মুক্তিযোদ্ধার বাঁচার লড়াই -দেশমাতৃকার জন্য যাঁরা যুদ্ধে নেমেছিলেন তাঁদের অনেকেই আজ লড়ছেন দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য। তাঁদের জীবনচিত্র নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন-হেলাল উদ্দিনের সম্বল একটি 'পেলুইন' by বিশ্বজিৎ পাল বাবু
ঘন কুয়াশা, হাড় কাঁপানো শীত। ভোরের সূর্য তখনো পুব আকাশে উঁকি দেয়নি। এত সকালে হেলাল উদ্দিনের ঘুম ভেঙেছে কি না এমন 'শঙ্কা' নিয়েই তাঁর বাড়ি খোঁজা। হাসান নামের এক যুবক নিয়ে গেলেন হেলাল উদ্দিনের বাড়িতে। বাড়ি বলতে একটা কুঁড়েঘর, যে ঘরে ঢুকতে হয় মাথা নুইয়ে।
বাড়িতে ঢুকেই দেখা যায় ছোট্ট একটা প্লেটে ভাত খাচ্ছেন এক বয়স্ক লোক। জানালেন, কাজে বেরোলে ফিরতে দেরি হয় বলে ভোরেই ভাত খেয়ে যান। তিনিই মুক্তিযোদ্ধা মো. হেলাল উদ্দিন। এলাকার লোকজন চেনে তাঁকে হেলাল কাজী হিসেবে। কেউ ডাকে হেলাল ডাক্তার বলে। অসীম সাহসিকতার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশের বিজয় ছিনিয়ে আনা এই মানুষটি জীবনযুদ্ধে নাস্তানাবুদ।
চক্রান্তের শিকার হয়ে হেলাল উদ্দিন হারিয়েছেন পৈতৃক সম্পত্তি। প্রথম বিয়ে করা বউকে দলবল নিয়ে জোর করে তুলে নিয়ে যায় এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। একবার তাঁকে রেললাইনে ফেলে হত্যার জন্য উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সে যাত্রায় বেঁচে যান। ছিলেন পল্লী চিকিৎসক। বয়সের ভারে এখন আগের মতো গ্রামে গ্রামে ঘুরে চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন না। এখন তাঁর একমাত্র সম্বল একটি পেলুইন (মাছ ধরার ছোট জাল)।
গত রবিবার ভোরে ভাত খাওয়া শেষে কথা বলতে বলতে পেলুইন হাতে বেরিয়ে পড়েন হেলাল উদ্দিন। ঠাণ্ডায় যখন হাতে একটু পানি লাগানো দায় তখন 'বীরদর্পেই' যেন বিলের পানিতে নেমে পড়লেন তিনি। জানালেন, অন্তত শ-দেড় শ টাকার মাছ ধরা হলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করবেন। প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা পানিতে থাকতে হবে তাঁকে।
তবে শেষ বয়সে এত কষ্টেও আফসোস নেই হেলাল উদ্দিনের। তাঁর স্পষ্ট উচ্চারণ, 'যুদ্দ কইরা দেশ পাইছি এইডাঅই বড় কতা। পাকিস্থানীরা যেইভাবে অত্যাচার শুরু করছিল, সবাই মিইল্লা রুইক্কা না দাঁড়াইলে আমডারে শেষ কইরা দিত। অহন আমার আপসোস শুদু একটা, শেখ মুজিবরে যারা মারছে হেরার সব কয়ডার বিচার দেইক্কা যাইতাম পারি কি না।'
কাজী হেলাল উদ্দিনের পৈতৃক বাড়ি আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের গুলখার গ্রামে। উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের নয়াদিল গ্রামে তিনি থাকেন। মাছ ধরাই এখন তাঁর পেশা। চার সন্তানের জনক হেলাল তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সংসারে এখন স্ত্রী ও পাঁচ-ছয় বছর বয়সী এক ছেলে।
বাড়ির কুঁড়েঘরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিতে মালা দেওয়া। বসার কোনো আলাদা ব্যবস্থা নেই। একমাত্র চৌকিটি ভেঙে পড়ার উপক্রম। খবর শোনার জন্য অনেক আগেই কেনা সাদাকালো টিভিটিও নষ্ট হয়ে আছে।
কথা প্রসঙ্গে হেলাল উদ্দিন জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি খাড়েরা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়তেন। দুদু মিয়া নামের এক ব্যক্তি পাকিস্তানের চাকরি ছেড়ে এলাকায় চলে আসেন। তিনিই মূলত উদ্বুদ্ধ করেন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য। ভারতের আগরতলার মনতলী ও বিজনা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন তিনি। ব্যবহার করতেন থ্রি নট থ্রি রাইফেল।
যুদ্ধের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, 'ক্যাপ্টেন আইনুদ্দিন ছিলেন আমডার মেইন লোক। আমডারে চালাইতেন আব্দুল আলীম। বাওনবাইড়ার ((ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শিমরাইলে আমডার ক্যাম্প আছিল। আমডার ক্যাম্পের লোকজনের হাতে বহু পাকিস্থানি আর রাজাকার মরছে। এক রাজাকার আখাউড়ার তন্তর এলাকার একটি ব্রিজ পাহারা দিত। খবর পাইয়া আমডা গিয়া হেরে গুলি কইরা মারি। আমডা রাস্তার পাশে বেশি অপারেশন চালাইছি। পাকিস্থানিরা রাস্তা দিয়া যাওনের সময় হেরার উপরে গুলি করছি। আমডার লগে তাহা বিল্লাল, কাসেম, শাহজাহান, অলি, নূরুর কথা মনে আছে।'
হেলাল উদ্দিন জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি এসএসসি পাস করেন। চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণও নেন। দিনমজুরি করার পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে ঘুরে লোকজনের চিকিৎসা করতেন তিনি। বয়সের কারণে এখন আর কোনোটাই পারেন না। কয়েক বছর ধরে মাছ ধরেই সংসার চালাচ্ছেন। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও কোনো সার্টিফিকেট নেই তাঁর। শেখ মুজিবকে হত্যার পর ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। সার্টিফিকেট নিয়ে কখনো চিন্তা করেননি। মুক্তিযোদ্ধার একটি প্রমাণপত্র কয়েক বছর আগে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ২০০৯ সালে এ বিষয়ে আবেদন করলেও এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। তবে সম্প্রতি হওয়া একটি তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে বলে শুনেছেন তিনি।
চক্রান্তের শিকার হয়ে হেলাল উদ্দিন হারিয়েছেন পৈতৃক সম্পত্তি। প্রথম বিয়ে করা বউকে দলবল নিয়ে জোর করে তুলে নিয়ে যায় এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। একবার তাঁকে রেললাইনে ফেলে হত্যার জন্য উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সে যাত্রায় বেঁচে যান। ছিলেন পল্লী চিকিৎসক। বয়সের ভারে এখন আগের মতো গ্রামে গ্রামে ঘুরে চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন না। এখন তাঁর একমাত্র সম্বল একটি পেলুইন (মাছ ধরার ছোট জাল)।
গত রবিবার ভোরে ভাত খাওয়া শেষে কথা বলতে বলতে পেলুইন হাতে বেরিয়ে পড়েন হেলাল উদ্দিন। ঠাণ্ডায় যখন হাতে একটু পানি লাগানো দায় তখন 'বীরদর্পেই' যেন বিলের পানিতে নেমে পড়লেন তিনি। জানালেন, অন্তত শ-দেড় শ টাকার মাছ ধরা হলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করবেন। প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা পানিতে থাকতে হবে তাঁকে।
তবে শেষ বয়সে এত কষ্টেও আফসোস নেই হেলাল উদ্দিনের। তাঁর স্পষ্ট উচ্চারণ, 'যুদ্দ কইরা দেশ পাইছি এইডাঅই বড় কতা। পাকিস্থানীরা যেইভাবে অত্যাচার শুরু করছিল, সবাই মিইল্লা রুইক্কা না দাঁড়াইলে আমডারে শেষ কইরা দিত। অহন আমার আপসোস শুদু একটা, শেখ মুজিবরে যারা মারছে হেরার সব কয়ডার বিচার দেইক্কা যাইতাম পারি কি না।'
কাজী হেলাল উদ্দিনের পৈতৃক বাড়ি আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের গুলখার গ্রামে। উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের নয়াদিল গ্রামে তিনি থাকেন। মাছ ধরাই এখন তাঁর পেশা। চার সন্তানের জনক হেলাল তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সংসারে এখন স্ত্রী ও পাঁচ-ছয় বছর বয়সী এক ছেলে।
বাড়ির কুঁড়েঘরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিতে মালা দেওয়া। বসার কোনো আলাদা ব্যবস্থা নেই। একমাত্র চৌকিটি ভেঙে পড়ার উপক্রম। খবর শোনার জন্য অনেক আগেই কেনা সাদাকালো টিভিটিও নষ্ট হয়ে আছে।
কথা প্রসঙ্গে হেলাল উদ্দিন জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি খাড়েরা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়তেন। দুদু মিয়া নামের এক ব্যক্তি পাকিস্তানের চাকরি ছেড়ে এলাকায় চলে আসেন। তিনিই মূলত উদ্বুদ্ধ করেন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য। ভারতের আগরতলার মনতলী ও বিজনা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন তিনি। ব্যবহার করতেন থ্রি নট থ্রি রাইফেল।
যুদ্ধের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, 'ক্যাপ্টেন আইনুদ্দিন ছিলেন আমডার মেইন লোক। আমডারে চালাইতেন আব্দুল আলীম। বাওনবাইড়ার ((ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শিমরাইলে আমডার ক্যাম্প আছিল। আমডার ক্যাম্পের লোকজনের হাতে বহু পাকিস্থানি আর রাজাকার মরছে। এক রাজাকার আখাউড়ার তন্তর এলাকার একটি ব্রিজ পাহারা দিত। খবর পাইয়া আমডা গিয়া হেরে গুলি কইরা মারি। আমডা রাস্তার পাশে বেশি অপারেশন চালাইছি। পাকিস্থানিরা রাস্তা দিয়া যাওনের সময় হেরার উপরে গুলি করছি। আমডার লগে তাহা বিল্লাল, কাসেম, শাহজাহান, অলি, নূরুর কথা মনে আছে।'
হেলাল উদ্দিন জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি এসএসসি পাস করেন। চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণও নেন। দিনমজুরি করার পাশাপাশি গ্রামে গ্রামে ঘুরে লোকজনের চিকিৎসা করতেন তিনি। বয়সের কারণে এখন আর কোনোটাই পারেন না। কয়েক বছর ধরে মাছ ধরেই সংসার চালাচ্ছেন। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও কোনো সার্টিফিকেট নেই তাঁর। শেখ মুজিবকে হত্যার পর ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। সার্টিফিকেট নিয়ে কখনো চিন্তা করেননি। মুক্তিযোদ্ধার একটি প্রমাণপত্র কয়েক বছর আগে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ২০০৯ সালে এ বিষয়ে আবেদন করলেও এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। তবে সম্প্রতি হওয়া একটি তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে বলে শুনেছেন তিনি।
No comments