‘একসঙ্গে এত লোকের কখনো জানাজা পড়াইনি’ by রশিদুল হাসান
তিন ঘণ্টা একটি পেয়ারাগাছ আঁকড়ে ধরে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও বাঁচতে পারেনি আমার চার ভাই ও তিন বোন, চোখের সামনে তাদের মরতে দেখেও ওই দিন আমি তাদের জন্য কিছুই করতে পারিনি। পরের দিন সকালে পানি কমে যাওয়ার পর আমাদের পরিবারের সাতজনসহ একই স্থানে মোট ৪৭ জনের বিকৃত লাশ দেখতে পাই।’
কান্নায় গলা বুজে আসছিল, তবু দুঃসহ স্মৃতির কথা বলে যাচ্ছিলেন মোছাম্মদ রাবেয়া (৪২)। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে গেলেও হারিয়েছিলেন পরিবারের সাতজন সদস্যকে। দক্ষিণ পতেঙ্গার মাইজপাড়ার এই বাসিন্দা বলেন, ‘রাত দুইটায় পানি আসার আগ মুহূর্তে আমাদের বাড়ির আটটি পরিবারের প্রায় ৫৫ জন লোক ইসলাম চৌকিদারের ঘরের চালার ওপর আশ্রয় নেয়। কিন্তু পানি যখন টিনের ছাউনির নিচে মোটা কাগজ দিয়ে তৈরি ওই চালাটি স্পর্শ করে, তখন চালাটি ভিজে নরম হয়ে যায় এবং সেটি আমাদের ভর সইতে না পেরে ভেঙে পড়ে যায়। প্রায় ১৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় সবাই। সেদিন ৪৭ জনের মৃত্যু ঘটে। পানিতে ভেসে যাওয়ার সময় উঠানের গাছটি ধরতে পেরেছিলাম বলে আমি ওই দিন রক্ষা পাই।’
শুধু রাবেয়া নয়, ২৯ এপ্রিল রাতে স্বজন হারানোর কথা স্মরণ করে এখনো বিলাপ করে কেঁদে ওঠেন আকতার, নুর মোহাম্মদ, জাফরসহ বেঁচে থাকা নিহত পরিবারের লোকজন।
মা, বাবা এবং একমাত্র ভাইকে হারানো মো. আকতার বলেন, ‘সেই দিন ব্যক্তিগত কাজে শহরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকায় আমি প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু স্বজন হারানোর বেদনা এখনো বহন করে চলেছি।’ ‘তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে ইসলাম চৌকিদারের ঘরটি অপেক্ষাকৃত মজবুত হওয়ায় সবাই ওই ঘরটিতে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সবকিছু ওলট-পালট করে দেয়। মূলত সেদিন সবাই জলোচ্ছ্বাস হবে, এটা ভাবেনি। এ কারণে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে যাননি।’
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসঙ্গে ৪৭ জনকে দাফন করা কবরস্থানটিতে বর্তমানে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। নিহত লোকজনের স্মৃতি রক্ষার্থে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বন্যা-পরবর্তী কবরস্থানের চারপাশে কোমর সমান দেয়াল নির্মাণ করা হয়। গণকবরটি খনন করেছিলেন বদিউল আলমসহ মোট আটজন। এ প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘৩০ এপ্রিল সকালে পানি কমে গিয়েছিল, তখন স্তূপের নিচ থেকে প্রতিটি লাশ আমরা টেনে বের করি। এভাবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত মোট ৪৭টি লাশ পেয়েছিলাম। বাড়ির পাশেই আমিসহ আরও আটজন গণকবরটি খনন করেন।’
মৃত ব্যক্তিদের জানাজা পড়িয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা মো. জসিম উদ্দিন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেদিন অনেকের জন্য কাফনের কাপড়েরও ব্যবস্থা করা যায়নি। ছিল না আলাদা কোনো খাটিয়া। সবাইকে এক সারিতে রেখে রাত ১০টায় গণজানাজা অনুষ্ঠিত হয়। একসঙ্গে এতগুলো মৃত মানুষের জানাজা পড়ানোর কথা আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে রাখব।’
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রাম ও এর সংলগ্ন জেলায় প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটেছিল।
শুধু রাবেয়া নয়, ২৯ এপ্রিল রাতে স্বজন হারানোর কথা স্মরণ করে এখনো বিলাপ করে কেঁদে ওঠেন আকতার, নুর মোহাম্মদ, জাফরসহ বেঁচে থাকা নিহত পরিবারের লোকজন।
মা, বাবা এবং একমাত্র ভাইকে হারানো মো. আকতার বলেন, ‘সেই দিন ব্যক্তিগত কাজে শহরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকায় আমি প্রাণে বেঁচে যাই। কিন্তু স্বজন হারানোর বেদনা এখনো বহন করে চলেছি।’ ‘তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে ইসলাম চৌকিদারের ঘরটি অপেক্ষাকৃত মজবুত হওয়ায় সবাই ওই ঘরটিতে আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সবকিছু ওলট-পালট করে দেয়। মূলত সেদিন সবাই জলোচ্ছ্বাস হবে, এটা ভাবেনি। এ কারণে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে যাননি।’
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসঙ্গে ৪৭ জনকে দাফন করা কবরস্থানটিতে বর্তমানে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। নিহত লোকজনের স্মৃতি রক্ষার্থে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বন্যা-পরবর্তী কবরস্থানের চারপাশে কোমর সমান দেয়াল নির্মাণ করা হয়। গণকবরটি খনন করেছিলেন বদিউল আলমসহ মোট আটজন। এ প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘৩০ এপ্রিল সকালে পানি কমে গিয়েছিল, তখন স্তূপের নিচ থেকে প্রতিটি লাশ আমরা টেনে বের করি। এভাবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত মোট ৪৭টি লাশ পেয়েছিলাম। বাড়ির পাশেই আমিসহ আরও আটজন গণকবরটি খনন করেন।’
মৃত ব্যক্তিদের জানাজা পড়িয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা মো. জসিম উদ্দিন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেদিন অনেকের জন্য কাফনের কাপড়েরও ব্যবস্থা করা যায়নি। ছিল না আলাদা কোনো খাটিয়া। সবাইকে এক সারিতে রেখে রাত ১০টায় গণজানাজা অনুষ্ঠিত হয়। একসঙ্গে এতগুলো মৃত মানুষের জানাজা পড়ানোর কথা আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে রাখব।’
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে চট্টগ্রাম ও এর সংলগ্ন জেলায় প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটেছিল।
No comments