সেরে ওঠো মালালা

'খোদা, শিক্ষার আলোকে ভালোবাসার তওফিক দাও আমায়।' কবি ইকবালের এ চাওয়াকে অন্তরে পশিয়ে জীবনে প্রকাশের প্রচেষ্টাই আজ মালালাকে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পেঁৗছে দিয়েছে। রোজ সকালে এই প্রত্যয়ের সঙ্গেই দিন শুরু করত শিশুটি।


আজ পাকিস্তানের কোটি জনতা দিন শুরু করেছে আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে মালালাকে সুস্থ দেখার প্রত্যাশা নিয়ে। পাকিস্তানের প্রগতিশীলতার প্রতীক হয়ে উঠেছে মালালা।
গত মঙ্গলবারের ওই নৃশংসতা নাড়া দিয়ে যায় পুরো বিশ্বকে। দুঃখ-ক্ষোভ-নিন্দার স্রোত বয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে পত্রিকার পাতা আর টেলিভিশনের পর্দায়। প্রশ্ন ওঠে মালালার নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে। ছদ্মনামের আড়াল থেকে বের হওয়ার পর তার নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে সন্দেহ ছিল না কারো মধ্যেই। তবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। এখন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, সেনাপ্রধান, সরকারি ও বিরোধী দলের রাজনীতিকরা মালালার জন্য শোক-উদ্বেগ-নিন্দা নিয়ে হাজির হলেও প্রয়োজনের সময় তাঁদের কেউই ছিলেন না। এমনকি নিজেদের ত্রুটির কথাও স্বীকার করছেন না কেউ।
পাকিস্তানের বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক দ্য ডন গতকাল এক নিবন্ধে লেখে, 'আজ কোটি মানুষ দোয়া করছে মালালার বেঁচে থাকা আর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য। একসময় জঙ্গি উপদ্রুত উপত্যকা সোয়াতে কোনো নিরাপত্তা ছাড়াই রীতিমতো লড়াই করে টিকে ছিল মেয়েটি। ওর পরিস্থিতিই আমাদের বলে দেয় সাহসী ও লড়াকু মানুষগুলোর সঙ্গে আমাদের আচরণ কেমন।'
নিবন্ধে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি তোলা হয় মালালার নিরাপত্তা নিয়ে। 'নারীশিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে জঙ্গিদের অবস্থানের বিরুদ্ধে লিখে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করলেও কেন তাকে যথাযথ নিরাপত্তা দেওয়া হলো না।' ডন দাবি করে, সোয়াতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানো সেনাবাহিনীকেও মালালার নিরাপত্তা ঘাটতি নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে। 'ক্ষমতাসীনদের জন্য যদি দুর্ভেদ্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে মালালাকে কেন অরক্ষিতভাবে জঙ্গিদের দয়ার ওপর ছেড়ে দেওয়া হলো।'
'অতীতেও এরা নারীদের হত্যা করেছে, কবর থেকে মৃতদেহ টেনে তুলে তা বিকৃত করেছে, মসজিদে-স্কুলে-জানাজায়-জিরগায় বোমা হামলা চালিয়েছে। শিরশ্ছেদ করেছে, ছিন্ন মস্তক প্রকাশ্যে দেখিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছে। এদের বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হয়েছে। আলোচনা না সংঘাত_সমাধান কোন পথে তা এখনই বেছে নিতে হবে।'
ডন জানায়, ভাগ্য মালালাকে খ্যাতি এনে দেয়নি। বরং দুর্ভোগ, সোয়াতের মানুষের জন্য ভালোবাসা, ডজন ডজন স্কুল বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পর তালেবানের ঔদ্ধত্যের বিবরণ প্রকাশই তাকে বিখ্যাত করেছে। তার জন্য আজ শুধু পাকিস্তান নয়, দোয়া করছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। আল্লাহ এই কোটি মানুষের দোয়া কবুল করুন। মালালা আবার ফিরে আসুক আমাদের মধ্যে। সফল হোক তার অভীষ্ট লক্ষ্য।'

No comments

Powered by Blogger.