হিনা যে কারণে কথা বলবেন না by মিজানুর রহমান
বিউটি উইথ ব্রেইন হিনা রাব্বানী খার। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রথমবারের মতো ঢাকা আসছেন আজ। সকাল ১০টায় বিশেষ বিমানে চড়ে রাজধানীর মাটিতে পা রাখবেন। মাত্র ৬ ঘণ্টার কম সময় অবস্থান করবেন ঢাকায়। ব্যস্ত সময় কাটাবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে।
তার সম্মানে দীপু মনির দেয়া মধ্যাহ্নভোজেও যোগ দেবেন। মতবিনিময় করবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত তার অধস্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে। কিন্তু কোথাও মিডিয়ার মুখোমুখি হবেন না। কোন অবস্থাতেই যাতে মিডিয়া তার ধারে কাছে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আপাতত হিনা কোন কভারেজ চাইছেন না বলে কোন মূল্যে মিডিয়াকে এড়িয়ে যেতে হাই কমিশনের তরফে পররাষ্ট্র দপ্তরকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এ কাজটি করতে তাদের পরামর্শ ও সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন? কি কারণে পাকিস্তানের তরফে বাড়তি এ সতর্কতা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে হিনা নিজেই মিডিয়াকে এড়িয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা নিতে হাই কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, মিডিয়ায় প্রেসিডেন্ট পুত্র বিলাওয়ালের সঙ্গে তার প্রেমের খবর প্রকাশের পর থেকেই তার এ এড়িয়ে চলা। নিজ দেশে তো বটেই, বাইরের দুনিয়ায় তিনি সযত্নে মিডিয়াকে এড়িয়ে চলছেন। বাংলাদেশের অনলাইন সাপ্তাহিক ব্লিৎজ এই খবর দিয়েছিল। তার অসম প্রেম নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ায় যখন আলোচনা-সমালোচনা তুঙ্গে তখনও বিদেশ সফর করেছেন হিনা। বরাবরই মিডিয়া কর্মীরা তার প্রতিক্রিয়া নিতে পিছু নিয়েছে, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। তার কথিত প্রেম নিয়ে পাকিস্তানে ইতিমধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। কোটিপতি স্বামী ফিরোজ গুলজার তার কললিস্ট চেয়ে গুজবের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। পরে অবশ্য তিনি নিজেই এটাকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। স্বামীর প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক হওয়ায় গুজব ছাইছাপা পড়লেও বিতর্ক হিনার পিছু ছাড়ছে না। ওদিকে হিনার কথিত প্রেমের খবর যে পত্রিকাটি ছাপিয়েছিল তার সম্পাদক শোয়েব চৌধুরী গ্রেপ্তার হয়েছেন এক প্রতারণা মামলায়। যা-ই হোক এত কিছুর মধ্যেও হিনা থেমে নেই। তিনি তার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় এবারের ডি-এইট শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির বিশেষ দূত হিসেবে আসছেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সময়ের ব্যাপ্তি কম হলেও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সফরকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে ঢাকা। মহাজোট সরকারের আমলে দেশটির কোন মন্ত্রীর এটিই প্রথম সফর। হিনা রাব্বানীকে স্বাগত জানাতে সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সকাল ১০টায় বিশেষ বিমানে চড়ে হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবেন তিনি। ভিআইপি লাউঞ্জে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস। হোটেল রূপসী বাংলায় রিফ্রেশমেন্টের পর পররাষ্ট্র দপ্তরে মন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরে দুই দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার একটি সুযোগ তৈরি হবে। সকাল ১১টায় দীপু-হিনা’র মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা ও সম্পদের হিস্যার বিষয়টি আলোচনায় আসবে। একই সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ঢাকায় আটকে পড়া পাকিস্তানিদের পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তোলা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বেরিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির আমন্ত্রণ পত্র আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবেন। সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইসলামাবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণের অনিশ্চয়তা দূর হবে। বাংলাদেশ ডি-৮-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২২শে নভেম্বর ডি-৮-এর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের বিষয়ে সরকারের ভেতরে ইতিবাচক ভাবনা রয়েছে। তবে সব কিছুই আজকের সফরের মধ্য দিয়ে খোলাসা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তার সম্মানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির দেয়া ভোজসভায় অংশ নেবেন হিনা রাব্বানী। দুপুর ১টায় হোটেল রূপসী বাংলার টপ অব দ্য পার্কে অনুষ্ঠেয়। মধ্যাহ্নভোজ শেষে বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। বিকাল পৌনে ৩টায় বিএনপি নেত্রীর বাসভবনে বৈঠকটি হবে বলে জানিয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। বিকালে বিশেষ বিমানেই ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে তার ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।
No comments