সংলাপে বসুন-সংঘাত-হানাহানি কাম্য নয়

দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ক্রমেই সংঘাতের দিকে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা। দুর্ভোগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনেও। তিন দিন হরতালের কারণে বাজারে প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। আর একবার দাম বাড়লে সেটাই স্থায়ী হয়ে যায়।


হরতালের সময় হতাহত হয়েছে অনেকে এবং কয়েক ডজন বাস পোড়ানো হয়েছে। এতে সমস্যার আবর্তে নিমজ্জমান গণপরিবহন ব্যবস্থা আরো বেশি সমস্যায় পতিত হয়েছে। তাই বিরোধী দলের লাগাতার হরতালের হুমকি সাধারণ মানুষকে আরো বেশি আতঙ্কগ্রস্ত করছে। এর পরও সরকারি ও বিরোধী দলের একগুঁয়েমি ও অনড় অবস্থান দেখলে সেই আতঙ্ক আরো বেড়ে যায়। দেশের বিশিষ্টজনদের পক্ষ থেকে সংঘাতে না গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য বারবার অনুরোধ জানানো হলেও কোনো পক্ষই তাতে কর্ণপাত করছে বলে মনে হয় না। বরং দিন দিন তাঁদের বক্তব্য আরো অসহিষ্ণু, আরো বেশি লাগামহীন হয়ে উঠছে। বিরোধী দল নিখোঁজ হওয়া নেতা ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন করছে, আর সরকারি দল তাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করছে। এক পক্ষ লাগাতার হরতালের হুমকি দিচ্ছে, আরেক পক্ষ তা প্রতিরোধের ঘোষণা দিচ্ছে। এই হুমকি ও প্রতিরোধের ঘোষণা দেশকে কোন গন্তব্যে নিয়ে যাবে, তা কি তাঁরা একবারও ভেবে দেখেছেন?
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী এবং তাঁর গাড়িচালককে মধ্যরাতে কিছু দুর্বৃত্ত তুলে নিয়ে গেছে। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাঁকে সরকারি বাহিনীর লোকরা গুম করেছে। কিন্তু তাঁদের এ দাবির সপক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। কাজেই একে একটি রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে দেখাটাই যুক্তিযুক্ত। আবার সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করার জন্যই ইলিয়াস আলীকে লুকিয়ে রাখা হতে পারে। এটাও স্পষ্টতই পাল্টা রাজনৈতিক বক্তব্য। কিন্তু সেটা অপহরণ হোক, গুম হোক কিংবা অন্য কিছু হোক, এটা তো সত্য, প্রায় অর্ধমাস হলো তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার বলছে, তাঁকে জীবিত উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু অর্ধমাসেও তাঁকে খুঁজে বের করতে না পারাটাকে আমরা কি সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখব না? সরকার তার ব্যর্থতা স্বীকার না করে বিরোধী দলের আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করছে_ এটা কতটা যুক্তিযুক্ত? আবার লাগাতার হরতাল কিংবা সারা দেশে আগুন জ্বলবে_এ ধরনের যে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, সেটাকেও আমরা যুক্তিযুক্ত মনে করি না। কারণ রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করে, অর্থনীতি ধ্বংস করে কিংবা জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে শুধু ইলিয়াস আলী কেন, অন্য কোনো সমস্যারও সমাধান হতে পারে বলে আমরা মনে করি না। সমাধানের জন্য দল দুটির মধ্যে একটি আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, যা বর্তমানে প্রায় শূন্যের কোঠায় গিয়ে পেঁৗছেছে। পরস্পরের প্রতি সহিষ্ণুতা বাড়াতে হবে। সর্বোপরি জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে সংঘাতের পথ পরিহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। তা না হলে কিছু মানুষের রাজনৈতিক অভিলাষ ও একগুঁয়েমির কারণে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে এবং দেশের সব অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। তেমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়।
সরকারি ও বিরোধী দলের প্রতি আমাদের আবেদন, অতীতের সব তিক্ততা ভুলে দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে সংলাপে বসুন। পরস্পরকে আস্থায় নিয়ে আলোচনা করুন। ব্যক্তিস্বার্থ নয়, দেশের স্বার্থে সমাধান খুঁজে বের করুন।

No comments

Powered by Blogger.