ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এই তবে ছাত্রনেতা, এরই নাম প্রাধ্যক্ষ!
বড় ভাইদের সালাম দেয় না, সম্মান করে না, প্রোগ্রামে আসে না—তাদের মারব না তো কী করব?’ এই দম্ভোক্তিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হল ছাত্রলীগ সভাপতির। প্রথম আলো ১৮ জানুয়ারি উদ্ধৃতি হিসেবে এটি তুলে ধরেছে। বিস্তারিত পড়ে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০-১২ জন শিক্ষার্থী, যাঁরা সবাই মাস্টারদা সূর্য সেন হলের একটি কক্ষে অবস্থান করেন।
তাঁদের সবাইকে ১৭ জানুয়ারি হলের অতিথিকক্ষে ধরে এনে শীতের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখে জেরা করা হয়েছে, দেয়ালে মাথা ঠোকা হয়েছে এবং একপর্যায়ে পেটানো হয়েছে। তাঁদের অপরাধ (?) তাঁরা ছাত্রলীগের সভায় উপস্থিত হন না, বড় ভাইদের দেখে সালাম দেন না। শিক্ষার্থীদের এই অপরাধটি (!) জানা গেছে হল ছাত্রলীগের নেতার মুখে, একই সঙ্গে যিনি নিজ দায়িত্বের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে হলের প্রাধ্যক্ষও সাংবাদিকদের কাছে তাঁর দায়িত্ব ও দায়িত্বশীলতার একটি ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন।
ছাত্রলীগের কীর্তিকলাপ নিয়ে মাঝেমধ্যে এ ধরনের সংবাদ গণমাধ্যমের কল্যাণে পাঠকের সামনে আসে। শুধু ছাত্রলীগ নয়, যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছাত্রসংগঠন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ‘রাজা বনে যায়’। তারা টেন্ডারবাজি, খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ এ ধারার বাইরে আসতে পারেনি। যদিও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ২৩ দফার নির্বাচনী অঙ্গীকারে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা, একটি আধুনিক সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কথা বলেছিল। বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে, তরুণ ভোটাররা (ওই শিক্ষার্থীদের বয়সী) সেই প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করেন, তাদের সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছে।
১৯৭৩ সালের পর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ফলাফলে এত বড় বিজয় আসেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় এলেও সে সময় তাদের আসনসংখ্যা ছিল ৫০ শতাংশের নিচে। কিন্তু ২০০৮ সালের বিজয় ছিল নিরঙ্কুশ। এই বিজয়ের নায়ক ছিলেন এ দেশের তরুণ প্রজন্ম। যারা সব সময় একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও আধুনিক দেশ দেখতে চায়। কিন্তু সরকারের শাসনামলের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে যে সংবাদ পত্রিকায় এসেছে, তাতে আবারও প্রমাণিত হলো ‘পরিবর্তন হয়নি মনে ও আচরণে।’ আওয়ামী লীগ যেহেতু ক্ষমতায়, তাই ছাত্রলীগের নেতারা রাজা হয়ে গেছেন। এই তল্লাটের তাঁরা মালিক, শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রজা। এই প্রজারা তাঁদের রাজাদের সালাম দিয়ে চলবে, রাস্তাঘাটে কদমবুসি করবে, পরীক্ষার হলে না গিয়ে মিছিলে যাবে! এর ব্যত্যয় হলেই নেমে আসবে নির্যাতনের খড়্গ। সূর্য সেন হলে যেটা ঘটেছে।
কেউ বলবেন এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অথবা ওই সংগঠেনের শীর্ষ রাজারা হয়তো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন। বলা বাহুল্য, তা হবে লোক দেখানো। কেননা, এ ধরনের ঘটনা দুই বছর ধরে ঘটেই চলছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুঙ্কার ছাড়ছেন, ‘আর কিন্তু কোনো গুন্ডামি সহ্য করব না’, বলছেন, ‘ছাত্রলীগের মধ্যে শিবির ঢুকেছে’ প্রধানমন্ত্রী ‘সম্পর্কছেদ করছেন’, আবার তাঁদের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটছেন। পত্রিকা ঘেঁটে জানা গেছে, ছাত্রলীগ গত দুই বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৪২টি সংঘাতের জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯০টি ও বাইরে ৫২টি। এসব সংঘর্ষে ১৬ জন খুন হয়েছে, আহতের সংখ্যা চার হাজারের অধিক। তাদের সন্ত্রাসের কারণে বন্ধ হয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। হয়তো কেউ বলবেন, ‘আগের সরকারের সময়ও তো এটা হয়েছে।’ হ্যাঁ, সত্য। কিন্তু এখনো তা-ই হবে? তা মেনে নেওয়া যায় না। জনগণও মেনে নিচ্ছে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফল তা প্রমাণ করছে।
প্রথম আলোর এই কলামে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের সন্ত্রাস নিয়ে আমরা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলাম। দেশের মানুষও নানা সময় এই গুন্ডামি বন্ধের দাবি তুলেছে। কিন্তু তা যে বন্ধ হয়নি, সূর্য সেন হলের ঘটনা তার সাক্ষ্য দেয়। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়াও শুভ নয়। আওয়ামী লীগের নেতারা, সরকারের মন্ত্রীরা কি তা বুঝতে পারছেন? পাবনার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর সরকার সমর্থকদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২ অক্টোবর এই কলামে আমরা প্রশ্ন করেছিলাম, যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকার আর আওয়ামী লীগের জন্য অতল গর্ত খুঁড়েছেন কি না! আজ পৌর নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, আশঙ্কা সত্য। গর্ত খোঁড়া চলছেই। আপাত দৃষ্টিতে তাঁদের দলীয় কর্মী হিসেবে চেনা গেলেও তাঁরা ‘দুধের মাছি’। আওয়ামী লীগ যখন বিপদে পড়বে, তাঁরা সবাই লাপাত্তা হয়ে যাবেন, অপকর্মের বোঝা বইতে হবে আওয়ামী লীগকেই। ইতিহাস তা-ই বলে।
সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষর বয়ানও একই সংবাদে উদ্ধৃত করা হয়েছে। ‘তারেক বন্দনা’ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রুচিহীনতার বিষয়টি ৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ আমরা এই কলামে তুলে ধরেছিলাম। আজ দেখছি, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনো কিছু শিক্ষক রয়েছেন, যাঁরা দায়িত্ববোধ শেখেননি, নৈতিক মূল্যবোধ ছাড়াই বেড়ে উঠেছেন, সনদ সংগ্রহ করেছেন, মনুষ্যত্ব অর্জন করেননি। একজন অভিভাবক তাঁর সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে ভাবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাঁর সন্তানের বিপদে পাশে দাঁড়াবেন, আগলে রাখবেন। সেই অভিভাবক যখন দুর্বিনীত ছাত্রলীগের ধৃষ্টতা জানবেন, আর প্রাধ্যক্ষের বয়ান শুনবেন, তখন লজ্জিত হবেন নিশ্চয়ই। প্রাধ্যক্ষ যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য। তাঁর বক্তব্য প্রমাণ করে, তিনি মূক ও বধির হয়ে আছেন।
একজন মানুষ বিপদে পড়লে এখনো তার সহায়তায় আমরা ছুটে যাই, এটি আমাদের বাল্যকালের শিক্ষা, আমাদের সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র মানুষের মধ্যে এখনো বিরাজমান। অথচ একজন শিক্ষক প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে থেকে নানা সুবিধা নিয়েও যেহেতু ‘কেউ এসে বলেননি, তাই বিবেক টলেনি’ ধরনের মনোভাব পোষণ করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে আসে আমাদের মগজে সত্যিই পচন ধরেছে। সমাজের অনেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেলেও মানসিক বিকলঙ্গতার সঙ্গে যে এখনো বাস করছেন, প্রাধ্যক্ষ তা জানান দিলেন। ছাত্রলীগের নেতা শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে আর হলের প্রাধ্যক্ষ দায়িত্ব অবহেলা করে অপরাধ করেছেন। আমরা দুজনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করি।
লেখকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী।
ছাত্রলীগের কীর্তিকলাপ নিয়ে মাঝেমধ্যে এ ধরনের সংবাদ গণমাধ্যমের কল্যাণে পাঠকের সামনে আসে। শুধু ছাত্রলীগ নয়, যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছাত্রসংগঠন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ‘রাজা বনে যায়’। তারা টেন্ডারবাজি, খুন, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়সহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ এ ধারার বাইরে আসতে পারেনি। যদিও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ২৩ দফার নির্বাচনী অঙ্গীকারে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনা, একটি আধুনিক সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কথা বলেছিল। বাংলাদেশের মানুষ বিশেষ করে, তরুণ ভোটাররা (ওই শিক্ষার্থীদের বয়সী) সেই প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করেন, তাদের সমর্থন দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছে।
১৯৭৩ সালের পর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ফলাফলে এত বড় বিজয় আসেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় এলেও সে সময় তাদের আসনসংখ্যা ছিল ৫০ শতাংশের নিচে। কিন্তু ২০০৮ সালের বিজয় ছিল নিরঙ্কুশ। এই বিজয়ের নায়ক ছিলেন এ দেশের তরুণ প্রজন্ম। যারা সব সময় একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও আধুনিক দেশ দেখতে চায়। কিন্তু সরকারের শাসনামলের দুই বছর পূর্ণ হওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে যে সংবাদ পত্রিকায় এসেছে, তাতে আবারও প্রমাণিত হলো ‘পরিবর্তন হয়নি মনে ও আচরণে।’ আওয়ামী লীগ যেহেতু ক্ষমতায়, তাই ছাত্রলীগের নেতারা রাজা হয়ে গেছেন। এই তল্লাটের তাঁরা মালিক, শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রজা। এই প্রজারা তাঁদের রাজাদের সালাম দিয়ে চলবে, রাস্তাঘাটে কদমবুসি করবে, পরীক্ষার হলে না গিয়ে মিছিলে যাবে! এর ব্যত্যয় হলেই নেমে আসবে নির্যাতনের খড়্গ। সূর্য সেন হলে যেটা ঘটেছে।
কেউ বলবেন এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অথবা ওই সংগঠেনের শীর্ষ রাজারা হয়তো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন। বলা বাহুল্য, তা হবে লোক দেখানো। কেননা, এ ধরনের ঘটনা দুই বছর ধরে ঘটেই চলছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুঙ্কার ছাড়ছেন, ‘আর কিন্তু কোনো গুন্ডামি সহ্য করব না’, বলছেন, ‘ছাত্রলীগের মধ্যে শিবির ঢুকেছে’ প্রধানমন্ত্রী ‘সম্পর্কছেদ করছেন’, আবার তাঁদের অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটছেন। পত্রিকা ঘেঁটে জানা গেছে, ছাত্রলীগ গত দুই বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৪২টি সংঘাতের জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯০টি ও বাইরে ৫২টি। এসব সংঘর্ষে ১৬ জন খুন হয়েছে, আহতের সংখ্যা চার হাজারের অধিক। তাদের সন্ত্রাসের কারণে বন্ধ হয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। হয়তো কেউ বলবেন, ‘আগের সরকারের সময়ও তো এটা হয়েছে।’ হ্যাঁ, সত্য। কিন্তু এখনো তা-ই হবে? তা মেনে নেওয়া যায় না। জনগণও মেনে নিচ্ছে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফল তা প্রমাণ করছে।
প্রথম আলোর এই কলামে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের সন্ত্রাস নিয়ে আমরা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলাম। দেশের মানুষও নানা সময় এই গুন্ডামি বন্ধের দাবি তুলেছে। কিন্তু তা যে বন্ধ হয়নি, সূর্য সেন হলের ঘটনা তার সাক্ষ্য দেয়। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়াও শুভ নয়। আওয়ামী লীগের নেতারা, সরকারের মন্ত্রীরা কি তা বুঝতে পারছেন? পাবনার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ওপর সরকার সমর্থকদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২ অক্টোবর এই কলামে আমরা প্রশ্ন করেছিলাম, যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকার আর আওয়ামী লীগের জন্য অতল গর্ত খুঁড়েছেন কি না! আজ পৌর নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, আশঙ্কা সত্য। গর্ত খোঁড়া চলছেই। আপাত দৃষ্টিতে তাঁদের দলীয় কর্মী হিসেবে চেনা গেলেও তাঁরা ‘দুধের মাছি’। আওয়ামী লীগ যখন বিপদে পড়বে, তাঁরা সবাই লাপাত্তা হয়ে যাবেন, অপকর্মের বোঝা বইতে হবে আওয়ামী লীগকেই। ইতিহাস তা-ই বলে।
সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষর বয়ানও একই সংবাদে উদ্ধৃত করা হয়েছে। ‘তারেক বন্দনা’ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রুচিহীনতার বিষয়টি ৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ আমরা এই কলামে তুলে ধরেছিলাম। আজ দেখছি, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনো কিছু শিক্ষক রয়েছেন, যাঁরা দায়িত্ববোধ শেখেননি, নৈতিক মূল্যবোধ ছাড়াই বেড়ে উঠেছেন, সনদ সংগ্রহ করেছেন, মনুষ্যত্ব অর্জন করেননি। একজন অভিভাবক তাঁর সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে ভাবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাঁর সন্তানের বিপদে পাশে দাঁড়াবেন, আগলে রাখবেন। সেই অভিভাবক যখন দুর্বিনীত ছাত্রলীগের ধৃষ্টতা জানবেন, আর প্রাধ্যক্ষের বয়ান শুনবেন, তখন লজ্জিত হবেন নিশ্চয়ই। প্রাধ্যক্ষ যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য। তাঁর বক্তব্য প্রমাণ করে, তিনি মূক ও বধির হয়ে আছেন।
একজন মানুষ বিপদে পড়লে এখনো তার সহায়তায় আমরা ছুটে যাই, এটি আমাদের বাল্যকালের শিক্ষা, আমাদের সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র মানুষের মধ্যে এখনো বিরাজমান। অথচ একজন শিক্ষক প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বে থেকে নানা সুবিধা নিয়েও যেহেতু ‘কেউ এসে বলেননি, তাই বিবেক টলেনি’ ধরনের মনোভাব পোষণ করেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে আসে আমাদের মগজে সত্যিই পচন ধরেছে। সমাজের অনেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেলেও মানসিক বিকলঙ্গতার সঙ্গে যে এখনো বাস করছেন, প্রাধ্যক্ষ তা জানান দিলেন। ছাত্রলীগের নেতা শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে আর হলের প্রাধ্যক্ষ দায়িত্ব অবহেলা করে অপরাধ করেছেন। আমরা দুজনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করি।
লেখকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী।
No comments