পৌর নির্বাচন-সরকারের জেগে ওঠার ঘণ্টাধ্বনি by বদিউল আলম মজুমদার
সারা দেশে মোট ২৪২টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। যদিও অনিয়ম ও গোলযোগের কারণে ছয়টিতে নির্বাচনী ফলাফল আংশিক বা পুরোপুরিভাবে স্থগিত করা হয়েছে। যে ২৩৬টি আসনের নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে, বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, সেগুলোতে বিএনপি ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা মোট ৯২টি মেয়র পদ এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীরা মোট ১১টি মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন।
পক্ষান্তরে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা যথাক্রমে ৮৬টি ও ২৩টি আসনে জয় লাভ করেছেন। এ ছাড়া মহাজোটের অংশীদার জাতীয় পার্টি দুটি এবং বিএনপির সহযোগী জামায়াতে ইসলামী পাঁচটি আসন পেয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ১৭টি আসন। তাই সার্বিকভাবে মহাজোট ১১১টি এবং চারদলীয় জোট ১০৮টি মেয়র পদ পেয়েছে, যদিও পৌর নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিকভাবে জোটবদ্ধ হয়নি। অর্থাৎ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে এবং এতে চারদলীয় জোট ‘হারেনি’, জাতীয় নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনের মতো মহাজোটের ব্যাপক ‘বিজয়’ ঘটেনি।
বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত ছোটখাটো ঘটনা সত্ত্বেও নির্বাচন প্রথম দিকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলেও শেষ দিকে বেশি অনিয়ম ও গোলযোগের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশন অবশ্য শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সচেষ্ট ছিল। তবে, সাম্প্রতিক নির্বাচন থেকে এটি আবারও সুস্পষ্ট হলো যে রাজনৈতিক দল ও তাদের মনোনীত প্রার্থীরা যদি সদাচরণ না করেন, তাঁরা যদি ছলে-বলে-কলে-কৌশলে নির্বাচিত হওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর হন এবং প্রশাসন যদি সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষতা প্রদর্শন না করে, তাহলে সবচেয়ে শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। প্রসঙ্গত, আমরা আনন্দিত হতাম, যদি কমিশন সেসব রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত, যারা বিভিন্ন হুমকি-ধমকির মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রার্থীদের জোর করে বসিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। কারণ, এটি ছিল ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা, যা নির্বাচনী আচরণবিধি ‘নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখা’ সম্পর্কিত বিধানের (বিধি ৮) লঙ্ঘন। এ ছাড়া প্রার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিধিও সীমিত হয়ে গেছে, যা তাদের ঠকানোর শামিল।
নির্বাচনের ফলাফলের তাৎপর্য নিয়ে এখন প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর মধ্যে বাগিবতণ্ডা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তার শরিকদের মতে, পৌর নির্বাচনের ফলাফল বিভিন্ন কারণে এবং স্থানীয় ইস্যু দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে, তাই এটি ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি নয়। অন্যদিকে বিরোধী দলের মত অনুযায়ী, পৌর নির্বাচনের ফলাফল সরকারের জনপ্রিয়তারই প্রতিফলন এবং বর্তমান সরকারকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। উল্লেখ্য, কোনোরূপ অগ্র-পশ্চাৎ না ভেবে হুট করে দলভিত্তিক পৌর নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে সরকারই এটিকে ‘রেফারেন্ডাম’ বা দলের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের পরীক্ষায় পরিণত করেছে।
এ কথা সত্য যে স্থানীয় নির্বাচন অনেক স্থানীয় ইস্যু ও স্থানীয় বাস্তবতা দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়। তাই সদ্যসমাপ্ত পৌর নির্বাচনের ফলাফলকে সরকারের জনপ্রিয়তার সঠিক মাপকাঠি হিসেবে দাবি করা অত্যুক্তি হবে। এ ছাড়া পৌর নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা মাত্র ৬৫ লাখের মতো। তবে, এ ফলাফল নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। তাই এটিকে উপেক্ষা করারও অবকাশ নেই, বরং এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি। সাবধান থাকতে হবে, আমাদের রাজনীতিবিদেরা যেন ভুল শিক্ষা না নেন, যে ভুল অতীতে বহুবার করা হয়েছে।
এ কথা সবারই জানা, গত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোট প্রায় ৯০ শতাংশ আসনে বিজয়ী হয়েছিল। এরপর ২২ জানুয়ারির উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে গত জুন মাসে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জয়ী হন। বর্তমান পৌরসভা নির্বাচনেও বিএনপি মেয়র পদে প্রায় সমানসংখ্যক প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। গত দুই বছরে নির্বাচনী ফলাফলে এমন পরিবর্তন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সাম্প্রতিক কয়েকটি জরিপ থেকে দেখা যায়, গত দুই বছরে সরকারের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম আলো পরিচালিত জরিপ থেকে দেখা যায়, ২০০৯ সালের তুলনায় দুই বছরের মাথায় সরকারের কাজে ‘পুরোপুরি সন্তুষ্ট’ ও ‘আংশিক সন্তুষ্ট’দের হার ৬৬ শতাংশ থেকে ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে এবং ‘কিছুটা অসন্তুষ্ট’ ও ‘পুরোপুরি অসন্তুষ্ট’দের হার ২৬ শতাংশ থেকে ৩৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে (প্রথম আলো, ৬ জানুয়ারি ২০১১)। পৌর নির্বাচনের ফলাফল জরিপের এ ফলাফলের প্রতি সমর্থনই জুগিয়েছে। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোটারের অসন্তুষ্টি এবং ভোট প্রদানে তার প্রতিফলন পুরো নির্বাচনী ফলাফলকেই পাল্টে দিতে পারে। জনপ্রিয়তা হ্রাসের বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
গত জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচনে দুই ধরনের ভোটার—দলের প্রতি অনুগত এবং অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা, যাঁদের একটি বিরাট অংশ তরুণ ও শিক্ষিত—এঁরাই মহাজোটকে মহাবিজয় উপহার দিয়েছিল। এ দুই ধরনের ভোটারই গত দুই বছরের অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রভাবান্বিত হতে বাধ্য।
ক্ষমতাসীন দলের কথায় আসা যাক। গত দুই বছরে আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সরকারের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছে। কিছু নেতার আগ্রাসী ও অসংলগ্ন বক্তব্য (যেমন—বৃহত্তর নোয়াখালীর নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে বক্তব্য) এবং হরতাল-ধর্মঘটের সময় দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর জঙ্গি মিছিল ছাড়া সারা দেশে দলের কোনো কর্মসূচি লক্ষ করা যায় না। দলের কার্যক্রম এখন বহুলাংশে স্থবির। দলের স্থানীয় পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা-পাতিনেতা টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের গর্হিত কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন। কিছু কেন্দ্রীয় নেতা ও সংসদ সদস্য গডফাদারের ভূমিকায় লিপ্ত হয়েছেন। ফলে সারা দেশে দলের মধ্যে আজ ব্যাপক বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। আর দলের বহু পরীক্ষিত নেতা-কর্মী, যাঁরা এককালে স্বেচ্ছাশ্রম ও নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন, তাঁরা এখন দলে কোণঠাসা ও নিষ্ক্রিয়।
তরুণ, সচেতন ও নিরপেক্ষ ভোটাররা দিনবদলের অঙ্গীকারের ভিত্তিতে মহাজোটকে ভোট দিয়েছেন। তাঁরা আশা করেছিলেন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুণগত পরিবর্তন, প্রতিহিংসার অবসান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সংসদকে কার্যকর করার মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সব জাতীয় সমস্যার সমাধান, দলীয়করণের সমাপ্তি, ক্ষমতাধরদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি। এ সবই দিনবদলের সনদের অঙ্গীকার। এ ছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নির্বাচন-পরবর্তীকালে এক সংবাদ সম্মেলনে অঙ্গীকার করেছিলেন, মহাজোট সরকার হবে সব নাগরিকের, শুধু দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নয়। সরকার এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত তেমন কোনো আগ্রহ প্রদর্শন করেনি, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উল্টো দিকে হেঁটেছে। ফলে অনেক ভোটারের মতে, দিনবদলের তথা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো পরিবর্তনের সূচনা ঘটেনি। এসব সচেতন ও শিক্ষিত ভোটারের অনেকেই এখন হতাশ। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, শহর এলাকায়ই অধিকাংশ শিক্ষিত ভোটার বসবাস করেন, তাই তাঁদের অসন্তুষ্টি ও হতাশা পৌর নির্বাচনের ফলাফলকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।
ফায়দাবাজির রাজনীতিও পৌর নির্বাচনের ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলেছে। যেহেতু ফায়দার পরিমাণ সীমিত এবং ফায়দার দাবিদার অসংখ্য, তাই ফায়দার অংশ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলে এবং দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর অভ্যন্তরে এক অশুভ প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে। এ প্রতিযোগিতা অনেক সময় সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। দলের এবং দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে এমন বিভক্তি ও দ্বন্দ্ব নির্বাচনী ফলাফলের ওপর নিঃসন্দেহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও অনেক ভোটারকে সরকারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করেছে।
তবে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বিদ্যুতের সমস্যাই একমাত্র ইস্যু নয়, অন্যান্য নাগরিকসেবাও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—যেসব পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোয় নাগরিকসেবা বলতে তেমন কিছুই নেই। রাজনৈতিক বিবেচনায় ফায়দা হিসেবে (এবং নাগরিকদের প্রতারণার উদ্দেশ্যে) এসব পৌরসভা গঠন করা হয়েছে এবং এগুলো আইনে লিপিবদ্ধ মানদণ্ডগুলোও পূরণ করে না। যেমন—এসব এলাকায় তিন-চতুর্থাংশ ব্যক্তি অকৃষি পেশায় নিয়োজিত নয়, যা পৌরসভা হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। গত কয়েক বছরে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ, পানীয় জল, পয়োনিষ্কাশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং সরকারের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে অদূর ভবিষ্যতে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের আশাও করা যায় না।
জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবির পর পৌর নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত ও সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীরা অনেক বেশি আসনে জিতেছেন। নিঃসন্দেহে এটি আশাতীত বিজয়। তবে, তাঁদেরও অতি উৎফুল্ল হওয়ার কারণ নেই। কারণ, গত দুই দশকের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের ভোটাররা ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষেই ভোট দিয়ে আসছেন। গত জাতীয় নির্বাচনে ভোটাররা চারদলীয় জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তার আগে প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগকে, তার আগে বিএনপিকে। অর্থাৎ অপকর্ম ও দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে উপায়ান্তর না দেখে তাঁরা আশায় বুক বেঁধে প্রতিপক্ষকে ভোট দিয়েছেন; যদিও অপশাসন ও অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে তাঁদের পরিত্রাণ মেলে না।
প্রসঙ্গত, ক্ষমতাসীনদের অনেককেই বলতে শোনা যায়, বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে তাঁদের পক্ষে আশানুরূপ জয় অর্জন করা সম্ভবপর হয়নি। এটি একটি ভুল অজুহাত। কারণ, বিএনপিতেও অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন কীভাবে নির্ধারিত হবে, সে সম্পর্কে বিধিবিধান চূড়ান্ত না করেই তড়িঘড়ি করে দলভিত্তিক নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া ছিল অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। জাতীয় নির্বাচনের মতো মনোনয়ন-প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার বিধান না থাকার কারণে ব্যক্তির খেয়ালখুশিমতোই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে—অনেক ক্ষেত্রে অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিকেও। মনোনয়ন নির্ধারণে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মতামতও নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া মনোনয়ন-বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে। তাই বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়াই স্বাভাবিক।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠান যত বিলম্বিত করা হচ্ছে, নির্বাচনী ফলাফলে ক্ষমতাসীনদের তত বেশি বিপর্যয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আর গড়িমসি করা মহাজোট সরকারের স্বার্থের পরিপন্থী হবে। এ ছাড়া সরকারকে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা নিয়ে কী করতে চায়, সে ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর আমি লিখেছিলাম যে চট্টগ্রামের ভোটাররা সরকারের জন্য একটি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। আমার মনে হয়, এ সতর্কবাণীর প্রতি সরকার কর্ণপাত করেনি, কিংবা এ থেকে কোনো শিক্ষাও গ্রহণ করেনি। আমার আশঙ্কা, সাম্প্রতিক জরিপ ও পৌর নির্বাচনের ফলাফল সরকারের জন্য জেগে ওঠার ঘণ্টাধ্বনি বাজিয়ে দিয়েছে। আমরা আশা করি, সরকার জেগে উঠবে এবং সত্যিকারের দিনবদল ও সুশাসন কায়েমের পথে অগ্রসর হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের উদ্যোগ নেবে এবং নাগরিকদের প্রাপ্য সেবাদানে যথাযথ ভূমিকা রাখবে। দলকে সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দলীয় কর্মকাণ্ড চাঙা করবে এবং দলে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেবে। দলীয়করণ, ফায়দাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারি ইত্যাদি পরিহার করবে এবং আইনের শাসন কায়েমে আন্তরিক হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন নিয়ে আর টালবাহানা করবে না এবং মাননীয় সংসদ সদস্যদের বিযুক্ত করে এগুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করবে এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক)।
বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত ছোটখাটো ঘটনা সত্ত্বেও নির্বাচন প্রথম দিকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলেও শেষ দিকে বেশি অনিয়ম ও গোলযোগের অভিযোগ উঠেছে। নির্বাচন কমিশন অবশ্য শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সচেষ্ট ছিল। তবে, সাম্প্রতিক নির্বাচন থেকে এটি আবারও সুস্পষ্ট হলো যে রাজনৈতিক দল ও তাদের মনোনীত প্রার্থীরা যদি সদাচরণ না করেন, তাঁরা যদি ছলে-বলে-কলে-কৌশলে নির্বাচিত হওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর হন এবং প্রশাসন যদি সম্পূর্ণভাবে নিরপেক্ষতা প্রদর্শন না করে, তাহলে সবচেয়ে শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পক্ষেও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। প্রসঙ্গত, আমরা আনন্দিত হতাম, যদি কমিশন সেসব রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত, যারা বিভিন্ন হুমকি-ধমকির মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রার্থীদের জোর করে বসিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। কারণ, এটি ছিল ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা, যা নির্বাচনী আচরণবিধি ‘নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখা’ সম্পর্কিত বিধানের (বিধি ৮) লঙ্ঘন। এ ছাড়া প্রার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিধিও সীমিত হয়ে গেছে, যা তাদের ঠকানোর শামিল।
নির্বাচনের ফলাফলের তাৎপর্য নিয়ে এখন প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর মধ্যে বাগিবতণ্ডা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তার শরিকদের মতে, পৌর নির্বাচনের ফলাফল বিভিন্ন কারণে এবং স্থানীয় ইস্যু দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে, তাই এটি ক্ষমতাসীনদের জনপ্রিয়তার মাপকাঠি নয়। অন্যদিকে বিরোধী দলের মত অনুযায়ী, পৌর নির্বাচনের ফলাফল সরকারের জনপ্রিয়তারই প্রতিফলন এবং বর্তমান সরকারকে জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। উল্লেখ্য, কোনোরূপ অগ্র-পশ্চাৎ না ভেবে হুট করে দলভিত্তিক পৌর নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে সরকারই এটিকে ‘রেফারেন্ডাম’ বা দলের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের পরীক্ষায় পরিণত করেছে।
এ কথা সত্য যে স্থানীয় নির্বাচন অনেক স্থানীয় ইস্যু ও স্থানীয় বাস্তবতা দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়। তাই সদ্যসমাপ্ত পৌর নির্বাচনের ফলাফলকে সরকারের জনপ্রিয়তার সঠিক মাপকাঠি হিসেবে দাবি করা অত্যুক্তি হবে। এ ছাড়া পৌর নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা মাত্র ৬৫ লাখের মতো। তবে, এ ফলাফল নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। তাই এটিকে উপেক্ষা করারও অবকাশ নেই, বরং এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি। সাবধান থাকতে হবে, আমাদের রাজনীতিবিদেরা যেন ভুল শিক্ষা না নেন, যে ভুল অতীতে বহুবার করা হয়েছে।
এ কথা সবারই জানা, গত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোট প্রায় ৯০ শতাংশ আসনে বিজয়ী হয়েছিল। এরপর ২২ জানুয়ারির উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীরা নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে গত জুন মাসে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জয়ী হন। বর্তমান পৌরসভা নির্বাচনেও বিএনপি মেয়র পদে প্রায় সমানসংখ্যক প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। গত দুই বছরে নির্বাচনী ফলাফলে এমন পরিবর্তন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সাম্প্রতিক কয়েকটি জরিপ থেকে দেখা যায়, গত দুই বছরে সরকারের জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রথম আলো পরিচালিত জরিপ থেকে দেখা যায়, ২০০৯ সালের তুলনায় দুই বছরের মাথায় সরকারের কাজে ‘পুরোপুরি সন্তুষ্ট’ ও ‘আংশিক সন্তুষ্ট’দের হার ৬৬ শতাংশ থেকে ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে এবং ‘কিছুটা অসন্তুষ্ট’ ও ‘পুরোপুরি অসন্তুষ্ট’দের হার ২৬ শতাংশ থেকে ৩৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে (প্রথম আলো, ৬ জানুয়ারি ২০১১)। পৌর নির্বাচনের ফলাফল জরিপের এ ফলাফলের প্রতি সমর্থনই জুগিয়েছে। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোটারের অসন্তুষ্টি এবং ভোট প্রদানে তার প্রতিফলন পুরো নির্বাচনী ফলাফলকেই পাল্টে দিতে পারে। জনপ্রিয়তা হ্রাসের বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে।
গত জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচনে দুই ধরনের ভোটার—দলের প্রতি অনুগত এবং অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা, যাঁদের একটি বিরাট অংশ তরুণ ও শিক্ষিত—এঁরাই মহাজোটকে মহাবিজয় উপহার দিয়েছিল। এ দুই ধরনের ভোটারই গত দুই বছরের অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রভাবান্বিত হতে বাধ্য।
ক্ষমতাসীন দলের কথায় আসা যাক। গত দুই বছরে আওয়ামী লীগ দল হিসেবে সরকারের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছে। কিছু নেতার আগ্রাসী ও অসংলগ্ন বক্তব্য (যেমন—বৃহত্তর নোয়াখালীর নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে বক্তব্য) এবং হরতাল-ধর্মঘটের সময় দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর জঙ্গি মিছিল ছাড়া সারা দেশে দলের কোনো কর্মসূচি লক্ষ করা যায় না। দলের কার্যক্রম এখন বহুলাংশে স্থবির। দলের স্থানীয় পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা-পাতিনেতা টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের গর্হিত কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছেন। কিছু কেন্দ্রীয় নেতা ও সংসদ সদস্য গডফাদারের ভূমিকায় লিপ্ত হয়েছেন। ফলে সারা দেশে দলের মধ্যে আজ ব্যাপক বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। আর দলের বহু পরীক্ষিত নেতা-কর্মী, যাঁরা এককালে স্বেচ্ছাশ্রম ও নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন, তাঁরা এখন দলে কোণঠাসা ও নিষ্ক্রিয়।
তরুণ, সচেতন ও নিরপেক্ষ ভোটাররা দিনবদলের অঙ্গীকারের ভিত্তিতে মহাজোটকে ভোট দিয়েছেন। তাঁরা আশা করেছিলেন রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গুণগত পরিবর্তন, প্রতিহিংসার অবসান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সংসদকে কার্যকর করার মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সব জাতীয় সমস্যার সমাধান, দলীয়করণের সমাপ্তি, ক্ষমতাধরদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি। এ সবই দিনবদলের সনদের অঙ্গীকার। এ ছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নির্বাচন-পরবর্তীকালে এক সংবাদ সম্মেলনে অঙ্গীকার করেছিলেন, মহাজোট সরকার হবে সব নাগরিকের, শুধু দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নয়। সরকার এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত তেমন কোনো আগ্রহ প্রদর্শন করেনি, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উল্টো দিকে হেঁটেছে। ফলে অনেক ভোটারের মতে, দিনবদলের তথা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো পরিবর্তনের সূচনা ঘটেনি। এসব সচেতন ও শিক্ষিত ভোটারের অনেকেই এখন হতাশ। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, শহর এলাকায়ই অধিকাংশ শিক্ষিত ভোটার বসবাস করেন, তাই তাঁদের অসন্তুষ্টি ও হতাশা পৌর নির্বাচনের ফলাফলকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে।
ফায়দাবাজির রাজনীতিও পৌর নির্বাচনের ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলেছে। যেহেতু ফায়দার পরিমাণ সীমিত এবং ফায়দার দাবিদার অসংখ্য, তাই ফায়দার অংশ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলে এবং দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর অভ্যন্তরে এক অশুভ প্রতিযোগিতা বিরাজ করছে। এ প্রতিযোগিতা অনেক সময় সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। দলের এবং দলের অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে এমন বিভক্তি ও দ্বন্দ্ব নির্বাচনী ফলাফলের ওপর নিঃসন্দেহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও অনেক ভোটারকে সরকারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করেছে।
তবে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বিদ্যুতের সমস্যাই একমাত্র ইস্যু নয়, অন্যান্য নাগরিকসেবাও গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—যেসব পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোয় নাগরিকসেবা বলতে তেমন কিছুই নেই। রাজনৈতিক বিবেচনায় ফায়দা হিসেবে (এবং নাগরিকদের প্রতারণার উদ্দেশ্যে) এসব পৌরসভা গঠন করা হয়েছে এবং এগুলো আইনে লিপিবদ্ধ মানদণ্ডগুলোও পূরণ করে না। যেমন—এসব এলাকায় তিন-চতুর্থাংশ ব্যক্তি অকৃষি পেশায় নিয়োজিত নয়, যা পৌরসভা হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি। গত কয়েক বছরে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ, পানীয় জল, পয়োনিষ্কাশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং সরকারের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে অদূর ভবিষ্যতে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের আশাও করা যায় না।
জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবির পর পৌর নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত ও সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থীরা অনেক বেশি আসনে জিতেছেন। নিঃসন্দেহে এটি আশাতীত বিজয়। তবে, তাঁদেরও অতি উৎফুল্ল হওয়ার কারণ নেই। কারণ, গত দুই দশকের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের ভোটাররা ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষেই ভোট দিয়ে আসছেন। গত জাতীয় নির্বাচনে ভোটাররা চারদলীয় জোটকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তার আগে প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগকে, তার আগে বিএনপিকে। অর্থাৎ অপকর্ম ও দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে উপায়ান্তর না দেখে তাঁরা আশায় বুক বেঁধে প্রতিপক্ষকে ভোট দিয়েছেন; যদিও অপশাসন ও অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে তাঁদের পরিত্রাণ মেলে না।
প্রসঙ্গত, ক্ষমতাসীনদের অনেককেই বলতে শোনা যায়, বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে তাঁদের পক্ষে আশানুরূপ জয় অর্জন করা সম্ভবপর হয়নি। এটি একটি ভুল অজুহাত। কারণ, বিএনপিতেও অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়ন কীভাবে নির্ধারিত হবে, সে সম্পর্কে বিধিবিধান চূড়ান্ত না করেই তড়িঘড়ি করে দলভিত্তিক নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া ছিল অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। জাতীয় নির্বাচনের মতো মনোনয়ন-প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার বিধান না থাকার কারণে ব্যক্তির খেয়ালখুশিমতোই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে—অনেক ক্ষেত্রে অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিকেও। মনোনয়ন নির্ধারণে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মতামতও নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া মনোনয়ন-বাণিজ্যের অভিযোগও উঠেছে। তাই বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়াই স্বাভাবিক।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠান যত বিলম্বিত করা হচ্ছে, নির্বাচনী ফলাফলে ক্ষমতাসীনদের তত বেশি বিপর্যয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আর গড়িমসি করা মহাজোট সরকারের স্বার্থের পরিপন্থী হবে। এ ছাড়া সরকারকে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা নিয়ে কী করতে চায়, সে ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর আমি লিখেছিলাম যে চট্টগ্রামের ভোটাররা সরকারের জন্য একটি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। আমার মনে হয়, এ সতর্কবাণীর প্রতি সরকার কর্ণপাত করেনি, কিংবা এ থেকে কোনো শিক্ষাও গ্রহণ করেনি। আমার আশঙ্কা, সাম্প্রতিক জরিপ ও পৌর নির্বাচনের ফলাফল সরকারের জন্য জেগে ওঠার ঘণ্টাধ্বনি বাজিয়ে দিয়েছে। আমরা আশা করি, সরকার জেগে উঠবে এবং সত্যিকারের দিনবদল ও সুশাসন কায়েমের পথে অগ্রসর হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের উদ্যোগ নেবে এবং নাগরিকদের প্রাপ্য সেবাদানে যথাযথ ভূমিকা রাখবে। দলকে সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দলীয় কর্মকাণ্ড চাঙা করবে এবং দলে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেবে। দলীয়করণ, ফায়দাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলদারি ইত্যাদি পরিহার করবে এবং আইনের শাসন কায়েমে আন্তরিক হবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন নিয়ে আর টালবাহানা করবে না এবং মাননীয় সংসদ সদস্যদের বিযুক্ত করে এগুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করবে এবং শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করবে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক)।
No comments