প্রণব ও দুবের মতের প্রতিফলন ঘটাক দিল্লি-ভারতীয় প্রতিদানের অপেক্ষায়

বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতার সম্পর্কের পরবর্তী পদক্ষেপ এখন ভারতের কাছেই প্রত্যাশিত। ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় স্বাক্ষরিত যৌথ সমঝোতার বাস্তবায়নে ভারত এখনো পিছিয়ে আছে। সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথের সার্ধশততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ভারত সফররত বাংলাদেশি সাংবাদিকদের কাছে ভারতের অর্থমন্ত্রী


প্রণব মুখার্জি তা স্বীকারও করেছেন। গত সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার মুচকুন্দ দুবের বক্তব্যও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বাংলাদেশের প্রতি ভারতের প্রতিদানের দায়িত্বের কথাও জোরের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। আমরা ভারতের অর্থমন্ত্রী এবং প্রভাবশালী এক কূটনীতিকের মতো দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের এই খোলা মনের স্বীকারোক্তিকে সাধুবাদ জানাই। আশা করি, তাঁদের অভিমতই ভারত সরকারের বাংলাদেশবিষয়ক নীতিতে প্রতিফলিত হবে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সবদিকে গতির সূচনা হয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা, সন্ত্রাস দমন, যোগাযোগ ও বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উভয় দেশ পরস্পরের কাছাকাছি এসেছে। সহযোগিতার পরম নিদর্শন হিসেবে বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট-সুবিধা দিতে সম্মতও হয়েছে। এ ছাড়া ভারতের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহ দমনে সহযোগিতাসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবেও আবির্ভূত হয়েছে। কথা ছিল, ভারতও একইভাবে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সদিচ্ছার যোগ্য প্রতিদান দেবে। গঙ্গা, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যা, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক ও ট্যারিফ দূর হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখতে অপেক্ষারত। এসব বিষয়ের মীমাংসা না হলে রাষ্ট্রীয় সম্পর্কে তো বটেই, জনমনেও হতাশার জন্ম হতে পারে।
মুচকুন্দ দুবে সহযোগিতার তিনটি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছেন, যার সঙ্গে দ্বিমতের অবকাশ কম—বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ঋণ নয়, ৫০০ কোটি ডলার মঞ্জুরি দেওয়া; ভারতে চাহিদা আছে এমন বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশ অবাধ করা এবং অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনে ব্যাপকভিত্তিক সমঝোতায় আসা। ট্রানজিটের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের সুবিধা যেহেতু ভারতই পাবে, সেহেতু তার আর্থিক দায়িত্ব ভারতের নিতে অসুবিধা থাকার কথা নয়। বিপুল বাণিজ্য-ঘাটতি কমাতে ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার বাড়ানো বাণিজ্যিক ভারসাম্যের জন্যও দরকার। তৃতীয় দিকটি বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গেই সম্পর্কিত। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি বহুগুণে বেড়ে যাবে, যদি বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে।
বাংলাদেশ ভারতকে যে কৌশলগত, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়েছে, বিনিময়ে বাংলাদেশের এই পাওনাগুলো যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত। একে বলা যায় দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিনিয়োগ। বাংলাদেশ সেই বিনিয়োগ করেছে, এখন প্রতিদান দেখার পালা। আশা করা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ঢাকা সফরে বিষয়গুলোর সুরাহা হবে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত দিক থেকে চাপমুক্ত হলে ভারতের তাতে লাভ বৈ ক্ষতি নেই। ভারতের শাসকবর্গের একাংশের এই উপলব্ধি দেশটির রাষ্ট্রীয় নীতিতে প্রতিফলিত হলে সবারই মঙ্গল।

No comments

Powered by Blogger.