বীর মুক্তিযোদ্ধা- তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না

৫৮৬ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। হাবিবুল আলম, বীর প্রতীক দুঃসাহসী এক মুক্তিযোদ্ধা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ক্র্যাক প্লাটুনের অকুতোভয় ও দুর্ধর্ষ সদস্যরা ঢাকায় একের পর এক অপারেশন করেন।
এসব অপারেশনে তখন পাকিস্তান সরকারের ভিত্তি কেঁপে উঠেছিল। এই ক্র্যাক প্লাটুনের একজন সদস্য ছিলেন হাবিবুল আলম। তিনি ঢাকায় বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন।
হাবিবুল আলমের নিজ বয়ানে একটি অপারেশনের আংশিক বর্ণনা:
‘আমরা প্ল্যান করলাম একটা সিরিয়াস টাইপের অ্যাকশনের। সিদ্ধান্ত হলো ২০ নম্বর রোডে (ধানমন্ডি) চায়নিজ এম্বাসি এবং ১৮ নম্বর রোডে জাস্টিস আবদুল জব্বার খানের বাসার সামনে অপারেশন করার। সেখানে পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ প্রহরায় থাকত।
‘কাজী (কাজী কামালউদ্দিন, বীর বিক্রম), বদি (বদিউল আলম বীর বিক্রম), জুয়েল (শহীদ আবদুল হালিম জুয়েল বীর বিক্রম), রুমি (শহীদ শাফী ইমাম রুমী বীর বিক্রম), স্বপন (কামরুল হক স্বপন বীর বিক্রম) ও আমাকে নিয়ে একটি দল গঠন করা হলো। ‘এবার আমাদের টার্গেট ছিল “অ্যাটাক অন দ্য মুভ”। বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন। আগেই রেকি করা হয়েছিল। কিন্তু এর জন্য গাড়ি প্রয়োজন। ভার পড়ল আমার ও বদির ওপর।
‘মাজদা রাইটহ্যান্ড গাড়ি। ঠিক হলো আমি স্টিয়ারিং হুইলটা ধরব। আমার অস্ত্র যাবে বদির কাছে। এ অপারেশনে শেষ পর্যন্ত জুয়েলকে নেওয়া হয়নি তাঁর হাতের জখমের কারণে। আমরা গাড়ি নিয়ে ২০ নম্বর সড়কে গিয়ে আশ্চর্য হলাম। দেখি, নির্দিষ্ট বাড়ির সামনে পাকিস্তানি সেনা-পুলিশ নেই। গাড়ি টার্ন করে ১৮ নম্বরে ঢুকে পশ্চিম দিকে এগোতে থাকলাম।
‘দেখলাম, জাস্টিস জব্বার খানের বাড়ির সামনে আটজন পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ বসে আড্ডা মারছে। কেউ কেউ সিগারেট ফুঁকছে। আমি সাতমসজিদ রোডের সামনে থেকে গাড়ি ঘুরালাম। কাজী ও বদিকে বলা হলো ফায়ার করতে। রুমী ও স্বপনকে বলা হলো আমাদের লক্ষ্য করে কেউ গুলি করে কি না, তা খেয়াল রাখতে।
‘ইট ওয়াজ হার্ডলি টু-থ্রি সেকেন্ড। একটা ব্রাশ মানে দুই থেকে তিন সেকেন্ড, ১০ রাউন্ড গুলি বেরিয়ে যাওয়া। দুই লেবেলে গেল। কাজীরটা বুক বরাবর, আর বদিরটা পেট বরাবর। আমি খুব আস্তে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। আটজনই পড়ে গেল। সহজেই কাজ শেষ হওয়ায় আমরা আনন্দিত হলাম।’
তাঁরা এ অপারেশন করেন ২৫ আগস্ট।
হাবিবুল আলম ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে ভারতে যান। ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকা শহরে বেশ কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বেরজন্য হাবিবুল আলমকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩১৫।
হাবিবুল আলম বর্তমানে ব্যবসায়ী। তাঁর পৈতৃক বাড়ি নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার পিরুলী গ্রামে। স্থায়ীভাবে বাস করেন ঢাকায় (১/৩ দিলু রোড, ইস্কাটন)। তাঁর বাবার নাম (প্রকৌশলী) হাফিজুল আলম, মা ফাতেমা বেগম। স্ত্রী তৌহিদা আলম। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে।
সূত্র: হাবিবুল আলম বীর প্রতীক, মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীর প্রতীক ও শহীদ শাফী ইমাম রুমী স্মারকগ্রন্থ।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
ৎashedtৎ@pৎothom-alo.infoax

No comments

Powered by Blogger.