অর্থবহ তদন্তের স্বার্থে জোরালো উদ্যোগ প্রয়োজন-স্বাস্থ্য খাতে দুদকের মনোযোগ

সরকারের সেবা খাতগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য খাত বিভিন্ন কারণেই নাজুক। এর সঙ্গে সরাসরি মানুষের জীবন-মরণের সম্পর্ক। দুর্নীতির ব্যাপ্তি এখানে সরাসরি অধিক মানুষের চিকিৎসাহীনতায় পর্যবসিত হয়। তাই দুদক যে স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত দল গঠন করে প্রতিবেদন তৈরির পদক্ষেপ নিয়েছে, তা সাধুবাদযোগ্য।


কিন্তু মাত্র তিন সদস্যের দলের পক্ষে এই কাজ করা কতটা সম্ভব, সেই প্রশ্ন রয়ে যায়।
স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি এখন প্রতিদিনকার বিষয়। সরকারি হাসপাতাল ও সেবাকেন্দ্রগুলোতে সাধারণত স্বল্প আয়ের লোকেরাই গিয়ে থাকেন। এসব নিরুপায় মানুষের প্রতিনিয়ত সেখানে অপর্যাপ্ত চিকিৎসা, অপচিকিৎসা এবং অবহেলার শিকার হতে হয়। রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষার বেলায়ও দেখা যায় হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কোনো কাজে আসছে না। পদে পদে ঘুষ তো অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রকম দশা যেখানে, সেখানে দুর্নীতি-অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চিহ্নিত করা মানবিক প্রয়োজন। এর জন্য দরকার ছিল বড় আকারের নিষ্ঠাবান উদ্যোগ। সে কারণে দুদকের এই উদ্যোগকে অর্থবহ করায় আরও জোরালো করা প্রয়োজন।
দুদকের তদন্তের আওতায় থাকছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত বিভিন্ন অধিদপ্তর, বিভাগ এবং সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল। হাসপাতালের কেনাকাটা এবং পদায়ন-পদোন্নতিতে অনিয়মের পাশাপাশি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদনে যথাযথ নিয়ম মানা হয়েছে কি না, সেটাও তারা দেখবে। গত কয়েক বছরে সরকারি হাসপাতালগুলোতে কোটি কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হয়েছে, কেনা হয়েছে দামি দামি যন্ত্রপাতি। এসব নিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদপত্রে দুর্নীতির অভিযোগভিত্তিক প্রতিবেদনও ছাপা হয়েছে। এসবকেও আমলে নেওয়ার কথা বলেছে দুদকের তদন্ত দল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষকে তারা তাদের কাজের জন্য ব্যবহার করবে।
স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি বিরাট বিস্তৃত ব্যাপার। এসব দুর্নীতি উন্মোচনে যেমন চৌকস লোকবল দরকার, তেমনি দরকার বিশেষজ্ঞ সহায়তাও। মাত্র তিনজনের তদন্ত দলের পক্ষে দুর্নীতি প্রমাণের জন্য অনুসন্ধান চালানো কতটা সম্ভব? মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও সহায়তা না পেলে তাদের পক্ষে সব ক্ষেত্রে সফল হওয়াও কঠিন। তাই, দুদককে নিজের নামের সম্মান রাখতে হলে কাগুজে প্রতিবেদনমুখী না হয়ে সমস্যা চিহ্নিত করায় বেশি সচেষ্ট হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.