সংশোধিত খসড়া চিঠি আদালতের মনঃপূত হয়েছে

প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির দুর্নীতির মামলা ফের চালুর প্রশ্নে সুইস কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে লেখা সরকারের সংশোধিত খসড়া চিঠির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে আইনমন্ত্রী ফারুক নায়েকের লেখা চিঠি দুই দফা বাতিল করে দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত।


গতকাল বুধবার বিচারপতি আসিফ সাঈদ খোসার নেতৃত্বে পাঁচজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সরকারের তৃতীয় খসড়া চিঠিকে সন্তোষজনক বলে মন্তব্য করেন।
এর মাধ্যমে বিচার বিভাগের সঙ্গে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সরকারের প্রায় তিন বছরের টানাপোড়েনের অবসানের ব্যাপারে আশার আলো দেখছেন অনেকে। আদালতের এ রায়কে 'ন্যায় বিচারের পক্ষে জয়' বলে স্বাগত জানিয়েছে সরকার।
জাতীয় দায়মুক্তি অধ্যাদেশ (এনআরও) কার্যকর-সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে বিচারপতি খোসা গতকাল বলেন, 'আদালতে উত্থাপিত সরকারের খসড়া চিঠিতে আদালতের আদেশের প্রতিফলন ঘটেছে এবং এতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগও প্রকাশ পেয়েছে। এটি সন্তোষজনক।'
এর আগে গত ২৬ অক্টোবর এ-সংক্রান্ত শুনানি হয়। ওই দিন খসড়া চিঠি সন্তোষজনক নয় বলে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত অবমাননার ব্যাপারেও সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল। মামলার শুনানি আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে।
সুইস সরকারের উদ্দেশে লেখা পাকিস্তান সরকারের চিঠি চূড়ান্ত হওয়ায় সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মালিক কাইয়ুমের লেখা চিঠি বাতিল বলে গণ্য হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ প্রণীত এনআরও কার্যকর হওয়ার পর ২০০৭ সালের শেষের দিকে জারদারির মামলা স্থগিত করতে সুইস কর্তৃপক্ষকে ওই চিঠি লিখেছিলেন তিনি। প্রসঙ্গত, এনআরও কার্যকর হওয়ায় জারদারিসহ প্রায় আট হাজার রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি কর্মকর্তা দুর্নীতির অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পান।
আইনমন্ত্রী নায়েক আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, 'জাতীয় সম্পদের কিছুই লুট হয়নি। দেশে-বিদেশে প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে তোলা কোনো অভিযোগই এখন পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি।' জারদারির বিরুদ্ধে নব্বইয়ের দশকের অর্থ পাচার-সংক্রান্ত মামলাগুলো পুনরায় চালু করতে ২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকে সরকারের ওপর চাপ দিয়ে আসছেন সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সরকারের ভাষ্য, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে জারদারি দায়মুক্তি ভোগ করেন। এ-সংক্রান্ত আদেশ না মানায় গত জুনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানিকে আদালত অবমাননার দায়ে ক্ষমতাচ্যুত করেন সুপ্রিম কোর্ট। উত্তরসূরি রাজা পারভেজ আশরাফকেও জারদারির মামলা পুনরুজ্জীবিত করার ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানানোর নির্দেশ দেন আদালত। অবশেষে গত মাসে চিঠি লেখায় সম্মত হয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে সুইস কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠি আদালতে পেশ করতে বলা হয়।
আদালতে অনুমোদন পাওয়া চিঠির পুরোটা প্রকাশ করা হয়নি। তবে এতে জারদারির বিরুদ্ধে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ ডলার অর্থ পাচারসহ সব কয়টি দুর্নীতির মামলা পুনরায় চালু করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রচলিত আইন অনুযায়ী এবং সাংবিধানিক অধিকার বলে জারদারি মামলায় লড়াই করতে পারবেন_এ কথাও উল্লেখ আছে চিঠিতে। এদিকে জারদারির একই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ও দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন-সংক্রান্ত মামলায় গতকাল লাহোর হাইকোর্টে শুনানি হয়েছে। মুনির আহমেদ নামের এক ব্যক্তি এ মামলা করেন। তাঁর অভিযোগ, জারদারি একসঙ্গে দুই পদে থেকে আদালত অবমাননার শামিল অপরাধ করছেন। মামলার শুনানি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে। সূত্র : এএফপি, ডন।

No comments

Powered by Blogger.