আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মেলন-আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মেলন by জিল্লুর রহমান রতন
আশা করা হচ্ছে, এ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ায় শিশুদের অটিজমের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও প্রতিরোধে একটি অভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রণীত হবে, যা এ অঞ্চলের অটিস্টিক শিশুদের সুন্দর ও সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়ক হবে। আর অটিস্টিক শিশুদের জন্য সুন্দর ও সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ নির্মাণের দায়িত্ব আমাদের সবার অটিজম শিশুদের একটি স্নায়বিক
বিকাশজনিত সমস্যা যা অটিস্টিক স্পেকট্রাম ডিস অর্ডার নামক সামগ্রিক বিকাশজনিত সমস্যার একটি বিশেষ ধরন। এর মধ্যে ক্লাসিক্যাল অটিজম থেকে শুরু করে উচ্চকর্মক্ষমতা সম্পন্ন অ্যাসপার্জার ডিস অর্ডার সবই অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু আমাদের সমাজে অটিজম সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য ও এ বিষয়ে সচেতনতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে যে কারণে অটিজম নির্ণয়ে বেশিরভাগ সময় দেরি হয়ে যায় । এ জন্য অটিস্টিক শিশুদের দ্রুত সেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অথচ অটিস্টিক শিশুর পরিচর্যায় জন্য দ্রুত সমস্যা নিরূপণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও অটিজমের প্রকোপ বাড়ছে। অটিজম বিষয়ে জাতীয় কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ঢাকা বিভাগে ১৫টি জেলায় শিশু-কিশোরের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, প্রতি হাজারে ৮ জন শিশুর আটিজমের সমস্যা রয়েছে, যা উন্নত দেশের কাছাকাছি। অটিস্টিক শিশু ও তাদের অভিভাবকরা আমাদের সমাজে নানা বৈষম্যের শিকার। এর অন্যতম কারণ অটিজম সম্পর্কে জনসচেতনতার অভাব ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। এ বিষয়টি অটিস্টিক শিশুর সমাজে মুক্তভাবে বিকশিত হওয়ার পথে একটি বড় অন্তরায়।
অটিজম অন্যান্য বিকাশজনিত সমস্যা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও বিশেষ ধরনের। শিশু জন্মের পর অন্যসব শিশু যেভাবে বেড়ে ওঠে অটিস্টিক শিশুর ক্ষেত্রে তা হয় না। সাধারণত ৬ মাসের মধ্যে শিশুদের পরিচিতজন কিংবা পরিবেশে হাসি দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় এবং ৯ মাস বয়সে ডাকলে সাড়া দেওয়া বা কোনো শব্দের উৎসের দিকে তাকানোর একটি সহজাত প্রবণতা থাকে। কিন্তু অটিস্টিক শিশুর ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। অটিস্টিক শিশুর ক্ষেত্রে কথা বলা বা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা যায়। অন্য সব শিশু যেখানে এক বছর বয়সে দু'একটি শব্দ যেমন মা-বাবা, দাদা প্রভৃতি বলতে শুরু করে অটিস্টিক শিশুদের ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। এদের ক্ষেত্রে অনেক সময় পূর্বে অর্জিত কথা বলার দক্ষতাও হারিয়ে ফেলে। অটিজমের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে সামাজিক ভাব বিনিময়ের সমস্যা অন্যতম। এ ধরনের শিশুরা একা থাকতে পছন্দ করে, অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে আগ্রহী হয় না, কাছে ডাকলে কিংবা আদর করলে বিরক্ত হয় ও সরাসরি তাকানো এড়িয়ে চলে। যোগাযোগ ও ভাষাগত দক্ষতার অভাব ও সে সঙ্গে ইশারা কিংবা অভাষাগত যোগাযোগ দক্ষতারও অভাব লক্ষ্য করা যায়। অটিস্টিক শিশুর একই ধরনের আচরণ বা ব্যবহার এবং একই বিষয়ের প্রতি আগ্রহ যেমন, একই রকম খেলনা, রঙ, খাবার প্রভৃতির প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। এসব লক্ষণ সাধারণত শৈশবে দেখা যায়। তবে অনেক সময় পূর্ণাঙ্গ লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে তিন বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এসব সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে অটিস্টিক শিশুর আচরণগত সমস্যা, অতিচঞ্চলতা, সহিংস আচরণ, বুদ্ধিপ্রতিন্ধিতাসহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং অনিদ্রা, খাবার সম্যস্যা, খিঁচুনি ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে। এ জন্যই অটিজম নিরূপণ এবং সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত সেবাদলের সহায়তা প্রয়োজন।
অটিজমের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও বংশগতি বা জিনেটিক কারণকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয়। শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারা, শিশু পরিচর্যার পদ্ধতি ও ভ্যাকসিন বা টিকাদানের কারণে অটিজম হওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কারণ যাই থাক, সঠিক সময়ে অটিজম নিরূপণ করে বিভিন্ন ডিসিপিল্গনের সমন্বয়ে গঠিত সেবাদলের তত্ত্বাবধানে পরিচর্যার ব্যবস্থা থাকলে অটিস্টিক শিশুকে কর্মক্ষম রাখা ও পূর্ণভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া সম্ভব। আর এ সেবাদলে শিশু মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিদ, স্পিচথেরাটিস্ট, অকুপেশনাল ও ফিজিওথেরাটিস্টসহ বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞের অন্তর্ভুক্তি অপরিহার্য। এখানে কারও ভূমিকা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সমন্বয়হীনতা অটিস্টিক শিশুর বিকাশের অন্যতম অন্তরায়। বিদ্যমান সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অটিস্টিক শিশুদের জন্য এ ধরনের সেবাপ্রাপ্তি সম্পর্কে অভিভাবকদের জানা থাকা প্রয়োজন, যাতে তারা এসব সেবা গ্রহণ করতে পারেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিকাশ ক্লিনিক এবং সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর নিউরো ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন বা অটিজম সেন্টার অন্যতম।
অটিজম বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি এ বিষয়ে জনমনে বিভ্রান্তি দূরীকরণ ও সেবাপ্রাপ্তিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুর সেবা প্রদানে সমাজকল্যণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচটি জেলায় পাইলট প্রকল্প চালু করেছে, যা বর্তমানে আরও দশটি জেলায় সম্প্র্রসারিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সেবা সারাদেশে ৬৪টি জেলায় সম্প্র্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও এসব সেবাকেন্দ্রে বিশেষায়িত সেবার সুযোগ কম, তারপরও প্রশিক্ষিত কর্মী ও দক্ষ জনবলের এ সেবা অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য তৃণমূল পর্যায়ে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কারণ অটিস্টিক শিশুর জন্য বিশেষায়িত সেবার বেশিরভাগই শহরকেন্দ্রিক। আর ঢাকায় অবস্থিত অটিস্টিক শিশুদের জন্য বেসরকারি স্কুল ও সেবা খুবই ব্যয়বহুল, যার ব্যয় বহন করার সামর্থ্য বেশিরভাগ অভিভাবকের নেই। এবার জাতীয় প্রতিবন্ধী ও অটিজম দিবস একই দিনে জাতীয় পর্যায়ে পালন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অটিজম সেন্টার ও অটিজম সচেতনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা অটিজম স্পিকসের উদ্যোগে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় চলতি মাসের ২৫-২৯ তারিখ ঢাকায় অটিজম বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুাষ্ঠত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এ সম্মেলন উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীবর্গ, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পার্টির সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার ফাহমিদা মির্জাসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতারাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অটিজম এক্সপার্ট, শিশু মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিদ ও অটিজম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও অতিথি এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। এ সম্মেলনে অটিজম বিষয়ে প্রশিক্ষণ, সংশিল্গষ্ট সহযোগী সংস্থাগুলোর মধ্যে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা বিষয়ে কর্মসূচি ও গবেষণা বিষয়ে প্যানেল আলোচনা, প্রবন্ধ পাঠসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি রয়েছে। সঙ্গত কারণেই আসন্ন এ সম্মেলন মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ায় শিশুদের অটিজমের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও প্রতিরোধে একটি অভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রণীত হবে, যা এ অঞ্চলের অটিস্টিক শিশুদের সুন্দর ও সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়ক হবে। আর অটিস্টিক শিশুদের জন্য সুন্দর ও সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ নির্মাণের দায়িত্ব আমাদের সবার।
ডা. জিল্লুর রহমান খান রতন : সহকারী অধ্যাপক, শিশু-কিশোর মানসিক রোগ বিভাগ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
mzrkhhan@gmail.com
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও অটিজমের প্রকোপ বাড়ছে। অটিজম বিষয়ে জাতীয় কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ঢাকা বিভাগে ১৫টি জেলায় শিশু-কিশোরের ওপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, প্রতি হাজারে ৮ জন শিশুর আটিজমের সমস্যা রয়েছে, যা উন্নত দেশের কাছাকাছি। অটিস্টিক শিশু ও তাদের অভিভাবকরা আমাদের সমাজে নানা বৈষম্যের শিকার। এর অন্যতম কারণ অটিজম সম্পর্কে জনসচেতনতার অভাব ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। এ বিষয়টি অটিস্টিক শিশুর সমাজে মুক্তভাবে বিকশিত হওয়ার পথে একটি বড় অন্তরায়।
অটিজম অন্যান্য বিকাশজনিত সমস্যা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও বিশেষ ধরনের। শিশু জন্মের পর অন্যসব শিশু যেভাবে বেড়ে ওঠে অটিস্টিক শিশুর ক্ষেত্রে তা হয় না। সাধারণত ৬ মাসের মধ্যে শিশুদের পরিচিতজন কিংবা পরিবেশে হাসি দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় এবং ৯ মাস বয়সে ডাকলে সাড়া দেওয়া বা কোনো শব্দের উৎসের দিকে তাকানোর একটি সহজাত প্রবণতা থাকে। কিন্তু অটিস্টিক শিশুর ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। অটিস্টিক শিশুর ক্ষেত্রে কথা বলা বা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা যায়। অন্য সব শিশু যেখানে এক বছর বয়সে দু'একটি শব্দ যেমন মা-বাবা, দাদা প্রভৃতি বলতে শুরু করে অটিস্টিক শিশুদের ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। এদের ক্ষেত্রে অনেক সময় পূর্বে অর্জিত কথা বলার দক্ষতাও হারিয়ে ফেলে। অটিজমের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে সামাজিক ভাব বিনিময়ের সমস্যা অন্যতম। এ ধরনের শিশুরা একা থাকতে পছন্দ করে, অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে আগ্রহী হয় না, কাছে ডাকলে কিংবা আদর করলে বিরক্ত হয় ও সরাসরি তাকানো এড়িয়ে চলে। যোগাযোগ ও ভাষাগত দক্ষতার অভাব ও সে সঙ্গে ইশারা কিংবা অভাষাগত যোগাযোগ দক্ষতারও অভাব লক্ষ্য করা যায়। অটিস্টিক শিশুর একই ধরনের আচরণ বা ব্যবহার এবং একই বিষয়ের প্রতি আগ্রহ যেমন, একই রকম খেলনা, রঙ, খাবার প্রভৃতির প্রতি আগ্রহ দেখা যায়। এসব লক্ষণ সাধারণত শৈশবে দেখা যায়। তবে অনেক সময় পূর্ণাঙ্গ লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে তিন বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। এসব সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে অটিস্টিক শিশুর আচরণগত সমস্যা, অতিচঞ্চলতা, সহিংস আচরণ, বুদ্ধিপ্রতিন্ধিতাসহ বিভিন্ন ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং অনিদ্রা, খাবার সম্যস্যা, খিঁচুনি ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে। এ জন্যই অটিজম নিরূপণ এবং সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত সেবাদলের সহায়তা প্রয়োজন।
অটিজমের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা না গেলেও বংশগতি বা জিনেটিক কারণকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয়। শিশুকে পর্যাপ্ত সময় দিতে না পারা, শিশু পরিচর্যার পদ্ধতি ও ভ্যাকসিন বা টিকাদানের কারণে অটিজম হওয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কারণ যাই থাক, সঠিক সময়ে অটিজম নিরূপণ করে বিভিন্ন ডিসিপিল্গনের সমন্বয়ে গঠিত সেবাদলের তত্ত্বাবধানে পরিচর্যার ব্যবস্থা থাকলে অটিস্টিক শিশুকে কর্মক্ষম রাখা ও পূর্ণভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া সম্ভব। আর এ সেবাদলে শিশু মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিদ, স্পিচথেরাটিস্ট, অকুপেশনাল ও ফিজিওথেরাটিস্টসহ বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞের অন্তর্ভুক্তি অপরিহার্য। এখানে কারও ভূমিকা খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সমন্বয়হীনতা অটিস্টিক শিশুর বিকাশের অন্যতম অন্তরায়। বিদ্যমান সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অটিস্টিক শিশুদের জন্য এ ধরনের সেবাপ্রাপ্তি সম্পর্কে অভিভাবকদের জানা থাকা প্রয়োজন, যাতে তারা এসব সেবা গ্রহণ করতে পারেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, ঢাকা ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিকাশ ক্লিনিক এবং সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর নিউরো ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন বা অটিজম সেন্টার অন্যতম।
অটিজম বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি এ বিষয়ে জনমনে বিভ্রান্তি দূরীকরণ ও সেবাপ্রাপ্তিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুর সেবা প্রদানে সমাজকল্যণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচটি জেলায় পাইলট প্রকল্প চালু করেছে, যা বর্তমানে আরও দশটি জেলায় সম্প্র্রসারিত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সেবা সারাদেশে ৬৪টি জেলায় সম্প্র্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও এসব সেবাকেন্দ্রে বিশেষায়িত সেবার সুযোগ কম, তারপরও প্রশিক্ষিত কর্মী ও দক্ষ জনবলের এ সেবা অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য তৃণমূল পর্যায়ে খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কারণ অটিস্টিক শিশুর জন্য বিশেষায়িত সেবার বেশিরভাগই শহরকেন্দ্রিক। আর ঢাকায় অবস্থিত অটিস্টিক শিশুদের জন্য বেসরকারি স্কুল ও সেবা খুবই ব্যয়বহুল, যার ব্যয় বহন করার সামর্থ্য বেশিরভাগ অভিভাবকের নেই। এবার জাতীয় প্রতিবন্ধী ও অটিজম দিবস একই দিনে জাতীয় পর্যায়ে পালন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অটিজম সেন্টার ও অটিজম সচেতনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা অটিজম স্পিকসের উদ্যোগে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় চলতি মাসের ২৫-২৯ তারিখ ঢাকায় অটিজম বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুাষ্ঠত হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর এ সম্মেলন উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীবর্গ, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পার্টির সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, পাকিস্তান পার্লামেন্টের স্পিকার ফাহমিদা মির্জাসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতারাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অটিজম এক্সপার্ট, শিশু মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিদ ও অটিজম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও অতিথি এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন। এ সম্মেলনে অটিজম বিষয়ে প্রশিক্ষণ, সংশিল্গষ্ট সহযোগী সংস্থাগুলোর মধ্যে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা বিষয়ে কর্মসূচি ও গবেষণা বিষয়ে প্যানেল আলোচনা, প্রবন্ধ পাঠসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি রয়েছে। সঙ্গত কারণেই আসন্ন এ সম্মেলন মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এ সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ায় শিশুদের অটিজমের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও প্রতিরোধে একটি অভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রণীত হবে, যা এ অঞ্চলের অটিস্টিক শিশুদের সুন্দর ও সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়ক হবে। আর অটিস্টিক শিশুদের জন্য সুন্দর ও সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ নির্মাণের দায়িত্ব আমাদের সবার।
ডা. জিল্লুর রহমান খান রতন : সহকারী অধ্যাপক, শিশু-কিশোর মানসিক রোগ বিভাগ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
mzrkhhan@gmail.com
No comments