ভারতের আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন বাংলাদেশের কমিটি চলতি সপ্তাহে-প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাচ্ছে ট্রানজিট by আশরাফুল হক রাজীব

ভারতকে ট্রানজিট বা আন্তদেশ পরিবহন ও যোগাযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো স্থাপন করছে বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন ধরে ট্রানজিট ইস্যু নিয়ে আলোচনা হলেও তা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। অবশেষে বিষয়টিতে অগ্রগতি হয়েছে। ট্রানজিটকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ভারত ইতিমধ্যে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে।


এর আলোকে বাংলাদেশেও ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হচ্ছে।
ট্রানজিট-সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে আহ্বায়ক করে চলতি সপ্তাহেই কমিটি গঠন করা হচ্ছে। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ট্রানজিট ইস্যুতে এরই মধ্যে অনেক আলোচনা হলেও তা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হচ্ছে। আন্তদেশ পরিবহনে নৌপথ, নদী, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর ব্যবহৃত হয়। এর সবই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত। এ কারণে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ট্রানজিটের কাজ সমন্বয় করবে।'
এক প্রশ্নের জবাবে নৌপরিবহনমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশের স্বার্থ ঠিক রেখে যতটুকু সম্ভব ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া হবে। এ থেকে আমরা যেন সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে পারি, তা নিশ্চিত করা হবে। কারণ ট্রানজিটের ফলে আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হব। ভারত সীমিতভাবে নৌবন্দর ব্যবহার করছে। নৌপথ ও বন্দর ব্যবহার করতে দিয়ে আমরা রাজস্ব পাচ্ছি। ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট দিয়েও ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারব।' প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা
ড. মশিউর রহমান বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার রূপরেখা নিয়ে কাজ করছেন। বাংলাদেশের উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা কমিটির চেয়ারম্যান মশিউর রহমান গত ২৩ মার্চ ট্রানজিট বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয় সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে ট্রানজিটের ফোকাল (বাস্তবায়নকারী) মন্ত্রণালয় হিসেবে কাজ করার তাগিদ দেন। ট্রানজিটকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে মশিউর রহমান ১৬ এপ্রিল নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে ডিও লেটার (আধাসরকারি পত্র) দেন। তাতে উল্লেখ করা হয়, 'আন্তপরিবহন ও যোগাযোগের জন্য আমরা এখনো কোনো আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি বা দল গঠন করিনি। ভারত আন্তদেশ পরিবহন ও যোগাযোগের জন্য ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে। আন্তদেশ পরিবহনে প্রধানত নৌপথ, নৌবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর ব্যবহৃত হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভুক্ত। সড়ক ও রেলপথ ব্যবহৃত হলেও তা নৌকেন্দ্রিক পরিবহন ব্যবস্থার তুলনায় গৌণ। শুল্ক ব্যবস্থা সমন্বয়ের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেও কমিটির অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।' এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা নৌ মন্ত্রণালয়কে আন্তদেশ পরিবহন ও যোগাযোগব্যবস্থা সমন্বয়ের দায়িত্ব গ্রহণ ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো স্থাপনের সুপারিশ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আন্তদেশ পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য ১২ সদস্যের কমিটি গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিগগির কমিটির অফিস আদেশ জারি হতে পারে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটিতে পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, যোগাযোগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিআইডাবি্লউটিএ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের একজন করে প্রতিনিধি রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই বৈঠক করে কমিটির কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আন্তদেশ পরিবহন ও যোগাযোগের জন্য ভারত আট সদস্যের কমিটি করেছে। তাতে রয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, অর্থ ও রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের পরিচালক, নৌ মন্ত্রণালয়ের আইডাবি্লউএআই উইংয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশবিষয়ক উপসচিব, সড়কপথ বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই ট্রানজিটের বিষয়টি আলোচিত হলেও প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাঠামো দাঁড়ায়নি। এই প্রথমবারের মতো দুই দেশ এ বিষয়ে একটি কাঠামো তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। তবে কমিটিতে মন্ত্রণালয়ের বাইরে থেকেও প্রতিনিধি রাখা উচিত। আর ভারতের সঙ্গে ট্রানজিটবিষয়ক যেকোনো আলোচনা হতে হবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে।

No comments

Powered by Blogger.