ত্যাজ্যপুত্র কি আসলেই ত্যাজ্য? by আকরামুল ইসলাম
ধনাঢ্য ঘরের একমাত্র সন্তান শাকিল (ছদ্মনাম) পরিবারের অমতে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন অপেক্ষাকৃত নিচু ঘরের সন্তান লিলিকে (ছদ্মনাম)। শাকিলের বাবার একান্ত ইচ্ছা ছিল, ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দেবেন তাঁর দীর্ঘ দিনের এক বন্ধুর মেয়ের সঙ্গে। কিন্তু শাকিল যখন সবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলেন,
তখন তাঁর বাবা এতে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হন এবং তাঁকে ত্যাজ্যপুত্র হিসেবে তাঁর সব সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার ঘোষণা দেন। আমাদের দেশে এ রকম ঘটনার কথা অহরহ শোনা যায়। সাধারণত সন্তানেরা বাবা-মায়ের অবাধ্য হলে বা তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের মতো করে কোনো কাজ করলে কিংবা কোনো কারণে বখে গেলে তাকে পরিবারের মতে চলার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু কোনো কিছুতেই যখন তাকে বশে আনা যায় না, তখন বাবা-মায়েরা ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে শাস্তিস্বরূপ তাদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দেন এবং অনেক সময় ত্যাজ্যপুত্র হিসেবে ঘোষণাও করেন।
ত্যাজ্যপুত্র যদিও একটি প্রচলিত বিষয়, কিন্তু এ বিষয়ে অস্বচ্ছ ধারণা রয়েছে। প্রচলিত ধারণা এই যে যদি কোনো বাবা-মা তাঁর সন্তানকে ত্যাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন, তবে ওই সন্তান চিরতরে তার বাবা-মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। অনেক সময় দেখা যায়, পিতা তাঁর সন্তানকে ত্যাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন এবং হলফনামার মাধ্যমে স্বীকৃতি দেন যে তাঁর মৃত্যুর পর ওই সন্তান সম্পত্তির কোনো অংশীদার হবে না। এ ধরনের ঘোষণার আদৌ কোনো আইনি ভিত্তি আছে কি না, তা অনেকের কাছেই অজানা। এই অজ্ঞতার কারণেই সমাজে বিষয়টি সম্পর্কে নানা ধরনের অঘটন ঘটছে।
কিন্তু প্রকৃত বিষয় হলো, ত্যাজ্যপুত্র সম্পর্কে মুসলিম আইনে কোনো বিধান নেই এবং এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা।
মুসলিম পারিবারিক আইনে উত্তরাধিকার সম্পর্কে
সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে কারা সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবে এবং তাদের অংশ কতটুকু হবে।
মুসলিম আইন অনুযায়ী, জন্মসূত্রেই কোনো সন্তান তার পরিবারের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার অর্জন করে এবং তাদের এই অধিকার কোনোভাবেই খর্বযোগ্য নয়। আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নানাভাবেই সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন। যেমন দান, উইল, বিক্রয় ইত্যাদি। তবে মুসলিম আইনে উইলের দ্বারা এবং উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তা কার্যকর হবে। উইলের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই এক-তৃতীয়াংশের বেশি সম্পত্তি দেওয়া যাবে না। জীবৎকালে যদি কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয় দান বা বিক্রির মাধ্যমে, তবে ওই সম্পত্তিতে ওই ব্যক্তির মালিকানার বিলুপ্তি ঘটে এবং তার মৃত্যুর পর হস্তান্তর করা সম্পত্তি বাদে রেখে যাওয়া বাকি সম্পত্তিতে ওই ব্যক্তির উত্তরাধিকারদের মালিকানা সৃষ্টি হয় এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত অংশ অনুযায়ী তাদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টিত হবে। কিন্তু মুসলিম আইনে এমন কোনো বিধান রাখা হয়নি, যার দ্বারা ঘোষণার মাধ্যমে বাবা-মা তাঁদের সম্পত্তি থেকে সন্তানকে বঞ্চিত করতে পারেন। যেহেতু সুস্পষ্টভাবে অংশ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তাই সম্পত্তি কীভাবে এবং কাদের মধ্যে বণ্টিত হবে, সে বিষয়ে মতামত দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। উত্তরাধিকার আইনে যে কয়জন অংশীদারকে কোনো অবস্থায় সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যায় না, তাদের মধ্যে ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। তবে কেউ যদি রেজিস্ট্রিকৃতভাবে পুরো সম্পত্তি দান বা হস্তান্তর করে যায় এবং সন্তানকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে তার কোনো অংশের কথা উল্লেখ না করে যায়, তবে ওই সম্পত্তিতে তার সন্তানদের কোনো অংশ থাকবে না। অনেকে দলিল সম্পাদন কিংবা হলফনামার মাধ্যমে ত্যাজ্য করার ঘোষণা দেন। কিন্তু যেভাবেই করা হোক, এ ধরনের ইচ্ছা বা আদেশের কোনো মূল্য নেই। কেননা, মুসলিম আইনে এ ধরনের দলিল বা হলফনামা সম্পাদনের কোনো ধারাই রাখা হয়নি।
এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক তসলিমা মুনসুর বলেন, ‘ভ্রান্ত ধারণা হিসেবে ত্যাজ্যপুত্র বিষয়টি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। যেহেতু বিষয়টির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই, তাই হলফনামার মাধ্যমে করা হলেও তা আদালতে কার্যকর করার কোনো সুযোগ নেই।’ সাধারণত দেখা যায়, বাবা যদি কোনো সন্তানকে ত্যাজ্য করেন তবে তাঁর মৃত্যুর পর অন্যান্য উত্তরাধিকার সেই সন্তানকে সম্পত্তির অংশ দিতে চান না। সমাজপতিরাও আইন সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ার কারণে এ বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্ত দেন এবং কোনো সুরাহা করতে পারেন না। তাই কেউ যদি এমন অবস্থার শিকার হন এবং ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে না পারেন, তবে তিনি আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। ত্যাজ্যপুত্র একটি ভুল ও ভ্রান্ত বিষয় এবং এটি কোনোভাবেই আইনে স্বীকৃত নয়। মুসলিম আইন উত্তরাধিকার স্বত্বের অধিকারকে চিরন্তন সত্য হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়েছে।
ত্যাজ্যপুত্র যদিও একটি প্রচলিত বিষয়, কিন্তু এ বিষয়ে অস্বচ্ছ ধারণা রয়েছে। প্রচলিত ধারণা এই যে যদি কোনো বাবা-মা তাঁর সন্তানকে ত্যাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন, তবে ওই সন্তান চিরতরে তার বাবা-মায়ের সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। অনেক সময় দেখা যায়, পিতা তাঁর সন্তানকে ত্যাজ্য হিসেবে ঘোষণা করেন এবং হলফনামার মাধ্যমে স্বীকৃতি দেন যে তাঁর মৃত্যুর পর ওই সন্তান সম্পত্তির কোনো অংশীদার হবে না। এ ধরনের ঘোষণার আদৌ কোনো আইনি ভিত্তি আছে কি না, তা অনেকের কাছেই অজানা। এই অজ্ঞতার কারণেই সমাজে বিষয়টি সম্পর্কে নানা ধরনের অঘটন ঘটছে।
কিন্তু প্রকৃত বিষয় হলো, ত্যাজ্যপুত্র সম্পর্কে মুসলিম আইনে কোনো বিধান নেই এবং এটি একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা।
মুসলিম পারিবারিক আইনে উত্তরাধিকার সম্পর্কে
সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে কারা সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবে এবং তাদের অংশ কতটুকু হবে।
মুসলিম আইন অনুযায়ী, জন্মসূত্রেই কোনো সন্তান তার পরিবারের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার অর্জন করে এবং তাদের এই অধিকার কোনোভাবেই খর্বযোগ্য নয়। আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নানাভাবেই সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারেন। যেমন দান, উইল, বিক্রয় ইত্যাদি। তবে মুসলিম আইনে উইলের দ্বারা এবং উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তা কার্যকর হবে। উইলের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই এক-তৃতীয়াংশের বেশি সম্পত্তি দেওয়া যাবে না। জীবৎকালে যদি কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয় দান বা বিক্রির মাধ্যমে, তবে ওই সম্পত্তিতে ওই ব্যক্তির মালিকানার বিলুপ্তি ঘটে এবং তার মৃত্যুর পর হস্তান্তর করা সম্পত্তি বাদে রেখে যাওয়া বাকি সম্পত্তিতে ওই ব্যক্তির উত্তরাধিকারদের মালিকানা সৃষ্টি হয় এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত অংশ অনুযায়ী তাদের মধ্যে সম্পত্তি বণ্টিত হবে। কিন্তু মুসলিম আইনে এমন কোনো বিধান রাখা হয়নি, যার দ্বারা ঘোষণার মাধ্যমে বাবা-মা তাঁদের সম্পত্তি থেকে সন্তানকে বঞ্চিত করতে পারেন। যেহেতু সুস্পষ্টভাবে অংশ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তাই সম্পত্তি কীভাবে এবং কাদের মধ্যে বণ্টিত হবে, সে বিষয়ে মতামত দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। উত্তরাধিকার আইনে যে কয়জন অংশীদারকে কোনো অবস্থায় সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যায় না, তাদের মধ্যে ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। তবে কেউ যদি রেজিস্ট্রিকৃতভাবে পুরো সম্পত্তি দান বা হস্তান্তর করে যায় এবং সন্তানকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে তার কোনো অংশের কথা উল্লেখ না করে যায়, তবে ওই সম্পত্তিতে তার সন্তানদের কোনো অংশ থাকবে না। অনেকে দলিল সম্পাদন কিংবা হলফনামার মাধ্যমে ত্যাজ্য করার ঘোষণা দেন। কিন্তু যেভাবেই করা হোক, এ ধরনের ইচ্ছা বা আদেশের কোনো মূল্য নেই। কেননা, মুসলিম আইনে এ ধরনের দলিল বা হলফনামা সম্পাদনের কোনো ধারাই রাখা হয়নি।
এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক তসলিমা মুনসুর বলেন, ‘ভ্রান্ত ধারণা হিসেবে ত্যাজ্যপুত্র বিষয়টি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। যেহেতু বিষয়টির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই, তাই হলফনামার মাধ্যমে করা হলেও তা আদালতে কার্যকর করার কোনো সুযোগ নেই।’ সাধারণত দেখা যায়, বাবা যদি কোনো সন্তানকে ত্যাজ্য করেন তবে তাঁর মৃত্যুর পর অন্যান্য উত্তরাধিকার সেই সন্তানকে সম্পত্তির অংশ দিতে চান না। সমাজপতিরাও আইন সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ার কারণে এ বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্ত দেন এবং কোনো সুরাহা করতে পারেন না। তাই কেউ যদি এমন অবস্থার শিকার হন এবং ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে না পারেন, তবে তিনি আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। ত্যাজ্যপুত্র একটি ভুল ও ভ্রান্ত বিষয় এবং এটি কোনোভাবেই আইনে স্বীকৃত নয়। মুসলিম আইন উত্তরাধিকার স্বত্বের অধিকারকে চিরন্তন সত্য হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়েছে।
No comments