তিস্তা সড়ক সেতু-নির্মাণকাজ না তামাশা?
রংপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সড়ক সেতু নিয়ে যা হচ্ছে সেটাকে তামাশা বললে অত্যুক্তি হয় কি? সোমবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, ২০০৬ সালে শুরু হওয়া ওই নির্মাণকাজ ২০০৯ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু তারপর চার দফা সময় বাড়িয়ে নিয়েও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেন কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি তা আমাদের বোধগম্য নয়। এমনকি গত মার্চে ওই স্থান পরিদর্শনকালে কাজের 'অগ্রগতি' দেখে খোদ যোগাযোগমন্ত্রীর অসন্তোষ প্রকাশ এবং সর্বশেষ বর্ধিত সময়সীমা মে মাসের মধ্যে সেতুটি সম্পন্ন করতে না পারলে লাইসেন্স বাতিলের হুমকিও কাজে আসেনি দেখে কেবল বিস্মিতই হতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে বরাদ্দ অর্থ উত্তোলন করা হয়ে গেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এভাবে ঢিমেতালে ও গরজহীনভাবে কাজ করতে থাকে। তিস্তা সড়ক সেতুর ক্ষেত্রেও কি এর পুনরাবৃত্তি হয়েছে? দেশের বিভিন্ন স্থানে এমন দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে পতিত সেতু স্থানীয় জনসাধারণের যাতায়াতের ক্ষেত্রে গলার ফাঁস হয়ে থাকার নজির বিরল নয়। কিন্তু মনে রাখা জরুরি, সড়ক সেতুটির ওপর উত্তরবঙ্গের তিনটি জেলার বিপুলসংখ্যক মানুষের যোগাযোগ ও পরিবহনের স্বাচ্ছন্দ্য নির্ভর করছে। ওই স্থানে একটি প্রাচীন রেল সেতু রয়েছে। এতে পাটাতন বিছিয়ে বাস ও অন্যান্য গাড়িও চলাচল করছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু এতে ঝামেলার শেষ নেই। রেল যাতায়াতের সময় যেমন অন্য যানবাহনকে দীর্ঘসময় সেতুর দু'পাশে অপেক্ষা করতে হয়; তেমনি সেতুতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট অঞ্চল গোটা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শতবর্ষ-প্রাচীন সেতুটি রেল ও সড়কপথের যৌথ চাপ কত দিন সহ্য করতে পারবে, সে প্রশ্নও ছিল। ওই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত সড়ক সেতুটি এসব সমস্যার সমাধান দিতে পারত। ঠিকাদারের দায়িত্বহীনতার কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষের এই স্বপ্ন ও স্বাচ্ছন্দ্য সুদূরপরাহত হবে কেন? এখন এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কি আদৌ সেতুটি সম্পন্ন করতে চায়? কর্তৃপক্ষ কী করছে আমরা জানতে চাই। কারও মামাবাড়ির আবদার মেটানোর জন্য রাষ্ট্র তাদের নিয়োগ করেনি। তিস্তা সেতু নিয়ে অনেক তামাশা হয়েছে, আর দেখতে চাই না।
No comments