সোনালী ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলার- হুঁশিয়ারি দুদকের

জালিয়াতি করে হলমার্ক যে টাকা আত্মসাৎ করেছে, তা উদ্ধারের জন্য সোনালী ব্যাংককেই মামলা করতে হবে। নইলে উল্টো সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ঠুকে দেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার দুদকের পক্ষ থেকে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।


সংবাদ সম্মেলনে দুদকের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন কমিশনের সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, জালিয়াতির জন্য দুদক শুধু হলমার্কের বিরুদ্ধে অনিয়মের মামলা করেছে। তাদের টাকা উদ্ধারের জন্য সোনালী ব্যাংক অর্থঋণ আদালত বা অন্য যেকোনো আদালতে মামলা করতে পারে। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোনো সহযোগিতা চাইলে কমিশন থেকে সহযোগিতা করা হবে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সচিব আরো বলেন, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী বাহারুল ইসলামসহ ব্যাংকটির ১০ পরিচালকের সহায়-সম্পদের খোঁজখবর নিচ্ছে দুদক। দুদক কমিশন এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেওয়ার পর এ কাজ শুরু করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তাঁদের সম্পদের বিষয়ে আলাদা অনুসন্ধান করা হবে। তিনি বলেন, হলমার্কের ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা প্রতিবেদনে না এলেও দুদকের মামলা-পরবর্তী তদন্তে এ বিষয় আরো বিশদভাবে খতিয়ে দেখা হবে। আগামী সপ্তাহে বেশির ভাগ পরিচালকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব চেয়ে তাঁদের নোটিশ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে আপাতত মামলা না করলেও দুদকের দায়ের করা মামলার তদন্তে তাঁদের সম্পৃক্ততা এলে তখন অভিযোগপত্রে দোষীদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান বিভাগের সূত্র জানায়।
হলমার্কের বিরুদ্ধে তো দুদক মামলা করেছে, এখন হলমার্কের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিষয়ে দুদক কোনো উদ্যোগ নেবে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের সচিব বলেন, সেটা আদালতের ব্যাপার। আদালত চাইলে হলমার্কের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারেন। তবে এ বিষয়টিও সোনালী ব্যাংকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তিনি বলেন, হলমার্কের মামলায় সোনালী ব্যাংকের পরিচালকদের বাদ রাখা হলেও তাঁদের সম্পদের খোঁজ নিতে ইতিমধ্যে কমিশন থেকে অনুসন্ধানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
দুদক সচিব বলেন, পুলিশের সাবেক আইজি নূর মোহাম্মদ সম্প্রতি দুদকের কাছে এক কোটি ৫৮ লাখ টাকার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছেন। এর মধ্যে তাঁর ২০ লাখ টাকা ঋণ আছে বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া ডেসটিনির পলাতক পরিচালকদের গ্রেপ্তারে দুদকের অভিযান অব্যাহত আছে বলেও তিনি জানান।
সচিব আরো বলেন, রেলের অর্থ কেলেঙ্কারির বিষয়ে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িচালক আজম খানের বক্তব্য নিতে দ্রুত চেষ্টা চালাবে দুদক।
কারসাজির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংকের এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা করে দুদক। ওই মামলায় রবিবার রাতে মিরপুর থেকে তানভীরকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সোমবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ১১ মামলার মধ্যে তিনটিতে তানভীর মাহমুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৪ দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত।
সংবাদ সম্মেলনে দুদক সচিব জানান, গত সেপ্টেম্বরে দুদকের কাছে এক হাজার ১৭টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৯২টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগে কমিশন গত মাসে ৬৮টি মামলা দায়েরের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্যও উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিতীয় দিনের মতো রিমান্ডে হলমার্কের এমডি : দুদকের দায়ের করা ১১ মামলার মধ্যে তিন মামলায় হলমার্কের এমডি তানভীর মাহমুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২৪ দিনের রিমান্ডের মধ্যে গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেছেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা। দুদক কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় দুর্নীতির অভিযোগে ভিআইপিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সংরক্ষিত কক্ষে তানভীরকে নেওয়া হয়। ছয় সদস্যের তদন্ত টিমের প্রধান দুদকের সিনিয়র উপপরিচালক মীর জয়নুল আবেদিন শিবলীর নেতৃত্বে দুদকের কর্মকর্তারা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে রমনা থেকে পুলিশ ভ্যানে করে দুর্নীতি দমন কমিশনে নিয়ে আসা হয় তানভীরকে। প্রথম দিন তুষারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও দ্বিতীয় দিন তাঁকে দেখা যায়নি। তবে এ বিষয়ে দুদকের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
জানা যায়, হলমার্ক ফ্যাশন থেকে ৪৪৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের সুতা রপ্তানি করা হয় বলে ভুয়া নথি দেখিয়ে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে গতকাল তানভীরকে জেরা করেন দুদক কর্মকর্তারা। হলমার্কের কর্মচারী জাহাঙ্গীর আলমকে মালিক সাজিয়ে ভুয়া প্রতিষ্ঠান আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের নামে সোনালী ব্যাংক হোটেল শেরাটন শাখায় (বর্তমানে রূপসী বাংলা) হিসাব খুলে ২৬৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তানভীর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তানভীরকে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আবারও রমনা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ ও দুদকের মধ্যে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক এনামুল হক চৌধুরী জানান, তানভীর ও তুষারকে রমনা থানা থেকে দুদক কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা-নেওয়ার কাজটি তাঁকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.