নেরিকা ধান-কৃষক নয় গিনিপিগ
আফ্রিকা থেকে আনা ধান আবাদ করে পাবনার ঈশ্বরদীতে আড়াই হাজার কৃষকের দিশেহারা হওয়ার খবর আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বেশ কিছু প্রশ্নের সামনে। অনেক আশা করে নতুন জাতের ধান চাষ করে বেশি ফলন দূরে থাক, 'ঠিকমতো খড়' না পাওয়ার সংবাদও আমরা সংবাদমাধ্যমে মাঝে মাঝে দেখে থাকি।
সাধারণত কোনো 'বীজ কোম্পানি' এ জন্য দায়ী থাকে। গত বছরও 'ঝলক' ধান নিয়ে বৃহত্তর নোয়াখালীসহ দেশের কয়েকটি স্থানে এমন কেলেঙ্কারির পর বীজ বিক্রেতা কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। ঈশ্বরদীতে দেখা যাচ্ছে, খোদ কৃষি বিভাগ ও বিএডিসি থেকেই নেরিকা ধান কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল। তার মানে, যে কর্তৃপক্ষের কাছে বীজ প্রতারণার প্রতিকার পাওয়ার কথা, তাদের মাধ্যমেই ঠকল কৃষক? আমরা বলছি না যে বিএডিসি ইচ্ছাকৃত এমন কাণ্ড করেছে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত একটি প্রতিষ্ঠানের আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল নাকি? আমরা আশা করি, ঈশ্বরদীর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা অবিলম্বে ক্ষতিপূরণ পাবেন। কৃষি মন্ত্রণালয় যদি বীজ কোম্পানিকে জরিমানার নির্দেশ দিতে পারে; নিজের বেলায় নির্লিপ্ত থাকবে কোন যুক্তিতে? উপজেলা ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা নেরিকা ধান আবাদের অপ্রত্যাশিত পরিণতিতে যেভাবে 'লজ্জিত' কিংবা 'কৃষকের কাছে মুখ দেখাতে বিব্রত' হওয়ার কথা বলছেন, তাও আমাদের কাছে কৌতুককর মনে হয়েছে। তাদের উচিত এই বীজ নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল আচরণ করা। দিশেহারা কৃষকের কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা দেওয়া। বীজটি বাংলাদেশের মৃত্তিকা ও আবহাওয়ার পক্ষে কতটা উপযোগী, চাষিদের যথাযথ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছিল কি-না খতিয়ে দেখতে বলব আমরা। একই বীজ দেশের আরও ৮৩টি উপজেলায় পরীক্ষামূলক চাষের জন্য বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। সেখানকার পরিস্থিতি কী? মৌসুম নির্বিশেষ চাষযোগ্যতার যে দাবি নেরিকা বীজ সম্পর্কে করা হয়েছে, তাও আমাদের কাছে বিস্ময়করই লাগে। এই তথ্য সঠিকভাবে প্রচারিত হয়েছে কি-না দেখা হোক। আমাদের দেশেই রয়েছে সমৃদ্ধ ধানবৈচিত্র্য। সেগুলোর উন্নয়ন ও সংরক্ষণের বদলে বিদেশি বীজ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও কতখানি যৌক্তিক, এ প্রসঙ্গে সে প্রশ্নও আমরা নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলতে চাই।
No comments