আবার ‘রাজনৈতিক মামলা’ প্রত্যাহারের উদ্যোগ by রোজিনা ইসলাম

রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করতে দ্বিতীয় ধাপে কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে ছয় হাজার ৭৮৬টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছিল। এবার মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করছে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরুর নেতৃত্বাধীন ‘রাজনৈতিক কমিটি’।


প্রথম পর্যায়ে সুপারিশ করার দায়িত্ব ছিল আইন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় কমিটির।
রাজনৈতিক কমিটি থেকে জানা গেছে, ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বিবেচনায় খুন, হত্যা, অস্ত্র আইনে মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের ২৯৭টি মামলা প্রত্যাহারের জন্য সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে। এখন জাতীয় কমিটি এসব সুপারিশ যাচাই-বাছাই করবে। এ জন্য মামলার নথির বিষয়ে জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এর আগে খুন-ডাকাতির মামলা প্রত্যাহার করার পর জাতীয় কমিটির কর্মকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে রাজনৈতিক কমিটি গঠন করা হয়। রাজনৈতিক কমিটির দাবি, জাতীয় কমিটির মতো সন্ত্রাসী বা বিরোধী দলের কোনো নেতার মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ তারা করেনি। যাচাই-বাছাই করে দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মামলাগুলো প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই কমিটিও হত্যাসহ অনেক বিতর্কিত মামলার সুপারিশ করেছে, যা নিয়ে পরে আবার বিতর্ক হতে পারে।
জানতে চাইলে রাজনৈতিক কমিটির প্রধান আবদুল মতিন খসরু প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁর নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছিল। কমিটি দীর্ঘদিন যাচাই-বাছাই করে মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। মূলত যেসব ব্যক্তি প্রকৃতভাবেই রাজনৈতিক হয়রানির শিকার এবং যাঁরা সরকারের নির্ধারিত সময়ে আবেদন করতে পারেননি, তাঁদের মামলা যাচাই-বাছাই করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। কমিটির সুপারিশ করা মামলাগুলোর মধ্যে খুন, হত্যা, অস্ত্র মামলাসহ মারামারির মামলাও রয়েছে। তিনি বলেন, তাঁর কমিটির প্রতিবেদনই চূড়ান্ত নয়, সরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে আগের জাতীয় কমিটি পুনর্গঠন করেছে সরকার। আইন প্রতিমন্ত্রী এর প্রধানই আছেন। তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুকে সহসভাপতি করে সাত সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সদস্যরা হলেন স্বরাষ্ট্রসচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবকে কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক বা অন্য কোনোভাবে হয়রানির উদ্দেশে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে, এমন ছয় হাজার ৭৮৬টি মামলা সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রত্যাহারের আদেশ দেওয়া হয়েছে বর্তমান সরকারের সময়। এর ফলে কমবেশি ৮১ হাজার অভিযুক্ত ব্যক্তি খালাস পেয়েছেন বা খালাসের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন।
তবে দুদক সম্মতি না দেওয়ায় দুদকের ৩১৫টি মামলা প্রত্যাহারের চেষ্টা এখনো সফল হয়নি। আইন অনুযায়ী দুদকের সুপারিশ ছাড়া দুদকের মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারও ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বলে পাঁচ হাজার ৮৮৮টি মামলা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং ৯৪৫টি মামলা থেকে কিছু আসামিকে অব্যাহতি দেয়। এ প্রক্রিয়ায় মোট ৭৩ হাজার ৫৪১ জন অভিযুক্ত ব্যক্তি খালাস পান।

No comments

Powered by Blogger.