প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে কিছু কথা by শাহ আহমদ রেজা


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের নানা দিক নিয়ে বিভিন্ন মহলে এখনও আলোচনা চলছে। তিনি নিজে এই সফরকে ‘শতভাগ সফল’ দাবি করলেও বিরোধী দলগুলো ভারতের কাছে বাংলাদেশের স্বার্থ তুলে দেয়ার অভিযোগ তুলেছে। দিন যত যাচ্ছে তত নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে এবং স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, দেশের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর অর্জন মোটেও উল্লেখযোগ্য নয়।
তিনি আসলে শুধু দিয়েই এসেছেন। দিয়েছেনও আবার ভারতের ইচ্ছামত। শেখ হাসিনা সত্যিই বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে ‘সমানে সমানে’ আলোচনা করতে গিয়েছিলেন কি-না, তার মধ্যে বাংলাদেশের স্বার্থ আদায়ের উদ্দেশ্য আদৌ ছিল কিনা—এ ধরনের প্রশ্ন বিভিন্ন মহল থেকে গুরুত্বের সঙ্গে উঠে আসছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে এসেছে তার সফরসঙ্গীদের পরিচিতি। এমন কয়েকজনকেই তিনি সঙ্গে নিয়েছিলেন, যাদের দিয়ে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা সম্ভব নয়—বিশেষ করে প্রতিপক্ষ যেখানে রয়েছেন ভারতের মতো বিরাট দেশের ঝানু, অভিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক রাজনীতিক ও কূটনীতিকরা।

বিচ্ছিন্নভাবে শুনলে আপত্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু বিষয়টিকে হাল্কাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। কথাটা পরিষ্কার করা যাক। যেমন—সন্ত্রাস দমনসহ দু’দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত তিনটি পৃথক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম উপস্থিত থাকলেও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সঙ্গে নেননি প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে বাংলাদেশের বিপুল ঘাটতিসহ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য একটি প্রধান বিষয় ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্যমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যাননি। অন্যদিকে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা কিন্তু ঠিকই ছিলেন। সমুদ্র বন্দর এবং রেল ও সড়কপথে করিডোর দেয়ার মাধ্যমে অর্থ আয় করার কথা শুনিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি এবং রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা গেলেও বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ও যোগাযোগমন্ত্রীর কাউকেই সঙ্গে নেননি প্রধানমন্ত্রী। ভারত থেকে বিদ্যুত্ আমদানির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশের জ্বালানিমন্ত্রীকে দেখা যায়নি।
ভারতের প্রতিনিধিদলের দিকেও লক্ষ্য করা দরকার। প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণাসহ পাঁচজন পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন বৈঠকে। ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রীনিত কাউর। ডজনখানেক আইসিএস অফিসারসহ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিশেষ করে নজর কেড়েছেন ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কে নারায়ণন—যিনি সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মতো শক্তিশালী দেশগুলোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করে থাকেন। অন্যদিকে শেখ হাসিনার প্রতিনিধিদলের দিকে লক্ষ্য করে দেখুন। ভারতের ছয়জন ঝানু মন্ত্রীর বিপরীতে বৈঠকে ছিলেন মাত্র দু’জন—পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এবং পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন। দু’জনের মধ্যে দীপু মনি সম্পর্কে কথা বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না। কারণ তিনি এমন একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী যিনি এমনকি ‘বাফার স্টেটেরও’ অর্থ বোঝেন না!
এদিকে পানিসম্পদমন্ত্রীও কম দেখাননি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপর এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রাক্কালে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রণব মুখার্জি যখন ঢাকায় এসেছিলেন, রমেশ চন্দ্র সেন তখন তার কাছে পানির কথাটাই তোলেননি। শুধু তাই নয়, মন্ত্রী উল্টো বলেছিলেন, ফারাক্কা পয়েন্ট দিয়ে কিছু পরিমাণে হলেও পানি যে পাওয়া যাচ্ছে এতেই আমাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিত! তার কাছ থেকে অন্য একটি কথাও তখন জানা গিয়েছিল—তিনি নাকি টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে কিছুই জানেন না! এমন একজন পানিসম্পদমন্ত্রীকেই শেখ হাসিনা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন! প্রধানমন্ত্রী নিজেও তেমন গুরুত্ব দেননি বলেই তিস্তাসহ ৫৪টি নদ-নদীর পানি বণ্টনের মতো অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়ও পেছাতে পেছাতে গিয়ে যৌথ ঘোষণার ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদে ঠাঁই পেয়েছে। একই কথা বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্য সব বিষয়েও সমানভাবে প্রযোজ্য।
এজন্যই বিরোধীদলগুলো থেকে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের স্বার্থ অর্জনের তেমন ইচ্ছা আদৌ প্রধানমন্ত্রীর ছিল কি-না? কারণ, ভারতের রাজনীতিক, কূটনীতিক ও আমলাদের সম্পর্কে যাদের ধারণা রয়েছে, তারাই স্বীকার করবেন, ড. মনমোহন সিং থেকে কে নারায়ণন পর্যন্ত ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘সমানে সমানে’ তর্ক ও আলোচনা করে এবং যুক্তির জবাবে পাল্টা-যুক্তি দেখিয়ে দেশের স্বার্থ আদায় করার যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো একজনই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন না। অন্যদিকে ভারতীয়দের দিকে লক্ষ্য করে দেখুন। তাদের মধ্যে কে এদেশের কার দাদা, দিদি কিংবা কাকাবাবু সেটা বড় কথা নয়, নিজেদের দেশের স্বার্থের ব্যাপারে সিরিয়াস ছিলেন বলেই ভারতীয়রা প্রতিটি বিষয়ে যোগ্য, উপযুক্ত ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তিকে দিয়ে প্রতিনিধিত্ব করিয়েছেন। বাংলাদেশের পক্ষে তেমন কেউ না থাকার কারণ সম্পর্কে সম্ভবত কথা বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ে না। বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন আসলে উজাড় করে দিয়ে আসার জন্য। সে উদ্দেশ্য অবশ্য শতভাগই সফল হয়েছে!
এদিকে জাতীয় স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে উত্সাহিত হওয়ার কোনো কারণ না থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর কথিত সাফল্য নিয়ে ক্ষমতাসীনরা রীতিমত শোরগোল তুলে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ‘সবক’ও কম দিচ্ছেন না। যেমন ভারতে অবস্থানকালে শুধু নয়, দেশে ফিরে আসার পরও ১৬ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনসহ প্রতিটি উপলক্ষে তিনি বলেছেন—‘ঝগড়া’ করে নয়, আলোচনার মাধ্যমেই ভারতের সঙ্গে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে। দিল্লি সফর সম্পর্কে আরও অনেক কথাই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে তার বক্তব্যের ‘ঝগড়া’ বিষয়ক শব্দটি। শুনলে মনে হবে যেন বাংলাদেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দল ভারতের সঙ্গে শুধু ‘ঝগড়া’ই করে! আর ‘ঝগড়া’ করে বলেই ভারতের সঙ্গে সমস্যার সমাধান হয়নি! এখানে লক্ষ্য করা দরকার, প্রধানমন্ত্রী কিন্তু প্রথমেই স্বীকার করে নিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক সমস্যাই অমীমাংসিত রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কথার পিঠে কথা উঠেছে কিছু ঐতিহাসিক কারণে। পর্যালোচনায় দেখা যাবে, ভারত যদি সত্ প্রতিবেশীসুলভ নীতি ও মনোভাবের পরিচয় দিত তাহলে বাংলাদেশের কেউই ভারতের সঙ্গে ‘ঝগড়ার’ চিন্তা করত না। অন্যদিকে ভারতের নীতিই হলো কিছু না দিয়ে শুধু নেয়া, নেয়া এবং নেয়া। এই নীতি ও উদ্দেশ্য পূরণে কেউ সম্মত না হলে তার পরিণতি কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে, নিকট অতীতে চারদলীয় জোটকে তা বুঝতে হয়েছে। একই কারণে শেখ হাসিনাও ক্ষমতায় আসতে পেরেছেন। এর মধ্য দিয়ে একথাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ভারত তার ইচ্ছা পূরণ করিয়ে নেয়ার প্রয়োজনে লগি-বৈঠার ব্যবহার করতে পারে, নিজে গণতন্ত্রের ‘পূজারী’ হলেও ক্ষমতায় আনতে পারে অগণতান্ত্রিক কোনো সরকারকে। এখানে ‘ঝগড়ার’ প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, ঠিক কোন নেতা ভারতের সঙ্গে কখন ‘ঝগড়া’ করতে চেয়েছেন বা ‘ঝগড়া’ করেছেন—সে কথা কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জানাননি। অথচ ‘ঝগড়া’র কথাই যদি ওঠে তাহলে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর পিতা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করতে হবে। ১৯৭৫ সালের মধ্য আগস্ট পর্যন্ত দোর্দণ্ড ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৭৪ সালের ১৬ মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তিনি ‘মুজিব-ইন্দিরা’ নামে পরিচিত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। এই চুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ বেরুবাড়িকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ মুজিব নিশ্চয়ই ‘ঝগড়া’ করার জন্য চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেননি। অন্যদিকে ভারত কিন্তু চুক্তি লংঘন করেছিল। নিজে বেরুবাড়ির দখল নিলেও ভারত আজও পর্যন্ত বাংলাদেশকে তিনবিঘা করিডোর দেয়নি। প্রতারণার কৌশল হিসেবে ভারত আইনের প্যাঁচ কষেছে। শুধু তা-ই নয়, মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিকে ভারতের লোকসভাও এখনও অনুমোদন করেনি।
ফারাক্কা বাঁধটি চালু করতে গিয়ে ভারত চাতুরির আশ্রয় নিয়েছিল। মুজিব-ইন্দিরা যুক্ত ইশতেহারে বলা হয়েছিল, ফারাক্কা বাঁধ সম্পূর্ণরূপে চালু করার আগে শুষ্ক মৌসুমে প্রাপ্ত পানির পরিমাণ নিয়ে সমঝোতায় আসার জন্য ভারত প্রথমে ৪১ দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ফিডার ক্যানেল চালু করবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ৪১ দিনের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও ভারত ফিডার ক্যানেল দিয়ে পানি প্রত্যাহার অব্যাহত রেখেছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি না করেই ১৯৭৬ সালের শুষ্ক মৌসুমে পূর্ণ ক্ষমতায় গঙ্গার পানি নিয়ে গেছে। এভাবেই ভারতের পানি আগ্রাসন শুরু হয়েছিল। এখনও সে আগ্রাসনে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
শুধু ফারাক্কার কথাই বা বলা কেন, শেখ হাসিনার নিজের অভিজ্ঞতাও কি খুব মধুর? ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষায় এটা ছিল এক ‘ঐতিহাসিক চুক্তি।’ অন্যদিকে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরপর, ১৯৯৭ সালের মার্চেই ভারত তার পানি আগ্রাসনকে আরও প্রচন্ড করেছিল। চুক্তি অনুযায়ী মার্চের প্রথম ও দ্বিতীয় ১০ দিনের চক্রে বাংলাদেশের প্রাপ্য যেখানে ছিল ৩৫ হাজার কিউসেক, ভারত সেখানে দিয়েছিল গড়ে ২১ হাজার কিউসেক। সর্বনিম্ন পরিমাণ পানি পাওয়ার রেকর্ডও স্থাপিত হয়েছিল ১৯৯৭ সালের মার্চেই—২৭ মার্চ বাংলাদেশ পেয়েছিল মাত্র ৬ হাজার ৪৫৭ কিউসেক। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারতের সঙ্গে ‘ঝগড়া’ করতে দেখা যায়নি। সে অবস্থাই চলেছে এখনও। কোনো মৌসুমেই বাংলাদেশ গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছে না। ছোট-বড় আরও অনেক বাঁধের মাধ্যমেও ভারত পানি প্রত্যাহার ও পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করায় অভিন্ন ৫৪টির মধ্যে ৪০টি নদ-নদী শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এখন পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে টিপাইমুখ বাঁধের উল্লেখ করা দরকার। এখানেও নিশ্চয়ই বলা যাবে না যে, বাংলাদেশের কেউ ‘ঝগড়া’ করতে গিয়েছিলেন বলেই ভারত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ করে তাকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে চাচ্ছে! প্রায় ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার ভেতরে ঢুকে তেল ও গ্যাসের জন্য অনুসন্ধান করার মাধ্যমে সমুদ্র সীমানার ব্যাপারেও ভারতই কিন্তু ‘ঝগড়া’ বাধিয়ে চলেছে। লুণ্ঠন করে নিচ্ছে বাংলাদেশের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ।
সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও উল্লেখ করা দরকার। স্বাধীনতার পর থেকেই বিএসএফ এই হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছে—সেটা এমন এক সময়, যখন ‘ঝগড়া’র প্রশ্নই উঠতে পারেনি। কিন্তু বিএসএফ তথা ভারত শুধু মানুষ মেরেছে। বিএসএফের সে হত্যাকাণ্ড এখনও প্রতিদিনই চলছে। এখানে বাংলাদেশের দিক থেকে ‘ঝগড়া’ করার প্রশ্ন ওঠে কিভাবে?
ভারতীয়দের পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের কাছেও ‘প্যাঁচাল’ মনে হতে পারে, কিন্তু ‘ঝগড়া’র কথা যখন উঠেছেই তখন দু’দেশের বাণিজ্যের কথাও উল্লেখ করা দরকার। তিন-তিনটি যুগ অতিক্রান্ত হলেও প্রথম থেকেই বাংলাদেশকে বিপুল ঘাটতির মধ্যে রেখেছে ভারত। ভারতীয়রা বাংলাদেশের ভেতর নিজেদের পণ্য ঠেলে দেয়ার ব্যাপারেই বেশি ব্যস্ত থাকে। আমদানির ক্ষেত্রেও ভারতীয়রা একই নীতি-মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছে। ‘ঝগড়া’টা তাহলে করছে কে? টিভি ও সংবাদ মাধ্যমের উদাহরণও যথেষ্ট তাত্পর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ ভারতীয় সব টিভির জন্য দরজা খুলে দিলেও ভারতের কোথাও, এমনকি ‘বাঙালির রাজ্য’ পশ্চিমবঙ্গেও বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেল সম্প্রচার করতে দেয়া হয় না। কথা শুধু এটুকুই নয়, ভারতের টিভিগুলো মাঝে-মধ্যেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাড়ি ধরে টান দিচ্ছে। পা দিয়ে বাংলাদেশের পতাকা পর্যন্ত মাড়াচ্ছে—যেমন ‘তারা বাংলা’ মাড়িয়েছে গত ৪ জানুয়ারি। অর্থাত্ ‘ঝগড়া’ বাধাচ্ছে ভারতীয়রা, বাংলাদেশের কেউ নয়।
এভাবে খাত বা বিষয় ধরে ধরে যে কোনো পর্যালোচনায় প্রতিষ্ঠিত হবে, বাংলাদেশের কোনো নেতা নন—‘ঝগড়া’ আসলে ভারতীয়রাই করে চলেছে। কিন্তু সেদিকে প্রধানমন্ত্রীর নজর পড়েনি। ভারতীয়দের মতো তারও বরং মনে হয়েছে, বাংলাদেশের কিছু দলই শুধু ভারতের সঙ্গে ‘ঝগড়া’ বাধাতে এবং দু’দেশের সম্পর্ককে সংঘাতপূর্ণ রাখতে চায়। অথচ কথাটা যে আদৌ সত্য নয় সে কথা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীই সুনির্দিষ্টভাবে জানেন। তিনি আসলে কৌশল হিসেবেই আগে আক্রমণে বহুবার ব্যবহৃত এবং প্রতিবার ব্যর্থ প্রমাণিত কৌশল নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ভাবতেই পারেন, কিন্তু জনগণকে বিশ্বাস করানো যাবে না যে বাংলাদেশের কোনো দল আগ বাড়িয়ে ভারতের সঙ্গে ‘ঝগড়া’ বাধানোর মতো বোকামি করেছে বা করতে পারে।
লেখক : সাংবাদিক 

No comments

Powered by Blogger.