বি শে ষ জ্ঞ ম তা ম ত
এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে চলছে দেশ। চলছে কল-কারখানার শিল্পের চাকা। ২৪ নভেম্বর রাতে থমকে দাঁড়ায় দেশের শিল্প খাতের চাকা। শুরু হয়ে যায় সর্বস্তরে শোকের মাতম। শোকে স্তব্ধ গোটা জাতি।
আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ঘটে তাজরীন ফ্যাশনস নামক গার্মেন্ট কারখানায় অগি্নকাণ্ডে ১১১ শ্রমিকের প্রাণহানি। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন নারী। আত্মকর্মসংস্থানের জন্য গ্রাম থেকে ছুটে আসা নারী শ্রমিকদের জীবনে কেনই-বা ঘটছে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা? আগামী দিনগুলোতেও কি ঘটতে থাকবে দুর্ঘটনা? নাকি নিরাপদে কাজ করতে পারবেন তারা? বিশিষ্ট তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে এসব উত্তর জানার চেষ্টা করেছেন আ হ ম ফয়সল
'ট্রেড ইউনিয়ন থাকলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটত না'
শিরীন আখতার
সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক জোট
প্রথমত মেয়েরা শ্রমবাজারে নতুন, তারপর গ্রাম ছেড়ে শহরে। তাদের মধ্যে নতুন চিন্তা-চেতনা। তারা অনেক কিছু চাইলেও পারে না। মেয়েরা বললেই তো আর লাফিয়ে পড়তে পারে না। তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কাজের পাশাপাশি মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। গত ২৫ বছর ধরে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার আন্দোলন করে আসছি। আমরা শ্রমিকদের সচেতনতার কাজটিই করছি। আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে। সরকার নিয়মিত গার্মেন্ট সেক্টর পরিদর্শন করে না বিধায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। তা ছাড়া এ সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়ন না থাকাও দুর্ঘটনার একটি অন্যতম কারণ। যদি ট্রেড ইউনিয়ন থাকত তাহলে এত বড় একটি দুর্ঘটনা ঘটত না। গার্মেন্ট সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলাটাই এখন আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারকে গার্মেন্টের দিকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। এ সেক্টরে অব্যবস্থাপনা দূর করতে যৌথ মনিটরিং ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি গার্মেন্টে শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। হ
'দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে'
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ
সহকারী নির্বাহী পরিচালক
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ- বিলস
দেশের সামগ্রিক মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে কর্মসংস্থান বজায় রাখা ও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকার-মালিক মনে করে, যদি শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা ও মজুরি বেশি দেওয়া হয় তাহলে এ ব্যবসা নাও থাকতে পারে। সাধারণত গ্রামের কিশোরী মেয়েরাই গার্মেন্ট শিল্পের সঙ্গে বেশি জড়িত। দরিদ্র্র বলে তারা অল্পতেই তুষ্ট থাকে। অথচ তারাই দেশের এ বৃহত্তর শিল্পের মূল চালিকাশক্তি। তবুও তারা অবহেলিত। গত ২০-২২ বছর ধরে গার্মেন্টে অগি্নকাণ্ডের ঘটনা ঘটে আসছে। প্রতিবারই আগুন লাগছে আর শ্রমিকরা বের হয়ে আসতে পারছে না। আশুলিয়ায় এবার যে দুর্ঘটনা ঘটেছে_ এ ধরনের দুর্ঘটনা নতুন নয়, অন্যবারের চেয়ে এবার বড় ধরনের। এখন দেখা যাচ্ছে সরকার, এমনকি বিরোধী দল সবাই ক্ষতিপূরণের কথা বলছে কিন্তু কেউ এ ঘটনার বিচার চাচ্ছে না। তার মানে মালিকদের তোষণে সবাই। এ ধরনের দুর্ঘটনায় মালিকের শাস্তি না হওয়ায় সামগ্রিক অর্থে কেউই সতর্ক হচ্ছে না। এটি অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত হয়, প্রতিকারের সুপারিশও করা হয় কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট কখনোই প্রকাশ করা হয় না। আমরা মনে করি, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে মালিকদের আরও সচেতন করতে হবে। এ ছাড়া সরকার উচ্চ পর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে চেকলিস্ট করে কয়েকটি মডেল গার্মেন্ট ঘোষণা করতে পারে, যা দেখে অন্য সব গার্মেন্ট মালিকরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এ ক্ষেত্রে মিডিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এর আগে পালন করেছে, আগামীতেও করতে পারে। হ
'গামেন্ট সেক্টরের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় প্রয়োজন'
প্রতিমা পাল মজুমদার
সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, বিআইডিএস
এ বিষয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে দেখলাম, ঢাকা শহরের মধ্যে যেসব গার্মেন্ট রয়েছে সেগুলো মোটামুটি ঠিকঠাক আছে। একটু দূরে সাভার-আশুলিয়া এলাকার গার্মেন্টগুলোতেই যত অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম। দুর্ঘটনার পর তাজরীন ফ্যাশনসে গিয়ে দেখলাম, সেখানে তিনটি সিঁড়ি আছে কিন্তু বের হওয়ার পথ ছিল একটি দিয়ে। নিচ তলায় সুতা ও কেমিক্যাল ছিল একসঙ্গে। যেটা থাকার কথা নয়। মালিক আইন ভঙ্গ করেছে। পাশাপাশি সরকারের বড় দোষ হলো, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যে মনিটরিং সেল রয়েছে তার কোনো কার্যকারিতা নেই। তাজরীন ভবনটি বানানোর অনুমতিতে ঘাপলা থাকায় ভবন মালিক এটি তৈরিতে অনেক নিয়ম মানেননি। গার্মেন্ট শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের পরিদর্শক সেলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। যারা আইন মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি যারা আইন মানবে তাদের ট্যাক্স মওকুফ অথবা পুরস্কারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তা ছাড়া এ সেক্টরে ৮০ শতাংশই নারী শ্রমিক। যত ধরনের দুর্যোগ আসে, সব কিছুতেই তারা বেশি আক্রান্ত হন। নারী মরছে কী হয়েছে, এ ভাবনায় সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। নারী ঘরেও অবহেলিত আবার বাইরেও অবহেলিত। শ্রীলংকায় ব্যাপক আকারে চা-শিল্প থাকায় পৃথক মন্ত্রণালয় রয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর আমাদের দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড। এ সেক্টরের সঙ্গে ৪-৫টি মন্ত্রণালয় জড়িত। গার্মেন্ট সেক্টরের জন্য এখন পৃথক একটি মন্ত্রণালয় প্রয়োজন। হ
'ট্রেড ইউনিয়ন থাকলে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটত না'
শিরীন আখতার
সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক জোট
প্রথমত মেয়েরা শ্রমবাজারে নতুন, তারপর গ্রাম ছেড়ে শহরে। তাদের মধ্যে নতুন চিন্তা-চেতনা। তারা অনেক কিছু চাইলেও পারে না। মেয়েরা বললেই তো আর লাফিয়ে পড়তে পারে না। তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কাজের পাশাপাশি মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। গত ২৫ বছর ধরে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার আন্দোলন করে আসছি। আমরা শ্রমিকদের সচেতনতার কাজটিই করছি। আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে তার পেছনে সরকারের ব্যর্থতা রয়েছে। সরকার নিয়মিত গার্মেন্ট সেক্টর পরিদর্শন করে না বিধায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। তা ছাড়া এ সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়ন না থাকাও দুর্ঘটনার একটি অন্যতম কারণ। যদি ট্রেড ইউনিয়ন থাকত তাহলে এত বড় একটি দুর্ঘটনা ঘটত না। গার্মেন্ট সেক্টরে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলাটাই এখন আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারকে গার্মেন্টের দিকে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। এ সেক্টরে অব্যবস্থাপনা দূর করতে যৌথ মনিটরিং ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি গার্মেন্টে শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। হ
'দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে'
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ
সহকারী নির্বাহী পরিচালক
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ- বিলস
দেশের সামগ্রিক মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে কর্মসংস্থান বজায় রাখা ও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকার-মালিক মনে করে, যদি শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা ও মজুরি বেশি দেওয়া হয় তাহলে এ ব্যবসা নাও থাকতে পারে। সাধারণত গ্রামের কিশোরী মেয়েরাই গার্মেন্ট শিল্পের সঙ্গে বেশি জড়িত। দরিদ্র্র বলে তারা অল্পতেই তুষ্ট থাকে। অথচ তারাই দেশের এ বৃহত্তর শিল্পের মূল চালিকাশক্তি। তবুও তারা অবহেলিত। গত ২০-২২ বছর ধরে গার্মেন্টে অগি্নকাণ্ডের ঘটনা ঘটে আসছে। প্রতিবারই আগুন লাগছে আর শ্রমিকরা বের হয়ে আসতে পারছে না। আশুলিয়ায় এবার যে দুর্ঘটনা ঘটেছে_ এ ধরনের দুর্ঘটনা নতুন নয়, অন্যবারের চেয়ে এবার বড় ধরনের। এখন দেখা যাচ্ছে সরকার, এমনকি বিরোধী দল সবাই ক্ষতিপূরণের কথা বলছে কিন্তু কেউ এ ঘটনার বিচার চাচ্ছে না। তার মানে মালিকদের তোষণে সবাই। এ ধরনের দুর্ঘটনায় মালিকের শাস্তি না হওয়ায় সামগ্রিক অর্থে কেউই সতর্ক হচ্ছে না। এটি অবহেলাজনিত হত্যাকাণ্ড। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত হয়, প্রতিকারের সুপারিশও করা হয় কিন্তু তদন্ত রিপোর্ট কখনোই প্রকাশ করা হয় না। আমরা মনে করি, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে মালিকদের আরও সচেতন করতে হবে। এ ছাড়া সরকার উচ্চ পর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে চেকলিস্ট করে কয়েকটি মডেল গার্মেন্ট ঘোষণা করতে পারে, যা দেখে অন্য সব গার্মেন্ট মালিকরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এ ক্ষেত্রে মিডিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এর আগে পালন করেছে, আগামীতেও করতে পারে। হ
'গামেন্ট সেক্টরের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় প্রয়োজন'
প্রতিমা পাল মজুমদার
সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, বিআইডিএস
এ বিষয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে দেখলাম, ঢাকা শহরের মধ্যে যেসব গার্মেন্ট রয়েছে সেগুলো মোটামুটি ঠিকঠাক আছে। একটু দূরে সাভার-আশুলিয়া এলাকার গার্মেন্টগুলোতেই যত অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম। দুর্ঘটনার পর তাজরীন ফ্যাশনসে গিয়ে দেখলাম, সেখানে তিনটি সিঁড়ি আছে কিন্তু বের হওয়ার পথ ছিল একটি দিয়ে। নিচ তলায় সুতা ও কেমিক্যাল ছিল একসঙ্গে। যেটা থাকার কথা নয়। মালিক আইন ভঙ্গ করেছে। পাশাপাশি সরকারের বড় দোষ হলো, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যে মনিটরিং সেল রয়েছে তার কোনো কার্যকারিতা নেই। তাজরীন ভবনটি বানানোর অনুমতিতে ঘাপলা থাকায় ভবন মালিক এটি তৈরিতে অনেক নিয়ম মানেননি। গার্মেন্ট শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের পরিদর্শক সেলকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। যারা আইন মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি যারা আইন মানবে তাদের ট্যাক্স মওকুফ অথবা পুরস্কারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তা ছাড়া এ সেক্টরে ৮০ শতাংশই নারী শ্রমিক। যত ধরনের দুর্যোগ আসে, সব কিছুতেই তারা বেশি আক্রান্ত হন। নারী মরছে কী হয়েছে, এ ভাবনায় সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে না। নারী ঘরেও অবহেলিত আবার বাইরেও অবহেলিত। শ্রীলংকায় ব্যাপক আকারে চা-শিল্প থাকায় পৃথক মন্ত্রণালয় রয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর আমাদের দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড। এ সেক্টরের সঙ্গে ৪-৫টি মন্ত্রণালয় জড়িত। গার্মেন্ট সেক্টরের জন্য এখন পৃথক একটি মন্ত্রণালয় প্রয়োজন। হ
No comments