রামুর ঘটনা নিয়ে রাজনীতির খেলা বন্ধ হোক by কাজী সিরাজ
রামুর বৌদ্ধপল্লী ও উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে ২৯ সেপ্টেম্বর। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এত দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও এর প্রকৃত রহস্য এখনো ভেদ করা যায়নি। দলমত-নির্বিশেষে সবাই একবাক্যে বলছেন, ঘটনাটি আকস্মিক নয়, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও নিখুঁত।
এতে আমাদেরও কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সন্দেহ জাগছে এই বর্বরতা-নৃশংসতার পরিকল্পনাকারী ও নেপথ্য সংগঠকদের চিহ্নিত করে তাদের মুখোশ জনগণের সামনে উন্মোচিত করা যাবে কি না বা করা হবে কি না তা নিয়ে। ইতিমধ্যে দেশের সব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, এলিট ফোর্স র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়তার কারণে এমন একটি সাম্প্রদায়িক ধ্বংসযজ্ঞ সেখানে সংঘটিত হতে পেরেছে। প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে দুর্বৃত্তরা তাণ্ডব চালিয়েছে। শুরু থেকেই পুলিশ ও অন্যান্য সরকারি মহলের কাছে সাহায্য চেয়েও তা পাওয়া যায়নি। আসছি-আসব করে করে তারা সময়ক্ষেপণ করেছে এবং দুর্বৃত্তায়ন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। ধারণ করা দৃশ্যচিত্র স্পষ্ট করেছে যে শাসকদল আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ সব দলের লোকজন ও রোহিঙ্গারা, যারা দুনিয়ার কাছে আমাদের সমগ্র দেশ ও জাতির মাথা হেঁট করে দেওয়া অপকর্মটির সঙ্গে যুক্ত ছিল। ফেসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার একটি চিত্র জনৈক উত্তম বড়ুয়ার নামে প্রচারের প্রতিবাদে মিছিলকারীদের দলে সবাই ছিল। সুনির্দিষ্টভাবে বিভিন্ন রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, নিশ্চিত করা হয়েছে যে প্রথম মিছিলটি বের করে ক্ষমতাসীন দলের লোকরা। স্থানীয় সংসদ সদস্য বিএনপির আর উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের। তাঁরাও ঘটনাস্থলে ছিলেন, সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন এবং পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নেওয়ার কালে 'কেটে' পড়েছেন। তাঁরা দুজনও প্রশাসনের সাহায্য চেয়েছিলেন, কিন্তু সময়মতো তা পাননি বলে জানিয়েছেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশের অহংকারকে চূর্ণ করে দিয়েছে রামুর বৌদ্ধপল্লী ও উপাসনালয়ে হামলার বর্বরতা। হামলাটা আবার হয়েছে দেশের সবচেয়ে নিরীহ, শান্তিপ্রিয় ও নির্ঝঞ্ঝাট ক্ষুদ্র ধর্মীয় সম্প্রদায় বৌদ্ধদের একটি জনবসতিতে- যারা অহিংস বাণীর ধারক ও প্রচারক। শতাব্দীকাল থেকে ধর্মীয় সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবার সঙ্গে মধুর একটি সম্পর্কের বন্ধনে তারা আবদ্ধ। তাদের ওপর এই অমানবিক হামলায় সমগ্র জাতির হৃদয় বেদনার অঙ্কুশে বিদ্ধ। ঘটনার খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষুব্ধ জাতির হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ শুরু হয়, সে রক্তক্ষরণ এখনো বন্ধ হয়নি। ১৬ কোটি মানুষের প্রায় সবাই চেয়েছে এই ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত হোক, প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের বিচার ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। নির্মমতার শিকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মনে নিরাপত্তাবোধ জাগিয়ে তোলা হোক।
দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর মানুষের প্রার্থনা ও সরল আকাঙ্ক্ষার মিনারটি ভেঙে দিলেন। তাঁর বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, তিনি ঘটনার গুরুত্ব ও গভীরতা উপলব্ধি করেননি। তিনি বৌদ্ধপল্লীতে হামলা, অগি্নসংযোগ, লুটপাট, বৌদ্ধমূর্তি ধ্বংসসহ তাদের শতাব্দীকালের ঐতিহ্য বিনাশের বীভৎস তাণ্ডবের সব দায় বিএনপি-জামায়াত-মৌলবাদীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে এলেন; অভিযোগ থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার প্রয়াস নিলেন তাঁর দল আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং তাঁর 'আমার পুলিশ'সহ (সব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই বলে থাকেন) আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে সেখানে নিয়োজিতদের ও জনপ্রশাসনের লোকদের। তাঁর বক্তব্য সর্বজনগ্রাহ্য হয়নি; পক্ষপাত দোষে দুষ্ট। মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তিকে অনেকেই অনৈতিক বলেছেন এই কারণে যে উচ্চ আদালতের রায়ে তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে গিয়েছিল। রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে তিনি তা ধরে রেখেছেন এখনো। এমপি হিসেবে তাঁর বৈধতা প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করা উচিত ছিল। এটা নৈতিকতার প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের সুরাহা হওয়ার আগে তাঁকে সংসদ সদস্য গণ্য করে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া সঠিক হয়নি বলে মনে করেন অনেকে। তবে হ্যাঁ, তাঁকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী বানানো যেত, যদি সে কোটা অবশিষ্ট থাকে। টেকনোক্র্যাট কোটায়ই বা তাঁকেই নিতে হবে কেন? আর কোনো লোক কি নেই আওয়ামী লীগে? তাঁর নির্বাচিত হওয়া নিয়ে আইনি জটিলতা এখনো নিষ্পন্ন হয়নি বলে তাঁকে নিয়ে এ কথাগুলো রাজনীতির ময়দানে আছে। এ অবস্থায় নিজের বিবর্ণ ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও উজ্জ্বল করার একটা সুযোগ তাঁর সামনে এনে দিয়েছিল রামুর বেদনাবিধুর ঘটনা। তিনি সেখানে তাঁর বক্তৃতা মঞ্চকে আওয়ামী লীগের মঞ্চ বিবেচনা না করে যদি সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর (দল দলীয় লোকদের, সরকার, মন্ত্রী দেশের ও জনগণের) মঞ্চ বিবেচনা করে কথা বলতেন তাহলে নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করার একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত হতো। কিন্তু তাঁর দলবাজ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা সে সুযোগ বিনাশ করে দিয়েছে। তাঁর বক্তব্যে প্রশাসন এই দিক নির্দেশনাই পেল যে আর যাই হোক, ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগকে জড়ানো যাবে না। অকারণে আওয়ামী লীগকে জড়ানোর কথা কারো বলা উচিত নয়। কিন্তু আগে থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি বলে দেন যে এর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত-মৌলবাদীরা জড়িত, তাহলে তদন্তকারীরা আওয়ামী লীগ কর্মীরা জড়িত থাকলেও কি তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পাবে, নাকি যাদের দিকে তিনি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন, তাদের ঘটনার সঙ্গে না জড়িয়ে নিরপেক্ষভাবে প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করার ঝুঁকি নেবে? তাঁর বক্তব্যে রি-অ্যাক্ট করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। খোদ দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হবিগঞ্জের ১৮ দলের জনসভায় বলে বসলেন যে সরকারি দলের ইন্ধনেই রামুর ঘটনা ঘটেছে। নিজ দলের লোকদের বাঁচানোর জন্যই নাকি বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া তাঁর মোটেই উচিত হয়নি বলে তাঁর অনেক শুভানুধ্যায়ীও তাঁর সমালোচনা করছেন। তাঁদের মতে, তাঁর বক্তব্য দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর মানের বক্তব্য হয়নি। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলতে পারতেন যে তদন্তকাজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রভাবিত হবে এবং প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটিত হবে না ও প্রকৃত দোষীরাও ধরা পড়বে না। কারো ওপর দোষ না চাপিয়ে তাঁর উচিত ছিল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার নেপথ্য কারণ ও নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করার জোরালো দাবি উত্থাপন করা। সেটাই হতো যথার্থ। ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কেও তাঁর উচ্চারণ ছিল বেশ দুর্বল। এর সুদূরপ্রসারী পরিণাম নিয়ে কোনো ধরনের উষ্মা তাঁর চেহারায় ফুটে উঠতে দেখা যায়নি। তাঁর মানের একজন নেত্রীর কাছ থেকে জনগণের সেটা ছিল স্বাভাবিক প্রত্যাশা। তদন্ত প্রক্রিয়ায় সন্দেহ-অবিশ্বাসের শেষ পেরেকটি মেরে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রামু গিয়ে তিনি আর সমগ্র জনগণের ও সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকলেন না, হয়ে গেলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। সরকারপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্র-স্বার্থ না দেখে তিনি দেখলেন দলীয় স্বার্থ। সব ধরনের দলীয় ও গোষ্ঠীগত সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে 'রাষ্ট্রবাজি' না করে তিনি করে এলেন দলবাজি। তিনি ঘটনার জন্য দায়ী করলেন বিএনপিদলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমানকে। সোমবার ৮.১০.২০১২ সকালে রামুর খিজারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জনসভায় তিনি বলেন, 'সেদিন রাত সাড়ে ১১টায় যখন এখানকার মানুষ শান্ত হয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন স্থানীয় সংসদ সদস্য এসে মানুষকে কী বলে গেলেন, যে তিনি চলে যাওয়ার পর মন্দিরে আগুন লাগানো শুরু হলো? আমার প্রশ্ন, তিনি কী কথা বলে গেলেন, কী উস্কানি দিয়ে গেলেন, তা বলতে হবে। মন্দিরে হামলার জন্য তিনিই দায়ী। অথচ তাঁর নেত্রী আওয়ামী লীগকে দায়ী করছেন।' পাঠক, এখন আপনারাই বলুন, সরকারি উদ্যোগে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে যত তদন্তদলই গঠন করা হোক, বিএনপির স্থানীয় সংসদ সদস্যকে না ফাঁসিয়ে তাদের উপায় থাকবে? প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হয়েছে বিচারের আগে রায় ঘোষণার মতো। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে এমন একটি দুনিয়াকাঁপানো ঘটনা নিয়ে যে ব্লেইম গেম, একে অপরকে দোষারোপ করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার উৎকট প্রতিযোগিতা চলছে, তাতে প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারপ্রধানের বক্তব্যে সরকারি তদন্তকাজ অবশ্যই প্রভাবিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়ের গভীরে গিয়ে সারা দুনিয়ায় এই ঘটনায় আমাদের জাতীয় ভাবমূর্তি যে দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপের ঘোষণা দেননি। ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরগুলো আরো আকর্ষণীয়ভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পুনর্নির্মাণ, বৌদ্ধমূর্তি নির্মাণে সিদ্ধহস্ত বিদেশি কুশলী এনে ধ্বংসপ্রাপ্ত ও আংশিক ধ্বংসপ্রাপ্ত মূর্তিগুলো নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ, মেরামত করার সরকারি উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কত দিনের মধ্যে কাজগুলো সম্পন্ন করে দেওয়া হবে তার একটা সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে পারতেন; পারতেন জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বসতবাড়িগুলো নতুন করে নির্মাণ করে দেওয়ার সরকারি ঘোষণা দিতে। একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়, বসতবাড়ি, শতাব্দীকালের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষা করতে সরকারি ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত সর্বস্বহারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনার আদর্শবাহী আপামর জনগণকে দায়মুক্ত করতে পারতেন। এই গর্হিত অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রকাশ করতে পারতেন আমাদের জাতীয় ঘৃণা। তা না করে রিলিফ বিতরণের মাধ্যমে তিনি করে এলেন ভোটের রাজনীতি। দানবীয় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত আতঙ্কিত মানুষের মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তাবোধের জায়গায় রাজনৈতিক বিভাজনের বিষ ছড়িয়ে তিনি রামুর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষের মধ্যে নতুন আতঙ্কের বাসা বেঁধে দিয়ে এলেন। অথচ এখন জরুরিভাবে সেখানে প্রয়োজন দলমত-নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে স্বস্তির সুবাতাস বইয়ে দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থেকে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, এনজিও ও প্রশাসনের সমন্বয়ে নির্বাচিত দুই জনপ্রতিনিধি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের যৌথ নেতৃত্বে একটি সর্বজনীন শান্তি ও নিরাপত্তা কমিটি করে দিয়ে আসতে পারতেন। তাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সব ভয়ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা কেটে যেত। কিন্তু প্রত্যাশিত তেমন কিছুই হলো না।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বাংলাদেশে সংখ্যায় কম হলেও সমগ্র উপমহাদেশের শত শত বছরের কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নির্মাণে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ভূমিকা অন্য ধর্মাবলম্বীদের চেয়ে ক্ষেত্রবিশেষে অধিকতর উল্লেখযোগ্য। শান্তিপ্রিয় ও শান্তির বাণী প্রচারক এই সম্প্রদায়ের ওপর নির্মমতা চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, মিয়ানমারসহ আমাদের বহু প্রয়োজনীয় উন্নয়ন সহযোগী ও বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্বকে কণ্টকিত করে তুলতে পারে। সারা পৃথিবীর বিবেকবান মানুষের মনে আমাদের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত হতে পারে প্রচণ্ড ঘৃণার বারুদ। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এই নিষ্ঠুর বর্বরতার পরদিন লন্ডনসহ নানা দেশের পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশ সম্পর্কে যে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে, এর আগে কোনো ঘটনা বাংলাদেশের জন্য এত ড্যামেজিং হয়নি। রামুর ঘটনা অবশ্যই একটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা। এই ঘটনায় ভাঙা ঘর হয়তো জোড়া লাগবে, কিন্তু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভাঙা মন জোড়া লাগাতে অনেক সময় লাগবে। দুর্বৃত্তরা আমাদের একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরই শুধু আঘাত হানেনি, তারা আঘাত হেনেছে আমাদের জাতিসত্তার ওপর। শত শত বছর ধরে এই ভূখণ্ডের হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের মধ্যে বিরাজমান সহাবস্থান ও সম্প্রীতির অহংকারকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে তারা। কারা এই দুর্বৃত্ত-দুরাচার? ওদের খুঁজে বের করতে হবে, বিচার করতে হবে, কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে চালকের আসনে বসতে হবে সরকারকে। একটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে তো ব্যর্থ হয়েছেই, তার ওপর যে ঘটনা বিশ্বদরবারে জাতির মাথা হেঁট করিয়েছে, ঐতিহ্যকে ম্লান করে দিয়েছে, সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে দুর্বল করার জন্য 'ছোবল' মেরেছে, সে ঘটনার প্রকৃত খলনায়কদের- তারা যে দলের, যে মতেরই হোক না কেন- খুঁজে বের করতেও যদি সরকার ব্যর্থ হয়, তাহলে এই সরকারের কার্যকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তুলতে পারে জনগণ।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
kazi.shiraz@yahoo.com
দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর মানুষের প্রার্থনা ও সরল আকাঙ্ক্ষার মিনারটি ভেঙে দিলেন। তাঁর বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, তিনি ঘটনার গুরুত্ব ও গভীরতা উপলব্ধি করেননি। তিনি বৌদ্ধপল্লীতে হামলা, অগি্নসংযোগ, লুটপাট, বৌদ্ধমূর্তি ধ্বংসসহ তাদের শতাব্দীকালের ঐতিহ্য বিনাশের বীভৎস তাণ্ডবের সব দায় বিএনপি-জামায়াত-মৌলবাদীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে এলেন; অভিযোগ থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার প্রয়াস নিলেন তাঁর দল আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং তাঁর 'আমার পুলিশ'সহ (সব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই বলে থাকেন) আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে সেখানে নিয়োজিতদের ও জনপ্রশাসনের লোকদের। তাঁর বক্তব্য সর্বজনগ্রাহ্য হয়নি; পক্ষপাত দোষে দুষ্ট। মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তিকে অনেকেই অনৈতিক বলেছেন এই কারণে যে উচ্চ আদালতের রায়ে তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে গিয়েছিল। রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে তিনি তা ধরে রেখেছেন এখনো। এমপি হিসেবে তাঁর বৈধতা প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করা উচিত ছিল। এটা নৈতিকতার প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের সুরাহা হওয়ার আগে তাঁকে সংসদ সদস্য গণ্য করে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া সঠিক হয়নি বলে মনে করেন অনেকে। তবে হ্যাঁ, তাঁকে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী বানানো যেত, যদি সে কোটা অবশিষ্ট থাকে। টেকনোক্র্যাট কোটায়ই বা তাঁকেই নিতে হবে কেন? আর কোনো লোক কি নেই আওয়ামী লীগে? তাঁর নির্বাচিত হওয়া নিয়ে আইনি জটিলতা এখনো নিষ্পন্ন হয়নি বলে তাঁকে নিয়ে এ কথাগুলো রাজনীতির ময়দানে আছে। এ অবস্থায় নিজের বিবর্ণ ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও উজ্জ্বল করার একটা সুযোগ তাঁর সামনে এনে দিয়েছিল রামুর বেদনাবিধুর ঘটনা। তিনি সেখানে তাঁর বক্তৃতা মঞ্চকে আওয়ামী লীগের মঞ্চ বিবেচনা না করে যদি সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর (দল দলীয় লোকদের, সরকার, মন্ত্রী দেশের ও জনগণের) মঞ্চ বিবেচনা করে কথা বলতেন তাহলে নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করার একটা ক্ষেত্র প্রস্তুত হতো। কিন্তু তাঁর দলবাজ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা সে সুযোগ বিনাশ করে দিয়েছে। তাঁর বক্তব্যে প্রশাসন এই দিক নির্দেশনাই পেল যে আর যাই হোক, ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগকে জড়ানো যাবে না। অকারণে আওয়ামী লীগকে জড়ানোর কথা কারো বলা উচিত নয়। কিন্তু আগে থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি বলে দেন যে এর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত-মৌলবাদীরা জড়িত, তাহলে তদন্তকারীরা আওয়ামী লীগ কর্মীরা জড়িত থাকলেও কি তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার সাহস পাবে, নাকি যাদের দিকে তিনি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন, তাদের ঘটনার সঙ্গে না জড়িয়ে নিরপেক্ষভাবে প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করার ঝুঁকি নেবে? তাঁর বক্তব্যে রি-অ্যাক্ট করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। খোদ দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হবিগঞ্জের ১৮ দলের জনসভায় বলে বসলেন যে সরকারি দলের ইন্ধনেই রামুর ঘটনা ঘটেছে। নিজ দলের লোকদের বাঁচানোর জন্যই নাকি বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া তাঁর মোটেই উচিত হয়নি বলে তাঁর অনেক শুভানুধ্যায়ীও তাঁর সমালোচনা করছেন। তাঁদের মতে, তাঁর বক্তব্য দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর মানের বক্তব্য হয়নি। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলতে পারতেন যে তদন্তকাজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রভাবিত হবে এবং প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটিত হবে না ও প্রকৃত দোষীরাও ধরা পড়বে না। কারো ওপর দোষ না চাপিয়ে তাঁর উচিত ছিল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার নেপথ্য কারণ ও নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করার জোরালো দাবি উত্থাপন করা। সেটাই হতো যথার্থ। ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কেও তাঁর উচ্চারণ ছিল বেশ দুর্বল। এর সুদূরপ্রসারী পরিণাম নিয়ে কোনো ধরনের উষ্মা তাঁর চেহারায় ফুটে উঠতে দেখা যায়নি। তাঁর মানের একজন নেত্রীর কাছ থেকে জনগণের সেটা ছিল স্বাভাবিক প্রত্যাশা। তদন্ত প্রক্রিয়ায় সন্দেহ-অবিশ্বাসের শেষ পেরেকটি মেরে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রামু গিয়ে তিনি আর সমগ্র জনগণের ও সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকলেন না, হয়ে গেলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। সরকারপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্র-স্বার্থ না দেখে তিনি দেখলেন দলীয় স্বার্থ। সব ধরনের দলীয় ও গোষ্ঠীগত সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে 'রাষ্ট্রবাজি' না করে তিনি করে এলেন দলবাজি। তিনি ঘটনার জন্য দায়ী করলেন বিএনপিদলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমানকে। সোমবার ৮.১০.২০১২ সকালে রামুর খিজারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জনসভায় তিনি বলেন, 'সেদিন রাত সাড়ে ১১টায় যখন এখানকার মানুষ শান্ত হয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন স্থানীয় সংসদ সদস্য এসে মানুষকে কী বলে গেলেন, যে তিনি চলে যাওয়ার পর মন্দিরে আগুন লাগানো শুরু হলো? আমার প্রশ্ন, তিনি কী কথা বলে গেলেন, কী উস্কানি দিয়ে গেলেন, তা বলতে হবে। মন্দিরে হামলার জন্য তিনিই দায়ী। অথচ তাঁর নেত্রী আওয়ামী লীগকে দায়ী করছেন।' পাঠক, এখন আপনারাই বলুন, সরকারি উদ্যোগে স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে যত তদন্তদলই গঠন করা হোক, বিএনপির স্থানীয় সংসদ সদস্যকে না ফাঁসিয়ে তাদের উপায় থাকবে? প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হয়েছে বিচারের আগে রায় ঘোষণার মতো। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে এমন একটি দুনিয়াকাঁপানো ঘটনা নিয়ে যে ব্লেইম গেম, একে অপরকে দোষারোপ করে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার উৎকট প্রতিযোগিতা চলছে, তাতে প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারপ্রধানের বক্তব্যে সরকারি তদন্তকাজ অবশ্যই প্রভাবিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়ের গভীরে গিয়ে সারা দুনিয়ায় এই ঘটনায় আমাদের জাতীয় ভাবমূর্তি যে দারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপের ঘোষণা দেননি। ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরগুলো আরো আকর্ষণীয়ভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে পুনর্নির্মাণ, বৌদ্ধমূর্তি নির্মাণে সিদ্ধহস্ত বিদেশি কুশলী এনে ধ্বংসপ্রাপ্ত ও আংশিক ধ্বংসপ্রাপ্ত মূর্তিগুলো নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ, মেরামত করার সরকারি উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কত দিনের মধ্যে কাজগুলো সম্পন্ন করে দেওয়া হবে তার একটা সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে পারতেন; পারতেন জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বসতবাড়িগুলো নতুন করে নির্মাণ করে দেওয়ার সরকারি ঘোষণা দিতে। একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়, বসতবাড়ি, শতাব্দীকালের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষা করতে সরকারি ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত সর্বস্বহারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনার আদর্শবাহী আপামর জনগণকে দায়মুক্ত করতে পারতেন। এই গর্হিত অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রকাশ করতে পারতেন আমাদের জাতীয় ঘৃণা। তা না করে রিলিফ বিতরণের মাধ্যমে তিনি করে এলেন ভোটের রাজনীতি। দানবীয় হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত আতঙ্কিত মানুষের মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তাবোধের জায়গায় রাজনৈতিক বিভাজনের বিষ ছড়িয়ে তিনি রামুর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষের মধ্যে নতুন আতঙ্কের বাসা বেঁধে দিয়ে এলেন। অথচ এখন জরুরিভাবে সেখানে প্রয়োজন দলমত-নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে স্বস্তির সুবাতাস বইয়ে দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থেকে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, এনজিও ও প্রশাসনের সমন্বয়ে নির্বাচিত দুই জনপ্রতিনিধি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের যৌথ নেতৃত্বে একটি সর্বজনীন শান্তি ও নিরাপত্তা কমিটি করে দিয়ে আসতে পারতেন। তাতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সব ভয়ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা কেটে যেত। কিন্তু প্রত্যাশিত তেমন কিছুই হলো না।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বাংলাদেশে সংখ্যায় কম হলেও সমগ্র উপমহাদেশের শত শত বছরের কৃষ্টি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নির্মাণে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ভূমিকা অন্য ধর্মাবলম্বীদের চেয়ে ক্ষেত্রবিশেষে অধিকতর উল্লেখযোগ্য। শান্তিপ্রিয় ও শান্তির বাণী প্রচারক এই সম্প্রদায়ের ওপর নির্মমতা চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, মিয়ানমারসহ আমাদের বহু প্রয়োজনীয় উন্নয়ন সহযোগী ও বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্বকে কণ্টকিত করে তুলতে পারে। সারা পৃথিবীর বিবেকবান মানুষের মনে আমাদের বিরুদ্ধে পুঞ্জীভূত হতে পারে প্রচণ্ড ঘৃণার বারুদ। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এই নিষ্ঠুর বর্বরতার পরদিন লন্ডনসহ নানা দেশের পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশ সম্পর্কে যে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে, এর আগে কোনো ঘটনা বাংলাদেশের জন্য এত ড্যামেজিং হয়নি। রামুর ঘটনা অবশ্যই একটি সাম্প্রদায়িক ঘটনা। এই ঘটনায় ভাঙা ঘর হয়তো জোড়া লাগবে, কিন্তু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ভাঙা মন জোড়া লাগাতে অনেক সময় লাগবে। দুর্বৃত্তরা আমাদের একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরই শুধু আঘাত হানেনি, তারা আঘাত হেনেছে আমাদের জাতিসত্তার ওপর। শত শত বছর ধরে এই ভূখণ্ডের হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের মধ্যে বিরাজমান সহাবস্থান ও সম্প্রীতির অহংকারকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে তারা। কারা এই দুর্বৃত্ত-দুরাচার? ওদের খুঁজে বের করতে হবে, বিচার করতে হবে, কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ব্যাপারে চালকের আসনে বসতে হবে সরকারকে। একটি ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে তো ব্যর্থ হয়েছেই, তার ওপর যে ঘটনা বিশ্বদরবারে জাতির মাথা হেঁট করিয়েছে, ঐতিহ্যকে ম্লান করে দিয়েছে, সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে দুর্বল করার জন্য 'ছোবল' মেরেছে, সে ঘটনার প্রকৃত খলনায়কদের- তারা যে দলের, যে মতেরই হোক না কেন- খুঁজে বের করতেও যদি সরকার ব্যর্থ হয়, তাহলে এই সরকারের কার্যকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তুলতে পারে জনগণ।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
kazi.shiraz@yahoo.com
No comments