আগুন কেড়ে নিল পাঁচটি তাজা প্রাণ

ফরিদপুরে একটি বসতবাড়িতে আগুন লেগে পাঁচ স্বজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের খাঁকান্দা নাজিরপুর গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত ব্যক্তিরা হলেন: গৃহকর্তা কেরেচ ভূঁইয়া (৬৫), নাতি শাহীন ভূঁইয়া (১৫) ও নাতনি ফিহা (৩) এবং তাঁদের আত্মীয় তহুরা (১২) ও গোলাম মহিউদ্দিন ওরফে


সুমন (১৭)। তহুরা কেরেচ ভূঁইয়ার ছেলে ফরহাদের স্ত্রীর বড় ভাইয়ের মেয়ে এবং গোলাম মহিউদ্দিন বোনের ছেলে। এর মধ্যে তহুরা ও সুমন কিছুদিন আগে ওই বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে রান্নাঘর থেকে আগুনের আঁচ পেয়ে জেগে ওঠেন কেরেচ ভূঁইয়ার ছেলে ফরহাদের স্ত্রী মাকছুদা বেগম। চিৎকার দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। তাঁর চিৎকার শুনে মেয়ে ফারজানা (৭) ও ভাশুর জাফর ভূঁইয়াও ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। ততক্ষণে রান্নাঘরসংলগ্ন দুটি ঘরের দরজায় আগুন লাগে। জীবন বাঁচাতে ঘরে থাকা বৃদ্ধ কেরেচ ভূঁইয়া ও চার শিশু-কিশোর আকুতি জানালেও কেউ তাদের বাঁচাতে পারেনি। আগুনে পুড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় তাদের।
প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী আবদুল গফ্ফর বলেন, ফরহাদের রান্নাঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত। ওই সময় এলাকায় বাতাসের তীব্রতার কারণে মুহূর্তে আগুন অন্যান্য ঘরে ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল সকালে খাঁকান্দা নাজিরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি দোচালা টিনের ঘর, দুটি রান্নাঘর, গোয়ালঘর, ঘরে থাকা মালামাল ও গবাদিপশু (একটি গরু, দুটি ছাগল, ১১টি কবুতর, ১৩টি মুরগি) পুড়ে গেছে। ছয়টি ঘরের ভিটার ওপরে শুধু পোড়া কয়লা।
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে গতকাল ঢাকা থেকে বাড়িতে ছুটে আসেন ফরহাদ ভূঁইয়া। ছোট মেয়ে ফিহা, বাবা কেরেচ ভূঁইয়া, ভাতিজা শাহীন, স্ত্রী মাকছুদার ভাগনে সুমন ও ভাতিজি তহুরার লাশ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে গৃহিণী মাকছুদা বেগম বলেন, ‘পুরো ঘরে আগুন লাগায় ঘরে ঢুকতে পারিনি। চোখের সামনে পাঁচটি তাজা প্রাণ জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে গেল। আমি ওদের বাঁচাতে পারলাম না।’
ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লিডার মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ভাঙ্গা ও ফরিদপুরের ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয়।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক হেলালুদ্দীন আহমদ গতকাল সকালে খাঁকান্দা নাজিরপুর গ্রাম পরিদর্শন করেন। তিনি নিহতদের জনপ্রতি নগদ পাঁচ হাজার টাকা, ২০ কেজি চাল ও ১০টি করে টিন এবং শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন।
চলে গেল সুমনও: অগ্নিকাণ্ডে মৃত সুমন সদরপুর উপজেলা এলজিইডি অফিসের কম্পিউটার অপারেটর আবদুল বাকি মিয়ার ছেলে। বাড়ি ভাঙ্গার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের খাটরা গ্রামে। এ বছর সদরপুরের শিবসুন্দর একাডেমি থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল সুমন। পরীক্ষা শেষে গত বুধবার সে খালু ফরহাদ ভূঁইয়ার বাড়িতে বেড়াতে যায়।
সুমনের বাবা আবদুল বাকি মিয়া বলেন, ‘আমার তিন ছেলের মধ্যে সুমন মেজো। বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম (২২) দেড় বছর আগে নিউমোনিয়ায় মারা যায়।’

No comments

Powered by Blogger.