তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩৫৪ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। সাহসী ও ক্ষিপ্র মুক্তিযোদ্ধা তুমুল যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যেতে থাকল। বেলায়েত হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে তাদের ধাওয়া করলেন। ভীতসন্ত্রস্ত সেনারা তখন পেছন ফিরে গুলি করতে করতে পিছিয়ে যেতে শুরু করল।
বেলায়েত হোসেন দমে গেলেন না। তাঁর ইচ্ছা দু-একজন শত্রু সেনাকে জীবিত ধরার। সাহস ও ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এগোতে থাকলেন। কিন্তু তাঁর আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হলো না। শত্রু সেনাদের ছোড়া একটি গুলি এসে লাগল তাঁর মাথায়। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি। কিছুক্ষণ পর নিভে গেল তাঁর জীবনপ্রদীপ। এ ঘটনা সালদা নদীতে। ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর।
সালদা নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্গত। ১২ নভেম্বর রাতে ২ নম্বর সেক্টরের সালদা নদী সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ চালান। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা সালদা নদীর বেশির ভাগ এলাকা দখল করে নেন। যুদ্ধে বেলায়েত হোসেনও অংশ নেন। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। যুদ্ধে তিনি অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন।
১৪ নভেম্বর। তখন বেলা একটার মতো হবে। পাকিস্তানি সেনাদের একটি শক্তিশালী দল সালদা নদী পুনর্দখলের জন্য মনোয়ারা গ্রামের পশ্চিম দিকে গোডাউন এলাকা হয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। ওই এলাকায় বেলায়েত হোসেন ছিলেন তাঁর দল নিয়ে। অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি সেনাদের ওপর তিনি আক্রমণ চালান। প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর তারা পালাতে থাকে। তখন বেলায়েত হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন।
২ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল, ১৯৭৫ সালে নিহত) ১৯৭৪-৭৫ সালে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেলায়েত হোসেন সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘...সুবেদার বেলায়েত একটি দল নিয়ে পাক সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য গুদামঘর এলাকায় আক্রমণ চালায়। পাক সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত হয়। এবং তারা পালিয়ে যায়। কিন্তু একজন পাকসেনা আড়াল থেকে সুবেদার বেলায়েতকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তার মাথায় গুলি লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, হাসপাতালে পৌঁছার আগেই সে শাহাদতবরণ করে। তার মতো বীর সৈনিকের শহীদ হওয়ায় আমরা সবাই মর্মাহত হয়ে পড়ি। বেলায়েতের কীর্তি এবং বিক্রমের কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সালদা নদী এলাকা দখল করা একটি দুঃসাহসী পরিকল্পনা ছিল।’
বেলায়েত হোসেন চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। মার্চ মাসের শুরু থেকে তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিদ্রোহ করে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের সালদা নদী সাব-সেক্টরে।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য শহীদ বেলায়েত হোসেনকে মরণোত্তর বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩১।
শহীদ বেলায়েত হোসেনের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার গাছুয়া গ্রামে। বর্তমানে তাঁর স্ত্রী ও ছেলে বসবাস করেন চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানার বায়োজিদ বোস্তামি এলাকার শেরশাহ কলোনিতে। তাঁর বাবার নাম মাজেদ মিয়া, মা বিবি মরিয়ম। স্ত্রী তফসিলা বেগম। তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, দশম খণ্ড এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ২।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.coস
সালদা নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার অন্তর্গত। ১২ নভেম্বর রাতে ২ নম্বর সেক্টরের সালদা নদী সাব-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানে আক্রমণ চালান। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধারা সালদা নদীর বেশির ভাগ এলাকা দখল করে নেন। যুদ্ধে বেলায়েত হোসেনও অংশ নেন। একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। যুদ্ধে তিনি অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেন।
১৪ নভেম্বর। তখন বেলা একটার মতো হবে। পাকিস্তানি সেনাদের একটি শক্তিশালী দল সালদা নদী পুনর্দখলের জন্য মনোয়ারা গ্রামের পশ্চিম দিকে গোডাউন এলাকা হয়ে এগিয়ে আসতে থাকে। ওই এলাকায় বেলায়েত হোসেন ছিলেন তাঁর দল নিয়ে। অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি সেনাদের ওপর তিনি আক্রমণ চালান। প্রচণ্ড আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর তারা পালাতে থাকে। তখন বেলায়েত হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে তাদের ধাওয়া করেন।
২ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক মেজর খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম, পরে মেজর জেনারেল, ১৯৭৫ সালে নিহত) ১৯৭৪-৭৫ সালে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেলায়েত হোসেন সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘...সুবেদার বেলায়েত একটি দল নিয়ে পাক সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য গুদামঘর এলাকায় আক্রমণ চালায়। পাক সেনাদের আক্রমণ প্রতিহত হয়। এবং তারা পালিয়ে যায়। কিন্তু একজন পাকসেনা আড়াল থেকে সুবেদার বেলায়েতকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তার মাথায় গুলি লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, হাসপাতালে পৌঁছার আগেই সে শাহাদতবরণ করে। তার মতো বীর সৈনিকের শহীদ হওয়ায় আমরা সবাই মর্মাহত হয়ে পড়ি। বেলায়েতের কীর্তি এবং বিক্রমের কথা বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সালদা নদী এলাকা দখল করা একটি দুঃসাহসী পরিকল্পনা ছিল।’
বেলায়েত হোসেন চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১ সালে এই রেজিমেন্টের অবস্থান ছিল কুমিল্লা সেনানিবাসে। মার্চ মাসের শুরু থেকে তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিদ্রোহ করে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন ২ নম্বর সেক্টরের সালদা নদী সাব-সেক্টরে।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য শহীদ বেলায়েত হোসেনকে মরণোত্তর বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩১।
শহীদ বেলায়েত হোসেনের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার গাছুয়া গ্রামে। বর্তমানে তাঁর স্ত্রী ও ছেলে বসবাস করেন চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানার বায়োজিদ বোস্তামি এলাকার শেরশাহ কলোনিতে। তাঁর বাবার নাম মাজেদ মিয়া, মা বিবি মরিয়ম। স্ত্রী তফসিলা বেগম। তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে।
সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র, দশম খণ্ড এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ২।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.coস
No comments