লিউড- বেন অ্যাফ্লেকের আরগো
ছবির নাম আরগো। যে ছবির আসলে কোনো অস্তিত্বই ছিল না। ছিল শুধু নাম আর সেই নামকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে কিছু পোস্টার। তার পরও রবার্ট অ্যান্ডার্স, মার্ক লাইজেক, কোরা লাইজেক, হেনরি স্কাৎজ, জোসেফ স্ট্যাফোর্ড ও ক্যাথলিন স্ট্যাফোর্ড নামের ছয় মার্কিন কূটনীতিককে যদি জিজ্ঞেস করা হতো,
তাঁদের প্রিয় ছবির নাম কী, একবাক্যেও নয়, তাঁরা উত্তর দিতেন এক শব্দে—আরগো!
১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের সময় তেহরানে মার্কিন দূতাবাস অস্ত্রধারী বিপ্লবীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। ৫২ জন মার্কিন নাগরিক ৪৪৪ দিনের দুর্বিষহ বন্দিদশায় জীবন কাটান। জিম্মি করা হয় তাঁদের। কিন্তু দূতাবাসে কর্মরত ছয় কূটনীতিক বুদ্ধি করে দূতাবাস থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেন কানাডীয় রাষ্ট্রদূতের বাসায়।
যদিও তাঁরা দ্রুতই বুঝতে পারেন, এই আশ্রয়ও নিরাপদ নয়। যেকোনো মুহূর্তে খুঁজে বের করা হবে তাঁদের। এই ছয় কূটনীতিককে উদ্ধার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) বিশেষ এক মিশন হাতে নেয়। যে মিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয় টনি মেন্ডেজ নামের দুর্ধর্ষ এক এজেন্টকে। ঠিক করা হয়, এই ছয় কূটনীতিককে বানিয়ে ফেলা হবে চলচ্চিত্রকর্মী, যাঁরা স্টার ওয়ার্স ধরনের একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি বানানোর জন্য লোকেশন খুঁজতে এসেছিলেন ইরানে। ছয়জনকে বানিয়ে দেওয়া হয় কানাডার নাগরিক। তৈরি করা হয় জাল ভিসা আর পাসপোর্ট।
গল্পটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ছবির একটা নামও দেওয়া হয়—আরগো। ছাপানো হয় পোস্টার। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এই পরিকল্পনা। ‘এটাই সিআইএর সবচেয়ে সেরা বাজে পরিকল্পনা।’ কিন্তু রুদ্ধশ্বাস সেই নাটকীয় আয়োজনের মাধ্যমে মুক্তি পান রবার্ট অ্যান্ডার্স ও তাঁর পাঁচজন সঙ্গী।
যে ছবির কোনো অস্তিত্বই ছিল না, সেই আরগো মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল। সিআইএর বেছে নেওয়া সেই নাম দিয়েই তেহরানের সেই ঘটনা অবলম্বনে ছবি বানিয়েছেন বেন অ্যাফ্লেক। বলা হচ্ছে, অভিনেতা অ্যাফ্লেককে এই ছবি হলিউডের শীর্ষ পরিচালকের আসনে বসিয়ে দেবে!
২০০৭ সালে গন বেবি গন দিয়ে পরিচালক হিসেবে অভিষেক। তিন বছর বাদে আরও একটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন অ্যাফ্লেক—দ্য টাউন। দুটো ছবিই সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তবে নিজের পরিচালক-প্রতিভা ও সামর্থ্যের আসল পরীক্ষা এই ৪০ বছর বয়সী দিয়েছেন আরগোয়। দুই ঘণ্টার এই পলিটিক্যাল থ্রিলার নিয়ে অ্যাফ্লেক নিজেও উচ্ছ্বসিত। আগের দুটো ছবিরই কাজ তিনি করেছেন বোস্টনে, নিজের শহরে। কিন্তু এবার ১৯৭৯ সালের উত্তাল তেহরানকে পুননির্মাণ করতে হয়েছে তাঁকে সেলুলয়েডে। ছবির সিংহভাগ শুটিং করেছেন ইস্তাম্বুলে।
সিআইএর এই মিশন দীর্ঘদিন গোপন ছিল। ১৯৯৭ সালে ক্লিনটন প্রশাসন প্রথম এর দলিল অবমুক্ত করে। তখনই সবাই প্রথম জানতে পারেন টনি মেন্ডেজের নায়কোচিত কীর্তির কথা। সিআইএর সেসব গোপন দলিল অবলম্বনে ২০০৭ সালে উইয়ার্ড সাময়িকীতে এক দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন জহুয়া বিয়ারম্যান। ‘হাউ দ্য সিআইএ ইউজড অ্যা ফেক সাই-ফাই ফ্লিক টু রেসকিউ আমেরিকানস ফ্রম তেহরান’ শিরোনামের সেই প্রবন্ধ অবলম্বনেই লেখা হয় চিত্রনাট্য। ছবিটি যদিও সত্য কাহিনি অবলম্বনে, কিন্তু নাটকীয়তার স্বার্থে ছবিটির চিত্রনাট্যে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে কল্পনা।
ছবিটির গল্প প্রথম অ্যাফ্লেকের নজরে আনেন জর্জ ক্লুনি। চিত্রনাট্য পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই ছবিটি বানাতে রাজি হয়ে যান তিনি। ক্লুনি নিজে এই ছবির অন্যতম প্রযোজকও। ‘ও আমাকে অনেকটা হালকা মেজাজেই বলেছিল, “হেই, দেখো তো, এটা তোমার পছন্দ হয় কি না?” আমি চিত্রনাট্য পড়ে রীতিমতো শিহরিত হয়ে গিয়েছিলাম। এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য ছিল,’ বলেছেন অ্যাফ্লেক।
বড় ক্যানভাসে প্রথমবারের মতো কাজ করা। পরিচালকের বিস্তর হ্যাপা সামলানোর পাশাপাশি টনি মেন্ডেজ চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন অ্যাফ্লেক। কানাডার সেই অন্তঃপ্রাণ রাষ্ট্রদূত ছাড়া ছয় কূটনীতিকের মুক্তি যেমন মিলত না, তেমনি এই ছবি বানানোও হতো না। আর তাই ছবির প্রথম প্রিমিয়ার হয়েছে কানাডার টরন্টো উৎসবে, গত মাসে। কানাডীয়রা অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের কাছে মনে হয়েছে, রাষ্ট্রদূত কেনেথ টেলরের ভূমিকা যথাযথভাবে তুলে আনেননি অ্যাফ্লেক।
রাজীব হাসান
এলএ টাইমস ও হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে
১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের সময় তেহরানে মার্কিন দূতাবাস অস্ত্রধারী বিপ্লবীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। ৫২ জন মার্কিন নাগরিক ৪৪৪ দিনের দুর্বিষহ বন্দিদশায় জীবন কাটান। জিম্মি করা হয় তাঁদের। কিন্তু দূতাবাসে কর্মরত ছয় কূটনীতিক বুদ্ধি করে দূতাবাস থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেন কানাডীয় রাষ্ট্রদূতের বাসায়।
যদিও তাঁরা দ্রুতই বুঝতে পারেন, এই আশ্রয়ও নিরাপদ নয়। যেকোনো মুহূর্তে খুঁজে বের করা হবে তাঁদের। এই ছয় কূটনীতিককে উদ্ধার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) বিশেষ এক মিশন হাতে নেয়। যে মিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয় টনি মেন্ডেজ নামের দুর্ধর্ষ এক এজেন্টকে। ঠিক করা হয়, এই ছয় কূটনীতিককে বানিয়ে ফেলা হবে চলচ্চিত্রকর্মী, যাঁরা স্টার ওয়ার্স ধরনের একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি বানানোর জন্য লোকেশন খুঁজতে এসেছিলেন ইরানে। ছয়জনকে বানিয়ে দেওয়া হয় কানাডার নাগরিক। তৈরি করা হয় জাল ভিসা আর পাসপোর্ট।
গল্পটাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ছবির একটা নামও দেওয়া হয়—আরগো। ছাপানো হয় পোস্টার। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এই পরিকল্পনা। ‘এটাই সিআইএর সবচেয়ে সেরা বাজে পরিকল্পনা।’ কিন্তু রুদ্ধশ্বাস সেই নাটকীয় আয়োজনের মাধ্যমে মুক্তি পান রবার্ট অ্যান্ডার্স ও তাঁর পাঁচজন সঙ্গী।
যে ছবির কোনো অস্তিত্বই ছিল না, সেই আরগো মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল। সিআইএর বেছে নেওয়া সেই নাম দিয়েই তেহরানের সেই ঘটনা অবলম্বনে ছবি বানিয়েছেন বেন অ্যাফ্লেক। বলা হচ্ছে, অভিনেতা অ্যাফ্লেককে এই ছবি হলিউডের শীর্ষ পরিচালকের আসনে বসিয়ে দেবে!
২০০৭ সালে গন বেবি গন দিয়ে পরিচালক হিসেবে অভিষেক। তিন বছর বাদে আরও একটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন অ্যাফ্লেক—দ্য টাউন। দুটো ছবিই সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তবে নিজের পরিচালক-প্রতিভা ও সামর্থ্যের আসল পরীক্ষা এই ৪০ বছর বয়সী দিয়েছেন আরগোয়। দুই ঘণ্টার এই পলিটিক্যাল থ্রিলার নিয়ে অ্যাফ্লেক নিজেও উচ্ছ্বসিত। আগের দুটো ছবিরই কাজ তিনি করেছেন বোস্টনে, নিজের শহরে। কিন্তু এবার ১৯৭৯ সালের উত্তাল তেহরানকে পুননির্মাণ করতে হয়েছে তাঁকে সেলুলয়েডে। ছবির সিংহভাগ শুটিং করেছেন ইস্তাম্বুলে।
সিআইএর এই মিশন দীর্ঘদিন গোপন ছিল। ১৯৯৭ সালে ক্লিনটন প্রশাসন প্রথম এর দলিল অবমুক্ত করে। তখনই সবাই প্রথম জানতে পারেন টনি মেন্ডেজের নায়কোচিত কীর্তির কথা। সিআইএর সেসব গোপন দলিল অবলম্বনে ২০০৭ সালে উইয়ার্ড সাময়িকীতে এক দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন জহুয়া বিয়ারম্যান। ‘হাউ দ্য সিআইএ ইউজড অ্যা ফেক সাই-ফাই ফ্লিক টু রেসকিউ আমেরিকানস ফ্রম তেহরান’ শিরোনামের সেই প্রবন্ধ অবলম্বনেই লেখা হয় চিত্রনাট্য। ছবিটি যদিও সত্য কাহিনি অবলম্বনে, কিন্তু নাটকীয়তার স্বার্থে ছবিটির চিত্রনাট্যে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে কল্পনা।
ছবিটির গল্প প্রথম অ্যাফ্লেকের নজরে আনেন জর্জ ক্লুনি। চিত্রনাট্য পড়ে সঙ্গে সঙ্গেই ছবিটি বানাতে রাজি হয়ে যান তিনি। ক্লুনি নিজে এই ছবির অন্যতম প্রযোজকও। ‘ও আমাকে অনেকটা হালকা মেজাজেই বলেছিল, “হেই, দেখো তো, এটা তোমার পছন্দ হয় কি না?” আমি চিত্রনাট্য পড়ে রীতিমতো শিহরিত হয়ে গিয়েছিলাম। এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য ছিল,’ বলেছেন অ্যাফ্লেক।
বড় ক্যানভাসে প্রথমবারের মতো কাজ করা। পরিচালকের বিস্তর হ্যাপা সামলানোর পাশাপাশি টনি মেন্ডেজ চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন অ্যাফ্লেক। কানাডার সেই অন্তঃপ্রাণ রাষ্ট্রদূত ছাড়া ছয় কূটনীতিকের মুক্তি যেমন মিলত না, তেমনি এই ছবি বানানোও হতো না। আর তাই ছবির প্রথম প্রিমিয়ার হয়েছে কানাডার টরন্টো উৎসবে, গত মাসে। কানাডীয়রা অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের কাছে মনে হয়েছে, রাষ্ট্রদূত কেনেথ টেলরের ভূমিকা যথাযথভাবে তুলে আনেননি অ্যাফ্লেক।
রাজীব হাসান
এলএ টাইমস ও হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে
No comments