃতদের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান (২২) এবং মো. সোইয়াব (১৯) নামে দু’জন গণধোলাইয়ের শিকার হন।
রাজধানীর গ্রিন রোডে জামায়াত-শিবির কর্মীরা পুলিশের কড়া পাহাড়ায় মিছিল করতে না পেরে পুরো এলাকা জুড়ে তাণ্ডব চালায়। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
সায়েন্সল্যাব থেকে পান্থপথ মোড় পর্যন্ত গ্রিন রোড এলাকায় চোরাগুপ্তা হামলা চালিয়ে তারা ৭টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এর মধ্যে ২টি মাইক্রোবাস ও ৩টি লেগুনা রয়েছে।
সকাল সাড়ে দশটায় চিড়িয়াখানার সামনে দিশারি পরিবহনে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা।
সকাল ১১টায় মিরপুর ১ নম্বরে আনসার ক্যাম্পের সামনে দু’টি বাসে আগুন দেওয়া হয়। সেখান থেকে মাংস ব্যবসায়ী সুরুজ মিয়াকে আটক করে মিরপুর থানা পুলিশ।
শ্যামলীতে গাড়ি ভাঙচুর করার সময় সোহেল (২৬) নামে এক যুবককে আটক করে এলাকাবাসী। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এ ভাঙচুরের ঘটনায় এক শিশুসহ বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
হরতালের সর্মথনে রাজধানীর জিগাতলায় টায়ারে আগুন জ্বালায় জামায়াত কর্মীরা।
সকাল সাড়ে নয়টায় ইউল্যাব ইউনিভার্সিটির সামনে মিছিল করতে এসে একদল জামায়াত কর্মী টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর মতিঝিল থেকে ছেড়ে আসা মোহাম্মদপুরগামী মৈত্রী পরিবহনের বাস ভাঙচুর করে।
এ ঘটনায় বাসের ড্রাইভারসহ কিছু যাত্রী আহত হন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে কাউকে গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেনি।
সকাল ৮টার দিকে মহাখালী এলাকায় শাহীন কলেজের সামনে বাসে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। তারা একটি যাত্রীবাহী চলন্ত বাসে পেট্রোল ছুঁড়ে দেয়। পরবর্তীতে হরতাল সমর্থকরা ওই বাসে আগুন ছুঁড়লে বাসের একটি সিটে আগুন লেগে যায়। এ সময় যাত্রীরা দ্রুত আগুন নিভিয়ে নেয়। তবে এই ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
এদিকে হরতাল বিরোধী মিছিল-সমাবেশ করেছে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। তিতুমীর কলেজের ছাত্রলীগ নেতা ছিমছং মিত্রচার্লসের নেতৃত্বে মিছিলটি তিতুমীর কলেজের আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ করে তিতুমীর কলেজের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
যাত্রাবাড়ী এলাকায় হরতাল সমর্থনে পিকেটাররা ১০/১৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এছাড়া তারা পুলিশের টহল গাড়িতে ইট-পাটকেল ছোঁড়ে। এসময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয় তারা।
এর আগে খিলগাঁওয়ে পুলিশ-পিকেটার সংঘর্ষে চারজন পুলিশ সদস্য আহত হন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জামায়াত-শিবির কর্মীরা শান্তিনগর মোড়ে বাস ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ তিনজন জামায়াত-শিবির কর্মীকে আটক করে। এ ঘটনার পর আতঙ্কে আশপাশের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। তখন দ্রুত স্থান ত্যাগ করে জামায়াত-শিবিরের পিকেটাররা। সংঘর্ষ চলাকালে পিকেটাররা যাত্রীসহ একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর মগবাজারের ইনসাফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে সোহরাব হোসেন নামে এক জামায়াত কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ভোরে রাজধানীর হোটেল রূপসীবাংলার(শেরাটন) সামনে একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায় পিকেটাররা। বাংলমোটরের কাছে আগুন দেয় টায়ারে।এর আগে ফার্মগেটে কয়েকজন টি শার্ট পরা যুবক টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
পুরনো ঢাকার কোতোয়ালী, সদরঘাট, বাংলাবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সূত্রাপুর, চকবাজার, বাবুবাজারসহ আশপাশের এলাকায় হরতালের সমর্থনে কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গেটে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। দুপুর নাগাদ হরতালবিরোদী মিছিলও করে তারা।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরকারি কবি নজরুল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ কলেজের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি বাহাদুর শাহ পার্ক, কোর্ট-কাচারি ও রায় সাহেব বাজার মোড় ঘুরে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ করে।
এছাড়া পৌনে ১১টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি শরিফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে লক্ষ্মীবাজার-শাঁখারীবাজার মোড়-জনসন রোড়, রায়সাহেব বাজার মোড় ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় গেটে তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
সোয়া ১১টার দিকে ঘাট শ্রমিকলীগ ও বিআইডব্লিউটিএ’র শ্রমিকলীগ আলাদা আলাদা ব্যানারে টার্মিনাল এলাকা থেকে একটি মিছিল বের করে বাংলাবাজার, পাটুয়াটুলী, ইসলামপুরসহ সদরঘাটের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
বেলা সোয়া ১২টার দিকে মালিবাগ এলাকার আবুল হোটেলের সামনে থেকে জামাত-শিবির কর্মী সন্দেহে তিন জনকে আটক করে পুলিশ।
আটক হওয়া দু’জনের নাম- জয়নাল আবেদিন ও মারুফ। আরেকজনের নাম জানা যায়নি।
সকাল সাড়ে সাতটায় রাজধানীর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি থেকে শুরু করে হরতালের প্রতিবাদে ছাত্রলীগের একটি মিছিল শুক্রাবাদ, কলাবাগান ঘুরে আবার বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভে এসে শেষ হয়।
জামায়াত-শিবিরে নৈরাজ্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে ভাষানটেক থানা যুবলীগ। এ সময় ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে সংগীত পরিবেশন এবং শ্লোগানের মধ্যে দিয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ পালন করা হয়।
এদিকে জামায়াতের ডাকা হরতাল প্রতিহত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ আশপাশের এলাকায় সতর্ক অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ।
হরতাল সত্ত্বেও পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের (বিজ্ঞান অনুষদ) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার সাক্ষাৎকার ঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা শাহবাগ, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, মধুর ক্যান্টিন, নীলক্ষেত, কাঁটাবনসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের অবস্থান নিয়েছে।
বেলা সাড়ে ১১টায় মধুর ক্যান্টিন থেকে হরতাল বিরোধী মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। অপরাজেয় বাংলার পাদেদেশে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে মিছিলটি শেষ হয়।
বাংলানিউজের সাভারের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ওমর ফারুক জানান, সকাল ৭টার দিকে সাভারে একটি শ্রমিকবাহী বাসে আগুন দেয় জামায়াত কর্মীরা। এসময় আতঙ্কিত হয়ে নামাতে গিয়ে ১০ শ্রমিক আহত হন।
নয়াহাট এলাকায় হরতালের সমর্থনে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াত সমর্থকরা। এসময় তারা বেশ কয়েকটি যানবাহনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।
পরে সাভার ও আশুলিয়া থেকে ৩ পিকেটারকে আটক করে পুলিশ।
মঙ্গলবার ভোরে সাভারের রেডিও কলোনি এলাকায় পিকেটিংয়ের সময় কালাম নামে এক পিকেটারকে আটক করে সাভার থানা পুলিশ।
অন্যদিকে আশুলিয়ার নয়ারহাট এলাকায় পিকেটিংয়ের সময় রফিক (২২) ও মতিউর (২৫) নামে দুই পিকেটারকে আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, হরতালে নগরীতে যানবাহন ভাঙচুর এবং সীতাকুণ্ডে তেলবাহী ছোট গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়া জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা নগরীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে।
পুলিশ নগরীতে বিভিন্ন ঝটিকা মিছিলে ধাওয়া দিয়ে ও যানবাহন ভাঙচুরের সময় এবং পরে এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে পৃথকভাবে ৮ জনকে আটক করে। এছাড়া জেলার লোহাগাড়া ও সীতাকুন্ড উপজেলা থেকে ৫ জামায়াত-শিবির কর্মীকে আটক করে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত মোট ১৩ শিবির কর্মীকে আটক করা হয়।
সকাল পৌনে ১০টার দিকে নাসিমন ভবনের সামনে শিবির কর্মীরা একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করে।
নগরীর বাকলিয়া থানার ওসি নূরুল আবছার ভূঁইয়া বাংলানিউজকে জানান, সকাল পৌনে ৮টার দিকে ৪-৫ জন হরতাল সমর্থক পিকেটার নগরীর রাজাখালী মোড়ে জিরাত ফ্যাশন লিমিটেডের সামনে চারটি যানবাহন ভাঙচুর করে। ভাঙচুর করা যানবাহনের মধ্যে একটি বাস, দু`টি টেম্পু ও একটি সিএনজি অটোরিকশা আছে।
ঘটনাস্থল থেকে হামিদ হোসেন নামে এক শিবির কর্মীকে আটক করা হয়।
এদিকে যানবাহন ভাংচুরের পর আশপাশের বিভিন্ন দোকান ও অলিগলিতে তল্লাশি চালিয়ে আরো ২ শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানান বাকলিয়া থানার ওসি নূরুল আবছার ভূঁইয়া।
এছাড়া বেলা ১১টার দিকে নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির সামনে জামায়াত-শিবিরের ঝটিকা মিছিল ও অটোরিক্সা ভাঙচুরের সময় ধাওয়া দিয়ে পুলিশ ২ শিবির কর্মীকে আটক করেছে বলে জানিয়েছেন পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ।
নগরীর ডবলমুরিং জোনের সহকারী কমিশনার আরেফিন জুয়েল বাংলানিউজকে জানান, সকাল ১১টার দিকে নগরীর মাঝিরঘাট এলাকায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশ ধাওয়া দিয়ে দু`জনকে আটক করে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সকাল ১০টার দিকে নগরীর পতেঙ্গা থানা এলাকায় জামায়াত-শিবিরের ১০-১৫ জন কর্মী মিছিল বের করার চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে একজনকে আটক করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) ফরিদ উদ্দিন আহমদ বাংলানিউজকে জানান, ২টি মোটরসাইকেলে চড়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে সীতাকুণ্ডে একটি তেলবাহী গাড়িতে (ভাউচার) অগ্নিসংযোগ করেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছার আগেই দ্রুতগতিতে তারা পালিয়ে যায়।
তবে পরে পন্থিছিলার শেখপাড়ায় অভিযান চালিয়ে দু`শিবির কর্মীকে আটক করে।
এছাড়া ঝটিকা মিছিল ও ভাঙচুরের চেষ্টাকালে ৩ জামায়াত-শিবির কর্মীকে আটক করে লোহাগাড়া থানা পুলিশ।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি তানভীর আহমেদ জানান, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জে ভোরে প্রায় ১ ঘণ্টা তাণ্ডব চালানোর পর পিছু হটে হরতাল আহ্বান করা জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা।
ভোর সাড়ে ৬টা থেকে জামায়াত ও শিবিরের কয়েক শ’ নেতাকর্মী ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক ও ছানারপাড় এলাকায় অবস্থান নেয়। তারা কয়েকটি স্পটে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয় ও কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে।
এ সময় পুলিশের সামনেই জামায়াত নেতাকর্মীরা সড়কে মিছিল করে। পরে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে নেতাকর্মীরা পিছু হটে।
জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
একই সময়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মিয়ার নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়।
এছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সদর উপজেলার ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকায় একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
সিলেটের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সাব্বির আহমেদ জানান, দক্ষিণ সুরমা এলাকায় হরতালের সকালে ব্যাপক সহিংসতা শুরু করে শিবির ক্যাডাররা। এসময় পুলিশের একটি ভ্যানে অতর্কিত আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালায় করে তারা। ওই স্থান থেকে পুলিশ চারজনকে আটক করলে তাদের মোবাইলে হামলার নির্দেশ সংবলিত মেসেজ পাওয়া যায়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্র জানায়, হামলাকারীরা পুলিশের অবস্থান দেখে বিভিন্ন স্থানে ভাগ হয়ে হামলা চালায়। হামলার সময় হাতে ও পিঠে ব্যাগে করে ককটেল বহন করে তারা। সুযোগ বুঝে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
এ সময় পুলিশ ধাওয়া করে দু’টি মোটরসাইকেল জব্দ করে ও চারজনকে আটক করে।
এরপর দক্ষিণ সুরমা থেকে উপশহর এলাকায় এসে ২টি সিএনজি অটোরিকশা ও টায়ার পোড়ায় শিবিরকর্মীরা।
এর আগে পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে এজন হরতাল সমর্থক আহত হয়।
পরে হরতাল ঠেকাতে রাজপথে নামে আওয়ামী লীগ। সিটি মেয়র মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের নেতৃত্বে মিছিল সমাবেশ করে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এসব সভা সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পুলিশ।
সকাল সাড়ে ১১টায় কোর্ট পয়েন্টে হরতাল বিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
খুলনা প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান মুন্না জানান, সোমবার রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আটক করা হয় জামায়াত-শিবিরের ১৪ নেতাকর্মীকে।
হরতাল চলাকালে জামায়াত-শিবির কর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষে ২ পুলিশ সদস্য আহত হন। আহতরা হলেন- সোনাডাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর ও কনস্টেবল মেহেদী হাসান। ঘটনাস্থল থেকে শিবির কর্মী আজীম ও জামায়াত কর্মী জাহাঙ্গীরকে আটক করে পুলিশ।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর লায়ন্স স্কুল সংলগ্ন কাশেম সড়কে এ সংঘর্ষ হয়।
বগুড়ার স্টাফ করেসপন্ডেন্ট টিএম মামুন জানান, দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।
এদিকে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত শাহাজানপুর, দুপচাচিয়া, শেরপুর ও সদর থেকে পুলিশ মিছিল ও পিকেটিং করার সময় ১০ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীকে আটক করে।
পরে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের সামনে একটি রড বোঝাই একটি ট্রাকে (ঢাকা মেট্টো ট- ১৬-২৯-৩৩) আগুন ধরিয়ে দেয়।
এছাড়া সকাল থেকে বগুড়ার নন্দীগ্রামে কোপিহার সীমান্ত এলাকায় ও পার্শ্ববর্তী জেলা নাটোরের সিংড়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের সংঘর্ষে ৭ জন আহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ৬ জনকে আটক করে।
আহতরা হলেন- আওয়ামী লীগ নেতা শিমুল (৩২), ইনুকা (২৪), জামায়াত নেতা লয়া মিয়া (২৫), মঞ্জু (২৭), মাহফুজার (২২), এছাড়া শাহজাহানপুর এলাকার আহত ২ জন হলেন- আলী ইমাম ও শ্যামল।
এ ঘটনায় শাহজাহানপরু থেকে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। এরা হলেন- ইদ্রিস আলী (৪৫), মামুনুর রশিদ (১৯), মোস্তফা কামাল (১৮), আল আমিন (১৮), আনোয়ার (৬০), ফারুক (১৮)।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা মাসুক হৃদয় জানান, জামায়াত-শিবিরের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর বাইপাস সড়কের পীরবাড়ি এলাকায় পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেয় জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
এ ঘটনায় রাকিব নামে এক শিবির কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
গাজীপুর প্রতিনিধি রিপন আনসারি জানান, টঙ্গিতে ৩টি বাসে অগ্নিসংযোগের চেষ্টার ঘটনায় ২ জনকে আটক করা হয়।
সকাল সাড়ে ৬টার দিকে টঙ্গির হোসেন মার্কেট এলাকায় হরতাল সমর্থকরা একটি মিছিল করে। এসময় তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের হোসেন মার্কেট এলকায় বেশ কয়েকটি টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। হরতালকারীরা চলন্ত বাসকে লক্ষ্য করে অগ্নিদগ্ধ টায়ার নিক্ষেপ করে বাসে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা টালায়। এই ঘটনায় পুলিশ সে স্থান থেকে ২হরতাল সমর্থককে আটক করে।
রাজশাহীর স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শরীফ সুমন জানান, বিনোদপুরে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল শুরু হয়।
বিনোদপুর এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করাকে কেন্দ্র করে সকাল ৭টার দিকে শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হরতালের সমর্থনে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভোর সাড়ে ৬টা থেকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা কয়েকটি ককটেল বিস্ফারণ ঘটিয়ে সামনে আসার চেষ্টা করে।
পরে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুঁড়লে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটে। প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ওই এলাকার পরিস্থিতি পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ২ শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানান মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সানাউল হক।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি শরীফ বিশ্বাস জানান, কুষ্টিয়ায় হরতালের পক্ষে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল জানান, সাতক্ষীরায় হরতালে জামায়াত-শিবির কয়েক দফা ঝটিকা মিছিল করে। পিকেটাররা প্রধান প্রধান রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ এবং শহরের পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকায় একটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
পরে পুলিশ রাস্তা থেকে গাছের গুঁড়ি সরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ সময় শহরের বিভিন্নস্থান থেকে জামায়াত-শিবিরের ৬ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
ভোলা প্রতিনিধি ছোটন সাহা জানান, সকালের দিকে পিকেটাররা ভোলা-বরিশাল সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করলেও পুলিশের ধাওয়ায় সটকে পড়ে তারা।
ভোরে জেলা সদর ও দৌলতখান উপজেলা থেকে জামায়াতের ২ কর্মীকে আটক করে পুলিশ। এরা হলেন- নুরে আলম (৩২) ও মোস্তাফিজুর রহমান (২৮)।
কুমিল্লা সংবাদদাতা ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, পিকেটাররা ভোর থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ২৪টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় ১৩ জনকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি ফারুক হোসেন মজুমদারকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
এ ঘটনায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাসুম বিল্লাহ ও রফিকুল ইসলামকে চৌদ্দগ্রাম থেকে আটক করে পুলিশ।
পিকেটিং চলাকালে দাউদকান্দিতে ৪টি, চান্দিনায় ৬টি, নিমসার ৬টি, কালাকচুয়ায় ৪টি, নগরীর সদর সালাহউদ্দিন মোড়ে ২টি, চৌদ্দগ্রামে ১টি, বেলতলীতে ১টিসহ মোট ২৪টি গাড়ি ভাঙচুর করে পিকেটাররা।
পুলিশ কন্ট্রোল রুমের শাহাদাত মুঠোফোনে বাংলানিউজকে জানান, পুলিশ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াত শিবিরের ১৩ কর্মীকে আটক করেছে।
পাবনা প্রতিনিধি শাহীনুর রহমান শাহীন জানান, জেলার ৬ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পৃথক অভিযান চালিয়ে জামায়াত-শিবিরের ২৫ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
হরতালে নাশকতার আশঙ্কায় সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার সকাল সাতটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বাংলানিউজকে জানান, সদর উপজেলায় ৯ জন, আটঘরিয়ায় ৪ জন, চাটমোহরে ১ জন, ঈশ্বরদীতে ৪ জন, সাঁথিয়ায় ৫ জন ও সুজানগরে ২ জনকে আটক করে পুলিশ।
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জামায়াত-শিবির হটাও শ্লোগান দিয়ে উপজেলা আওয়াম লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা হরতাল বিরোধী বিক্ষোভ মিছিল করে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উপজেলার ভুলতাস্থ আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়। মিছিলটি ভুলতা, গোলাকান্দাইল, সাওঘাট ও মাহনা এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
পরে ভুলতা গোলচত্বর এলাকায় এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বরিশাল প্রতিনিধি কাওছার হোসেন জানান, ফজরের নামাজ শেষে নগরীতে হরতালের সমর্থনে খণ্ড খণ্ড ঝটিকা মিছিল বের করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা।
ভোর রাতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।
পিকেটিংকালে নগরীর বটতলা এলাকা থেকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা শিবিরের সভাপতি আহসান হাবিবকে (২২) আটক করে পুলিশ।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম স্বপন জানান, সকাল ৭টার দিকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর চৌমুহনী আঞ্চলিক মহাসড়কের বিসিক শিল্প নগরী এলাকায় শিবির ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এ সময় হরতালের সমর্থনে রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে পিকিটিংকালে একটি সিএনজি ও একটি মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে শিবির কর্মীরা।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পিকেটাররা। এ সময় উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে শিবির কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
দিনাজপুর প্রতিনিধি সানি সরকার জানান, হরতালে ১টি বিআরটিসি ও দুটি ট্রাকে ভাঙচুর এবং আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরে।
মঙ্গলবার ভোরে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে টায়ারে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পীরগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা একটি বিআরটিসি বাস ভাঙচুর করে। এসময় পুলিশ জামায়াত-শিবিরের ৪ নেতাকর্মীকে আটক করে।
দিনাজপুর সদরের দশ মাইল এলাকায় সকালে একটি খালি ট্রাক আগুন ধরিয়ে দেয় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। পরে পুলিশ ও দমকল বাহিনীর লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এছাড়া তেরোমাইল এলাকায় আরও একটি ট্রাকে ভাঙচুর চালায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা।
নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি আয়নাল হক জানান, মঙ্গলবার জামায়াত-শিবিরের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সমর্থনে নেত্রেকোনা পৌর শহরে শিবিরের কয়েকজন কর্মী ঝটিকা মিছিল বের করে। তবে মিছিলটি ফুরকানিয়া মাদরাসা এলাকায় পৌঁছুলে পুলিশ দেখে মিছিল পণ্ড হয়ে যায়।
ঠাকুরগাঁওয় জেলা প্রতিনিধি ফিরোজ আমিন সরকার জানান, ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় মহাসড়কে তেলিপাড়া এলাকায় জামায়াত শিবির কর্মীরা বিআরটিসির একটি বাস ও দুটি ট্রাক ভাঙচুর করে। এ সময় ৪ যাত্রী আহত হন।
এরা হলেন- স্নিগ্ধা, জাহাঙ্গীর, মকছেদ ও অজ্ঞাতপরিচয় এক যাত্রী।
বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি এম আকবর টুটুল জানান, হরতালে বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কে গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
মঙ্গলবার ভোর থেকে জামায়াতের নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে জেলার বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়।
এ সময় জেলার ফকিরহাট উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট, খুলনা-বাগেরহাট ও খুলনা-মংলা মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে পিকেটিং করে নেতাকর্মীরা। মহাসড়কের টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়কে যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি কাজী আব্দুল কুদ্দুস জানান, শহরের ড্রাইআইচ ফ্যাক্টরি, গঙ্গাপ্রসাদপুর ও গোয়ালন্দ উপজেলার মাল্লাপট্টি থেকে তিন জামায়াত কর্মীকে আটক করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি একেএস রোকন জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জে হরতাল চলাকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে শহরে পুলিশের ১টি পিকআপ ভ্যানসহ ২টি ট্রাক ভাঙচুর করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা।
এসময় জামায়াত-শিবিরের ৩ কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন খান জানান, ময়মনসিংহ শহর ও উপজেলা পর্যায়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের বাড়িতে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় জামায়াত-শিবিরের ৩ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ শহরের কেওয়াটখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী রেজিস্ট্রার নুরুল ইসলাম খানকে তার বাসা থেকে আটক করে।
নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, জামায়াতের কর্মী মওলানা খলিল উল্লাহ ও জসীমউদ্দিনকে তাদের বাড়ি থেকে মঙ্গলবার সকালে আটক করা হয়।
দুপুর ১২টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের শিববাড়ি রোডস্থ কার্যালয় থেকে হরতালবিরোধী একটি মিছিলটি বের হয়। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে গাঙ্গিনারপাড় মোড়ে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।
এ সময় তারা ময়মনসিংহে জামায়াত-শিবিরকে প্রতিরোধের ঘোষণা দেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি ফজলে এলাহী স্বপন জানান, পিকেটিংয়ের প্রস্তুতিকালে পুলিশ জেলার উলিপুর উপজেলা থেকে জামায়াতের ৩ নেতাকর্মীকে আটক করে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন-জামায়াতের আমীর আব্দুল আজিজ, প্রচার ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কাদের এবং জামায়াত সদস্য শহীদুল ইসলাম।
No comments