প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং পিএসসির দায়বদ্ধতা by সোহেল নওরোজ

বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) অধীনে অনুষ্ঠিতব্য ৩৩তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় শেষ মুহূর্তে ৭ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত নির্ধারিত সব আবশ্যিক ও পদ সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।


ছয়টি বিভাগীয় শহরের ২৬টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠেয় এ পরীক্ষায় চার হাজার ২০৬টি শূন্য পদের বিপরীতে ২৮ হাজার ৯১৭ জন পরীক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একসঙ্গে চার সেট প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ায় প্রার্থীরা যারপরনাই ক্ষুব্ধ, বিস্মিত। স্বাভাবিকভাবেই পিএসসির বর্তমান কর্তৃপক্ষের কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অতীতেও একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। তবে গত চার বছরে পিএসসির কাজকর্মে শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে। কোনো প্রকার অঘটন ছাড়াই নিয়মিত পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ হয়েছে। এরূপ পরিস্থিতিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং এ জন্য পরীক্ষা বাতিলের ঘটনা নিঃসন্দেহে একটি বড় বিপর্যয়।
৩৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার বাধ্যতামূলক নয়টি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনায় পত্রপত্রিকার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিরূপ প্রতিক্রিয়া আর উৎকণ্ঠায় ভরে উঠেছে ফেসবুক-টুইটারের পাতা। তবে সবচেয়ে বড় ঝড় যে পরীক্ষার্থীদের মনের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিসিএস কেবল মেধা যাচাইয়ের জন্য অনুষ্ঠিত একটা নিয়োগ পরীক্ষা নয়। কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং ত্যাগের সঙ্গে ধৈর্য ও মনঃসংযোগের সম্মিলন না ঘটলে দীর্ঘমেয়াদি এ পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব হয় না। প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে একদিকে পরীক্ষার পরবর্তী সময়সূচি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলো, অন্যদিকে পরিবর্তিত সূচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আবার মনোনিবেশ করা অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে পড়ল। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও কঠোরতা ছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার শঙ্কা পুরোপুরি দূর হওয়ার নয়।
নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস যেভাবে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে তাতে চাকরিপ্রার্থী মেধাবীদের আতঙ্কিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সর্বশেষ ৩৩তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস পিএসসির অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা এবং সরকারের ঔদাসীন্যকে আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। শুরুতে পিএসসি প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টিকে 'গুজব' বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। তাদের যুক্তি ছিল, পরীক্ষার কিছুক্ষণ আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, সুতরাং ফাঁস হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু প্রশ্নপত্রের সব সেটই যে ফাঁস হতে পারে এমন আশঙ্কা কেন তারা আমলে নিল না? কেন বিসিএসের আবশ্যিক নয়টি বিষয়েরই পরীক্ষা বাতিল করতে হলো? সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে জিজ্ঞাসা_ সপ্তাহ দুয়েক ধরেই লিখিত উত্তরসহ মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে প্রশ্নপত্র বিক্রি ও লেনদেনের খবর চাউর হওয়া সত্ত্বেও তাদের নির্লিপ্ততা কি প্রকারান্তরে ভয়াবহ এ অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের প্রশ্রয় দেওয়ার নামান্তর নয়? পিএসসি না বিজি প্রেস_ কার মধ্যে 'ভূত', সে তর্কে না গিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের শনাক্ত ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের একটি পরীক্ষার আয়োজনের ক্ষেত্রে দীর্ঘ প্রস্তুতির সঙ্গে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও ছাপার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ প্রশ্নপত্র ফাঁসের ভূত তাড়াতে না পারলে অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনার কৌশল পাল্টাবে কিন্তু পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যাবে না।

য় সোহেল নওরোজ :৩৩তম বিসিএস পরীক্ষার্থী ও শিক্ষার্থী
বাকৃবি ময়মনসিংহ
 

No comments

Powered by Blogger.