জাবিতে শিক্ষক নিয়োগ-অস্বচ্ছতা থেকেই অস্থিরতা by শামসুল আলম সেলিম
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। ওই বিভাগের শিক্ষকদের দাবি, বর্তমানে যেসব শিক্ষক আছেন, তারাই ঠিকমতো ক্লাস পান না। অফিসে এসে অলস সময় কাটান। বর্তমানে প্রচলিত কোর্সগুলো ছাড়াও বিভাগে এখনও ১৪০ ঘণ্টা ফাঁকা কর্মঘণ্টা রয়েছে।
এর মাধ্যমে বিভাগে আরও নতুন ৪০টি কোর্স চালু করা যাবে। এমতাবস্থায় বিভাগে
অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের যৌক্তিকতা কতটুকু?
দেশের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিরতা আর যেন কাটছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ হত্যাকাণ্ড, শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক এএ মামুনকে সাবেক প্রক্টর কর্তৃক লাঞ্ছনা, ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র্যময় পরিবেশ প্রভৃতি ইস্যুতে শিক্ষকদের আন্দোলন জোরদার হচ্ছে দিন দিন। এ অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে সম্প্রতি বিভিন্ন বিভাগে অপ্রয়োজনীয় ও বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে। সর্বশেষ গণিত বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। ওই বিভাগের শিক্ষকদের দাবি, বর্তমানে যেসব শিক্ষক আছেন, তারাই ঠিকমতো ক্লাস পান না। অফিসে এসে অলস সময় কাটান। তাদের হিসাবমতে, সপ্তাহে একজন অধ্যাপক ১০, সহযোগী অধ্যাপক ১২, সহকারী অধ্যাপক ১৪ এবং প্রভাষকের ১৬ ঘণ্টা কর্মঘণ্টা আছে। বিভাগের ২৪ জন শিক্ষকের হিসাব করলে দেখা যায়, বর্তমানে প্রচলিত কোর্সগুলো ছাড়াও বিভাগে এখনও ১৪০ ঘণ্টা ফাঁকা কর্মঘণ্টা রয়েছে। এর মাধ্যমে বিভাগে আরও নতুন ৪০টি কোর্স চালু করা যাবে। এমতাবস্থায় বিভাগে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের যৌক্তিকতা কতটুকু? সেদিন শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যা ঘটে গেল, নিঃসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে তা কলঙ্ক ও লজ্জাজনক।
গত ১০ মার্চ ছিল গণিত বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের সিলেকশন কমিটির সভা। অবরোধের ঘোষণা দেন আন্দোলনরত 'শিক্ষক সমাজ'-এর সদস্যরা। এদিকে পেশিশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রশাসন চায় তাদের পছন্দের প্রার্থীদের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য। শিক্ষক সমাজের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বানচাল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন উপাচার্যপন্থিরা।
এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুবায়ের হত্যার 'বিচার বিভাগীয় তদন্ত' ও 'অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া' বাতিলসহ আট দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি সকাল ৮টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছাড়াই একই স্থানে অবস্থান নেন উপাচার্যপন্থিরা।
একের পর এক অবৈধ ও অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের মাধ্যমে নৈতিকতা হারিয়েছেন উপাচার্য। এ কারণে নির্ধারিত স্থান পরিবর্তন করে সভা করেন তার বাসভবনে। এটাও করা হয় লুকোচুরির মাধ্যমে। শুধু পছন্দের প্রার্থীরাই জানতে পারেন সভার স্থানটি।
বিষয়টি জানার পর শিক্ষক সমাজের সদস্যরা উপাচার্য ভবন অবরোধ করেন। পাশাপাশি অবস্থান নেন উপাচার্যপন্থিরাও। এ সময় উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা আন্দোলনকারীদের প্রতি ব্যঙ্গাত্মক আচরণ করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
অবরোধ চলাকালীন উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা বিশেষ প্রহরায় কয়েক প্রার্থীকে দেয়াল টপকে উপাচার্যের বাসভবনে পাঠান। এদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্ব্বা প্রার্থীও ছিলেন। একাধিক প্রার্থী প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে রেজিস্ট্রার বরাবর একটি অভিযোগপত্রও দাখিল করেন।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তথ্য হচ্ছে, অবরোধের কথা জানতে পেরে গণিত বিভাগের সভাপতি লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ, উপাচার্যের একজন পছন্দের প্রার্থী মাহতাব উদ্দিনকে নিয়ে আগে থেকেই উপাচার্যের বাসায় অবস্থান করছিলেন। এদিকে অবরোধের কারণে বেশ কিছু প্রার্থী সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে আলোচনার জন্য শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এএ মামুনের নেতৃত্বে শিক্ষক সমিতির একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেও ব্যস্ততার অজুহাতে উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় সিলেকশন বোর্ডের এক সদস্য 'এ রকম পরিস্থিতিতে সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব নয়' বলে ফিরে যান (১১ মার্চ, সমকাল)।
৯ জানুয়ারি জুবায়ের হত্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন চলছেই। একদিনের জন্যও থামেনি আন্দোলনের কর্মসূচি। এখন সব দাবি পরিণত হয়েছে এক দফাতে_ 'উপাচার্যের পদত্যাগ'। ক্যাম্পাসে চলছে অবরোধ, প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও, সর্বাত্মক ধর্মঘট। এ রকম উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে আবার প্রাণরসায়ন, অনুপ্রাণ বিজ্ঞান ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে প্রশাসন। আন্দোলনরতরা কোনোভাবেই একের পর এক অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ মেনে নেবে না। শিক্ষকরা যে কোনো মূল্যেই প্রতিহত করবেন অবৈধ এ প্রক্রিয়া। তাহলে এবার কী ঘটবে এপ্রিলের ২ ও ৩ তারিখে? বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনো জঘন্য ইতিহাস? উপাচার্যের কাছে জিজ্ঞাসা, স্বৈরাচারী মনোভাবে একের পর এক অতিরিক্ত, অযোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া কি খুব জরুরি?
অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম :সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের যৌক্তিকতা কতটুকু?
দেশের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিরতা আর যেন কাটছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ হত্যাকাণ্ড, শিক্ষক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক এএ মামুনকে সাবেক প্রক্টর কর্তৃক লাঞ্ছনা, ক্যাম্পাসের জীববৈচিত্র্যময় পরিবেশ প্রভৃতি ইস্যুতে শিক্ষকদের আন্দোলন জোরদার হচ্ছে দিন দিন। এ অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে সম্প্রতি বিভিন্ন বিভাগে অপ্রয়োজনীয় ও বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে। সর্বশেষ গণিত বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। ওই বিভাগের শিক্ষকদের দাবি, বর্তমানে যেসব শিক্ষক আছেন, তারাই ঠিকমতো ক্লাস পান না। অফিসে এসে অলস সময় কাটান। তাদের হিসাবমতে, সপ্তাহে একজন অধ্যাপক ১০, সহযোগী অধ্যাপক ১২, সহকারী অধ্যাপক ১৪ এবং প্রভাষকের ১৬ ঘণ্টা কর্মঘণ্টা আছে। বিভাগের ২৪ জন শিক্ষকের হিসাব করলে দেখা যায়, বর্তমানে প্রচলিত কোর্সগুলো ছাড়াও বিভাগে এখনও ১৪০ ঘণ্টা ফাঁকা কর্মঘণ্টা রয়েছে। এর মাধ্যমে বিভাগে আরও নতুন ৪০টি কোর্স চালু করা যাবে। এমতাবস্থায় বিভাগে অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের যৌক্তিকতা কতটুকু? সেদিন শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যা ঘটে গেল, নিঃসন্দেহে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে তা কলঙ্ক ও লজ্জাজনক।
গত ১০ মার্চ ছিল গণিত বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের সিলেকশন কমিটির সভা। অবরোধের ঘোষণা দেন আন্দোলনরত 'শিক্ষক সমাজ'-এর সদস্যরা। এদিকে পেশিশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রশাসন চায় তাদের পছন্দের প্রার্থীদের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য। শিক্ষক সমাজের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বানচাল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন উপাচার্যপন্থিরা।
এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জুবায়ের হত্যার 'বিচার বিভাগীয় তদন্ত' ও 'অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া' বাতিলসহ আট দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকরা পূর্বঘোষিত কর্মসূচি সকাল ৮টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছাড়াই একই স্থানে অবস্থান নেন উপাচার্যপন্থিরা।
একের পর এক অবৈধ ও অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের মাধ্যমে নৈতিকতা হারিয়েছেন উপাচার্য। এ কারণে নির্ধারিত স্থান পরিবর্তন করে সভা করেন তার বাসভবনে। এটাও করা হয় লুকোচুরির মাধ্যমে। শুধু পছন্দের প্রার্থীরাই জানতে পারেন সভার স্থানটি।
বিষয়টি জানার পর শিক্ষক সমাজের সদস্যরা উপাচার্য ভবন অবরোধ করেন। পাশাপাশি অবস্থান নেন উপাচার্যপন্থিরাও। এ সময় উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা আন্দোলনকারীদের প্রতি ব্যঙ্গাত্মক আচরণ করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
অবরোধ চলাকালীন উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরা বিশেষ প্রহরায় কয়েক প্রার্থীকে দেয়াল টপকে উপাচার্যের বাসভবনে পাঠান। এদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্ব্বা প্রার্থীও ছিলেন। একাধিক প্রার্থী প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে রেজিস্ট্রার বরাবর একটি অভিযোগপত্রও দাখিল করেন।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তথ্য হচ্ছে, অবরোধের কথা জানতে পেরে গণিত বিভাগের সভাপতি লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ, উপাচার্যের একজন পছন্দের প্রার্থী মাহতাব উদ্দিনকে নিয়ে আগে থেকেই উপাচার্যের বাসায় অবস্থান করছিলেন। এদিকে অবরোধের কারণে বেশ কিছু প্রার্থী সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে আলোচনার জন্য শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এএ মামুনের নেতৃত্বে শিক্ষক সমিতির একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলেও ব্যস্ততার অজুহাতে উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় সিলেকশন বোর্ডের এক সদস্য 'এ রকম পরিস্থিতিতে সাক্ষাৎকার নেওয়া সম্ভব নয়' বলে ফিরে যান (১১ মার্চ, সমকাল)।
৯ জানুয়ারি জুবায়ের হত্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন চলছেই। একদিনের জন্যও থামেনি আন্দোলনের কর্মসূচি। এখন সব দাবি পরিণত হয়েছে এক দফাতে_ 'উপাচার্যের পদত্যাগ'। ক্যাম্পাসে চলছে অবরোধ, প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও, সর্বাত্মক ধর্মঘট। এ রকম উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে আবার প্রাণরসায়ন, অনুপ্রাণ বিজ্ঞান ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে প্রশাসন। আন্দোলনরতরা কোনোভাবেই একের পর এক অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ মেনে নেবে না। শিক্ষকরা যে কোনো মূল্যেই প্রতিহত করবেন অবৈধ এ প্রক্রিয়া। তাহলে এবার কী ঘটবে এপ্রিলের ২ ও ৩ তারিখে? বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কোনো জঘন্য ইতিহাস? উপাচার্যের কাছে জিজ্ঞাসা, স্বৈরাচারী মনোভাবে একের পর এক অতিরিক্ত, অযোগ্য শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া কি খুব জরুরি?
অধ্যাপক ড. শামসুল আলম সেলিম :সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
No comments