সমুদ্রজয়ে নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী-জনকল্যাণই লক্ষ্য, হারাবার ভয় নেই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জনগণকে পিতার মতোই ভালোবাসতে শিখেছি। আমার মৃত্যুভয় নেই। কিছু হারাবার ভয়ও নেই। জনকল্যাণই আমার লক্ষ্য। জনগণের জন্য ত্যাগ স্বীকারে আমি প্রস্তুত।’ গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সমুদ্রজয় উদ্যাপন জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত সংবর্ধনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী।


জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে সম্মাননা পাঠ করেন সৈয়দ শামসুল হক। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী সম্মাননাপত্র প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এরপর নৃত্য ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের অংশগ্রহণে গণসংগীত পরিবেশন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্রে আমাদের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। অতীতে তার ব্যত্যয় ঘটেছে। ভারতের সঙ্গে সালিসের রায় হবে ২০১৪ সালে। আবার নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এলে বিজয় নিশ্চিত করতে পারব। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে প্রস্তুতিমূলক কাজ হিসেবে ফ্রিগেট ক্রয়, মিগ-২৯ বিমান ক্রয়, কক্সবাজারে রাডার স্থাপন, বিমানঘাঁটি স্থাপন এবং সেনাক্যাম্প স্থাপন করি। আর এবার ক্ষমতায় এসে নৌবাহিনীর জন্য হাইড্রোগ্রাফিক জাহাজ ক্রয় করি। দ্রুততার সঙ্গে তথ্য সংগ্রহের কাজ করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু কমেছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চলেছে। জঙ্গিবাদ নেই। আমরা সবুজ-সুনীল সোনার বাংলা গড়ে তুলব। এ বাংলা বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর কোথাও অসাংবিধানিক সরকার মানুষের কল্যাণ করতে পারেনি। কেবল গণতান্ত্রিক সরকারই মানুষের কল্যাণ করতে পারে। এই সংবর্ধনা বাংলার জনগণের, লাখো শহীদের। তিনি সমুদ্রসম্পদকে নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, এ সংবর্ধনা কোনো দলের পক্ষ থেকে নয়, সারা দেশের জনগণের পক্ষ থেকে। এখন বাংলাদেশ বলতে কেবল স্থলভাগ নয়, সমুদ্রসীমা নিয়ে একটি নির্দিষ্ট এলাকা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব দরকার, যারা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে। সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পেয়েছি। গত নির্বাচনে তাঁকে সুযোগ দিয়েছি। তাঁকে আরও সুযোগ দিতে হবে। তিনি আমাদের জন্য যা করতে পেরেছেন, তা মনে রেখেই বলব, আপনাকে আমাদের আরও প্রয়োজন আছে।’
জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী আইনি লড়াই করে সমুদ্র জয় করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমি শিশুদের চিকিৎসক। বর্তমানে শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার কমেছে। বিনা মূল্যে শিশুদের বই দেওয়া হচ্ছে। আপনার এই উদ্যোগ আরও সফল হোক।’
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, কূটনৈতিক দক্ষতা অতিক্রম করে এই সমুদ্রজয় একটি বড় মাইলফলক। এই সাফল্য ধরে রাখতে আগামী আরও দুটো নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে রাখার জন্য চেষ্টা করে যাব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বের কারণেই এ বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছে।
ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, পিতা দেশ স্বাধীন করে গেছেন, আর কন্যা আরেকটি বাংলাদেশসম সমুদ্র দিয়ে গেলেন। পিতা-কন্যার এই অর্জন বিরল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘জাতির এই বিজয়কে যারা মানতে পারে না, আমাদের অগ্রযাত্রাকে যারা মানতে পারে না, তাদের এই হীনম্মন্যতা মনে রেখেই আগামী নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিল্পী, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কৃষিবিদসহ পেশাজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আবৃত্তি ও বিশিষ্ট শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।

No comments

Powered by Blogger.