নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করা হোক-হরতাল সমাধান নয়

পর পর তিন দিনের হরতালের পর চার দিনের বিরতিতে আবার টানা দুই দিনের হরতালের কর্মসূচি বড়ই পরিতাপের। বিএনপির গতকালের হরতাল ঘোষণার পর এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ আবার পরিবর্তন করা হলো। আমরা আশা করব, বিএনপি এর পরের কর্মকৌশল নির্ধারণে বিষয়টি বিবেচনায় নেবে।


বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীর উদ্ধার অভিযানের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক কোনো ফল এখনো পাওয়া যায়নি, যাতে দলের নেতা-কর্মীদের ক্ষুব্ধ হওয়া স্বাভাবিক। তবে শুধু হরতাল কোনো সমাধান নয়।
আমরাও চাই অবিলম্বে ইলিয়াস আলী উদ্ধার হোন। শুধু বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বলেই নয়, দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং গুমের ঘটনাবলির পটভূমিতে তাঁর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে। সরকারের দায়িত্ব, সফল উদ্ধার অভিযানের মধ্য দিয়ে এ উদ্বেগের অবসান ঘটানো। কিন্তু এর প্রতিবাদ কর্মসূচি হিসেবে টানা হরতাল কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিরোধী দলকে অবশ্যই উপযুক্ত বিকল্প কর্মসূচির কথা ভাবতে হবে।
প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে সহিংস হরতালের বিরুদ্ধে আমাদের যে নীতিগত অবস্থান, তা পুনর্ব্যক্ত করছি। কারণ, এ ধরনের কর্মসূচিতে সমস্যা সমাধান হয় না, জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।
নিখোঁজ বা গুম হওয়ার ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও সরকার কঠোর অবস্থান না নিলে জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই সেই পরিস্থিতি কাম্য নয়। বিরোধী দল বর্তমানে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের বিরুদ্ধে হরতাল পালন করলেও ক্ষমতায় গেলে এসব অপরাধ বন্ধে কী পদক্ষেপ নেবে, সে সম্পর্কে কিছুই বলছে না। বিএনপি অপারেশন ক্লিন হার্ট শুরু করেছিল, এর সঙ্গে জড়িত সরকারি বাহিনীর সদস্যদের যাতে বিচার না হয়, সে জন্য ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি আইনও পাস করেছিল। আওয়ামী লীগ তখন এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিল এবং আমরা তাদের নীতিগত অবস্থানকে সমর্থন দিয়েছিলাম। এখন আওয়ামী লীগকে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নিতে দেখা যায় না। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
আর দশটা বিষয়ের মতো ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া নিয়ে দুই প্রধান দলের বাগিবতণ্ডা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকে সন্দেহের আঙুল তুলেছে। দেশ যে একটি অনিশ্চিত ও অস্থির অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাতে সন্দেহ নেই। কারণ, মানবাধিকার কমিশনসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে দাবি করছে, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গুমের ঘটনায় রাষ্ট্রীয় সংস্থার সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব খতিয়ে দেখার জন্য দেশ-বিদেশে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের দাবি জোরালো হয়ে উঠছে। কিন্তু সরকার এসবের প্রতি গতানুগতিক শিথিল মনোভাব দেখিয়ে চলেছে। গুম হওয়া মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত জঘন্যতম অপরাধের অন্যতম। একটা সময় গেছে, কে কত বড় সন্ত্রাসী, কে কতগুলো মামলার ফেরার আসামি, এটা চিহ্নিত করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে জনপ্রিয় করার প্রয়াস চালানো হয়েছিল। এটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা বা অপরাধ দমনের উপায় হতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.