সম্পাদকের কলাম-দেশের মানুষ চায় দুই নেত্রীর সমঝোতা by ইমদাদুল হক মিলন
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিল্প, সাহিত্য ও খেলাধুলার ব্যাপারে খুবই উৎসাহী একজন মানুষ। কয়েকটি ঘটনার কথা মনে আছে। বাংলাদেশ যে বছর কুয়ালালামপুরে আইসিসি ট্রফি জিতল, শেষ বলে পাইলটের রানের জন্য অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ, সেবারও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য জায়নামাজে বসে তিনি দোয়া করছিলেন। বাঙালি জাতি উৎকণ্ঠায়- পাইলট পারবেন তো বাংলাদেশকে জেতাতে!
পাইলট পেরেছিলেন এবং বাংলাদেশ আনন্দের বন্যায় ভেসেছিল।
আমাদের জীবনে সুসংবাদ এবং বড় প্রাপ্তি খুব কম। ফলে দেশের যেকোনো গৌরবে সব মানুষ একত্র হয়ে আনন্দ উৎসব করে। তখন কোনো রাজনীতি থাকে না, তখন আওয়ামী লীগ-বিএনপি থাকে না; দেশই প্রধান হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুকন্যা যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকেন, তখন ক্রিকেটে বাংলাদেশ বিস্ময়কর সব ঘটনা ঘটায়। গত এপ্রিলে এশিয়া কাপ ক্রিকেটেও বাংলাদেশ আকাশছোঁয়া সাফল্য অর্জন করেছিল। পৃথিবীর সেরা দুটি দলকে হারিয়ে দিয়েছিল। ফাইনালে পাকিস্তানকে প্রায় হারাতে গিয়েছিল। আর এবার বিজয়ের মাসে বিজয় নামের এক তরুণ ক্রিকেটার গড়ল বিজয়ের নতুন ইতিহাস। ১৬০ রানের ব্যবধানে হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ক্রিকেটে এত বড় জয় বাংলাদেশ কখনো পায়নি। শাবাশ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তোমাদের নিয়ে আমরা গৌরব করি। বাংলাদেশের মুখ পৃথিবীর কাছে উজ্জ্বল করছ তোমরা।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল হক শাকিল আমার প্রিয়ভাজন। বিকেলবেলা সে ফোন করে জানাল, কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাপুরে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধন শেষ করেই ছুটে এসেছেন গণভবনে। টেলিভিশনের সামনে বসেছেন খেলা দেখতে। খেলা তখন শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রীর হাতে মোবাইল, চোখ টেলিভিশনের পর্দায়। বাংলাদেশ জিতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে 'জয় বাংলা' বলে উল্লাস প্রকাশ করেন তিনি। বিসিবি সভাপতিকে ফোন করেন, ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানান। তারপর মিষ্টি আনিয়ে গণভবনের সবাইকে মিষ্টিমুখ করান।
প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের উৎসাহে দেশের মানুষ খুশি হয়, আপ্লুত হয়।
আমার ব্যক্তিগত দুটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। গত রমজানে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ইফতার পার্টি শেষ করে আমরা বঙ্গভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। আমার সঙ্গে 'বাংলাদেশ প্রতিদিন' সম্পাদক নঈম নিজাম। প্রধানমন্ত্রী বেরোবেন, এ জন্য অপেক্ষা। তিনি বেরিয়ে এলেন। আমাকে দেখেই হাসিমুখে এগিয়ে এলেন। আব্বার বইটা পড়েছ?
বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' পড়েছি কি না জানতে চাইলেন। আমি কথা বলার আগেই বললেন, ও, তুমি তো পড়েছ। বইটা নিয়ে তুমি লিখেছিলে। তোমার লেখা আমি পড়েছি।
পাঁচ-সাত মিনিট দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' নিয়ে কথা বললেন। আমি লক্ষ করলাম, কথা বলার সময় তিনি উচ্ছ্বসিত। অর্থাৎ শিল্প-সাহিত্য নিয়ে কথা বলতে তিনি খুব ভালোবাসেন।
আরেক দিন গণভবনে ২৫-৩০ মিনিট তিনি বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' এবং অন্যান্য লেখালেখি নিয়ে, বাংলাদেশ-ভারতের সাহিত্য নিয়ে কথা বললেন। তাঁর সাহিত্যপাঠের অভিজ্ঞতায় আমি বিস্মিত। কোন ফাঁকে এত বই তিনি পড়েছেন!
কথায় কথায় সেদিন বললেন এক-এগারোর সময় অন্তরিন অবস্থায় কেমন করে তিনি 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র ভূমিকা লিখেছিলেন। যে রুমে তিনি থাকতেন, সেই রুমে টেবিল ছিল না। তিনি একটা টেবিল চাইলেন। নড়বড়ে একটা টেবিল তাঁকে দেওয়া হলো। টেবিলের ওপর অয়েলক্লথ বিছিয়ে দেওয়া হলো। ওই টেবিলে বসে তিনি বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র অসাধারণ ভূমিকাটি লিখলেন। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' পড়ে আমি যতটা মুগ্ধ হয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা পড়েও ঠিক ততটাই মুগ্ধ হয়েছি। এ এক দুর্দান্ত রচনা! অন্তরিন থাকা অবস্থায়, ওই ধরনের মানসিক বিপর্যয়ে থাকা অবস্থায় একজন মানুষ কেমন করে লেখেন এই রকম লেখা! বঙ্গবন্ধুই বা কেমন করে পেরেছিলেন জেলখানায় বসে এই রকম বিস্ময়কর একটি লেখা লিখতে!
এক-এগারোর সূত্র ধরে বাংলাদেশের এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা আসে। গত কয়েক মাসে দেশে একের পর এক ঘটে গেছে ভয়াবহ সব ঘটনা। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি নৃশংসভাবে খুন হলেন, সেই হত্যাকাণ্ডের সুরাহা হলো না। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুম হলেন তো হলেনই। কোনো হদিসই মিলল না তাঁর। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি, রামুর ঘটনা, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরের আক্রমণ এবং পুলিশ অসহায় ভঙ্গিতে মার খাচ্ছে, ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে পড়ছে, চাপা পড়ে মরছে মানুষ। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির আগুন কেড়ে নিল ১২৪ জন মানুষের তাজা প্রাণ। পুড়ে কয়লা হয়ে গেল আমাদের অসহায় মানুষগুলো। খালেদা জিয়া মহাসমাবেশ করে আন্দোলনের ডাক দিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন- এই দাবি মানা না হলে অবরোধ এবং লাগাতার হরতালে যাবে বিএনপি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বেগম জিয়া অনড়। অন্যদিকে অনির্বাচিত সরকার ব্যবস্থায় না ফেরার কঠোর অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী। দুই নেত্রীর এই কঠিন মনোভাব দেশের মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। মানুষ অস্থিরতায় ভুগছে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছে। দেশে তৈরি হয়েছে গভীর রাজনৈতিক সংকট।
কী হতে যাচ্ছে দেশে?
গত ৩০ নভেম্বর কালের কণ্ঠে মাহমুদুর রহমান মান্না লিখেছেন, "এই পরিস্থিতির কোনো নিষ্পত্তি হওয়ার জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না আমি। যেকোনোভাবেই হোক একটি হস্তক্ষেপ অবশ্যম্ভাবী, সেটা প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য, সামরিক কিংবা বেসামরিক, দেশি কিংবা বিদেশি, তা বলতে পারব না। এ দুই প্রচণ্ড জেদি নেত্রী যে রকম 'ষাঁড়ের লড়াইয়ের' প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাতে হস্তক্ষেপ ছাড়া নিষ্পত্তির সম্ভাবনা আমি দেখি না।"
২ ডিসেম্বর 'প্রথম আলো'র সাক্ষাৎকারে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, 'বিএনপির সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায়ের দুই বছর পর যখন নির্বাচন হলো, মানুষ তাদের যেভাবে প্রত্যাখ্যান করল, সেটাকেও বিচার বলা যায়। বর্তমান সরকারও কি তাদের মতো বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে চায়? নির্বাচন তো সামনে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে তারা যদি একটা নির্বাচন করে প্রমাণ করতে পারে, মানুষ তাদের মেনে নিচ্ছে, তাহলে বুঝব, খুব ভালো কাজ করেছে। সেই পরীক্ষায় তাদের যাওয়া উচিত। কিন্তু সেই পরীক্ষা তারা এড়াতে চাইছে কেন?'
এ দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কথায় অনেক কিছুই পরিষ্কার।
আমি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, দুই নেত্রীর এই জেদাজেদি একেবারেই পছন্দ করছে না তারা। মানুষ চায়, দুই নেত্রীর সৌহার্দ্যপূর্ণ একটা সম্পর্ক তৈরি হোক। দেশের ভালোর জন্য দুই নেত্রীর মধ্যে একটা সমঝোতা হোক। দেশে সত্যিকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করুক। একটি সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হোক। জেদাজেদির ফল কখনো ভালো হয় না। আমরা শান্তির বাংলাদেশ চাই, স্বস্তির বাংলাদেশ চাই।
পৃথিবীতে দুটি স্লোগান এখন খুব জনপ্রিয় : 'থিংক পজিটিভ' এবং 'রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন'।
আমাদের দুই নেত্রী কি এই স্লোগান দুটি নিয়ে একটু ভাববেন!
পুনশ্চ : ১ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের জনসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'আমাদের রাজনীতি হচ্ছে মানুষের জন্য। আমরা চাই মানুষের আর দেশের উন্নয়ন।' সুতরাং আমরা আশা করতে পারি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই দেশের মানুষ যা চায় তা নিয়ে ভাববেন।
বিরোধীদলীয় নেতার জন্যও একই কথা।
পাইলট পেরেছিলেন এবং বাংলাদেশ আনন্দের বন্যায় ভেসেছিল।
আমাদের জীবনে সুসংবাদ এবং বড় প্রাপ্তি খুব কম। ফলে দেশের যেকোনো গৌরবে সব মানুষ একত্র হয়ে আনন্দ উৎসব করে। তখন কোনো রাজনীতি থাকে না, তখন আওয়ামী লীগ-বিএনপি থাকে না; দেশই প্রধান হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুকন্যা যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকেন, তখন ক্রিকেটে বাংলাদেশ বিস্ময়কর সব ঘটনা ঘটায়। গত এপ্রিলে এশিয়া কাপ ক্রিকেটেও বাংলাদেশ আকাশছোঁয়া সাফল্য অর্জন করেছিল। পৃথিবীর সেরা দুটি দলকে হারিয়ে দিয়েছিল। ফাইনালে পাকিস্তানকে প্রায় হারাতে গিয়েছিল। আর এবার বিজয়ের মাসে বিজয় নামের এক তরুণ ক্রিকেটার গড়ল বিজয়ের নতুন ইতিহাস। ১৬০ রানের ব্যবধানে হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ক্রিকেটে এত বড় জয় বাংলাদেশ কখনো পায়নি। শাবাশ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তোমাদের নিয়ে আমরা গৌরব করি। বাংলাদেশের মুখ পৃথিবীর কাছে উজ্জ্বল করছ তোমরা।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী (মিডিয়া) মাহবুবুল হক শাকিল আমার প্রিয়ভাজন। বিকেলবেলা সে ফোন করে জানাল, কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাপুরে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধন শেষ করেই ছুটে এসেছেন গণভবনে। টেলিভিশনের সামনে বসেছেন খেলা দেখতে। খেলা তখন শেষ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রীর হাতে মোবাইল, চোখ টেলিভিশনের পর্দায়। বাংলাদেশ জিতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে 'জয় বাংলা' বলে উল্লাস প্রকাশ করেন তিনি। বিসিবি সভাপতিকে ফোন করেন, ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানান। তারপর মিষ্টি আনিয়ে গণভবনের সবাইকে মিষ্টিমুখ করান।
প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের উৎসাহে দেশের মানুষ খুশি হয়, আপ্লুত হয়।
আমার ব্যক্তিগত দুটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। গত রমজানে মহামান্য রাষ্ট্রপতির ইফতার পার্টি শেষ করে আমরা বঙ্গভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। আমার সঙ্গে 'বাংলাদেশ প্রতিদিন' সম্পাদক নঈম নিজাম। প্রধানমন্ত্রী বেরোবেন, এ জন্য অপেক্ষা। তিনি বেরিয়ে এলেন। আমাকে দেখেই হাসিমুখে এগিয়ে এলেন। আব্বার বইটা পড়েছ?
বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' পড়েছি কি না জানতে চাইলেন। আমি কথা বলার আগেই বললেন, ও, তুমি তো পড়েছ। বইটা নিয়ে তুমি লিখেছিলে। তোমার লেখা আমি পড়েছি।
পাঁচ-সাত মিনিট দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' নিয়ে কথা বললেন। আমি লক্ষ করলাম, কথা বলার সময় তিনি উচ্ছ্বসিত। অর্থাৎ শিল্প-সাহিত্য নিয়ে কথা বলতে তিনি খুব ভালোবাসেন।
আরেক দিন গণভবনে ২৫-৩০ মিনিট তিনি বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' এবং অন্যান্য লেখালেখি নিয়ে, বাংলাদেশ-ভারতের সাহিত্য নিয়ে কথা বললেন। তাঁর সাহিত্যপাঠের অভিজ্ঞতায় আমি বিস্মিত। কোন ফাঁকে এত বই তিনি পড়েছেন!
কথায় কথায় সেদিন বললেন এক-এগারোর সময় অন্তরিন অবস্থায় কেমন করে তিনি 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র ভূমিকা লিখেছিলেন। যে রুমে তিনি থাকতেন, সেই রুমে টেবিল ছিল না। তিনি একটা টেবিল চাইলেন। নড়বড়ে একটা টেবিল তাঁকে দেওয়া হলো। টেবিলের ওপর অয়েলক্লথ বিছিয়ে দেওয়া হলো। ওই টেবিলে বসে তিনি বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র অসাধারণ ভূমিকাটি লিখলেন। 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' পড়ে আমি যতটা মুগ্ধ হয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা পড়েও ঠিক ততটাই মুগ্ধ হয়েছি। এ এক দুর্দান্ত রচনা! অন্তরিন থাকা অবস্থায়, ওই ধরনের মানসিক বিপর্যয়ে থাকা অবস্থায় একজন মানুষ কেমন করে লেখেন এই রকম লেখা! বঙ্গবন্ধুই বা কেমন করে পেরেছিলেন জেলখানায় বসে এই রকম বিস্ময়কর একটি লেখা লিখতে!
এক-এগারোর সূত্র ধরে বাংলাদেশের এখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা আসে। গত কয়েক মাসে দেশে একের পর এক ঘটে গেছে ভয়াবহ সব ঘটনা। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি নৃশংসভাবে খুন হলেন, সেই হত্যাকাণ্ডের সুরাহা হলো না। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী গুম হলেন তো হলেনই। কোনো হদিসই মিলল না তাঁর। পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি, রামুর ঘটনা, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরের আক্রমণ এবং পুলিশ অসহায় ভঙ্গিতে মার খাচ্ছে, ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে পড়ছে, চাপা পড়ে মরছে মানুষ। গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির আগুন কেড়ে নিল ১২৪ জন মানুষের তাজা প্রাণ। পুড়ে কয়লা হয়ে গেল আমাদের অসহায় মানুষগুলো। খালেদা জিয়া মহাসমাবেশ করে আন্দোলনের ডাক দিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন- এই দাবি মানা না হলে অবরোধ এবং লাগাতার হরতালে যাবে বিএনপি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বেগম জিয়া অনড়। অন্যদিকে অনির্বাচিত সরকার ব্যবস্থায় না ফেরার কঠোর অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী। দুই নেত্রীর এই কঠিন মনোভাব দেশের মানুষকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। মানুষ অস্থিরতায় ভুগছে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছে। দেশে তৈরি হয়েছে গভীর রাজনৈতিক সংকট।
কী হতে যাচ্ছে দেশে?
গত ৩০ নভেম্বর কালের কণ্ঠে মাহমুদুর রহমান মান্না লিখেছেন, "এই পরিস্থিতির কোনো নিষ্পত্তি হওয়ার জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না আমি। যেকোনোভাবেই হোক একটি হস্তক্ষেপ অবশ্যম্ভাবী, সেটা প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্য, সামরিক কিংবা বেসামরিক, দেশি কিংবা বিদেশি, তা বলতে পারব না। এ দুই প্রচণ্ড জেদি নেত্রী যে রকম 'ষাঁড়ের লড়াইয়ের' প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাতে হস্তক্ষেপ ছাড়া নিষ্পত্তির সম্ভাবনা আমি দেখি না।"
২ ডিসেম্বর 'প্রথম আলো'র সাক্ষাৎকারে ড. কামাল হোসেন বলেছেন, 'বিএনপির সরকার ক্ষমতা থেকে বিদায়ের দুই বছর পর যখন নির্বাচন হলো, মানুষ তাদের যেভাবে প্রত্যাখ্যান করল, সেটাকেও বিচার বলা যায়। বর্তমান সরকারও কি তাদের মতো বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে চায়? নির্বাচন তো সামনে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে তারা যদি একটা নির্বাচন করে প্রমাণ করতে পারে, মানুষ তাদের মেনে নিচ্ছে, তাহলে বুঝব, খুব ভালো কাজ করেছে। সেই পরীক্ষায় তাদের যাওয়া উচিত। কিন্তু সেই পরীক্ষা তারা এড়াতে চাইছে কেন?'
এ দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কথায় অনেক কিছুই পরিষ্কার।
আমি সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, দুই নেত্রীর এই জেদাজেদি একেবারেই পছন্দ করছে না তারা। মানুষ চায়, দুই নেত্রীর সৌহার্দ্যপূর্ণ একটা সম্পর্ক তৈরি হোক। দেশের ভালোর জন্য দুই নেত্রীর মধ্যে একটা সমঝোতা হোক। দেশে সত্যিকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করুক। একটি সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হোক। জেদাজেদির ফল কখনো ভালো হয় না। আমরা শান্তির বাংলাদেশ চাই, স্বস্তির বাংলাদেশ চাই।
পৃথিবীতে দুটি স্লোগান এখন খুব জনপ্রিয় : 'থিংক পজিটিভ' এবং 'রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন'।
আমাদের দুই নেত্রী কি এই স্লোগান দুটি নিয়ে একটু ভাববেন!
পুনশ্চ : ১ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের জনসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'আমাদের রাজনীতি হচ্ছে মানুষের জন্য। আমরা চাই মানুষের আর দেশের উন্নয়ন।' সুতরাং আমরা আশা করতে পারি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই দেশের মানুষ যা চায় তা নিয়ে ভাববেন।
বিরোধীদলীয় নেতার জন্যও একই কথা।
No comments