চরাচর-সুগন্ধি ধান by শামস শামীম
'উড়কি ধানের মুড়কি দেব, বিন্নি ধানের খৈ'_প্রচলিত লোকছড়ার সেই বিন্নি ধান বাস্তবে হাওরাঞ্চলের অনেক সুগন্ধি ধানের একটি। 'ঝরাবাদল, বাঁশফুল, বর্ণজিরা, তুলসিমালা, গাজী, জোয়ালকোট, মধুমাধব, খাসিয়া বিন্নি, হলিনদামেথি, দুধজর, যদুবিরণ, মধুবিরণ, ফুলমালতি, কলারাজা' _এসব হচ্ছে হাওরাঞ্চলের সুগন্ধি ও কাব্যিক দেশি ধানের নাম।
হাওরভাটির সংগ্রামী ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী এসব ধান হাওর থেকে এখন প্রায় হারিয়েই গেছে। যে কয়েকটি প্রজাতির দেশি ধান এখনো দেখতে পাওয়া যায় তাও করপোরেট কম্পানির হাইব্রিড ধানের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারছে না। সুগন্ধি ও কাব্যিক নামের দেশি ধান চাষের বদলে এখন কম্পানির 'সারথী, অগ্রণী, টিয়া, সোনার বাংলা, হীরা' হাওরে বাজারজুড়ে আছে। দেশি ধানকে হটিয়ে হাইব্রিড ধান এখন স্থায়ী হয়েছে। তবে দেশি ধান এখনো ঝড়-জল-বানের সঙ্গে পরিচর্যা ছাড়াই দীর্ঘক্ষণ যুদ্ধ করে টিকে থাকে_সেই প্রমাণিত বিশ্বাস থেকেই হাওরভাটির বিভিন্ন গ্রামের কৃষক এখনো কিছু জমিতে দেশি ধানের চাষ করে।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা পুস্তকে দেখা গেছে, হাওরাঞ্চলে একসময় ২২৮ প্রজাতির দেশি ধানের চাষ হতো, বিশেষ করে হাওর জেলা সুনামগঞ্জের সুনামগঞ্জ সদর দিরাই, ছাতক, জামালগঞ্জ, ধরমপাশা ও তাহিরপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি দেশি ধান চাষ হতো। এসব প্রজাতির ধান চাষ করতে কৃষকদের সময় ও শ্রম লাগত কম। অতিরিক্ত পরিচর্যা ছাড়াই প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চাষ হতো দেশি ধানের। বোরো মৌসুমে খইয়া, রাতা, কন্দীবোরো, জগলীবোরো, বিচিবিরই, বানাজিরা, সাধু টেপি, রংগিলা, নলবিরণ, সোনা রাতা, লতাবোরো, কইয়াবোরো, লতাটেপি, চন্দ্রী, বাঁশফুল, তুলসিমালা, লালটেপি, গিজাবিরো, বিকিন, গজারি, বর্ণজিরা, কচুশাইল, আসান, অসিম, বিদিন, ফটকা, কাউলি, তায়েফ, রায়েন, বইয়াখাউরি, বেগমপেচিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বোরো ধান চাষ হতো। আমন মৌসুমে দুধজর, বাজলা, মুগি, আশানিয়া, দেপা, বিরল, মোটংগা, গাজী, খামা, গুতি, কলামখনিয়া, খুকনিশাইল, কইতাখামা, জোয়ালকোট, মাতিয়ারি, আইকর শাইল, ময়নাশাইল, গোয়াই, মুগবাদল, ঝড়াবাদল, খইয়া আমন, ডেপা খাগা, কলামাকনি, ধলামাকনি, যদুবিরণ, মধুবিরণ, মধুবাধব, ফুলমালতি, কলারাজা, খাসিয়া বিন্নি, পুরা বিন্নি, সোনাঝুরি, হাতকড়া, ঘোটক, অগি ঘোটক, চাপরাস, নাগা ঠাকুরভোগ ও গোয়ারচরা ধান চাষ হতো। এ ছাড়া আউশ মৌসুমে কিছু এলাকায় মুরালি, দুমাই, মারকা, মোরালি, বগি, দোয়ালিসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি ধান চাষ হতো। এসব নামের ধান একই সঙ্গে স্থানীয় ইতিহাস-ঐতিহ্যেরও প্রতিনিধিত্ব করত।
গ্রামীণ কৃষিবিদরা জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায় দেশি ধানচাষ, যার ধারাবাহিকতা এখনো বিদ্যমান। দেশি ধানের প্রচারণার বদলে শহরে-বন্দরে, গ্রামের হাট-বাজারে, এমনকি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন-বেতারসহ বেসরকারি মিডিয়ায় এখন কেবল হাইব্রিডের প্রচারণা ও জয়গান। হাজার বছরের লোকায়ত জ্ঞানে বেড়ে ওঠা ও পরিবর্তিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কোনো কৃষক ও তার জ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। যারা প্রাকৃতিক ঝড়ঝাপটায় সংগ্রাম করে টিকে আছে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে প্রচারে নিয়ে আসা হচ্ছে না। মিডিয়ায় প্রচারণার নামে মুনাফালোভীরা গ্রামের সহজ-সরল কৃষকদের বেশি ফলনের প্রলোভনই দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণা পুস্তকে দেখা গেছে, হাওরাঞ্চলে একসময় ২২৮ প্রজাতির দেশি ধানের চাষ হতো, বিশেষ করে হাওর জেলা সুনামগঞ্জের সুনামগঞ্জ সদর দিরাই, ছাতক, জামালগঞ্জ, ধরমপাশা ও তাহিরপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি দেশি ধান চাষ হতো। এসব প্রজাতির ধান চাষ করতে কৃষকদের সময় ও শ্রম লাগত কম। অতিরিক্ত পরিচর্যা ছাড়াই প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চাষ হতো দেশি ধানের। বোরো মৌসুমে খইয়া, রাতা, কন্দীবোরো, জগলীবোরো, বিচিবিরই, বানাজিরা, সাধু টেপি, রংগিলা, নলবিরণ, সোনা রাতা, লতাবোরো, কইয়াবোরো, লতাটেপি, চন্দ্রী, বাঁশফুল, তুলসিমালা, লালটেপি, গিজাবিরো, বিকিন, গজারি, বর্ণজিরা, কচুশাইল, আসান, অসিম, বিদিন, ফটকা, কাউলি, তায়েফ, রায়েন, বইয়াখাউরি, বেগমপেচিসহ বিভিন্ন প্রজাতির বোরো ধান চাষ হতো। আমন মৌসুমে দুধজর, বাজলা, মুগি, আশানিয়া, দেপা, বিরল, মোটংগা, গাজী, খামা, গুতি, কলামখনিয়া, খুকনিশাইল, কইতাখামা, জোয়ালকোট, মাতিয়ারি, আইকর শাইল, ময়নাশাইল, গোয়াই, মুগবাদল, ঝড়াবাদল, খইয়া আমন, ডেপা খাগা, কলামাকনি, ধলামাকনি, যদুবিরণ, মধুবিরণ, মধুবাধব, ফুলমালতি, কলারাজা, খাসিয়া বিন্নি, পুরা বিন্নি, সোনাঝুরি, হাতকড়া, ঘোটক, অগি ঘোটক, চাপরাস, নাগা ঠাকুরভোগ ও গোয়ারচরা ধান চাষ হতো। এ ছাড়া আউশ মৌসুমে কিছু এলাকায় মুরালি, দুমাই, মারকা, মোরালি, বগি, দোয়ালিসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি ধান চাষ হতো। এসব নামের ধান একই সঙ্গে স্থানীয় ইতিহাস-ঐতিহ্যেরও প্রতিনিধিত্ব করত।
গ্রামীণ কৃষিবিদরা জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায় দেশি ধানচাষ, যার ধারাবাহিকতা এখনো বিদ্যমান। দেশি ধানের প্রচারণার বদলে শহরে-বন্দরে, গ্রামের হাট-বাজারে, এমনকি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন-বেতারসহ বেসরকারি মিডিয়ায় এখন কেবল হাইব্রিডের প্রচারণা ও জয়গান। হাজার বছরের লোকায়ত জ্ঞানে বেড়ে ওঠা ও পরিবর্তিত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কোনো কৃষক ও তার জ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। যারা প্রাকৃতিক ঝড়ঝাপটায় সংগ্রাম করে টিকে আছে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে প্রচারে নিয়ে আসা হচ্ছে না। মিডিয়ায় প্রচারণার নামে মুনাফালোভীরা গ্রামের সহজ-সরল কৃষকদের বেশি ফলনের প্রলোভনই দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
No comments