এখনও সবার হাতে পাঠ্যবই পৌঁছেনিঃ সরকারের দাবি সঠিক নয়


বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণে সরকারের সাফল্যের কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে বলা হয়েছে বছরের শুরুতেই। শিক্ষামন্ত্রী বড় গলায় দাবি করেছিলেন সরকার দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীর হাতে নির্ধারিত সময়ে বই পৌঁছে দিয়েছে।
ক্ষমতাসীনদের এ ধরনের প্রচারণার পাশাপাশি পত্র-পত্রিকায় সব স্কুলে বই না পাওয়ার খবরের সঙ্গে বই না পেয়ে শিশু শিক্ষার্থীর কান্নার ছবিও দেখা গেছে। কিন্তু মিডিয়ায় এ ধরনের খবরকে গুরুত্ব না দেয়াটা ক্ষমতাসীনদের কতটা মজ্জাগত হয়ে গেছে সেটা এখন প্রমাণিত সত্য। অনেকেই পাঠ্যবই নিয়ে প্রকাশিত খবরকে সরকারবিরোধী প্রচারণা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এখন তারা কী বলবেন? খোদ শিক্ষামন্ত্রীই বই বিতরণে শতভাগ সাফল্যের দাবি অস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। শুধু তাই নয়, রাজধানীতেই এ কাজে ব্যর্থতার দায়ভার চাপিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি।

গত বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠ্যবই বিতরণ সংক্রান্ত এক উচ্চপর্যায়ের সভায় শিক্ষামন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এ কাজে বিদ্যমান ত্রুটি-বিচ্যুতি, অনিয়ম, গাফিলতি ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা এবং ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছানো নিশ্চিত করতে কমিটি গঠন করেছেন। এর মধ্য দিয়ে দেরি করে হলেও তিনি পত্র-পত্রিকায় উত্থাপিত অভিযোগগুলোর সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন। বাস্তবতার এই স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে ভালো লক্ষণ। এতে করে ক্ষমতাসীনদের গায়ের জোরে নিজেদের সফলতা প্রতিষ্ঠা করার প্রবণতা যদি কিছুটা হলেও হ্রাস পায় তবে সেটি সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে বলতে হয়। এর ফলে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়ার চেয়ে বাস্তবায়নকে গুরুত্ব দিতে ক্ষমতাসীনরা আগ্রহী হলে ভালো করবেন।
বিদ্যুত্, গ্যাস, খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য প্রভৃতি নিয়ে মহাজোট সরকারের অবস্থা দেখে এমন কথা মনে আসাই স্বাভাবিক। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ এবং বাণিজ্যিকভাবে পাঠ্যবই ছাপা নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েও একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাঠামো, জনবল ও ক্ষমতা সময়মত এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কতটা সক্ষম সেটি সম্ভবত বিবেচনায় নেয়া হয়নি। রাজধানীতে বই বিতরণে ব্যর্থতাই তার বড় প্রমাণ। জানা গেছে, রাজধানীতে মোট বইয়ের চাহিদা ৫৮ লাখ ৩২ হাজার ২৯৯টির স্থলে জেলা শিক্ষা অফিস ৫৭ লাখ ১৬ হাজার ৫৪৫টি বই পেয়েছে। এর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ৪১ লাখ ৬২ হাজার ৫৬৩টি আর ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮২ কপি বই গুদামে পড়ে আছে। এ জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। স্কুলে স্কুলে বই পরিবহনে সঙ্কটের কথাও জানা গেছে। টাকার বিনিময়ে পাঠ্যবই বিক্রির মতো দুর্নীতির খবরও প্রকাশ পেয়েছে। এসব কারণে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন মন্ত্রী। রাজধানীর বুকে এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে সারাদেশে পাঠ্যবই বিতরণের অবস্থাটা অনুমান করা কষ্টকর নয়। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিক্ষা অফিসাররা এখনও সরকারের বিনামূল্যের সব বই না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন। তাহলে এটি বলাই যায়, রাজধানীসহ সারাদেশের স্কুলে সব পাঠ্যবই এখনও পৌঁছেনি। অথচ রাজধানীর বইপাড়ায় বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যেই। বাধ্য হয়েই অভিভাবকরা বই কিনে দিচ্ছেন ছেলেমেয়েদের।
এ প্রসঙ্গে দেশের বিপুল সংখ্যক কিন্ডারগার্টেনের কথা উল্লেখ করা যায়। এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সরকারের জানা না থাকায় সেখানকার মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অজানা। তাদের বইয়ের চাহিদা পূরণের কী হবে? অর্থাত্ বিনামূল্যে দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীর জন্য পাঠ্যবই সরবরাহে সরকারের সাফল্যের দাবি এখনও অবাস্তব। কবে নাগাদ সবার হাতে বই পৌঁছবে সেটি নিশ্চিত করে কারও পক্ষে বলা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকারের দাবি সঠিক প্রমাণিত হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.