বরিশালের এসপি অফিস-বেতন তুলতেও উৎকোচ!
কথায় আছে, 'কাকের মাংস কাকে খায় না।' মনুষ্য সমাজে যারা অন্যায়-অনিয়ম করে তারা অন্তত স্বগোত্রীয়দের ছাড় দেয়, এটা বোঝাতেই এ প্রবাদের ব্যবহার। বাংলাদেশে দুর্নীতির বিস্তৃতি ঘটেছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, এমনই অভিযোগ এবং চারপাশে তাকালে স্পষ্ট হয়ে যায় যে তা অমূলক নয়।
সোমবার সমকালে 'বেতন তুলতে উৎকোচ দিতে হচ্ছে বরিশালের এসআইদের!' শিরোনামের খবরে বলা হয়, ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা মাসিক বেতন তুলতে মাথাপিছু ঘুষ দিতে হয় ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। বরিশাল জেলা পুলিশ বিভাগে এ উৎকোচ-বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ। ঘুষের গ্রহীতা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের একজন হিসাবরক্ষক। বেতনের চেক তুলতে গেলেই তিনি 'ইনাম' দাবি করেন। সমকালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষক অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, কিছু কাগজপত্র তৈরি করে হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠানোর জন্য সামান্য খরচের টাকা রাখা হয়েছে। কিন্তু সরকারি অফিসের নিয়ম অনুযায়ী, বেতনের যাবতীয় কাগজপত্র তৈরি করা এবং প্রয়োজনে হিসাবরক্ষণ অফিসসহ যে কোনো স্থানে তা পাঠানোর জন্য নির্দিষ্ট লোকের দায়িত্ব থাকে। এ জন্য ডাক খরচসহ যে কোনো ব্যয় নির্বাহের জন্যও কারও কাছে হাত পাতার দরকার নেই। তাহলে কেন এই 'সামান্য খরচ' আদায়ের নিয়ম? বরিশালের পুলিশ সুপার বেতন তোলার প্রক্রিয়ায় উৎকোচ বাণিজ্যের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা তার এ মনোভাবকে স্বাগত জানাই। পুলিশ বিভাগের উপপরিদর্শক বা এসআইদের পদকে তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করা সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। এ নতুন মর্যাদার কারণে তাদের বেতন এখন থেকে চেকের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যবস্থায় এসআইদের ভোগান্তি কমার কথা। কিন্তু কাকই যে কাকের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে, এ দৃষ্টান্ত কেবল বরিশাল নয়, দেশের আরও অনেক স্থানেই এ ধরনের 'বিভাগীয় হয়রানি-ভোগান্তির' ঘটনা থাকা স্বাভাবিক। পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহল বিষয়টি আমলে নেবে কি? কেবল পুলিশ বিভাগ নয়, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সব অফিসেই এ ধরনের ঘুষ-দুর্নীতি একরকম ওপেন সিক্রেট। দেশের হাজার হাজার বেসরকারি স্কুল ও কলেজশিক্ষক তাদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ তুলতে গিয়ে নিয়মিত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এক যুগের বেশি এমপিওভুক্তির তালিকায় থাকার পরও সহকারী প্রধান শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করে নতুন স্কেলে বেতন-ভাতা পেতে বছর গড়িয়ে যায়। এমন ঘটনা ঘটছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মীদের বাগে পেয়ে কিছু আদায় করে নেওয়ার মনোভাবের কারণে_ এমন অভিযোগ ভূরি ভূরি। পেনশনভোগীরা নিজ অফিসের এক সময়ের সহকর্মীদের হাতেই চরম ভোগান্তির শিকার হন এবং নগদ কিছু না খসালে কিছুতেই নিষ্কৃতি মেলে না। এ অবস্থার কি পরিবর্তন ঘটবে না? সমকালের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বরিশালের কয়েকজন এসআই উৎকোচ দিয়ে বেতন না তুলতে পণ করেছেন। এ মনোভাবকে আমরা স্বাগত জানাই। দেশের সর্বত্র এমন অবস্থার সৃষ্টি হলে দুর্নীতিবাজরা প্রমাদ গুনবেই। তবে একই সঙ্গে থাকা চাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের কঠোর মনোভাব। দুর্নীতির কালান্তক ব্যাধি থেকে দেশকে মুক্ত করতে এর বিকল্প নেই।
No comments