সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিং কতটা বিশ্বাসযোগ্য

আগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পারেননি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যারহস্য উন্মোচনে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর কথা রেখেছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর গত ২৫ সেপ্টেম্বর বলেছিলেন, ১০ অক্টোবরের মধ্যে সাগর-রুনি হত্যারহস্য উদ্ঘাটিত হবে।


এক দিন আগেই তিনি সংবাদ সম্মেলনে আসামিদের নাম-পরিচয় জানিয়ে দিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সাংবাদিকদের সামনে হত্যারহস্য নিয়ে নতুন তথ্য দিলেও তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য- এমন প্রশ্ন কিন্তু এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। তবু সরকারের পক্ষ থেকে একটা অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এটাও কম কথা নয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা দেশের মানুষকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড এই সময়ের আলোচিত একটি ঘটনা। কোনো হত্যাকাণ্ডই কাঙ্ক্ষিত নয়। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড এমনই একটি নাড়া দেওয়ার মতো ঘটনা যে আট মাস পরও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ডের পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে। সেই ৪৮ ঘণ্টা তো গেলই, তারপর আট মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে সাত আসামির নাম ঘোষণা করলেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি। সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে গেছেন।
বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের ঘোষণা দেওয়ার সময়ই সচেতন মহলে আরেকটি জজ মিয়া নাটকের সন্দেহ দেখা দিয়েছিল। তিনি কেমন করে নিশ্চিত হতে পারলেন যে ১০ অক্টোবরের মধ্যেই এই রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে? তিনি যদি নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে চেষ্টা করা হবে এমন কথা বলতেন, তবু কিছুটা হলেও হয়তো বিশ্বাসযোগ্য হতো। কিন্তু তা না করে তিনি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন। অন্য মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদেরই এই মামলার আসামি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। অথচ এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথিত হত্যাকারীরা যে পেশাদার আসামি, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আসামিরা পুলিশ হেফাজতে বা রাষ্ট্রের আওতায় আছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, আসামিরা গ্রেপ্তার থাকা সত্ত্বেও কেন হত্যার মোটিভ জানা গেল না? এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও কোনো ব্যাখ্যা দেননি। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে জনমনে সৃষ্ট নানা প্রশ্নের কারণে এই ব্যাখ্যা প্রয়োজন ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, তিনি কোনো 'জজ মিয়া নাটক' সাজাচ্ছেন না। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে যখন কোনো ব্যাখ্যা তাঁর কাছ থেকে পাওয়া গেল না, তখন নতুন জজ মিয়া নাটক মঞ্চায়নের সন্দেহটাই যে গাঢ় হয়, সে বিষয়টি অনুধাবন করতে সাবেক জাঁদরেল আমলা বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
সাংবাদিক নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। সাগর-রুনির পরিবারও নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দেশবাসীর শতভাগ বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে, এমন কথা জোর দিয়ে কেউ বলতে পারবে না। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে কাউকে আড়াল করার চেষ্টা আছে- এমন সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ তাঁর বক্তব্যের মধ্যেই রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর বক্তব্য এ হত্যাকাণ্ডের জট খোলার পরিবর্তে নতুন রহস্যের জন্ম দিল।
দেশবাসীর মতো আমরাও চাই, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যাদের হাত আছে, তাদের পরিচয় উন্মুক্ত হোক। প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের সম্মুখীন করা হোক। নতুন জজ মিয়া নাটক নয়, সত্য উদ্ঘাটিত হোক, সত্যিকারের বিচার হোক। শাস্তি হোক সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকারীদের।

No comments

Powered by Blogger.