সাঈদী নির্দোষ প্রমাণিত হবেনঃ রাজ্জাক
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে আইনি বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।
সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১- এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে ট্রাইব্যুনালে তিনি এই যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেন। পরে মামলার কার্যক্রম আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
যুক্তি উপস্থাপন শেষে সাংবাদিকদের ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাঈদী সাহেবের পক্ষে আইনি বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেছি।’
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের কাছে যুক্তি উপস্থাপন করে তার বিরুদ্ধে আনা ১৯টি চার্জ থেকে অব্যাহতি চেয়েছি।
তিনি আরো বলেন, প্রসিকিউশন যেসব অভিযোগ এনেছে, তাতে সাঈদী সাহেবের কোন শাস্তি হতে পারে না। আমরা আশা করছি, উনি এ মামলা থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হবে।
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের পিতা শহীদ ফয়জুর রহমানকে হত্যায় সাঈদীর সহযোগিতা রয়েছে- এমন অভিযোগে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, ‘শহীদ ফয়জুর রহমানের স্ত্রী আয়েশা ফয়েজ কোথায়? তার ছেলে-মেয়েরা কোথায়? তার ছেলে-মেয়েরা কেন তার পিতার হত্যার বিষয়ে সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে আসলেন না?’
তিনি বলেন, ‘শহীদ ফয়জুর রহমানের স্ত্রী আয়েশা ফয়েজ এখনো জীবিত আছেন। তিনি তার স্বামী হত্যার বিষয়ে বই লিখেছেন। তিনি এ মামলায় সবচেয়ে ভাল সাক্ষী হতে পারতেন। কিন্তু তিনি কেন আসলেন না?’
রাজ্জাক প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তার ছেলে-মেয়েরা, মেয়ের জামাই জীবিত আছেন। তাদের কেউ-ই বা কেন আসলেন না এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে? তার জীবিত ছেলে-মেয়েদের মধ্যে একজন হলেন- ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। তার তো ছুটে আসার কথা ছিল। আয়েশা ফয়েজের মেয়ের জামাই অ্যাডভোকেট আলী হায়দার খান এই ট্রাইব্যুনাল থেকে মাত্র দুশ’ গজ দূরে হাইকোর্টে প্রাকটিস করেন। তিনিও আসেনি তার শ্বশুরের হত্যাকাণ্ড বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে।’
সাঈদীর এই আইনজীবী আরো বলেন, ‘বসনিয়াসহ পৃথিবীর যেখানেই এ ধরনের যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে, সেখানেই আমরা জানি ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়-স্বজনরা কোর্টের সামনে লাইন দিয়ে ভিড় করেছে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য। কিন্তু আমরা শহীদ ফয়জুর রহমানের স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের কাউকে এখানে সাক্ষী হিসেবে দেখলাম না। এ থেকে প্রমাণিত, মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা মিথ্যা, সাজানো ষড়যন্ত্র।’
তিনি জানান, মাওলানা সাঈদীর একমাত্র অভিযোগ তিনি একজন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তিনি কোরআনের তাফসির করেন। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তার একটিতেও তার একদিনও শাস্তি হওয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন রাজ্জাক।
তিনি বলেন, সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ১৯টি অভিযোগের সবগুলোই বাতিল হওয়া উচিত। সবগুলো অভিযোগেই তাকে নির্দোষ ঘোষণা দেয়া উচিত। তিনি যে নির্দোষ সে মর্মে আমরা প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছি।
ট্রাইব্যুনালে যুক্তি উপস্থানের শেষ পর্যায়ে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনীত ষড়যন্ত্র এমনই এক ষড়যন্ত্র যে, পাহাড় টলে যাবার মত। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তার একটির সাথেও তার কোন সম্পর্ক নেই। এত বড় একটি মামলা এত বড় অভিযোগ তার বিরুদ্ধে কিন্তু আয়েশা ফয়েজ, ড. জাফর ইকবাল, এ মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসলেন না।’
তিনি বলেন, ‘ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়। পৃথিবীর প্রথম রাজনৈতিক হত্যার শিকার হয়েছেন জুলিয়াস সিজার। খৃস্টপূর্ব ৪৪ সালে সেটি হয়েছে। তার ১৬০০ বছর পর এ নিয়ে নাটক লিখেছেন সেক্সপিয়ার। আজ এখানে যা হচ্ছে, তা নিয়েও একদিন হয়তো কেউ নাটক লিখবে। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবেই।’
অন্যদিকে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের এসব কথার জবাবে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, ‘উনি যে নাটকের কথা বলেছেন, তা বলা মোটেও ঠিক হয়নি। এখানে কোন নাকট হয়নি। আমরা কোন নাটক করিনি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করেছি, আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে আবার আমাদের যুক্তি উপস্থাপন করব। তারপর আদালত এ বিষয়ে রায় দেবেন।’
‘তবে আমরা যে ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেছি, তাতে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।’- যোগ করেন হায়দার আলী।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পর অপর অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিরুদ্ধে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।
সোমবার সকালে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাককে যুক্তি উপস্থাপনে সহায়তা করেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন। আরো উপস্থিত ছিলেন- অ্যাডভোকেট মনজুর আহমেদ আনসারী।
সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষে সৈয়দ হায়দার আলী গত ১৫ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। তিনি গত ৫ নভেম্বর থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেছিলেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটককৃতদের মধ্যে একমাত্র দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন, আসামিপক্ষের সাক্ষী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ সবার জবানবন্দি গ্রহণ এবং জেরা শেষ হয়েছে।
মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য যুক্তিতর্ক উপস্থাপনও শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
সাঈদীকে একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেপ্তার করা হয়। পরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১০ সালের ২ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত বছরের ১৪ জুলাই তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। ৩ অক্টোবর সাঈদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলায় বিচারকাজ শুরু হয়।
সাঈদীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ এবং এ ধরনের অপরাধে সাহায্য করা ও জড়িত থাকার সুনির্দিস্ট ২০টি ঘটনায় অভিযোগ আনা হয়।
No comments