কম্পানিকা মাল-অনিয়ম অপচয়কে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না
কম্পানির মাল দরিয়ায় ঢেলে দেওয়ার মতো মনে হবে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত দেখে। বিভাগীয় কমিশনারদের গোঁ রক্ষা করতে গিয়ে সরকারের তহবিল থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে তাঁদের জন্য নতুন মডেলের উন্নতমানের গাড়ি কিনতে গিয়ে।
অথচ মাত্র বছরাধিককাল আগে বিভাগীয় কমিশনারদের জন্য ৫২ লাখ টাকা মূল্যের প্রতিটি হিসেবে সাতটি গাড়ি কেনা হয়েছিল। এরই মধ্যে তাঁদের জন্য ৭৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের গাড়ি কিনতে হচ্ছে। তাঁদের কথা, একই গাড়ি দেওয়া হয়েছে ইউএনওদেরও। এতে বিভাগীয় কমিশনারদের সম্মানহানি হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের জন্য গাড়ি প্রদান করতে হবে, এটা যৌক্তিক। কিন্তু তাঁদের এমন কোনো সুবিধা কি দেওয়া ঠিক হবে, যা আমাদের সরকারি তহবিল তথা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়? বিভাগীয় কমিশনার এবং ইউএনও পদ-পদবির দিক থেকে সমান নয়, এটা সত্য। কিন্তু গাড়ির মান দিয়েই কি সরকারি কর্মকর্তাদের মান-মর্যাদা নির্ধারণ করতে হবে এ গরিব দেশে? তা ছাড়া যখন গাড়ি কেনা হয়েছিল, তখন কি তাঁদের মর্যাদা সমান ছিল? কেনার আগে এটা চিন্তা করা হয়নি কেন? এই ঘটনা পরিকল্পনাহীন কর্মপরিচালনারই পরিচায়ক মাত্র। বছরকালের ব্যবধানে সরকারের আবার গাড়ি ক্রয়ের সিদ্ধান্তটি দুর্নীতির আশঙ্কাকেই জোরালো করে দেওয়া। সংগত কারণেই প্রশ্ন এসে যায়, তাহলে কি এই ক্রয়ের পেছনে কারো অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে? অন্তত গত কয়েক বছরে সরকারি কর্মকর্তা, মন্ত্রী ও উপজেলা চেয়ারম্যানদের জন্য প্রায় গণহারে গাড়ি ক্রয়ের হিসাব দেখে যে কারো মনে হতে পারে, এ দেশের টাকার কোনো অভাব নেই। উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, এডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের জন্য কেনা গাড়ি এবং কিছু অতিরিক্ত গাড়ি মিলিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় সাড়ে চার শ গাড়ি কিনেছে সরকার। সব কর্মকর্তাকে একই সঙ্গে গাড়ি দেওয়ার কারণ নাকি প্রাপ্তিক্ষেত্রে সমতা আনা! এখানে রাষ্ট্রের আর্থিক সংগতিকে আমলে আনা হয়নি। কারো গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে অবশ্যই তাঁর গাড়ি প্রতিস্থাপন করতে হবে। কিন্তু গাড়ির তালিকা দেখে স্পষ্ট হয়ে যায়, এটা প্রয়োজনের নিরিখে করা হয়নি।
একটি গরিব দেশে সাধারণ মানুষের অতি জরুরি সেবামূলক কাজ করার জন্য যেখানে সরকার অর্থ বরাদ্দ দিতে পারে না, গাড়ি চলার পথ করে দেওয়ার জন্য যেখানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়নের মতো কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না, সেখানে কর্মকর্তাদের মন রক্ষা করার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের কী যুক্তি থাকতে পারে, তা অবশ্যই ভেবে দেখার বিষয়।
পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরনের অযৌক্তিক দাবি গণমুখী প্রশাসন ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এর কাছে মাথানত করা সুশাসনের ধারণারও পরিপন্থী। তাই সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ ধরনের কাজ বন্ধ করা সম্ভব।
একটি গরিব দেশে সাধারণ মানুষের অতি জরুরি সেবামূলক কাজ করার জন্য যেখানে সরকার অর্থ বরাদ্দ দিতে পারে না, গাড়ি চলার পথ করে দেওয়ার জন্য যেখানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়নের মতো কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না, সেখানে কর্মকর্তাদের মন রক্ষা করার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের কী যুক্তি থাকতে পারে, তা অবশ্যই ভেবে দেখার বিষয়।
পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের এ ধরনের অযৌক্তিক দাবি গণমুখী প্রশাসন ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এর কাছে মাথানত করা সুশাসনের ধারণারও পরিপন্থী। তাই সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ ধরনের কাজ বন্ধ করা সম্ভব।
No comments