আবুল হোসেনসহ ১২ জনের নামে মামলা হচ্ছে! by হায়দার আলী
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীকে গতকাল সোমবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।
দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে অনুসন্ধানদলের সদস্যদের তৈরি চূড়ান্ত প্রতিবেদন আজ মঙ্গলবার কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হবে। এই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই কমিশন জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া প্রতিবেদনের একটি কপি হস্তান্তর করা হবে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের কাছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আজ কমিশনের সঙ্গে তাদের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। তবে জামায়াতের ডাকা হরতালের কারণে আজ বৈঠক করা সম্ভব না হলে তা আগামীকাল হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধানদলের সদস্যরা তাঁদের প্রতিবেদনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করবেন। দুদকের ভেতরেই একটি পক্ষ চাইছে, আবুল হোসেনকে বাদ দিয়ে মামলার সুপারিশ করতে। কিন্তু অন্য একটি পক্ষ চায়, দুদকের অনুসন্ধানে যাঁদের নাম উঠে এসেছে, মামলার সুপারিশে তাঁদের সবার নামই থাকুক। এসব নিয়ে দুদকের ভেতরে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ততা থাকলেও আবুল হোসেনের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশ্বব্যাংক প্যানেলের দাবি, কানাডিয়ান নাগরিক রমেশ সাহার ডায়েরিতে যে পাঁচজনের নাম ছিল, সৈয়দ আবুল হোসেন তাঁদের অন্যতম। দুদকের অনুসন্ধানেও তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণও পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। বিশ্বব্যাংকের
বিশেষজ্ঞ প্যানেল মূলত আবুল হোসেনসহ অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করারই ইঙ্গিত দিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত দুদক আবুল হোসেনসহ সব অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধেই মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, আগামীকালই এ মামলা করবে দুদক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মামলা করা হবে। প্রতিবেদনে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হবে, তাঁদের সবার নামেই মামলা করবে কমিশন। এই মামলা থেকে আবুল হোসেনকে বাঁচাতে গেলে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন হবে না বলেও তিনি জানান।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, অনুসন্ধানদল তাদের অনুসন্ধানকাজ শেষ করেছে। এখন প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। প্রতিবেদন তৈরি শেষ হলেই আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) কিংবা ৫ ডিসেম্বর তা জমা দেবে। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। কাদের নামে মামলা করা হবে সেটা প্রতিবেদন না দেখে বলা যাবে না বলেও জানান তিনি।
তিন সদস্যের বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান লুই গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো এবং সদস্য টিমোথি টং ও রিচার্ড অল্ডারম্যান গত রবিবার দুদকের সঙ্গে প্রথম দফায় বৈঠক করেন। এ সময় বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইন তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।
ন্যায়বিচারের আশায় আবুল হোসেন
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির দায় চাপালেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর ওপর। গতকাল জবানবন্দি শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দুদক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের দেওয়া লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, 'কানাডীয় কম্পানি এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আবুল হাসান চৌধুরী আমার কাছে এসেছিলেন। আমাকে অনুরোধ করেছিলেন, এসএনসি লাভালিনের দরপ্রস্তাব যেন সঠিকভাবে মূল্যায়িত হয়। আবুল হাসান চৌধুরী সম্ভবত দুইবার আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি এসএনসি লাভালিনের যেসব কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি নিয়ে দেখা করেছেন, তাঁদের দেখলে আমি কাউকে সম্ভবত এখন আইডেন্টিফাই করতে পারব না। এসএনসি লাভালিনসহ দরপ্রস্তাবে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধি কিংবা ব্যক্তিবর্গ যে যখন দেখা করেছেন, সেগুলো সৌজন্যমূলক। এসব সাক্ষাতে এসএনসি লাভালিন কোনো পৃথক গুরুত্ব পায়নি।'
পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে আবুল হোসেন বলেন, 'দরপত্র মূল্যায়নের জন্য কতবার মূল্যায়ন কিংবা বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়েছে তা স্পষ্ট মনে নেই। সেতু বিভাগ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগ। এই বিভাগের প্রধান হচ্ছেন একজন সচিব। এ ধরনের কমিটি গঠনের এখতিয়ার সেতু বিভাগের সচিবের। তিনি স্বীয় বিবেচনায় প্রকল্পের স্বার্থে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছেন। তবে আনুষ্ঠানিকতার কারণে তাঁর সুপারিশসহ ফাইলে আমার স্বাক্ষর নিয়েছেন। এ ধরনের মূল্যায়ন কমিটি গঠন ও পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমার কোনো ভূমিকা ছিল না, অভিপ্রায়ও ছিল না।' রমেশ সাহার ডায়রিতে তাঁর নাম থাকা প্রসঙ্গে আবুল হোসেন বলেন, 'আমি কখনো রমেশ সাহা বা ইসমাঈলের সঙ্গে বা এসএনসি লাভালিনের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে এককভাবে কথা বলিনি। যদি রমেশ সাহা তাঁর ডায়রিতে কিছু লিখে থাকেন- তা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার।' তিনি বলেন, 'জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যে কমিটি হয়েছিল, তাতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কেউ বলতে পারবেন না, আমি কারো পক্ষে বা কাউকে কাজ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছি।' সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, 'সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আমি কাজ করেছি। মহান দার্শনিক প্লেটো বলেছেন, ন্যায়বিচারের রূপ একটি, আর অন্যায় বিচারের শত রূপ। এ কারণেই ন্যায়বিচার করা অপেক্ষা অন্যায় বিচার করা সহজ।' এ সময় তিনি বলেন, 'আমি ন্যায়বিচারের জন্য দুদকের ডাকে হাজির হয়েছি। আবার ডাকলে আসব। এ পর্যন্ত আমাকে তিনবার দুদকের মুখোমুখি হতে হয়েছে।'
গতকাল দুপুর পৌনে ২টায় সৈয়দ আবুল হোসেন দুদক কার্যালয়ে যান। অনুসন্ধানদলের সদস্যরা সোয়া ২টায় তাঁর জবানবন্দি নেওয়া শুরু করেন। শেষ হয় বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে। অনুসন্ধানদলের প্রধান আবদুল্লা-আল-জাহিদের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। দলের অপর তিন সদস্য হলেন- দুদকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী ও উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম। দুদক সূত্র জানিয়েছে, গত রবিবার আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি 'গাইডলাইন' দিয়েছিল ঢাকায় আসা বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল। সে গাইডলাইন অনুযায়ী ইন্টারোগেশন সেলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
নিজেকে নির্দোষ দাবি আবুল হাসান চৌধুরীর
দ্বিতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমি কোনো অন্যায় করিনি, কোনো অনৈতিক কাজের সঙ্গে কখনোই জড়িত ছিলাম না। বিজয়ের এই মাসে সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীন সাংবাদিকতা। আশা করি, আপনারা সঠিক সাংবাদিকতা করবেন।' গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি দুদক কার্যালয়ে আসেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুর পৌনে ১২টায় তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যান।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যোগাযোগ
এদিকে, বিশ্বব্যাংক সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক ও বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বৈঠকের পর যেসব তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা পেয়েছেন সেগুলো এবং তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরের কর্মকর্তাদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইন রাজধানীর গুলশানের নিজ বাসভবন থেকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত পর্যন্ত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তথ্য দেন বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরের কর্মকর্তাদের। ভিডিও কনফারেন্সের সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা জিমা ম্যান।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধানদলের সদস্যরা তাঁদের প্রতিবেদনে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করবেন। দুদকের ভেতরেই একটি পক্ষ চাইছে, আবুল হোসেনকে বাদ দিয়ে মামলার সুপারিশ করতে। কিন্তু অন্য একটি পক্ষ চায়, দুদকের অনুসন্ধানে যাঁদের নাম উঠে এসেছে, মামলার সুপারিশে তাঁদের সবার নামই থাকুক। এসব নিয়ে দুদকের ভেতরে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ততা থাকলেও আবুল হোসেনের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে। বিশ্বব্যাংক প্যানেলের দাবি, কানাডিয়ান নাগরিক রমেশ সাহার ডায়েরিতে যে পাঁচজনের নাম ছিল, সৈয়দ আবুল হোসেন তাঁদের অন্যতম। দুদকের অনুসন্ধানেও তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণও পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। বিশ্বব্যাংকের
বিশেষজ্ঞ প্যানেল মূলত আবুল হোসেনসহ অন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করারই ইঙ্গিত দিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন করবে না। এ অবস্থায় শেষ পর্যন্ত দুদক আবুল হোসেনসহ সব অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধেই মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। জানা গেছে, আগামীকালই এ মামলা করবে দুদক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মামলা করা হবে। প্রতিবেদনে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হবে, তাঁদের সবার নামেই মামলা করবে কমিশন। এই মামলা থেকে আবুল হোসেনকে বাঁচাতে গেলে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন হবে না বলেও তিনি জানান।
দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, অনুসন্ধানদল তাদের অনুসন্ধানকাজ শেষ করেছে। এখন প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। প্রতিবেদন তৈরি শেষ হলেই আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) কিংবা ৫ ডিসেম্বর তা জমা দেবে। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। কাদের নামে মামলা করা হবে সেটা প্রতিবেদন না দেখে বলা যাবে না বলেও জানান তিনি।
তিন সদস্যের বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান লুই গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো এবং সদস্য টিমোথি টং ও রিচার্ড অল্ডারম্যান গত রবিবার দুদকের সঙ্গে প্রথম দফায় বৈঠক করেন। এ সময় বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইন তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।
ন্যায়বিচারের আশায় আবুল হোসেন
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির দায় চাপালেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর ওপর। গতকাল জবানবন্দি শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দুদক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের দেওয়া লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, 'কানাডীয় কম্পানি এসএনসি লাভালিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আবুল হাসান চৌধুরী আমার কাছে এসেছিলেন। আমাকে অনুরোধ করেছিলেন, এসএনসি লাভালিনের দরপ্রস্তাব যেন সঠিকভাবে মূল্যায়িত হয়। আবুল হাসান চৌধুরী সম্ভবত দুইবার আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি এসএনসি লাভালিনের যেসব কর্মকর্তা বা প্রতিনিধি নিয়ে দেখা করেছেন, তাঁদের দেখলে আমি কাউকে সম্ভবত এখন আইডেন্টিফাই করতে পারব না। এসএনসি লাভালিনসহ দরপ্রস্তাবে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধি কিংবা ব্যক্তিবর্গ যে যখন দেখা করেছেন, সেগুলো সৌজন্যমূলক। এসব সাক্ষাতে এসএনসি লাভালিন কোনো পৃথক গুরুত্ব পায়নি।'
পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই দাবি করে আবুল হোসেন বলেন, 'দরপত্র মূল্যায়নের জন্য কতবার মূল্যায়ন কিংবা বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয়েছে তা স্পষ্ট মনে নেই। সেতু বিভাগ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগ। এই বিভাগের প্রধান হচ্ছেন একজন সচিব। এ ধরনের কমিটি গঠনের এখতিয়ার সেতু বিভাগের সচিবের। তিনি স্বীয় বিবেচনায় প্রকল্পের স্বার্থে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছেন। তবে আনুষ্ঠানিকতার কারণে তাঁর সুপারিশসহ ফাইলে আমার স্বাক্ষর নিয়েছেন। এ ধরনের মূল্যায়ন কমিটি গঠন ও পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমার কোনো ভূমিকা ছিল না, অভিপ্রায়ও ছিল না।' রমেশ সাহার ডায়রিতে তাঁর নাম থাকা প্রসঙ্গে আবুল হোসেন বলেন, 'আমি কখনো রমেশ সাহা বা ইসমাঈলের সঙ্গে বা এসএনসি লাভালিনের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে এককভাবে কথা বলিনি। যদি রমেশ সাহা তাঁর ডায়রিতে কিছু লিখে থাকেন- তা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার।' তিনি বলেন, 'জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যে কমিটি হয়েছিল, তাতে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কেউ বলতে পারবেন না, আমি কারো পক্ষে বা কাউকে কাজ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছি।' সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, 'সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আমি কাজ করেছি। মহান দার্শনিক প্লেটো বলেছেন, ন্যায়বিচারের রূপ একটি, আর অন্যায় বিচারের শত রূপ। এ কারণেই ন্যায়বিচার করা অপেক্ষা অন্যায় বিচার করা সহজ।' এ সময় তিনি বলেন, 'আমি ন্যায়বিচারের জন্য দুদকের ডাকে হাজির হয়েছি। আবার ডাকলে আসব। এ পর্যন্ত আমাকে তিনবার দুদকের মুখোমুখি হতে হয়েছে।'
গতকাল দুপুর পৌনে ২টায় সৈয়দ আবুল হোসেন দুদক কার্যালয়ে যান। অনুসন্ধানদলের সদস্যরা সোয়া ২টায় তাঁর জবানবন্দি নেওয়া শুরু করেন। শেষ হয় বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে। অনুসন্ধানদলের প্রধান আবদুল্লা-আল-জাহিদের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। দলের অপর তিন সদস্য হলেন- দুদকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী ও উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম। দুদক সূত্র জানিয়েছে, গত রবিবার আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি 'গাইডলাইন' দিয়েছিল ঢাকায় আসা বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল। সে গাইডলাইন অনুযায়ী ইন্টারোগেশন সেলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
নিজেকে নির্দোষ দাবি আবুল হাসান চৌধুরীর
দ্বিতীয় দফা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী। পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমি কোনো অন্যায় করিনি, কোনো অনৈতিক কাজের সঙ্গে কখনোই জড়িত ছিলাম না। বিজয়ের এই মাসে সবচেয়ে বড় অর্জন স্বাধীন সাংবাদিকতা। আশা করি, আপনারা সঠিক সাংবাদিকতা করবেন।' গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি দুদক কার্যালয়ে আসেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুর পৌনে ১২টায় তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যান।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যোগাযোগ
এদিকে, বিশ্বব্যাংক সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক ও বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বৈঠকের পর যেসব তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা পেয়েছেন সেগুলো এবং তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরের কর্মকর্তাদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইন রাজধানীর গুলশানের নিজ বাসভবন থেকে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত পর্যন্ত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তথ্য দেন বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরের কর্মকর্তাদের। ভিডিও কনফারেন্সের সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা জিমা ম্যান।
No comments