প্রশ্নগুলোর উত্তর কি মিলবে না? by গোবিন্দ আচার্য্য
২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিট। হঠাৎ ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শ্রমিকরা। সবাই কাজ বন্ধ করে দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কারখানার ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) আবদুর রাজ্জাক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা দুলাল, স্টোর ইনচার্জ হামিদুল ইসলাম লাভলু ও সিকিউরিটি ইনচার্জ আল আমীন ওরফে ইমন শ্রমিকদের আশ্বস্ত করে, আগুন লাগেনি।
ফায়ারের প্রশিক্ষণ চলছে। এরপর শ্রমিকরা যার যার সিটে চলে যায়। কিছু সময় পর দেখা যায় নিচ তলায় আগুনের লেলিহান শিখা।এরপরই শুরু হয় শ্রমিকদের মধ্যে দিগ্গি্বদিক ছোটাছুটি। নিচে নামতেই দেখে গেটে তালা। এরই মধ্যে নিচতলায় গোডাউনসহ পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। উপরে উঠতেই ৬ তলার ফ্লোরে তালা। মনে হচ্ছিল তালাবদ্ধ করে শ্রমিকদের আগুনে নিক্ষেপ করছে কর্মকর্তারা। এরপর শ্রমিকদের মধ্যে শুরু হয় বাঁচার লড়াই_ কেউ জানালা ভেঙে, আবার কেউ কেউ লাফিয়ে। কিন্তু অধিকাংশ নারী শ্রমিক তাদের জন্য নির্ধারিত সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে বেশি বিপদে পড়ে। যারা ওই সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেছে তারা নামতে পারেনি আবার উপরেও উঠতে পারেনি। ফলে অগি্নকুণ্ডের মধ্যে অর্ধশতাধিক নারী শ্রমিক পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। কিন্তু আমি তিন তলা থেকে লাফ দিয়ে কীভাবে বাঁচলাম বলতে পারব না। আমাকে সাহায্য করেছেন কারখানার মেকানিক মোজাফফর। কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনের অপারেটর দীপা। তার অভিযোগ, এ আগুনে পুড়ে কোনো কর্মকর্তা তো মারা গেল না। মরল শুধু শ্রমিকরাই। যারা গেট লাগাল তারা তো ঠিকই কৌশলে পালিয়ে বাঁচল। তাদের কি শাস্তি হবে না?
১১১টি লাশের মধ্যে ৫৪টি লাশ স্বজনরা খুঁজে নেন। বাকিদের ঠাঁই হয়েছে জুরাইন কবরস্থানে।
যারা অগি্নকাণ্ডের সময় ৮তলা ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে লাফিয়ে জীবন বাঁচাতে চেয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেরই হাত-পা ভেঙে গেছে। আবার কেউ কেউ গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। টাকার অভাবে সঠিক চিকিৎসাও পাচ্ছে না তারা। এদের একজন আলেনুর। তিনি জানান, কাজ করতাম চতুর্থ তলায়। জীবন বাঁচাতে তৃতীয় তলায় নামতেই দেখি সিঁড়িতে আগুন। বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। অবশেষে জানালা দিয়ে তৃতীয় তলা থেকে লাফিয়ে পড়ি। এরপর আর কিছুই বলতে পারব না। জ্ঞান ফেরার পর দেখি শুয়ে আছি হাসপাতালের বিছানায়। টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে না পারায় ফিরে আসি বাসায়। কিন্তু পোড়া কপাল। কারখানা সংলগ্ন যে বাসাটিতে ভাড়া থাকতাম সেটিও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আশ্রয় নিয়েছি এক আত্মীয়ের বাসায়। এখন বুঝি, এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো ছিল। ক্ষোভ শুধু আলেনুর বেগমেরই নয়, অগি্নকাণ্ডে শত শত আহত শ্রমিকের। হতাহতের স্বজনদের অভিযোগ, মিডিয়ার মাধ্যমে শুধু জানতে পেরেছি, হতাহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু এখনও কোনো শ্রমিকের পরিবার এ ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি। স্থানীয়ভাবে গঠন করা হয়নি কোনো সহায়তাকেন্দ্র। আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনে পোশাক শিল্পের ইতিহাসে স্মরণকালের ভয়াবহ অগি্নকাণ্ডে ১১১ জনের প্রাণহানির এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এসব তদন্ত কমিটি আলোর মুখ দেখাবে কি-না, তা নিয়েও প্রশ্ন?
কিন্তু স্বাভাবিক দৃষ্টিতে শ্রমিকদের তদন্ত হচ্ছে, যদি কারখানার গেটগুলোতে তালা লাগানো না হতো, কারখানার নিচ তলায় অব্যবস্থাপনায় গোডাউন তৈরি করা না হতো, কারখানার নিজস্ব অগি্ননির্বাপক ব্যবস্থা পর্যাপ্ত থাকত এবং আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ওই কারখানার কর্মকর্তারা যদি কিছুই হয়নি বলে প্রচার করে শ্রমিকদের জোরপূর্বক কাজ করতে বাধ্য না করত, তাহলে হয়তো এত শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটত না। আর যারা এই মৃত্যুফাঁদ তৈরি করল তাদের কি শাস্তি হবে না? অব্যক্ত বেদনায় পাথর চোখে অসহায় শ্রমিকদের প্রশ্ন? আর কতবার নির্মম মৃত্যুর শিকার হবে অসহায় শ্রমিকরা?
লাশের সংখ্যা আর কত বেশি হলে শ্রমিকের নিরাপদ কর্মস্থল তৈরি করবে মালিক পক্ষ? কারখানায় আর কতবার আগুন লাগলে তার উত্তাপ স্পর্শ করবে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের। একজন সাবেক রাষ্ট্রপতিসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন দাবি করছে, যার অবহেলায় এসব শ্রমিকের প্রাণহানি
ঘটেছে, সেই তাজরীন ফ্যাশনের মালিক যিনি ঘটনার পর থেকে আত্মগোপন করেছেন, তাকে কি গ্রেফতার
করা হবে? হ
১১১টি লাশের মধ্যে ৫৪টি লাশ স্বজনরা খুঁজে নেন। বাকিদের ঠাঁই হয়েছে জুরাইন কবরস্থানে।
যারা অগি্নকাণ্ডের সময় ৮তলা ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে লাফিয়ে জীবন বাঁচাতে চেয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকেরই হাত-পা ভেঙে গেছে। আবার কেউ কেউ গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। টাকার অভাবে সঠিক চিকিৎসাও পাচ্ছে না তারা। এদের একজন আলেনুর। তিনি জানান, কাজ করতাম চতুর্থ তলায়। জীবন বাঁচাতে তৃতীয় তলায় নামতেই দেখি সিঁড়িতে আগুন। বের হওয়ার কোনো উপায় নেই। অবশেষে জানালা দিয়ে তৃতীয় তলা থেকে লাফিয়ে পড়ি। এরপর আর কিছুই বলতে পারব না। জ্ঞান ফেরার পর দেখি শুয়ে আছি হাসপাতালের বিছানায়। টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে না পারায় ফিরে আসি বাসায়। কিন্তু পোড়া কপাল। কারখানা সংলগ্ন যে বাসাটিতে ভাড়া থাকতাম সেটিও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আশ্রয় নিয়েছি এক আত্মীয়ের বাসায়। এখন বুঝি, এভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো ছিল। ক্ষোভ শুধু আলেনুর বেগমেরই নয়, অগি্নকাণ্ডে শত শত আহত শ্রমিকের। হতাহতের স্বজনদের অভিযোগ, মিডিয়ার মাধ্যমে শুধু জানতে পেরেছি, হতাহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কিন্তু এখনও কোনো শ্রমিকের পরিবার এ ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি। স্থানীয়ভাবে গঠন করা হয়নি কোনো সহায়তাকেন্দ্র। আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনে পোশাক শিল্পের ইতিহাসে স্মরণকালের ভয়াবহ অগি্নকাণ্ডে ১১১ জনের প্রাণহানির এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এসব তদন্ত কমিটি আলোর মুখ দেখাবে কি-না, তা নিয়েও প্রশ্ন?
কিন্তু স্বাভাবিক দৃষ্টিতে শ্রমিকদের তদন্ত হচ্ছে, যদি কারখানার গেটগুলোতে তালা লাগানো না হতো, কারখানার নিচ তলায় অব্যবস্থাপনায় গোডাউন তৈরি করা না হতো, কারখানার নিজস্ব অগি্ননির্বাপক ব্যবস্থা পর্যাপ্ত থাকত এবং আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ওই কারখানার কর্মকর্তারা যদি কিছুই হয়নি বলে প্রচার করে শ্রমিকদের জোরপূর্বক কাজ করতে বাধ্য না করত, তাহলে হয়তো এত শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটত না। আর যারা এই মৃত্যুফাঁদ তৈরি করল তাদের কি শাস্তি হবে না? অব্যক্ত বেদনায় পাথর চোখে অসহায় শ্রমিকদের প্রশ্ন? আর কতবার নির্মম মৃত্যুর শিকার হবে অসহায় শ্রমিকরা?
লাশের সংখ্যা আর কত বেশি হলে শ্রমিকের নিরাপদ কর্মস্থল তৈরি করবে মালিক পক্ষ? কারখানায় আর কতবার আগুন লাগলে তার উত্তাপ স্পর্শ করবে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের। একজন সাবেক রাষ্ট্রপতিসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন দাবি করছে, যার অবহেলায় এসব শ্রমিকের প্রাণহানি
ঘটেছে, সেই তাজরীন ফ্যাশনের মালিক যিনি ঘটনার পর থেকে আত্মগোপন করেছেন, তাকে কি গ্রেফতার
করা হবে? হ
No comments